যে কালখণ্ডে বসে আমি কবিতা লিখছি, সেই কালেরই একজন কবি ও তার কবিতার সাথে আমার পরিচয় ঘটেছে তার বিস্ময়কর মৃত্যুর পর। প্রাকৃতিক মৃত্যু সে নয়, স্বেচ্ছামৃত্যু, যে উৎস থেকে জীবনের উদ্ভব— জল, সেই অগাধ জলধির ভিতরে নিজেকে নি:শেষে সমর্পণ করে, সমুদ্রের অনিঃশেষ জলরাশির ভিতর আত্মাহুতি দিয়েছেন একজন বাঙালি কবি, এক পরমপ্রাণা নারী, মুনিরা চৌধুরী। তার মৃত্যু সংবাদ যেসব ব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্পর্কের পরিসর উন্মুক্ত করে, তার ভিতরের ধাঁধা, অব্যক্ত কথকতা এবং চাপা দিয়ে রাখা অজস্র উৎসুক মনের আর্তিকে পাশ কাটিয়ে যখন কবিতার ভিতরে এসে সন্ধান করি এই অকালপ্রয়াত কবিকে, বিস্ময়ে আবিষ্কার করি মৃত্যু দিয়ে শুরু হয়েছে তার কবিতার জগৎ, মৃত্যুকে ঘিরে জীবনের সাড়ম্বর উৎসব শেষে মৃত্যু দিয়েই রচিত তার কবিতার প্রস্থান পথ। এমন আপাদমস্তক মৃত্যুময় কবিতার সমারোহ আমার জ্ঞানের পরিধিতে দেখিনি আর কোনো কবির ভিতর, যখন জীবনের অনিবার্য অনুষঙ্গ হিসেবে সব প্রকৃত কবিই মৃত্যুকে ছুঁয়ে গেছেন বোধ ও অনুভবের বিভিন্ন মাত্রায়।
মুনিরা চৌধুরীর অন্তর্গত জীবন অনুসরণ করেছে কবিতাকে, কবিতার সত্য আর জীবনের সত্যে ফারাক থাকেনি কোনো; পূর্ব লিখিত কবিতায় স্বীকারোক্তির মতো মৃত্যুকে বরণ করেছেন অনায়াসে। বহিরাঙ্গে তার যে জীবন— শিক্ষা, সৌন্দর্য, সামাজিক প্রতিষ্ঠা, সংসার ও সৃষ্টিশীলতা সবখানেই তিনি সফল; জন্মেছেন যুক্তরাজ্যের গ্লস্টারশায়ারে, বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় লিখেছেন কবিতা, সম্পাদনা করেছেন সাহিত্যের কাগজ ও বেশ কিছু কবিতার সংকলন; দায়িত্ব পালন করেছেন বাংলা একাডেমি, যুক্তরাজ্য শাখার মহাপরিচালক পদে এবং বিবিধ সামাজিক কর্মকাণ্ডের মধ্যমনি হয়ে চারপাশে ছড়িয়েছেন উজ্জ্বলতা— কেন তিনি এমন বর্ণাঢ্য জীবনকে তুচ্ছ করে নিমিষেই মিশে যাবেন সমুদ্রের জলে, সে তো গভীর ভাবনার বিষয়। সেই রহস্যের জট ছাড়াবার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কবি হিসেবে তাকে আবিষ্কার করা, তার কবিসত্তার সুলুকসন্ধান করা। মুনিরার কবিতা পড়তে গিয়ে যে কেউ অনুভব করবেন তার বহিরাঙ্গে উদযাপিত জীবনের বর্ণচ্ছটা কবিতায় একদমই অনুপস্থিত, যে বাঙালি নারী অশ্বারোহী, সাদা ঘোড়ার পিঠে ছুটেছেন দুরন্ত বাতাসের বেগে, তারপর মাটিতে নেমে প্রিয় ঘোড়ার মুখে আলতো চুমু ছুঁয়ে দিয়েছেন অভিজাত আনা করেনিনার মতো— তার কবিতায় কোথায় সেই বর্ণিল জীবনের ছাপ, সেই উচ্ছাস? অতঃপর তার কবিতার ময়নাতদন্ত করি— হাতে রয়েছে মুনিরার কবিতার খনি, তার দু’টি কাব্যগ্রন্থ: নয় দরজার বাতাস ও মেহেকানন্দ কাব্য।
মুনিরার কবিতায় দ্বিবিধ মৃত্যুর ছায়া দৃশ্যমান: কোথাও মৃত্যু যেন নেগেটিভ ফটো ফিল্ম, অন্ধকারে ঢাকা মুখাবয়ব, সাদা কাগজে মুদ্রিত হয়ে কখনোই জীবনের রঙে মুদ্রিত হবে না; অন্যত্র মৃত্যু সাদা কাগজে মুদ্রিত, স্ব-আরোপিত ও রক্তের ভয়াবহ রঙে চিৎকৃত।
চক্ষু খুলে দেখি— কোথাও চক্ষু নেই, ছায়া নেই, বিম্ব-প্রতিবিম্ব নেই
শূন্য কুঠরীতে পড়ে আছে
মৃত সব মুনিরামায়া আমার অগ্নিমায়া
[হেমন্তে রচিত হেমলক-২, নয় দরজার বাতাস]
ভাঙা মন্দিরের পাশে আমাদের ভাঙা-শঙ্খের আওয়াজ ভাঙছে তো ভাঙছে
সখা হে, মমি হয়ে শুয়ে আছি অগ্নিঝর্ণার নিচে
আর জাগবো না
আর জাগবো না
[হেমন্তে রচিত হেমলক-৪, নয় দরজার বাতাস]
কষ্ট কি তবে কার্ডিফের ঐ একটা মাত্র ডানা-ভাঙা কালো কবুতর!
