লেক
সজীব চোখের মত জল ধরে আছো
সম্পন্ন পেয়ালা—
মাটির সিক্ত ছাঁচ, ঘাসপাড়ে নকশার বাহারে বুনট
হে শহর, তুমি কি মুগ্ধ ঠোঁট?
এ পাত্র ধরে আছো চুমুকের তীরে।
যেটুকু বিলম্বক্ষণ কেটে যাবে চুম্বনের আগে
সেসময় আমাদের বৈকালিক হাঁটা লক্ষ করে।
এই জল কাঁপে না কিছুতে
ভয়ার্ত বালকের মত সন্ধ্যা এসে লুকালে আয়তে
দলবদ্ধ বৃক্ষদের পাশাপাশি দাঁড়ায় অন্ধকার
শেষরশ্মি কপোলে ঘঁষে শহুরে কপোতির চেয়েও
অনিন্দ্য হয় সে যখন
তবু লজ্জায়, তস্কর রাত্রির শব্দহীন স্বরে চমকে উঠেও
কাঁপে না এ আয়ুষ্মতী জল!
সান্ধ্যপাড়ে তুমি এসে রেখে গেলে
দু’ফোটা না পাবার জল
সেই জল কাঁপল তখন!
দ্বিতীয়ার প্রস্তুতি
চোখের তরমুজ কাটা যন্ত্রণার ফ্রিজে।
প্রথমার আঘাত গড়ে দ্বিতীয়ার মুখ
কর্ণিয়া ফেটে আসে মনোবেদনার জল
ঝাপ্সা কান্নার তোড়ে ধীরে কি বিস্ময়,
কষ্ট নির্বাপণে নির্মাণ শুরু হয়ে যায়।
কবিকে আঘাত দিলে
বনভূমি কষ্ট পাবে
পাখিরা সাপ্তাহিক সঙ্গীতের আসর
বন্ধ করে দেবে, বৃক্ষেরা ঊর্ধ্বে না তুলে
ভূমিতে নামাবে শাখ, শোকের চিহ্নে
নদী আরো জলময় যোজনা বিস্তারে
যাবে দুঃখসিক্ত পলির উদোম আস্তরণে।
বৈশাখেই বৃষ্টি হয়ে মেঘেরা আবার
আষাঢ় সম্পর্কিত মানুষের ধারণা পাল্টাবে।
তুমি কি প্রস্তুতির পাঁচটি মার্বেল
সফল গড়িয়ে দিলে প্রথমার রুঢ়তায়?
আঁচড়ালে চুল, চোখে এল সন্দীপণ মায়া
পরজন্মে যদি তুমি অপেক্ষায় থাকো
তবে পাবে এ ভূ-ভাগ দ্বিতীয়া তিথি।
প্রথমা পাঠাল আমায় কষ্টময় আয়ুহীন ঘরে।
এখন কোন সিদ্ধান্ত নয়
গীতাঞ্জলীকে
হাওয়ায় রাস্তায় মার্বেলসম গড়িয়ে গেল
দুটো চড়ুই,
গীতবর্ণালীর ঢঙে তুমি ঘেঁষে যাও পাশ
তুমি তখনো বিচ্ছিন্ন সব স্বপ্নের খণ্ডকাঁচ
কিউবিষ্ট চিত্রীর মত হাওয়া জুড়ে দেয়
স্মৃতির এক্কা-দোক্কা।
আমি এখন কিছুই ছোঁব না, পারদের মতো
জ্যোৎস্না কাঁধের বালিশে ঘুমে এলোমেলো;
শস্যের সম্ভাষণ জানে যে কাস্তের ধার
দীপ্তিহীন, পড়ে আছে লুকানো মাটিতে।
ময়ূরপালকনীল এ আকাশ বৃষ্টিভারানত
চিকুর থেকে নেমে যাওয়া বৌদ্রের মত
পালানো দুপুর মন।
এখন আমি কিছুই ছোঁব না, যতবার ইচ্ছে
হেঁটে যাও মেয়ে, যতবার ছোঁড় নিমগ্নে ঢিল
তাকানো অধিক কোন সিদ্ধান্ত হবে না।
তোমার শ্রাবণধারা
চৈত্র ছিল তোমার দু’চোখে
এ কোন দাহন খর, শরতের ছায়াও দেখি না
কোনদিন মেঘ ছিল পল্লবের ছাদ
এখন এ সত্যে জাগে দারুণ বিভ্রম।
রৌদ্র বাহুডোরে জ্বলে উঠছে সুশীতল নদী
আকাশও ভুলেছে তার বরষা-স্বভাব
আতীব্র পুড়ে যায় আদিগন্ত ছায়ার পরিধি।
বুঝিনি
বৈশাখী হাওয়ায় জন্য ছিল আয়োজন,
জানিনি
তোমার দু’চোখে ছিল এমন শ্রাবণ।
আমাকে ছুঁয়েছে প্রেম
অন্তঃপ্রবাহে এক নদীর সলিল
অবিরল সুখভরা শব্দের শ্রুতি
বাজায় নিজস্ব যোজনায়
তাকে সিম্ফনিক তরলতা বলেছি আমি
আমাকে ছুঁয়েছে প্রেম, সঙ্গীত আমারই হবে।
নিসর্গে চাঁদ ঢালে ফোয়ারা সুন্দর
সবুজে দুলছে এক দুরন্ত বাতাস
বনভূমে পাখির কোলাজ
তাকে মনোময় অভিধা দিয়েছি আমি
আমাকে ছুঁয়েছে প্রেম, মনোহর আমারি নির্মাণ।
নিপুণ ব্যঞ্জণা ফোটে প্রকৃতি মুদ্রায়
অন্তর্বাস উন্মোচনে জ্যোৎস্নাময় রাত
একদল পরী যেন নামছে ঘুরে
তাকে অলৌকিক বাস্তব ভ্রমেছি আমি
আমাকে ছুঁয়েছে প্রেম, স্বপ্নেরা আমার দুচোখে।
নির্ঝর সীমান্ত হতে দ্রুতগতি হরিণের পাল
সুন্দরী পাতার ঘ্রাণে প্রবল প্রেমিক
ভয়ঙ্কর হুঙ্কার ঠেলে ঢুকছে ঝোপে
তাকে অসম্ভব আকাঙ্ক্ষা বানিয়েছি আমি
আমাকে ছুঁয়েছে প্রেম, দুঃসাহস আমারি মজ্জায়।
কামরুল হাসান
জন্ম ২২ ডিসেম্বর, ১৯৬১, শরীয়তপুরে। তিনি মূলত কবি। অনুবাদক, প্রাবন্ধিক ও ভ্রমণ গদ্যকার হিসেবেও খ্যাত। আছে নানা দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা।
ভারতের বিশ্বখ্যাত খড়গপুর আইআইটি থেকে এ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে এমবিএ সমাপ্ত করেন। এছাড়াও স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন যুক্তরাজ্যের ব্রাডফোর্ড ও এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কামরুল হাসান শিক্ষকতা করছেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে। কামরুল হাসান দু’হাতে লেখেন। এপর্যন্ত ১৪ টি কাব্যগ্রন্থ, ১ টি ছোটগল্প, ১টি প্রবন্ধ, ৪টি ভ্রমণ গ্রন্থ, ২ টি অনুবাদ কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া সমীর রায় চৌধুরী ও তুষার গায়েনের সাথে পোস্টমর্ডান বাংলা পোয়েট্রি ২০০৩ সম্পাদনা করেছেন।
খুব ভালো লাগলো