পিতার দৃশ্য জুড়ে
রাস্তার দৃশ্য ক্রমশ দূরের দিকে যায়
গৃহিপালিতের দিকে চেয়ে থাকার পরিণামগুলি
বিকেলের অনভ্যাসে মানবিক হয়ে ওঠে দিন
শূন্যতাও চলমান, স্থিরতার স্পর্শে জেগে ওঠে
মানুষের হাত থেকে ফুলের আতিথ্য ঝরে যাওয়ার আগে
বিকেলের দ্বিপ্রাহরিক, পিতার দৃশ্য জুড়ে স্থির হয়ে আছে
গৃহময়তার আগে বাতাস দিয়েছে
গাছের পাতায় ঝরে যাওয়ার আগে, পিতৃত্বের হাসি
গাছের প্রকৃতি থেকে দূরত্ব গড়েছে, বোঝা যায়
বিশ্বাস, মহাভারতের স্পর্শে
ঘুম, তারও কাছে নতশির, পারিবারিকতার গল্পকথাগুলি
ভাবনার ভিতরে পশ্চিম গভীর থেকে গভীরতর হয়ে আছে
জানলার অবয়বে গড়ে ওঠে দূরের আকাশ, ঘরের বাতাস আর একভাবে
পাখিকে পৃথিবী দিয়ে মেপে নেওয়া হয়তো কঠিন
প্রত্নইতিহাসের ঢঙে ডানার তত্ত্বগুলি রচিত হয়েছিল কোনো একদিন
সূর্যরঙিন হাতে একে একে রচিত হবে অন্ধকারের ভীষণ কাহিনি, বোঝা যায়
বিশ্বাস, মহাভারতের স্পর্শে যেন আজও বেঁচে আছে …
ছায়া পড়ে আছে
নিজের ছায়াকে লক্ষ করে এগিয়ে চলেছ
ছায়ার সঙ্গী হয়ে ছায়ায় মিলিয়ে গিয়েছ অনেকদিন
বাতাস এর বেশী আর কী-ই বা শিখিয়েছে, এই একটি জীবনে
কথাকে কথার ভিতর থেকে বুঝে নিতে হবে
ভালোকথা, এইভাবে, ভালোভাবে বলা কথার থেকে আলাদা হয়েছে
নিজেকে দেখার কথা ছিল, তবু চোখের ভূমিকাটিকে
দর্শনের খুব কাছে নিয়ে এলে, দেখা যায়
ছায়া পড়ে আছে, ঘর থেকে ঘরে গৃহমুখিনতার অভাব পড়ে আছে
স্মৃতি তো কথার মতো
তার মুখের দিকে তাকানোর স্মৃতি
কথায় কথায় বেঁচে আছে বহুকাল
দর্শনের ভাষা দিয়ে
কোনো কোনো দৃশ্য অভিজ্ঞতার অংশ হয়ে ওঠে
ছবিটি নতুন হয়ে ওঠে তার বর্ণপ্রতিভায়
দর্শনের ভাষা দিয়ে দৃশ্যটিকে ধরে ফেলা যদিও কঠিন
চোখ বন্ধ করে, কোনো কোনো দৃশ্যকে চিনে নেওয়ার প্রথা এখনও রয়েছে
কীভাবে একটি রঙের ধারণা গড়ে ওঠে, তারপর ভাঙে
এইটুকু দেখে নেওয়ার অভিপ্রায়ে চোখদুটি বন্ধ রেখেছে সে বহুকাল
যে ছবি দেখার বিষয় নয়, তা রয়েছে চোখের ভিতর
এই না দেখাটি রঙ দিয়ে ভরা যায়, বর্ণনা করা যায়
এই না দেখাও রচনা করেছে অন্যভাবে চেয়ে দেখবার ভাষাটিকে
চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দৃশ্যগুলি, দেখার প্রয়োজনে
বর্ণময় হয়ে ওঠে বোঝা যায়
কোনো এক অভিপ্রায়
একটি পাতার দুলে ওঠা দেখে
সে বড় অপূর্ণতায় ভরে ওঠে
ছায়া থেকে দূরে সরে আসে
গাছের সাহচর্য, কোনো এক অভিপ্রায়,
সবকিছু তাকে ত্যাগ করে
একটি পাতার দুলে ওঠা দেখে, আরও একবার
পরিপূর্ণতায় নিজেকে সে ফিরে পেতে চায়
মানুষ এভাবে কখনও নিঃস্ব, কখনও গভীর হতে থাকে
সেই অভিপ্রায়টিকে চিনে রাখা ভাল
সেই অন্ধকারটিকে পাতার গভীরে গিয়ে চিনে রাখা ভাল
একটি পাতার দুলে ওঠা দেখে
সে বড় একাকী, হেসে ওঠে —
বিপন্নতা তবুও রয়েছে
ধুলোবালির ঐশ্বর্যে ভরা এমন একটি দিন এর আগে কখনও আসেনি
জীবনকে ধুলোমলিন ভাবা হয়, সফলতা সে ভাবনার মধ্যে রয়েছে
তারপরও, অসফল রচনার সব দায়, জীবনের পাতায় পাতায়
ধুলো সম্বল হয়ে আছে
একটি রচনার কথা ভাবা হল, পাঠ সমাপ্তির কথা ভাবা হল তারপর
লেখকের ছায়া বড় হচ্ছে দেখে, তোমার হাসির কথা পাঠকের মুখে ভেসে ওঠে
একটি রচনার শেষে, একাকী পাঠক ছায়াকে নিজের মতো ভাবে
বিপন্নতা তবুও রয়েছে, দিনরাত্রি জুড়ে ধরা আছে জীবনের সব অসফলতা
আমাদের সকল রচনায়
স্বর্ণেন্দু সেনগুপ্ত
মেদিনীপুরে বসবাস। ২০১২ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ, ‘ধানইন্দিরা’ প্রকাশিত হয়, প্রকাশক কবিয়াল, ২০১৭ সালে বইটির পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। ২০১৫ তে দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ, ‘পিতার জন্ম হয়’। এই বইটি প্রকাশিত হয়েছে মনফকিরা থেকে। অনুবাদে আগ্রহ রয়েছে। ২০১৮ সালে ভাষালিপি প্রকাশ করেছে, ‘ফাঁসুড়েকে বিবাহপ্রস্তাব’। মার্গারেট এটউডের কবিতার অনুসৃজন। ২০১৯ সালে, বইপত্তর থেকে প্রকাশিত হয়েছে, ‘গুয়ান্তানামো / স্মৃতিকথা সাক্ষাৎকার কবিতা ছবি’। আমেরিকা অধিকৃত কিউবার গুয়ান্তানামো কারাগারে কয়েদিদের লেখা কবিতা স্মৃতিকথা সাক্ষাৎকারের অনুবাদ ও ছবির সংকলন এ বই। ২০২০ সালে ভাষালিপি থেকে প্রকাশিত হয় ‘নতুন এক নীরবতা’ আমেরিকার তরুণ প্রজন্মের কবি যোশেফ ম্যাসির কবিতার অনুসৃজন।