শ্মশান ঘাটে, ঠাকুর মা’র কাছে যাই
জেনে যাই— কষ্ট এক মৃত মুনিরা চৌধুরীর গোপন নাম।
[মুনিরাকথা-২, নয় দরজার বাতাস]
আজ মনে পড়ছে— আমি মরে গিয়েছিলাম প্রায় এক শত বছর আগে
এই মর পৃথিবীতে আরো দু’বার আমার মৃত্যু হয়েছিল
প্রতিটি মৃত্যুর আগে আমি একটা করে আয়না বানিয়ে রেখে গেছি
[ঠাকুরমা’র আকাশ ও বৃষ্টির মুখ, মেহেকানন্দা কাব্য]
জীবনের অনুপস্থিতি অথবা জীবনের বিপরীতে মৃত্যুছায়ায় উৎকীর্ণ এসব পঙক্তি আমাদের ভাবতে প্ররোচিত করে যে মৃত্যুচেতনা মুনিরার ভেতর স্বতঃস্ফূর্তভাবে উৎসারিত যার পিছনে প্রাথমিকভাবে দৃশ্যমান নয় কোনো পারিবারিক, সামাজিক, দৈশিক, বৈশ্বিক অথবা কোনো ঐতিহাসিক ক্রান্তিদশা; বরং তার মনোজাগতিক কাঠামোর মধ্যেই মৃত্যুর উপস্থিতি প্রবল। কবি জীবনানন্দ দাশের ভিতর যে পরাক্রান্ত মৃত্যুচেতনা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, তার উৎস প্রধানত আধুনিক সভ্যতার অবক্ষয়জনিত নৈরাশ্য, ক্লান্তি, নি:সঙ্গতা ও বিচ্ছিন্নতার বোধ, তাঁর ‘বিপন্ন বিস্ময়’কে মানবসভ্যতার ঐতিহাসিক পটভূমিতে বিশ্লেষণ করা যায়। তাঁর মৃত্যুচেতনা শুধুই ব্যক্তিক নয়, সেটা বিশেষ কালপর্বে সামষ্টিক মানবের, যার থেকে উত্তরণ খুঁজতে তিনি নিসর্গ, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সমাজ ও রাজনৈতিক চিন্তাদর্শনের বিচিত্রপথ অনুসন্ধান করেছেন নিবিড় কাব্যমগ্নতায়। মুনিরার মৃত্যুচেতনা একান্তভাবে ব্যক্তিক, যদিও সেটা ব্যক্তিসীমানা অতিক্রম করে কখনো কখনো আধ্যাত্মিকতার পথে উন্মুখ। সে আলোচনায় এখনই নয়, একটু পরে যাব।
মুনিরার অন্তর্গত মৃত্যুচেতনা যখন সক্রিয় হয়ে ওঠে, সাদা কাগজে চিত্রিত হয় আত্মহননকৃত রক্তের অমোচনীয় দাগ, তেমন কিছু কবিতার পঙক্তি পাঠ করা যাক :
আমি জেগে থাকি
কাটা-হাতখান অন্য-হাতে নিয়ে সারারাত জাগি
অনন্ত ভোরের দিকে হাতের গহীনে জ্বলে ওঠে হাতের চিতা
[মুনিরাকথা-১, নয় দরজার বাতাস]
নিশ্বাসগুলো আকাশে উড়িয়ে দিই …
দূরতম উড়িয়ে দিয়েছি ছায়া ও বাতাসের কঙ্কাল
একদিন তারা পাখি হবে, মেহেকানন্দা নদীতীরে …
রৌদ্রোজ্জ্বল এই দিনে
আপন ছায়া কেটে দিচ্ছি
প্রতিঅঙ্গে মেখে নিচ্ছি ছায়ার রক্ত।
[মেহেকানন্দা নদীতীরে-২, মেহকানন্দা কাব্য]
কে যেন আমার কণ্ঠস্বর থেকে
নিদ্রাতুর কিছু শব্দ লুণ্ঠন করে নিয়ে যায় নিধুয়া পাথারে
অতঃপর কাচের করাত দিয়ে শব্দগুলো কুচি কুচি করে ভাসিয়ে দেয়
আড়িয়াল খাঁ’র বুকে
ভাসে গলাকাটা নদী
ভাসে নদী
ভাসে গলাকাটা নক্ষত্র
শকুনের ডানায় চিৎকার ভাসে জল ও স্থলভূমে…
মৃত্যুর গন্ধ চৌদিকে
দূরে যাই
দূরে যাই
পৃথিবীর কোনো এক রান্নাঘরে আলু-পটল কাটতে ভুলে যাই
আমি আমাকে কেটে ফেলতে ভুল করি না
ওহ পাখি, পরমাত্মা …
[নয় দরজার নদী-৫, মেহেকানন্দা কাব্য]
কল্পনায় আত্মহননের বিবিধ উপায় অবলম্বন করেন মুনিরা : কখনো বিষ পান করে, কখনো দেহ থেকে হাত বিচ্ছিন্ন করে, রান্নাঘরের ছুরিতে নিজেকে বিভক্ত করে এবং নদীতে সলিল সমাধিস্থ হয়ে। যেসব দৃশ্য ও চিত্রকল্প তিনি সৃষ্টি করেন তা রীতিমত শ্বাসরুদ্ধকর, থ্রিলার সিনেমার ভয় উদ্রেককারী দৃশ্য পরম্পরার মতো স্নায়ু বিপর্যয়কারী। বেশিক্ষণ তার কবিতা পড়া যায় না, বিষাদ ও যন্ত্রণাগ্রস্থ হয়ে পড়তে হয়; কিন্তু প্রতিটি পঙক্তিতে একজন বিশুদ্ধ কবির নিশ্বাস, নিজস্বতা ও কাব্যশক্তি তাড়িত করতে থাকে পরবর্তী কবিতাপাঠে। যে অর্থে জীবনানন্দ বর্ণিত সেই ‘বিপন্ন বিস্ময়'(অর্থ নয়, কীর্তি নয়, স্বচ্ছলতা নয়— /আরো এক বিপন্ন বিস্ময়/ আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে খেলা করে;/ আমাদের ক্লান্ত করে;)একজন সম্পন্ন মানুষকে দড়ি হাতে আত্মহত্যায় উদ্বুদ্ধ করেছিল, তেমন কোনো ‘বিপন্ন বিস্ময়’ মুনিরার কাব্যমর্মে দেখি না, শুধু এক নি:সংশয় মৃত্যু-উন্মাদনা দেখতে পাই যা আমাদের অন্তরকে বিষাদগ্রস্থ করে তোলে। অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথের কবিতায় যে মৃত্যুচেতনা, সেটাও দৃশ্যমান নয় মুনিরায়— যেখানে আত্মহত্যা এবং মৃত্যুযন্ত্রণা অনুপস্থিত; বরং মৃত্যু জীবনেরই আরেক আনন্দময় উদযাপন, যেখানে ‘মরণ বলে আমি তোমার জীবনতরী বাই’, যেখানে মানবসত্তা পরমসত্তার সাথে মিলনে ব্যাকুল, ‘মরণ রে তুঁহু মম শ্যাম সমান’। আশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে, মুনিরা অবস্থান করেন রবীন্দ্রনাথ এবং জীবনানন্দের বিপরীতধর্মী মৃত্যুচেতনার মধ্যবর্তী কোনো এক বিন্দুতে যেখানে আত্মহননের উন্মাদনার ভেতরে রয়ে গেছে প্রেম ও আধ্যাত্মিক যাত্রার রূপকল্প :
হায় শ্যাম,
নাম ধরে ডাকো মেঘমন্দ্র স্বরে নাম ধরে ডাকো
আমি যে ভাঙা প্রদীপ জ্বালিয়ে তোমার ডাকের অপেক্ষা করছি
আত্মহারা আমি–বেঁচে থাকবো না কি মরে যাব
কে ডাকছে আমায়! তুমি না স্বয়ং ঈশ্বর!
[হেমন্তে রচিত হেমলক-১০, নয় দরজার বাতাস]
তোমায় খুঁজে খুঁজে দু’চোখের পাথর প্রজাপতি হয়ে উড়ে গেছে
অতঃপর পুড়ে গেছে ডানা …
[…]
কোথাও তো আনন্দ নেই
তোমার চোখের কুঠরিতে অন্ধ হওয়ার অধিক! হায়! জন্মান্ধ রাধিকা!
