বৃষ্টিরেখা
বৃষ্টি পড়ছে ভেতর বাহির-
তবু জল জানে না বৃষ্টিরেখা আর কতদূর!
আলমারিতে গুছিয়ে রেখেছি নদী,
তার ঘুম চুরি করে নিদ্রার ভেতর বয়ে চলেছে
প্রিয়তম নাকফুল— ঝাউপাতার প্রলাপ,
আমার না থাকা জুড়ে পড়ে আছি আমিই-
আঙুলে ডুবিয়ে রেখেছি ঈশ্বর
স্রোতের জলে ডুবে গেছে দ্রুতগামী ট্রেনের জংশন
আমাকে খুঁজতে এসে, না পেয়ে ফিরে গেছি
আমি নিজেই।
ঘুমের ওষুধ খেয়ে কোমায় চলে গেছে রাত্রি
ঘুমের ওষুধ খেয়ে কোমায় চলে গেছে রাত্রি, নিদ্রাবীজ-
জোছনার ছায়াপথে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নক্ষত্র,
ভেজা শরীর থেকে ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে সময়-
একটি অদৃশ্য বিন্দুর উপর চিত হয়ে শুয়ে আছে
জীবনের মৃতদেহ, স্বপ্নগ্রন্থি-
আমি মাতাল হয়ে তোমার মুখ দেখি অন্ধকারে, ঘুমপত্রে!
তুমি কেমন করে বুকে জড়িয়ে রাখো গন্ধরাজ-
ওড়নায় গুজে রাখো সমুদ্র! যে ঘর একদিন দুয়ারে
দাঁড়িয়ে ছিল, কোথায় তার প্রণীত পুরুষ?
এই যে, এতটা উষ্ণতা নিয়ে নদীর দিকে হেঁটে যাও,
কার কাছে জমা দেবে খড়ের যৌবন, প্রথম রক্তপাত!
জীবন গিলে খেয়েছে পঞ্জিকার পাতা
সূর্যের সামনে দাঁড়িয়ে মুখ ঢেকে রেখেছে নক্ষত্র-
অন্ধকারে আমি খুঁজছি মুদ্রিত রোদের ঢেউ, ঘোর বৃষ্টি-
ঘুমের মধ্যে জীবন গিলে খেয়েছে পঞ্জিকার পাতা,
উলটে গেছে যাপনের মধ্যরেখা,
এক হাওয়া রাতের কাছে জমা দিয়ে গেছে যাবতীয় সঞ্চয়
সেই থেকে মহল্লার অলিতে গলিতে উড়াল স্বভাব;
বুকের ভেতর সন্তর্পণে বসে আছে এক উড়ন্ত পাখি,
পাখির মনে বাসা বেধেছে নদী-
নদীর চোখে-মুখে বৃক্ষের পতন; মেঘের বল্লম
চুরি করে নিয়ে গেছে পলাতক হরিণ শাবক।
অরণ্য হারিয়ে ফেলেছে লোকালয়, ঘরবাড়ি, স্বদেশ-
উদ্বাস্তু হয়ে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে নাচঘুঙুর।
ক্যালেন্ডারের ব্ল্যাকহোলে বুঁদ হয়ে ডুবে আছে মাতাল জীবন।
মানুষের দেয়াল
মুখোমুখি দৌড়াচ্ছি,
অথচ কেউ কারো কাছে পৌছুতে পারছি না।
তবে কি রাত্রি হরণ করেছে
আমাদের রক্তের বীজ ও ঘাস?
অন্ধকারকে উপহাস করছে উষ্ণতার নীল?
অস্তিত্বের প্রস্তাব মাটিতে শুয়ে নক্ষত্রের আলোয়
ঢেলে দিচ্ছে বিষ?
হৃদয়ের রক্ত জ্বলছে নিদ্রাহীন পিপাসায়-
প্রাণের সংলাপ দেহের তাপে ক্ষয়ে যাচ্ছে,
নিষ্কাম শিশিরের প্রার্থনায়
সারারাত পুজো দিচ্ছে ধ্যানমগ্ন গোলাপ?
আমাদের ভেতরের অগণিত মানুষ
সুই-সুতোয় বুনে যাচ্ছে রোদ্দুরের ঢেউ,
মিতব্যয়ী স্বপ্নের শরীর শুঁকে শুঁকে
সারারাত তসবি গুণছে দীর্ঘশ্বাসের মুখ?
জোনাকির পাখনায় ভর করে তবে কি
একাকী বেড়ে উঠছে মানুষের দেয়াল-
দেয়ালের ওপারে?
আগুন সুখ
খুব কাছাকাছি-
তবু কাছে গেলে দূরের হয়ে যায় লণ্ঠন,
বাতাসের গন্ধে ভেঙ্গে যায় শরীর- দুচালা নক্ষত্র-
আঙ্গুলের ছাপে নিভে যায় সলতের সুখ,
আহ! আগুন! তোমাকে ভালোবেসে
জন্মান্ধ ফসিলেই নিচ্ছি ঠাই।
উইপোকার পাখনায় ভর করে ধেয়ে যাই
হন্তারক শিল্পের স্বচ্ছ শিখায়,
বাতি নিভে গেলে আঁধারেই
ফিরে আসি নির্বাসিত ছায়ার স্নায়ুঘরে;
অনুভূতির দেয়াল ধসে গেছে
সয়ে সয়ে সূর্যের মরা গন্ধ, শীতল ধূপ-
বেওয়ারিশ স্বপ্নের মতো জারজ সম্ভ্রমের বোতাম খুলে
সারারাত জোছনা নাড়ি।
জোছনারও কিছু আগুন আছে জ্বলে উঠবার।
মালেক মুস্তাকিম
এই সময়ের একজন তরুণ কবি। সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলায় জন্ম। গাঁয়ের ধুলোবালি আর কাদাজল মেখেই কেটেছে শৈশব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। পেশায় সরকারী চাকুরে। সাহিত্য সাময়িকী ও ছোট কাগজে নিয়মিত লিখছেন।
প্রকাশিত কবিতার বই: ভুলের ভূগোল, ২০১৩; বিষণ্ণতাবিরোধী চুম্বনগুলি, ২০১৬; তোমার সাথে হাঁটে আমার ছায়া, ২০১৮
[email protected]