ঘোড়াডুম
একটি ঘোড়া রাতের চারণ শেষে আস্তাবলে ফিরল জ্যোৎস্নশাসিত রাত্রির
প্রতিভা শেষ করে। তার শরীরে ক্ষুধাবোধ। উপত্যকার ঢাল বেয়ে নীচে
ঝরনার কাছে জলের আহ্বানে গিয়েছিল। দু’ঢোক জলে গ্রীবার মরু-প্রশ্নের
অন্তর ভিজিয়ে পানের সেই সন্ধিক্ষণ থেকে সরে এসেছে। তার শরীরে
আজ অসুস্থতা। একটি অশ্বথু গাছের নিচে উষ্ণতার শুশ্রূষা খুঁজে পেয়ে
মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে শুয়ে থাকল। দরবারি ঘণ্টাধ্বনির মত দিন শেষে
রাত্রি নীরব। দূরে প্রান্তরের উদারতা উদযাপন করে চলেছে এক ঝাঁক
সতীর্থ। তাদের হেষ্রাস্বরে চাঁদ, আলো, গতি, তৃণ, জল, প্রণয়ের প্রসঙ্গ।
সে কয়েকবার আনচান করে স্থির করে নিলো কান। সে ঘুমাল। জাগরণে
পিপাসা পেল তার। আকাশের ঢাল বেয়ে চাঁদও পৌঁছেছে ঝরনার কাছে
জলে চাঁদ। সে দেখে ডান-বামে কাঁপিতেছে ছায়া। দু’ঢোক জলের মায়া
মুখে তুলে সে ঈশানে তাকাল: আকাশে কর্তব্য-পরায়ণ আলো ফুটছে।
সে ফিরলো। শরীরে ক্ষুধা বোধ। যন্ত্রণা। চাবুক ও শকট জোড়া আছে
অগ্রিম উঠানে, সে নীরবতার পাশে দাঁড়াল: বশ্য, কর্তব্যপরায়ণ ঘোড়া।
০১.৭. ২০২০
আনন্দমোহন
রাতের ঘোড়া, চারণের মাঠ খোলা ও আকাশ জোড়া। চাদের শাসন
আজ আলো আর অন্ধকারে। ঘাড়ে তাদের গতির ঝালর দুলে দুলে
ওঠে যখন তখন। জ্যোৎস্নায় ঠিকানা খুঁজে পাই আনন্দমোহন। দুরের
সরবর বুকে আজ চাঁদ নিয়ে ঘুমাবে। এই অন্ধকার নীরবতার ঘামে
প্রত্যেকের জানাশোনা। প্রাচীন প্রদীপ হাতে হাঁক দিতে দিতে থেমে
গেল চৌকিদার। অন্ধকার ফুড়ে ইতিহাসের মৃত ঘোড়াদের আনাগোনা
যখন তখন, জ্যোৎস্নায় ঠিকানা খুঁজে পাই আনন্দমোহন।
০১.০৭.২০২০
জললিপি
সমুদ্রের গলিত অক্ষরে কয়েকটি বানান ভুল করেছিল জেলে।
কয়েকটি সার্ডিন মাছ জালের ফোঁকর গলে দশটি নম্বর কাটা!
আজ ভোরের গায়ে, উত্তরপত্রের মত মেলে রেখে জাল,
ভুলগুলো সেলাই করে করে শুধরে নিচ্ছে ছেলে-বউ-জেলে।
আগামীকাল পরীক্ষার খাতায় লিখতে হবে আবার মৎস্য শিকার
০১.০৭.২০২০
প্রক্রিয়াজাতক
সময়ই খুঁজে পায় দূরের শহর, শহরের গায়ে
আমরা টানিয়ে দেই সময় ফলক: পূর্বাব্দ, খ্রিস্টাব্দ
ভবিতাব্দ! ভৌত রসায়নের গন্ধ রেখে চলে গেছে
পাথর-প্রবাসীরা। তারা খেয়ে গেছে শহর-বাগানে
ফলানো ফল, সাথে করে নিয়ে যেতে পারে নাই
কিছু – ভৌত প্রযুক্তি-বল সময়ের যুক্তির সাথে হেরে
গেছে তর্কে। যারা জগতের গোপন ‘বল’কে বিহ্বল
করে দিতে পেরেছে, তারা শহরের লাল ফল স্থির
বৃন্ত থেকে ছিঁড়ে নিয়ে গেছে চলমান সময়ের কাছে।
এখন একটি লাল ফল দোকানির তাকে: অতীতের
ফসল, আজকের চল, ভবিষ্যতের নকল।
২৮.০৮.২০২০
মধ্যবয়সীদের ভোজ
একটি ভোজের আসরে সহজ বন্ধুরা এসে যায়। তাদের
মধ্য বয়স। তারা সকলেই রূপকথার সতীর্থের মত জীবনের
নানান দুর্গম দিকে অভিযান নিয়ে ছুটে গিয়েছিল, আজ তারা
পুনর্মিলিত। তাদের মধ্যবয়স। অর্জনের ওজন নিয়ে তাদের
কণ্ঠ আজ ভারি, আড়াআড়ি সংলাপে তারা প্রত্যেকেই জুয়ারি
প্রতিভা নিয়ে সপ্রতিভ। এখানে সৌহার্দ স্তম্ভিত! প্রত্যেকেই
রূপকথার সোনার আপেল গাছের স্থির বৃন্ত থেকে ছিঁড়ে আনা
আপেলের ওজন ও আকৃতি নিয়ে প্রতিযোগিতা-বিভোর।
রেষারেষি রঙের পোশাকে তাদের ঘোর লাগা নারীদের রূপ
ধর্মগ্রন্থের মলাটের মত এখনো নিশ্চুপ। তারা শুধু শারীরিক
বোধ নিয়ে অতি অভ্যস্ততায় বিলীন হয়ে থাকে তাদের কর্তার
সওদাগরি প্রতিভায়। আপেলের বোটায় তখনো ফোটা ফোটা
কশ, সহজ বন্ধুরা আলিঙ্গন করে বিদায় জানায় একে-ওকে।
তাদের মধ্যবয়স।
২৯.০৮.২০২০
জেনিস মাহমুন
জন্ম ১ জানুয়ারি ১৯৬৯; ঢাকা। ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। প্রকাশিত বই : ১২টি কাব্যগ্রন্থ। গত বছর ‘অসমগ্র’ নামে ৭টি কাব্যগ্রন্থ একসাথে প্রকাশিত হয়েছে।
ই-মেইল : [email protected]