[হেমন্তে রচিত হেমলক-১২, নয় দরজার বাতাস]
জন্মান্ধ রাধিকা, মুনিরা প্রতীক্ষা করেন শ্যামের ডাক শোনার অপেক্ষায় :
এই নবমীর রাতে
কোথা থেকে যেনো ভাঙা ভাঙা কীর্তনের সুর ভেসে আসছে
শ্যাম, তুমি কি আমায় ডাকছো নিমাই সন্ন্যাসীর গ্রাম থেকে …
ঘরের জানালায় দেখো অভিমানী কুয়াশা রাত জেগে আছে
[মেহেক ও মেহেকানন্দা-৯, নয় দরজার বাতাস]
রাধা-কৃষ্ণের যুগল বিগ্রহের মধ্যে পুরুষ-প্রকৃতির অনন্ত প্রেমলীলার সন্ধান করেছিলেন শ্রী চৈতন্যদেব যার মানবতাবাদী বৈষ্ণবধর্ম জাত-পাত-ধর্ম-বৰ্ণ নির্বিশেষে মানুষকে দিয়েছিল মানবিক ও আধ্যাত্মিক মুক্তির নিশানা, বাংলার সেই নিমাই সন্ন্যাসীর গ্রামে যান মুনিরা। কিন্তু চাতকিনীর মতো যে তৃষ্ণা কবিকে করেছে চির বিরহিনী, তার সন্ধান পেতে তিনি সারাদিন কবরে শুয়ে থাকেন, সারারাত চিতার আগুনে ছাইয়ের কীর্তন হয়ে ওড়েন, পুজো ও আরাধনা করেন, কিন্তু আক্ষেপ, “তবু ঈশ্বর/ তোমার নামের সাথে জোড়া লাগল না/ আমার আর আমার রক্তকরবীর হাত-পা,/ শিশিরের শরীর …”, অতঃপর অমৃতের সন্ধানে তিনি বিষ পান করেন।
হায়!
বৃষ্টির জলে তৃষ্ণা মেটে না, সমুদ্রের নোনা জলেও না
দ্বিপদী ঘোড়ায় চড়ে আরো দূর যেতে যেতে
নিমাই সন্ন্যাসীর গ্রামে যাই
মন্দিরের চূড়ায় অন্ধকার ঘন হয়ে এলে বিষ পান করি
চাতকিনীর মতো আমিও তৃষ্ণা নিবারণ করি।
[হেমন্তে রচিত হেমলক-১০, নয় দরজার বাতাস]
মুনিরা কি আত্মবিধ্বংসী নাকি আত্মপ্রেমী? নাকি এর দ্বৈরথে চালিত তার কবি ও নারীসত্তার প্রবল উপস্থিতি। দেখবার বিষয় হ’ল যে তিনি একইসঙ্গে ‘সিগনিফায়ার’ ও ‘সিগনিফায়েড’–তিনি সিগনিফায়ার যখন কবির চোখে দেখছেন ও চিহ্নিত করছেন নিজের নারীসত্তাকে বিভিন্ন রূপ, গন্ধ, শব্দ, সুর, দশা, সত্তা, পরিসর অর্থাৎ সিগনিফায়েড হিসাবে, যেমন : মুনিরাহেনা, মুনিরা কথা, মুনিরায়ানা, মুনিরামায়া, মুনিরামর্ম, মুনিরা ঘুম, মুনিরাআগুন, মুনিরাজননী, মুনিরাশহর, মুনিরানগরী।
‘তুমি কি একবারও শুঁকে যাবে না হাস্নাহেনা অথবা মুনিরাহেনার গন্ধ'(রূপ,গন্ধ)
‘হাতখানি যে রক্তে ডুবে আছে …/ কী করে লিখি কথা ও মুনিরাকথা'(শব্দ)
‘মুনিরায়ানা কীর্তনীয়া সুরে/ মৃত্যু ও প্রেম একাকী দাঁড়িয়ে রয়/ পৃথিবীর অনন্ত ভোরে'(সুর)
‘মৃত সব মুনিরামায়া আমার অগ্নিমায়া'(দশা),
‘এইসব মুনিরা ঘুমের ঘোরে কোথাও কোনো জানালা নেই'(দশা)
‘আর হাড়ের অন্ধকারের বীজকথা মুনিরামর্মে'(দশা)
‘ভাঙা ফাগুন জোড়া লেগে গেলে/ তৈরী হয়ে যেতে পারে মুনিরা আগুন'(দশা)
‘জন্মজননী আমি, মুনিরাজননী আমি মথুরা বৃন্দাবনে'(সত্তা)
‘মুনিরাশহরের নামে আজ এই পবিত্র দিনে মুছে ফেলো সব অভিশাপ'(পরিসর)
‘হা কন্যাকুমারী তুমি, এই আগুনের দেশে একদিন/ মুনিরানগরী হয়ো'(পরিসর)
নিজেকে দেখার ও অনুভব করার এই ‘নার্সিসাস’ মনঃস্তত্ব তার অপরূপ সৌন্দর্য, স্নিগ্ধ-প্রত্যয়ী উপস্থিতি এবং মেধাবী বিকিরণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ; তাই তিনি যথার্থই উপস্থিত হন ‘আয়নাকুমারী’ নদীর কিনারে :
কোনো এক আয়নাকুমারী নদীর কিনারে
আয়নার ভিতর সাঁতার কাটি, ঘুমিয়ে পড়ি …
দিনশেষে
আয়নায় বন্দি করে রাখি হযরত আদমের কবর, বিবি হাওয়ার শ্মশান।
[মুনিরাকথা-১৪, নয় দরজার বাতাস]
মুনিরা শুধু সত্তার বিভিন্ন রূপ দর্শনে ক্ষান্ত হন না, তাকে যথার্থভাবে প্রতিফলিত করার জন্য সৃষ্টি করেন নিজস্ব স্পেস, কল্প-ভুবন : মেহেকানন্দা নদী, মেহেকসমুদ্র, মেহেকানন্দা ডাকঘর।
‘এইবার চলো মেহেকানন্দার তীরে যাই, নিমাই সন্ন্যাসীর গ্রামে’
‘টেনে হিঁচড়ে জীবনের কাছে নিয়ে যাচ্ছি এক মেহেকানন্দা নদী’
‘অসীম আসমানে উড়ে যাচ্ছে মেহেকানন্দা নদী’
‘একদিন তারা পাখি হবে, মেহেকানন্দা নদীতীরে …’
‘চাঁদ-সূর্যের গলা একত্র করেছি/ ডুবিয়ে দিয়েছি মেহেকসমুদ্রে’
‘আমায় সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে মেহেকসমুদ্রে জনম জনমের মতো …’
‘তেজপাতার জাহাজে করে মেহেকসমুদ্রে ভাসছি …’
‘বিবিধ ডাকঘর ঘুরে শেষ পর্যন্ত ফেরত যেতে হয় নিজস্ব মেহেকানন্দা ডাকঘরে’
