ইউথেনেসিয়া
বেলজিয়ামের বাসিন্দা হলে
অনেক আগেই ইউথেনেসিয়া পেপারর্সে সাইন করে ফেলতাম
দুর্ভাগ্য, আমি ফরাসিদের প্রতিবেশী—
এদেশে এখনো এটি বৈধতা পায়নি
আর যা কিছু অবৈধ তার সম্পাদন সকল দেশেই অপরাধ
মরে অপরাধী হলে তোমাকে এর শাস্তি পেতে হবে
তোমাকে আমার মৃত্যুর কৈফিয়ত দিতে হবে
অথচ আমি চাই না আমার মৃত্যুর জন্য
তুমি পুলিশে স্টেশানে দৌড়াও
আদালতে যাও
কারণ আমি তো দেখেছি পুলিশ স্টেশানের ভিতর
আদালতের চত্বর…
আমি তোমাকে আমার থেকেও অধিক
ভালোবাসি
ভালোবাসি বলেই জীবন দিতে পারি
কাউকে ভালোবাসলে পরেই ফাঁসি পরা যায় হাসি মুখে—
ভালোবাসা এক অতুল-অজেয়-শক্তি
যার কাছে পৃথিবীর সব শক্তি পরাভূত হয়ে যায়
আমি মরে গিয়ে প্রমাণ করতে চাই
কতোখানি তোমার ছিলাম
আর কতোটা অন্যের
ইউথেনেসিয়া, কবে তুমি ফরাসিদের বৈধতা পাবে!
হায়, পৃথিবীর অগণিত নর-নারী মরে গিয়ে অপরাধী হয়ে যায়।
ইলিয়াদ-এর চাঁদ
আমার সকালে তুমি ঘুম ভাঙানো এলার্ম
হুড়মুড় উঠে গিয়ে তোমার শব্দিত চোয়াল আঙ্গুলে চাপি
তবে কি আমার হাতে কখনও জাগতে পারে কৃষ্ণ কালাশনিকভ
আমার বিকেলে তুমি গোলগাল লাল সূর্য
সমুদ্রসৈকত থেকে তোমার বুকেই ছুঁড়ি শিকারির তীর
তবে কি কখনও আমি মানুষের বাগানে ছুঁড়তে পারি সতেজ গ্রেনেড
অথচ আমার রাতে তুমি ইলিয়াদ-এর চাঁদ
সারারাত ধরে তোমার জোছনা পান করি অদেসি’র খোঁজে
তবে কি কখনও তুমি আমাকে হোমার বলে প্রভাতের বুলবুলি হবে।
স্বর্ণলতার উষ্ণজলনদী
কাছাকাছি থাকি বলে বারবার মুখোমুখি হই
মুখোমুখি হওয়া মানে গুতোগুতি নয়
তবু মাঝেমাঝে আমাদের ঘরে ঘটে আষাঢ়ের আস্ফালন
মেঘ গুড় গুড় বিজলির চমকানি বজ্রধ্বনি—
রক্তের সমুদ্রে ওঠে হিংস্র ঢেউ, দেঁতো হ্যারিক্যান
জিবের জোয়ার দু‘পাটি দাঁতের বাঁধ ভেঙে
তুমুল আছড়ে পড়ে ঠোঁটের সৈকতে
কেঁপে উঠি, ক্ষেপে যাই
অতর্কিতে অমবশ্যা নামে কখনো সখনো রোদপোড়া দিনে
নিজের গলার স্বর মুহূর্তে অচেনা হয়ে যায়
চিতার গতিতে হামলে পড়ি এদিক-ওদিক
লণ্ডভণ্ড হয়ে যাও তুমি, স্বর্ণলতা
তারপর ঘরময় সুনসান নিরবতা
যুগল আকাশ ভাঙে, দুই গালে বয়ে যায় উষ্ণজলনদী…
উষ্ণতায় জগতের জন্ম
জলের ফোঁটায় জীব, আর
নদীতো প্রতীক সভ্যতার—
আমি সভ্য হয়ে যাই
চিতার খোলস ছেড়ে আবারও তোমার মুখোমুখি হই
প্রথম দিনের মতো তোমাকে পোস্টার করি বুকের দেয়ালে
উষ্ণজলনদী দুই জোড়া হয়ে যায়
স্বর্ণলতা, বিপরীতমুখী হলে কখনোই এমন হতো না।
ফায়সাল আইয়ূব
জন্ম সিলেটে। লেখাপড়া সরকারি মুরারিচাঁদ কলেজ এবং মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় লন্ডনের হ্যামিলটন কলেজে।
২০০০ সালে ঢেউ নামে একটি লিটলম্যাগ সম্পাদনা করেন। প্রথম সংখ্যায় কবি দিলওয়ারসহ অনেকে কবিতা লিখেন। রেডিও বাংলাদেশ সিলেট কেন্দ্রের বার্তা বিভাগে সংবাদ অনুবাদক হিশেবে কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্যে নিয়মিত স্ক্রিপ্ট রাইটার হিশেবে তালিকাভুক্ত হন। ২০০৯ সালে লন্ডনে চলে আসেন। লন্ডনের একমাত্র ব্রডশিট খবরের কাগজ সাপ্তাহিক পত্রিকায় বার্তা সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন।
মূলত, কবিতা গল্প প্রবন্ধ নিবন্ধ লিখে থাকেন। প্রথম কবিতার বই ‘হিয়ার হিন্দোল’ সিলেট থেকে এবং ঢাকার উৎস প্রকাশন থেকে আরো একটি কবিতার বই এবং একটি ফিচারগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
বর্তমানে তিনি দুই সন্তান ও স্ত্রী ফাহিমা নিপাকে নিয়ে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বসবাস করছেন। বই পড়তে, সিনেমা দেখতে এবং সপরিবারে ভ্রমণ করতে খুব ভালোবাসেন।