নৌকাতলী
ডাকিনীর ছায়াস্মৃতি চোখ হারিয়ে অন্ধ হয়ে যায়
জোনাক-আলো জাগিয়ে রাখে ভ্রমণদৃশ্যের পথ
কালিদহে গড়িয়ে যেতে যেতে আঙুলবন্দি নুড়ি
দেখিয়েছে জাফরি-কাটায় ঝোলা জ্যাকেটের ভয়।
ঢেউ বিগড়ানো নদীতে ফিরিয়ে দিলে মৎস্যের আয়ু
বাদামফুল বুকে নিয়ে প্রত্ননৌকার তলে ধীবর ঘুমায়।
কথার বিস্ফার
আয়ু ফুরানো নদীগুলো
বসে আছে আমার টেবিলে
হাওয়া-পৃথিবীর রেখা টেনে
চরাচরে ছড়িয়ে আছে
বন-পালানো হরিণের হাড়
ছাতিমগাছের চোখ ফুঁড়ে
ঝরে পড়ছে
ফোঁটা ফোঁটা রক্ত
একটা মিহিস্রোত শিরা বেয়ে
ঢুকে পড়ছে দেহের ভেতর
উথালপাতাল করছে কথার বিস্ফার
প্রজননকাল
ভয়ানক পলির মধ্যে ডুবে আছি
আমার শরীর বীজে ভরপুর
দেহ ফুঁড়ে গজিয়ে উঠবে গাছ
ফুল, ফল, সুষম শস্যের সম্ভার
তোমাদের খাবার টেবিলে
ঝকঝকে শাদাভাত, নদী ও আপেল
সাফোর সাজানো বাগান
তছনছ করছে লেসবিয়ান ঘোড়া
বন্ধ্যা কাছিম দেশে
শুরু হবে প্রজননকাল
ক্ষয়
সুতো দিয়ে বাঁধা আছে হাত
কুঠার দিয়ে জল কাটার গল্প
পুরোনো অনেক। অন্ধ বিনয়ে
নত হবার আগে ভেবে দেখো—
লাল রিবনে বোঝা যায় না রক্তের দাগ!
কণ্ঠসাধক
কাক মরে গেলে কোকিল হয় না
কোকিল মরে গেলে কবি হয়ে যায়
শামীম হোসেন
জন্ম ১৯৮৩ সালের ৭ আগস্ট পদ্মাপারের রাজশাহীতে।
প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ : বরেন্দ্র প্রান্তরে বসন্ত নামে (২০০৭), পাখি পাখি ভয় (২০১১); উপমাংসের শোভা (২০১২), শীতল সন্ধ্যা গীতল রাত্রি (২০১৩); ধানের ধাত্রী (২০১৫), ডুমুরের আয়ু (২০১৭)।
ছড়াগ্রন্থ : এক তুড়ি ছয় বুড়ি (২০০৮), গাছভাই নাচভাই (২০১৭)।
কবিতা লেখার পাশাপাশি সম্পাদনা করছেন শিল্প-সাহিত্যের কাগজ ‘নদী’। স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার (২০১৫); রূপান্তর সাহিত্য পুরস্কার (২০১৩); রাজশাহী সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (২০১১); অধ্যয়ন শিশু ফাউন্ডেশন পুরস্কার (২০০৬); বিশাল বাংলা সাহিত্য পুরস্কার (২০১৭); আন্ওয়ার আহমদ স্মৃতি পুরস্কার (২০১৭)। বর্তমানে তিনি নিউজ পোর্টাল উত্তরকালে বার্তাসম্পাদক হিসেবে কর্মরত।