এই ‘মেহেক’ শব্দের উৎস কী আমরা জানি না। তবে চার পর্বে বিন্যস্ত মুনিরার কাব্যগ্রন্থ ‘নয় দরজার বাতাস’-এর তৃতীয় পর্বের নাম করেছেন ‘মেহেক ও মেহেকানন্দা’— এই ‘মেহেক’ ও ‘মেহেকানন্দা’ তিনি স্বয়ং, তার অন্য নাম ও সত্তার চিহ্নায়ন। ‘মেহেক’ শব্দের সাথে নদী, সমুদ্র, ডাকঘর যোগ করে সৃষ্টি করেছেন নিজস্ব শব্দ চিহ্নিত কল্পভুবন, নিজস্ব বিচরণক্ষেত্র। বাস্তব পৃথিবীর যেসব কল্পভুবন/বিচরণক্ষেত্র মুনিরার কবিমানসে উপস্থিত : যমুনা নদী, মথুরা বৃন্দাবন, কার্ডিফ, সিন্ধুপথ, হিন্দুকুশ ও হরপ্পার পাশাপাশি মেহেকানন্দা নদী, মেহেকসমুদ্র, মেহেকানন্দা ডাকঘর প্রতিষ্ঠিত হয়; নিজস্ব অনুভব ও কল্পিত জগতের নামকরণ পাঠকচৈতন্যে অমোচনীয় সিলমোহর মেরে দেয়। এভাবেই আত্মবিম্বে প্রতিবিম্বিত হন কবি মুনিরা চৌধুরী, এখানেই কবি হিসেবে তার শক্তি ও মৌলিকত্ব। স্মর্তব্য তার কবিতায় ব্যবহৃত শব্দ ‘মেহেকধুয়া’, ‘মেহেক বৃক্ষ’, ‘মেহেকের সুখ’ তার অন্যান্য সত্তা-তাত্ত্বিক চিহ্নায়ন।
লেখার শুরুতেই বলেছি যে মুনিরা চৌধুরী তার কবিতার সত্য আর জীবনের সত্যে কোনো ফারাক রাখেন নি, জীবনের অন্তিম দৃশ্যে যে আত্মহনন সেটা কবিতায় আগেই উদযাপন করেছেন। যে শহরে বাস করতেন মুনিরা, সেখানেই বাস করতেন আরেক তীব্র সংবেদী ও প্রতিভাবান কবি। জনশ্রুতি আছে, তিনি প্রণয় সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছিলেন সেই কবির সাথে ও প্রার্থিত শ্যামের রূপকল্প খুঁজেছিলেন তার ভিতর। জন্মান্ধ রাধিকার আকুল প্রেমতৃষ্ণা ও পরমের সাথে মিলিত হবার আকাঙ্ক্ষা, শুধু ভাবকল্পের দিক থেকে নয়, নশ্বর দেহমনের সংরাগে বাস্তবিক উদযাপন করতে চেয়েছেন যার চিহ্ন পড়ে আছে তার কবিতায়: “সিঁদুর পরিয়ে দাও শ্যাম সিঁদুর পরিয়ে দাও/ বললো সে— কোনোদিন তুমি সংসারসঙ্গিনী হয়ো না/ হয়ো সিঁদুরের অধিক সাধন সঙ্গিনী।” [মেহেক ও মেহেকানন্দা-১৪, নয় দরজার বাতাস] পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের বাইরে এসে যেখানে চিরন্তন পুরুষ ও প্রকৃতি মেশে সৃষ্টিলীলার পরমসম্ভোগে, সেখানে এসে দাঁড়িয়েছিলেন তারা বাংলার বৈষ্ণব ও বাউলদের মতো। কিন্তু জীবন ছিল না তাদের অনুকূলে, কবিপুরুষ আক্রান্ত হলেন দুরারোগ্য ব্যাধিতে, চিকিৎসকরা জানিয়ে দিলেন তার মৃত্যুক্ষণ; মানসিকভাবে ভেঙে পড়লেন কবি ও সাধনসঙ্গিনী। জানা যায়, মৃত্যু এসে একজনকে ছিনিয়ে নেবার আগেই, অনন্তলীলায় সঙ্গী হতে তারা একসাথে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যার মুদ্রিত এপিটাফ :
হায় শ্যাম!!
তুমি কি জানো— ভালোবেসে গোলাপ চাই না আমি
শুধু তোমায় খুন করতে চাই, সবগুলো নিশ্বাস নিতে চাই …
কেন যে বার বার মৃত্যুর কথা বলো?
হঠাৎ মরে গিয়ে আমায় দু:খ দিয়ো না …
ঈশ্বর দু:খ পাবেন
হঠাৎ মরে গিয়ে আমায় দু:খ দিয়ো না …
আমরা তো একসঙ্গেই মারা যাবো।
[মেহেক ও মেহেকানন্দা-১৫, নয় দরজার বাতাস]
যেদিন কবিপুরুষ মারা গেলেন, সেই সংবাদ পাওয়া মাত্রই ডুকরে কেঁদে ওঠেন মুনিরা, উন্মাদিনীর মতো নিজের গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যান, ঘন কুয়াশায় মোড়া কার্ডিফের কনকনে হিম শীতের রাতে— এই প্রথম তার কল্প-ভুবন ও বাস্তব পৃথিবী একসাথে মিশে যেতে থাকে, তিনি এগিয়ে চলেন তার স্বকল্পিত মেহেকসমুদ্রের দিকে, ব্যারী আইল্যাণ্ডের হুইটমোর সমুদ্র সৈকতে যেখানে মেহেকানন্দার জল ছলছল আছড়ে পড়ে বালিয়াড়ি জুড়ে, তার দু’চোখ ঝাপসা হয়ে আসে, দু’চোখে জন্ম নেয় অজস্র রক্তের ডালপালা, তিনি অস্ফুট মিনতি জানান ঈশ্বরের কাছে কুয়াশাভোরে তার রক্তডুমুরের ডালগুলো কেটে দিতে— অনন্তর তিনি সাঁতার কাটেন, সাঁতার কাটতে থাকেন নয়’শ বছরের পুরোনো সমুদ্রে একা …
অতঃপর স্নান করতে সমুদ্রে যাই
দেখি, সমুদ্র ডুবে আছে আমার ভেতর
ওহে রক্তকরবী, সমুদ্র ডুবে আছে তোমার ভেতরও।
[নয় দরজার বাতাস-৯, নয় দরজার বাতাস]
