যাত্রা
কেন এমন ঝাপসা হয়ে আসে চোখ?
হয়তো চশমার কাঁচে কিছু জমেছে কুয়াশা।
ঠাসবুনটে র্যাকস্যাক ভরা জিনিসপত্র।
অসাবধানে কোথাও কিছু কি পড়ে রইলো?
যাত্রা তো নিশ্চিত ছিল। প্রস্তুতিও।
ক্রস কানেকশন
যখন খুলছিল পাতালপুরীর শেষ দরোজাটাও,
পালিয়ে এসেছি। সব জানতে নেই—
এই কথা জানার পরেও
কোন নিষিদ্ধ গল্পের ভেতরে আচমকা অনিচ্ছুক ঢুকে পড়ি।
কেন যে…
ক্ষয়াটে মুদ্রাগুলো বারবার নেচে ওঠে হাতের তালুতে।
নেচে যাও
নেচে যাও
তামার মুদ্রা
পিতল চাকতি
এভাবেই টুং টাং বেজে ওঠো।
ঘোর স্তব্ধতার হিমাগারে তুচ্ছতর শব্দই বাজনা।
স্বপ্ন বয়ে চলা চোখই তো জলের আধার
এ কথা জানার পরেই
ছবি আঁকতে চেয়েছিল অন্ধ মেয়েটি;
বাতাসের ইজেলে সাদা ক্যানভাস।
ঘুম
ঘুমের মতো এমন নিশ্চিন্ত পালানোর আশ্রয়;
কোথাও নেই।
অথচ
ঘুম এবং আমার মাঝখানে
পিচ্ছিল
কণ্টকময়
একটি দীর্ঘ পথ পড়ে থাকে।
হিপনোসের বেদির সামনে ঘুরে বেড়ায়
স্মৃতির কোলাজ আর বাঁকা ছায়াগুলো।
প্রার্থনার হাত থেমে যায়।
একটি নিটোল ঘুমের বর চেয়েছিলাম।
একবার কড়া নাড়লেই
আছি
এক মায়াবী স্বপ্নের কোলাহলে।
একবার কড়া নাড়লেই
আবার খুলবে দরোজা
বেজে যাবে সুর;
ধ্রুপদী গানগুলো মনে পড়ে যাবে।
সেই বিকেল
সেই গুনগুন
রবীন্দ্রনাথ।
দৃশ্যের ভেতরে ঢুকে পড়বে
গলির সমস্ত হৈ চৈ সহ দুষ্টু বালক- বালিকা,
কর্কশ কাকগুলো ডেকে ডেকে উড়ে যাবে,
দানা খুটে খেতে ঘাসে নামবে শালিকের পাল,
দেওয়ালে জিমন্যাস্টের মতো হাঁটবে
পাশের বাড়ীর বেড়ালটা,
আচমকা ভেসে আসা বেলির সুবাস,
হর্ন বাজানো গাড়ি,
ব্যালকনির রকিং চেয়ার।
তুমুল আলাপচারিতা।
সব।
অবিকল।
একবার কড়া নাড়লেই
আবার ছলকে উঠবে চাঁদনি।
একাকীত্ব
একাকীত্ব দাঁড়িয়ে আছে ধু ধু শূন্যতার ছাইবর্ণ মাঠে।
সুনসান প্রান্তরে বেজে উঠুক কিছুতো শব্দ
তূর্যনাদে আকাশের চোখ খুলে দিয়ে
না হয় একটু কাঁদলো পৃথিবী, মিয়া-কি-মল্লারে ।
মেঘ ঢেকে রাখে তারার আকাশ; নক্ষত্রবিহীন নিঃসঙ্গতা।
অন্ধকার ঢেউয়ের দোলনায়
জেগে থাকে প্রখর অনিদ্র রাত;
ছেঁড়া ছেঁড়া ঘুমের ভেতরে স্বপ্নের লতাপাতা বেড়ে ওঠে
চৌরাশিয়ার বাঁশি কাঁদে
টুপটাপ বকুলের বিরহগান বাজে ;
আর কিছু নয়
শুধু একটি রাত ঘুমোতে চেয়েছি সিডেটিভহীন,
পাপড়িপালকের উষ্ণ আদরে।
চরে শিকস্তির চিহ্ন রেখে নদী কেন সরে সরে যায়?
নাজনীন খলিল
জন্ম ৬ নভেম্বর ১৯৫৭ সালে, বাংলাদেশের সিলেটে।
পড়াশুনা সিলেটেই, সরকারী মহিলা কলেজ এবং মুরারীচাঁদ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ(এমসি কলেজ) থেকে স্নাতক।
লেখালেখির শুরু ৭০ দশকের মাঝামাঝি থেকে। তখন থেকেই রেডিও বাংলাদেশ সিলেটের একজন নিয়মিত কথক, গ্রন্থক এবং উপস্থাপক। সেই সময় থেকেই বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখির পাশাপাশি সম্পাদনারও কাজ শুরু। সাহিত্য-সংস্কৃতি মাসিক ‘ সমীকরণের’ নির্বাহী-সম্পাদক হিসেবে ১৯৮০ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। ২০০১ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত সিলেট থেকে প্রকাশিত দৈনিক জনধারা নামে একটি পত্রিকার প্রকাশক এবং সম্পাদক ছিলেন। লেখালেখির বিষয়বস্তু মূলতঃ কবিতা এবং কথিকা।
প্রকাশিত কবিতার বই:পাথরের সাঁকো; বিষাদের প্রখর বেলুনগুলো; ভুল দরোজা এবং পুরনো অসুখ; একাত্তর দেখবো বলে(ব্রেইল,যৌথ);গুপ্তপধানুকী অথবা মাংসবিক্রেতা।