অভ্র আরিফের তিনটি কবিতা

স্বপ্ন

ঘুম ও জাগার বাইরের যে মুহূর্ত– সেখানটাতে আটকে আছি
হাওয়ায় দুলে দুলে শূন্যে ভেসে তোমার বাড়ি পৌঁছে যাই
সদর দরজায় আটকে দেয় তোমার ডাবের মতো চোখ
আমার কর্নিয়া রিডেবল তোমার চোখে চোখ রাখতেই
হৃদয়ের কপাট খুলে যায় তোমার
তারপর করতলে বন্দী করে হাত, চিবুক হয়ে অধরে এসে থামি
ঘুম ও জাগরণের মাঝখানে এই এতটুকু, এতটুকুই তো আমি।
এতটুকুর জন্য তোমার কাছে আমার এতো ঋণ,
প্রেমে, কামে বুঝি স্বপ্ন ভীষণ- ভীষণ লজ্জাহীন।

 

বাড়ি ফেরা

বাড়ি ফেরা শব্দটাই কেমন যেন আম্মা-আব্বার গন্ধ থাকে।
হৃদয়ের দগ্ধ ঘায়ে মোলায়েম উপশম নিতে
রাস্তার দু’ধারের ধাবমান দৃশ্যাবলী কেটে কেটে বাড়ি যেতাম।

‘ফেরা’ শব্দটা হৃদয়ের উৎসমূল ধরে টান দেয়
আমরা সেখানেই ফিরি যেখানে আমাদের মূল ঠিকানা
অন্য সবখানে শুধু ‘যাই’।
আমাদের সবার বাড়ি ‘ফিরতে’ ইচ্ছে করে,
কিন্তু আমরা এখন শুধু বাড়ি ‘যাই’।
যাওয়া এবং ফেরার দোলাচলে এখন দেখি
এই ইদে আমার ঘর নাই, আমার বাড়ি নাই।

 

গর্ত

আমাদের ঘরের মেঝেতে একটা ছোট গর্ত ছিলো।
গর্তটা এতো ভয়ানক যে, এটা বাবার শার্ট, মায়ের কানের দুল,
পরনের শাড়ি, বোনের জামা, আমার স্কুল ড্রেস সব কেড়ে নিতো।
বাবা শত চেষ্টা করেও গর্তটা বন্ধ করতে পারেননি।
শেষে গর্তটা আমার পাঠ্যবই ধরে টান দিলো। তারপর বাবা
এই ভয়ানক গর্ত থেকে বাঁচাতে আমাকে পাঠ্যবইসহ বাড়ির বাইরে
পাঠিয়ে দিলেন।

তারপর থেকে কোনোদিন আর গর্তটার খোঁজ নেইনি।
গতকাল শুনলাম, গর্তটা আম্মার একটা চোখ নিয়ে নিয়েছে।

 

অভ্র আরিফ

জন্ম ১২ মার্চ ১৯৯০ সালে কিশোরগঞ্জ জেলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে বর্তমানে শিল্প মন্ত্রণালয়ে কর্মরত। লেখালেখির শুরুটা হয় শহুরে পূঁতিগন্ধময় জীবনে বন্দী থেকে শৈশবের সোঁদা মাটির গন্ধ নিতে গিয়ে যখন কাগজ কলম হাতে তুলে নেয়। মূলত কবিতার তুলিতে শৈশবের পটচিত্র ভরে তোলাটাই নেশা। এছাড়া ছোটগল্প ও স্ক্রিপ্টও লিখে থাকেন।

Facebook Comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top