আমাদের গল্প শেষ হয় বটে, তবে নটে গাছটি মুড়োয় না। একজন কবি তার দৈহিক মৃত্যুতে নি:শেষিত হন না, বরং তার অনুপস্থিতি কবিতার নৈর্ব্যক্তিক পাঠে উদ্বুদ্ধ করে। মুনিরার কাব্যবোধ ও মৃত্যুচেতনা সমার্থবোধক হওয়ায়, পাঠক ও আলোচকরা তার আত্মহত্যার কারণ ভবিষ্যতেও অনুসন্ধান করবেন। আমার উপলব্ধি এই যে প্রেম ও আধ্যাত্মিকতার সম্পর্ক যেভাবে বাংলা ও উপমহাদেশীয় সংস্কৃতির মর্মে রয়েছে, সেখানে পৌঁছাবার একটি মাধ্যম সমাধি বা দেহান্তর–মুনিরা জন্মসূত্রে ও বেড়ে ওঠার অধিকাংশ সময় যুক্তরাজ্যে কাটালেও, বাংলাভাষা এবং সংস্কৃতির সাথে নিবিড় পরিচয় স্থাপনের জন্য বাংলাদেশে অনেক বছর বাস করেছেন, অধ্যয়ন করেছেন। মেধাবী ও সৃষ্টিশীল মুনিরা বাংলা তথা উপমহাদেশের আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক শেকড় গভীরভাবে অনুভব ও মর্মে ধারণ করতে পেরেছিলেন যা তার কবিতার ছত্রে ছত্রে বিধৃত হয়ে আছে। তার মনোজগতে নেগেটিভ ফটোফিল্মের মতো স্বতোৎসারিত মৃত্যুচেতনার সাথে যুক্ত হয়েছিল প্রাচ্যের অধ্যাত্মবাদী মৃত্যুচেতনা ও প্রেমাস্পদের বিয়োগব্যথা যা মুনিরাকে নির্দ্বিধ আত্মহননে প্ররোচিত করে।
দুই
‘শ্যাম’ পরিবৃত মুনিরার আত্মজৈবনিক কাব্যজগতে আরো তিন স্বজনের অস্তিত্ব অনুরণিত হতে দেখা যায় : বাবা, ঠাকুরমা ও ঠাকুরদা। পিতার অস্তিত্ববাচকতায় কন্যার অন্তরে যে চিরকালীন নির্ভরশীলতার স্থান, মুনিরার কবিতায় তার অনুভব মূর্ত হতে দেখি, কিন্তু সেটা তার সংশয়গ্রস্থ সত্তার উত্তরণে নিশ্চিত ভূমিকা রাখতে পারে এমন মনে হয় না। বাবার চশমায় তিনি দেখতে পান কয়েকটা কুয়াশার পাখি আটকা পড়ে থাকতে, বাবাকে অনুনয় করেন চশমা খুলে ফেলে ডানাহীন পাখিগুলোকে মুক্ত করে দিতে। কবিতায় ব্যবহৃত ডানাহীন পাখির প্রতীকে মুনিরা নিজেকেই দেখেন উড্ডয়ন ক্ষমতা রহিত, চলৎশক্তিহীন মানুষ হিসেবে।
ছোট ছোট বাবুই পাখিরা মুখে দানা নিয়ে
উড়তে উড়তে বার বার দানাগুলো ফেলে দেয়
কেউ কি আমায় এরকম ফেলে দিয়েছে বাবা
আমি পা-ভাঙা মানুষ, দৌড়াতে নেমেছি …
[হেমন্তে রচিত হেমলক-৬, নয় দরজার বাতাস]
তার সংশয় দূর করতে বাবা বলেন,”এইবার চলো মেহেকানন্দার তীরে যাই,/ নিমাই সন্ন্যাসীর গ্রামে/ আমি পাখির শরীরে কুয়াশার ডানা জুড়ে দিয়েছি।” মুনিরার কবিতায় বহু ব্যবহৃত আরেকটি প্রতীক কুয়াশা, তার পক্ষাঘাতগ্রস্থ পাখার বিকল্প উড়াল-অঙ্গ। শৈশবের কথা স্মরণ করেন তিনি, “হাত ধরে ধরে হাঁটতে শিখিয়ে বাবা বলেছিলো/–সাবধানে চলো, সামনেই আছে লেলিহান নদী।/ পাড়ি দিতে হবে।/কিছুতেই পেরুতে পারিনি আমি।/পা ভেঙে পড়ে আছে শৈশবের ঘোড়া।”[নয় দরজার বাতাস-৪, নয় দরজার বাতাস] বাস্তব জীবনে যে আত্মবিশ্বাসী নারী ঘোড়ার লাগামে হাত রেখে ছুটে চলেন বাতাসের সাথে বাজি রেখে, অন্তর্জগতে তিনি যে এতো ভঙ্গুর, নিজেকে পা-ভাঙা ঘোড়ার সাথে তুলনা করেন— সে এক বিস্ময়! অস্তিত্বের সংশয়বোধের সাথে মুনিরার মৃত্যুচেতনার সংযোগ সহজেই অনুমেয়। শৈশবের স্মৃতিভাণ্ডার থেকে ঠাকুরমার প্রসঙ্গে তিনি পঙক্তি চয়ন করেন, “কোনো এক অচেনা স্টেশনে শাদা-কালো ঠাকুরমা বলেছিলো/– জগতের আনন্দধারাকে জীবন দিবি,/ জীবনের কাছ থেকে কখনো আনন্দ নিবি না …” [হেমন্তে রচিত হেমলক-৭, নয় দরজার বাতাস] জীবনের কাছ থেকে আনন্দ না নেবার কী আছে? একি নিতান্তই কবিতার হেঁয়ালি নাকি বেড়ে ওঠার কালে পারিবারিক বিধি-নিষেধের ফলে সৃষ্ট মনস্তাত্ত্বিক বিভ্রম তা আমাদের বোঝার উপায় নেই। তবে ঠাকুরমা ফিরে ফিরে আসেন কবিতায় নির্ভরতার পরম সঙ্গী হিসেবে, ভরা পূর্ণিমার রাতে শ্মশানঘাটে অথবা কোনো এক কৃষ্ণরাতে যখন তার তীব্র নেতিধর্মী উপলব্ধি ঘটে, “কণ্ঠ/একজন মৃত মুনিরা চৌধুরীর গোপন নাম!” সবচেয়ে ব্যঞ্জনাময় হয়ে ওঠে ঘুমের ভিতর স্বপ্নযাত্রা, যখন মৃত ঠাকুরমা আর মহাশূন্যের এক পিঙ্কি বিড়ালকে নৌকায় নিয়ে কবি উঁচু উঁচু বিশাল ঢেউয়ের মধ্য দিয়ে নৌকা ভাসান, অবচেতনে আছড়ে পড়ে ভাবনার সমুদ্র, কালজ্ঞান লুপ্ত হয় তার— অতীত ও বর্তমানের ভেদরেখা মুছে নির্জ্ঞানস্তরে প্রবেশ ঘটে সত্তার, অর্জিত হয় অসামান্য কবিতার পঙক্তি :
এরপর কি হলো?
না, এর আগে কী হয়েছিল?
অবশ্য আগে— পরে বলে কিছু নেই
যাত্রা সবসময়ই বর্তমানের
নৌকা, মৃত ঠাকুরমা আর পিঙ্কি সবকিছুই বর্তমান
সবকিছুই স্থিরীকৃত
স্থির আবার চলমান
ঘুমের বিপুল ননীর মধ্যে সবকিছু দোলে …
[ঈশ্বরের ডায়েরী, মেহেকানন্দ কাব্য]
স্বপ্নাক্রান্ত জলের তলদেশ থেকে একরাশ ঝিনুক নিয়ে তিনি ভেসে ওঠেন এবং একটা একটা করে ঝিনুক খুলতে থাকেন স্বপ্নের মুক্তো পাবার আশায়। এবং কী পান তিনি? আমরা চমকে উঠি যখন তিনি জানান, “ঝিনুকগুলো খুলতে খুলতে নখ ভেঙে যায়/ আর আঙুল থেকে বেরিয়ে আসে গলিত সিঁদুর …”, আমরাও বেদনার্ত হই একথা ভেবে যে মুনিরা তার নেতিধর্মী মনোজগৎ থেকে কোনোভাবেই নিস্তার পান না এবং তার স্বপ্নের মুক্তো অধরাই থাকে। এই কবিতায় তিনি তার দাদা ঠাকুরের স্মৃতিও উল্লেখ করেন যার পিতলের বাঁশি থেকে করুণ কান্না ও কীর্তনের সুর বের হতো–যে কীর্তনীয়া গ্রামে কবি নিজেই ছিলেন কান্না শিকারী। দাদা ঠাকুর ও ঠাকুরমা তার আরো কিছু কবিতায় উপস্থিত হন, তবে এ বিষয়ে আরো বিস্তার এই লেখায় আবশ্যক নয়।
তিন
মুনিরার কবিতা পড়তে পড়তে প্রশ্ন জেগেছে মনে, তার আত্মজৈবনিক বৃত্তের বাইরে যে বিশাল দ্বন্দ্বমুখর বহির্জগৎ রয়েছে, তার উত্তাপ ও যন্ত্রণা কী তিনি কবিতায় ধারণ করেছিলেন? উত্তর হ্যাঁ-বাচক, সেটা স্ফুলিঙ্গের মতো বিচ্ছুরিত, কিন্তু আগুন হয়ে ওঠার অবকাশ পায়নি। বিচ্ছুরণ যতটুকু দেখেছি তা খাঁটি, মানবিক চেতনার কষ্টিপাথরে ঘষে পাওয়া ভীষণ উজ্জ্বল ও তেজস্ক্রিয়। মুনিরার অবলোকনে আদি মাতৃভূমি বাংলাদেশের ক্রান্তিদশা রক্তের বীভৎসতায় উচ্চকিত যা হতে পারে দেশের জন্মলগ্নে যুদ্ধকালীন বাস্তবতা অথবা সমকালের বিপর্যস্ত মানবতার রঙ, “মাঝে মাঝে গলা-কাটা সূর্য ওঠে বাংলাদেশে/ চুইয়ে চুইয়ে রক্ত ঝরে …/ ভিজে যায় গর্ভবতী মা ও শিশুর হাড়সহ ৫৬ হাজার বর্গমাইল।”[পালকগুচ্ছ, মেহেকানন্দা কাব্য] বাঙালি জাতিসত্তার উদ্বোধনে ভাষা আন্দোলন ও ভাষা শহীদদের স্মৃতিচারণ অনন্য মাত্রা পায় তার কবিতায়:
এখন ফেব্রুয়ারি মাস।… আর আমি জানি
এই মাসে বাংলা বর্ণমালাগুলো কাগজের পাতায় বন্দি হয়ে থাকে না।
রক্তবর্ণ পাখি হয়ে দূরতম যায় নক্ষত্রের বনে
রফিক, সালাম, বরকত, জব্বারের সম্মানে।
[মা -ভাষা, মেহেকানন্দ কাব্য]
ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদের উদ্ভব ও দীর্ঘ সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ রাষ্ট্রে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান হবে না এমনটাই ছিল প্রত্যাশিত; কিন্তু বাস্তবে তেমন ঘটেনি। রাজনীতিতে ধর্মের অপব্যবহার ও সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধির বিষফল অচিরেই ফলতে শুরু করে যার প্রভাবে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠির জান-মাল-মানের উপর নির্যাতন নেমে এসেছে বার বার। মুনিরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদী পঙক্তি উৎকীর্ণ করেন নিজস্ব স্বাক্ষর চিহ্নিত অনুপম কাব্যভাষায় :
কৃষ্ণদাগ ঘন হচ্ছে
স্বাধীন বাংলার কপাল খাঁ খাঁ করছে …
আর
আমার ঠাকুরমা’র সিঁদুরের কৌটা হতে
একদা লাল লাল বসন্ত ঋতু বেরিয়ে আসতো
এখন বেরিয়ে আসে পোড়া মানুষের হাড়ের গুড়ো।
আমি বাঙালি এবং মালাউন
শঙ্খধ্বনি ছাড়া আমার রক্তে আগুন ধরে না।
[আমি বাঙালি এবং মালাউন, মেহেকানন্দ কাব্য]
মুনিরা অসাম্প্রদায়িক চেতনার উজ্জ্বল কণ্ঠস্বর। তিনি স্বকালের ধর্মবিভেদ সম্পর্কে সচেতন ও বিভিন্ন ধর্মসম্প্রদায়ের সহিষ্ণু সহাবস্থানে বিশ্বাসী; অধিকন্তু ধর্মনিরপেক্ষ এক মানবধর্মে আস্থাশীল। এমনকি তিনি অতিক্রম করে যান মানবকল্পিত ঈশ্বরের ধারণাকে, তার মৃদু কণ্ঠস্বরে অমিত শক্তির আভাস ফুটে ওঠে — এক ধর্মনিরপেক্ষ ঈশ্বরের সন্ধানে উচ্চারণ করেন আলোকিত পঙক্তিমালা।
জানি
মানুষের বিশেষ কোনো ধর্ম থাকতে নেই তাই
পড়ুক আযান, পাশাপাশি রামমন্ত্র শুনি দূর আকাশে
হিন্দু ও মুসলিমের সঙ্গী নই আমি
মানুষ তুমি কোথায় এ-ভব মেহেকানন্দা নদী তীরে!
[মেহেক ও মেহেকানন্দা-১, নয় দরজার বাতাস]
উড়িয়ে দেই
ঈশ্বরের আরশ ছিদ্র করে উড়িয়ে দেই মেদেনীমণ্ডলে …
সেখানেও ঈশ্বর থাকেন, যিনি আমারই তৈরী
আর তো জানি— নির্লোভ ঈশ্বরের বিশেষ কোনো ধর্ম থাকতে হয় না।
[ঈশ্বররেখা, মেহেকানন্দ কাব্য]
চার
মুনিরা তার সীমিত কালের কাব্যচর্চায় একটি নিজস্ব কাব্যভুবন গড়ে তুলতে পেরেছিলেন, সেই ভুবন আমাদের কাছে স্বস্তিদায়ক হোক না হোক। যে ভাষাশৈলী দিয়ে তিনি তার কাব্যভুবনকে সাজিয়েছিলেন : শব্দচয়ন, মিথের ব্যবহার, প্রতীক ও চিত্রকল্প নির্মাণ— সবকিছুতে তার স্বাতন্ত্র্য আমি লক্ষ করেছি যা তার অকালমৃত্যুতে পূর্ণ রূপ পরিগ্রহ করে উঠতে পারেনি। তিনি কবিতায় প্রচলিত ছন্দকে অনুসরণ করেন নি, কবিতাকে দৃষ্টিগ্রাহ্য করে তোলার জন্য ভাষা নিয়ে কোনো বাড়তি কসরৎ করেন নি, বরং এক স্বতঃস্ফূর্ত ভাষাস্পন্দনের প্ৰহমানতায় নিবিষ্ট ও ধ্যানমগ্ন থেকেছেন। যেকোনো সংবেদী পাঠক আন্তরিকভাবে মুনিরার কবিতা পড়লে তার কাব্যশক্তি, ভাষার জাদু ও বিষন্ন মায়ায় আটকে পড়বেন, এটা নিশ্চিত। তিনি লিখেছেন গভীর বোধ ও অনুভবের উৎস থেকে, সৎ এবং সাহসী থেকেছেন প্রকাশভঙ্গিতে— ধর্মীয়, পারিবারিক ও সামাজিক বিধিনিষেধের কাছে নিজের আত্মাকে বন্দি হতে দেন নি কখনও যা আমাদের কালে বিরল। একজন বিশুদ্ধ কবির অন্তর থেকে উৎসারিত পঙক্তিমালা কখনোই ব্যর্থ হতে পারে না, মুনিরার শক্তি এখানেই।
মুনিরার একটি কবিতার পঙক্তি, “জোনাকীপাতার ঝন ঝন শব্দ শুনে মনে হচ্ছে/ আমার মাটির ঘরের জানালার পাশে যমুনা নদী বইছে/ বইছে …”, [হেমন্তে রচিত হেমলক-৬, নয় দরজার বাতাস]
গাছের পাতায় ভিড় করা জোনাকী জ্বলছে ও নিভছে— এখানে জোনাকী পোকা ও গাছের পাতা দু’টি ভিন্ন অস্তিত্ব; কিন্তু কবির দর্শন ও শ্রবণ ইন্দ্রিয় একত্রে সক্রিয় হয়ে ‘জোনাকী’ ও ‘পাতা’র মিথস্ক্রিয়া ঘটিয়ে নির্মাণ করছে নতুন শব্দ ‘জোনাকীপাতা’। অধিকন্তু বাতাসে পাতার শব্দ তার অনুভবে সৃষ্টি করছে নদী যমুনাকে। এই কবিতায় পরবর্তী পঙক্তিতে লিখছেন, “যমুনার তলপেট থেকে তুলে আনছি পৃথিবীর ভোর/ হে সূর্য, হে রক্তকরবী/ হে অনন্ত দৃশ্যান্তর”— রাতের অবসান কল্পনায়, নদীর দিগন্তে লীন জলরেখা ধরে সূর্য উদয়ের রক্তিম দৃশ্যকে তিনি ধারণ করলেন প্রসববেদনার হৃদয়সংবেদী চিত্রকল্পে। ‘রক্তকরবী’ একটি ফুল, ‘রক্তকরবী’ রবীন্দ্রনাথের কালজয়ী নাটকের বহু অর্থবাচক একটি প্রতীক যার মধ্যে নিহিত পরিবর্তনের বীজ এবং মুনিরা ‘রক্তকরবী’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। তার বিভিন্ন কবিতায় ‘রক্তকরবী’ শব্দের বহু ব্যঞ্জনাময় প্রয়োগ লক্ষ করেছি। ‘রক্তডুমুরের ডালপালা’ তার কবিতায় ব্যবহৃত নিজস্ব স্বাক্ষর চিহ্নিত আরেকটি প্রতীক। ‘ঈশ্বরের ডায়েরী’ কবিতায় তিনি লিখেছেন, “মেহেকানন্দা নদীতীরে কেবলই রোপন করি বৃষ্টির বিচি,/মৃত দাদা-ঠাকুর আর ঠাকুরের গান …”, এখানে ‘বৃষ্টির বিচি’ মুনিরার একটি অভিনব শব্দসৃজন যাকে বলা যেতে পারে কল্পচিত্র। এভাবে মুনিরার কবিতায় অনেক অর্থদ্যোতনাময় শব্দ, প্রতীক ও চিত্রকল্প খুঁজে পাওয়া সম্ভব যা দেখে তার কবিতার ব্র্যান্ড সনাক্ত করা যায়।
পাঁচ
অগ্নিকালো আকাশের নিচে দীর্ঘ দাঁড়াই
আমি আর আমার ছোট বোন আত্মহত্যা
[ছোটবোন আত্মহত্যা, মেহেকানন্দ কাব্য]
কবি সিলভিয়া প্লাথ আত্মহত্যা করেছিলেন গ্যাসের চেম্বারে মাথা ঢুকিয়ে, কবি অ্যান সেক্সটন আত্মহত্যা করেছিলেন গাড়ির ভেতর কার্বন মনো-অক্সাইড গ্যাস ছেড়ে, কবি ভার্জিনিয়া উলফ নিজের ওভারকোটে পাথরের নুড়ি বোঝাই করে ডুবে গিয়েছিলেন খরস্রোতা নদীতে, কবি কারিন বোয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খেয়ে। বিভিন্ন কারণ ছিল তাদের আত্মহত্যার, সম্পর্কজনিত জটিলতা, মানসিক চাপ, অবসাদ, বিষণ্ণতা ইত্যাদি। কবি মুনিরা চৌধুরীর মনস্তত্বে ক্রিয়াশীল মৃত্যুচিন্তাকে বেগবান করেছিল ব্যাধিগ্রস্থ প্রেমিক কবির নিশ্চিত মৃত্যুর কালঘোষণা। দু’জনেই ছিলেন বয়স ও জীবনাভিজ্ঞতায় পরিপক্ক–যদিও শিক্ষা, পেশা, সংসার ও সৃষ্টিশীলতার সব ক্ষেত্রে ঐশ্বর্য ও ব্যক্তিত্বশালিনী হয়েও মুনিরার ছিল একটি বিশুদ্ধ কিশোরী হৃদয় যা কবিপুরুষটি নিশ্চয়ই অনুভব করতে পেরেছিলেন। নিজের আসন্ন মৃত্যুর কথা জেনে, দয়িতাকে মরণের ওপারে অনন্ত প্রেমের সঙ্গী হিসেবে পাবার আকুলতা ত্যাগ করে, তিনি হয়ত মুনিরাকে আত্মহত্যায় নিরুৎসাহিত করে মানসিকভাবে শক্তি জোগাতে পারতেন যাতে মুনিরা তার জীবন ও সৃষ্টিশীলতার পথ পূর্ণ করার সুযোগ পান। মুনিরাও একবার ভেবে দেখতে পারতেন মৃত্যুর বিকল্প সম্ভাবনা জীবনকে বেছে নিতে, যেখানে বাকি জীবন তিনি প্রেমাস্পদের বিয়োগব্যথাকে নিজের কাব্য ও সৃষ্টিশীলতার মধ্য দিয়ে অমর করে রাখার সুযোগ পেতেন। তার সামনে উদাহরণ ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যার তরুণ বয়সে আত্মহত্যা করেছিলেন প্রিয় বৌদি কাদম্বরী দেবী, তাঁর চোখের সামনে একে একে পুত্র-কন্যারা পাড়ি দিয়েছিল চির বিদায়ের পথে; কিন্তু তিনি ভেঙে পড়েন নি–এইসব ব্যথাকে সৃষ্টিকর্মে পূর্ণ রূপ দিয়েছিলেন বলেই আজ আমরা এত কিছু পেয়েছি রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে। এসব আমি বলছি কোনো বিচারবোধ থেকে নয়, বলছি গভীর দু:খবোধ থেকে। কারণ আমরা বাংলা সাহিত্যের দু’জন সৃষ্টিশীল প্রতিভাকে হারিয়েছি একসাথে— একজনের মৃত্যু রোধ করার কোনো উপায় ছিল না চিকিৎসাশাস্ত্রের হাতে; কিন্তু অপরজনের বাঁচার সুযোগ ছিল তার বাকি জীবন ও সৃষ্টিকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেয়ার কথা ভেবে।
তবে আত্মহত্যার জন্য কবি মুনিরা চৌধুরী কোনোভাবেই ধর্ম, পরিবার ও সমাজের চোখে হেয় প্রতিপন্ন হতে পারেন না, তাকে অসম্মান করার অধিকার কারো নেই, তার কবিতা ও স্মৃতিচিহ্নকে মুছে দেয়ার হীন মানসিকতা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। কবিতা, প্রেম ও অধ্যাত্ম-তৃষ্ণার প্রদীপ হাতে যে সাহসী নারী নেমে গেছেন সমুদ্রের অতল জলে— তাকে যেন আমরা সবাই প্রাপ্য সম্মান জানাতে পারি, তাকে ভালোবেসে হৃদয়ে ধারণ করতে পারি, এই হোক আমাদের অঙ্গীকার! কবি মুনিরা চৌধুরী অমর রহে! লোকান্তরিত মুনিরার পঙক্তি দিয়েই তাকে অঞ্জলি দিই:
ঈশ্বর হও
তুমি কবি হও
পৃথিবীর যত গান, এইসব কবিতাবলী
গীত হোক, গীত হোক মৃতের সম্মানে …
[কীর্তন, মুনিরা চৌধুরী]
[শেষ]
তুষার গায়েন
কবি, প্রাবন্ধিক
জন্ম: ভাণ্ডারিয়া(বরিশাল), ৪ জুলাই ১৯৬৭
শিক্ষা ও পেশা: ‘দ্য ওডেসা স্টেট্ একাডেমি অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ও আর্কিটেকচার, ইউক্রেন’ থেকে স্থাপত্যে স্নাতকোত্তর এবং ‘দ্য সিটি কলেজ অব দ্য সিটি ইউনিভার্সিটি, নিউইয়র্ক, ইউএসএ’ থেকে আরবান ডিজাইনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। দেশে এক দশকের অধিক কাল কাজ করেছেন স্থপতি হিসেবে এবং ২০০৬ সালে তিনি কানাডায় অভিবাসী হবার পর টরন্টো শহরে বসবাস করছেন।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ- নীলভবহ্রদ (১৯৯৭), বৃষ্টির অন্তর ত্রাস (২০০৩), দ্বিমেরুযোজন (২০১২) এবং প্রবন্ধের বই- বাংলা কবিতা: অধুনান্তিকতার অভেদ সন্ধান (২০১৯)
কলকাতা থেকে প্রকাশিত Postmodern Bangla Poetry 2003, যৌথভাবে সম্পাদনা করেছেন কবি সমীর রায়চৌধুরী এবং কবি কামরুল হাসানের সাথে।
সময়ের একজন প্রতিভাবান কবি তুষার গায়েনের সমসাময়িক আরেক প্রায় নিভৃতচারী প্রয়াত কবির জীবন ও কাব্যের বিশ্লেষণধর্মী লেখা ‘কবি মুনিরা চৌধুরীঃ আত্মবিম্বে
প্রতিবিম্বিত মুনিরামায়া’ সবটুকু মনোসংযোগে অধ্যয়নের নিষ্ঠায় পড়লাম। বেশ জোরালো
একটি লেখা, যা একইসঙ্গে কবি ও তাঁর কাব্যভূবনকে চিনিয়ে দেয়।
লিখতে গিয়ে কবি তুষার গায়েন আবেগস্পৃষ্ট হয়েছেন। অথচ তিনি প্রয়াত কবি মুনিরাকে চিনতেন না। মুনিরাকে তিনি সন্ধান করেছেন তাঁর কাব্যের অন্তর্গত শক্তির ভিতরে।
তুষার গায়েনের মতোই আমি মুনিরা এবং তাঁর কাব্যভাবনা বা কবিতার সাথে পরিচিত ছিলাম না। তুষার গায়েন তাঁর সম্পর্কে লিখতে গিয়ে আবিস্কার বিস্ময় সম্পর্কে মাঝে মাঝে আমাকে কিছু বলেছিলেন। আজ মিলিয়ে নিলাম মুনিরাকে পাঠ করে।
কবি মুনিরা রান্নাঘরে আলু পটল কাটার মতো করেই নিজেকে কেটে কেটে যন্ত্রণার পথ বেয়ে
সৃষ্টির সোপান তৈরী করে গেছেন। তুষার যথার্থ লিখেছেন মুনিরার কবিতায় ‘মৃত্যু জীবনেরই আরেক আনন্দময় উদযাপন’। তুষারের মুনিরাপাঠের উপলব্ধি আমার কাছে যথার্থ হয়ে ধরা দেয় —- “ মুনিরা কি আত্মবিধ্বংসী নাকি আত্মপ্রেমী ? নাকি এই দ্বৈরথে চালিত তার কবি ও নারীসত্তার প্রবল উপস্থিতি”? পাঠ শেষে প্রশ্নটি পাঠকেরও আত্মজিজ্ঞাসা হয়ে দাঁড়ায়।
কবি মুনিরা চৌধুরীর ‘দশা’ কবিতায় বর্ণিত মুনিরাদের অবস্থান উপলব্ধি দিয়ে শেষ করি—-
“এইসব মুনিরা ঘুমের ঘোরে,
কোথাও কোনো জানালা নেই”
আমার আবেদন— ‘বিশুদ্ধ বাতাসের প্রয়োজনে মুনিরাদের চারিদিকে খোলা জানালা যেন থাকে’!
কবি তুষার গায়েনকে সাধুবাদ এমন ভালোবাসা ও দরদ নিয়ে সতীর্থ কবিকে উপস্থাপন করেছেন।