নিরুত্তাপে এ জীবন
ফাগুনের মতো দিন,রাত্রির মতো অন্ধকারে ক্ষয়ে যাচ্ছে— অনুশীলন করছে পূর্বাভাষহীন স্বপ্নের! দুমড়েমুচড়ে ভেঙে পড়ছে কাঙ্ক্ষিত আলোরা।
এই অন্ধপরিখা আশ্চর্য আঁধারে খুঁজে যাচ্ছে প্রাপকহীন চিঠির পত্রলিপির নিগূঢ় কৌশল যেন ফুসলে ওঠা সমুদ্র মধ্যরাতে চেয়ে আছে চাঁদের চোখে যে জোছনায় গোপন করছে কষ্টের দলিল যেখানে হত্যার ময়দানে ঝরে পড়ছে সদ্যস্নাত রক্তের মতো গাঢ় দুধের সর।
দীর্ঘশ্বাসের প্রমোদ ভ্রমণে ঠিকরে বেরোচ্ছে রক্তেরস্রোত— অসচেতন ভাবেই আছড়ে পড়ছে স্থির চোখের নিষ্পাপ চাহনি! আঙ্গুলগুলো খুঁজে পাচ্ছে না মজবুত কোন প্রশ্রয় যে বিচ্ছিন্নতার ছটফটানিগুলো ঠেলে দেবে দূর হৃদয়ের বিষণ্নতায় কিংবা শেষ আঁচড়েই এগিয়ে দেবে ভালোবাসাসম পুরো-পৃথিবী।
আমি তো জিজ্ঞেস করিনি— কেন জন্মমাসে আমার জন্য ফোটে না ফুল! কেন হাড়গোড় কঙ্কালের বুকে বিষম বেদনা কাঁদে! কেন একার চিৎকার শুনতে পায় না কোন অন্ধ-হৃদয়!
আয়ুর ভেতর বসে— মানুষ মূলত মৃত্যুর দিনই গোনে।
যে হৃদয়ে টাঙানো থাকে চকচকে চটকদার বিজ্ঞাপন— সে বিলবোর্ডের ছেঁড়া-ফাটা রঙ খসে পড়লে যে অটল দাঁড়িয়ে থাকে,সে ‘আমি’।
আমাকে আঘাত দেয়া সহজ— দাউদাউ আগুনে পুড়েও যে সকল অবহেলা সয়, তাকে ভুলে থাকা সহজ নয়!
এ হৃদয় নয় বারোভাতারির— এ হৃদয় সত্যের যে চির অক্ষয়।
মচমচে রোদে ভালোবাসা ছারখার
আমাকে তো ফিরতেই হয়— নোনাহ্রদের সংসারে যেখানে মৃদু-মায়ায় হতেও হয় লোভী!সর্বনাশের খেলায় যে শেকড় গেঁথেছো লালিমায় তার চকচকে তলে দেখেছি অন্ধকার।
সাজানো পুষ্পডালায় রেখেছিলে বিষফেনা— গোপন করেছিলে তুমুল সঙ্গম, আড়ালে রেখেছিলে ফণার ছোবল আকুল-ব্যাকুলতায়!
হৃদয় কী এতোটাই মূল্যহীন মাতাল-প্রণয়ে?
শীতের মতো রাত অতি-পুরাতন ক্ষতে মাড়াবে ক্রন্দন-বিধুর উষ্ণতা— হৃদয় সহসাই জেনে নেবে, বাগান উজাড় হলে ফুলেদের হাসি মেখে নেয়ে মাটির কান্না।
মৌন, সুরেলা এই নীল ধূসর জোছনা তার চোখে রাখে ঘন-কুয়াশার ঘোর— কার্নিশ বেয়ে মচমচে রোদে নামাবে অবহেলা!শূন্য বুকের উদ্বাস্তু শিবিরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেবে অর্থহীন ভালোবাসা যেন অহেতুক অপচয়ে জীবন খেয়ে নিচ্ছে নিজেরই আয়ু!
ব্যর্থ নিশানায় দাঁড়িয়ে আছে মলিন মুখের মালি— তীর-ধনুকের এবাদতে জ্বলছে শ্মশান, গোরস্তানের নিস্তব্ধতায় গল্পের উৎসমুখে দণ্ডায়মান মৃত্যুর বিস্ময়চিহ্ন!
গোলাপে রেখো না মুগ্ধতা— হৃদয় যদি কাঁদে, ছুঁয়ে দেয় এক ফোঁটা শিশিরের মতো জল হৃদয়ের পরে’,চোখে রাখে চোখ— সেই-তো ভালোবাসা যেন নির্লিপ্ত বিকেলে সমগ্র ‘আমি’ প্রতিটি মুহূর্তে ছুঁড়ে দিই বিষাদের চুম্বন।
এমন করে পুড়ি— যেমন করে সূর্য পোড়ে আলোকিত করে পৃথিবীর পরিধি।
যেখানে জীবন-মৃত্যু হাঁটে পাশাপাশি অথবা যোজন যোজন দূর— অথচ এক মন কাঁদলে পুড়ে যায় অপর অন্তঃপুর!
..
এ এক আশ্চর্য বন্দর যে ফেরারি নয়
এ এক আশ্চর্য বন্দর— দীর্ঘ আরসীর ভেতর লুকিয়ে রাখে দূর অনন্ত নিটোল নীলিমা, ভুলের পাখনা মেলে যে উন্মীলনে ছিটিয়ে গেছে প্রতারকের সংকেত যা নির্দোষ মনে হেসেখেলে পার করছে রাঙা আলোর ভেতর আঁধারের চক্রবাল।
কিছু মানুষ কাকের ওমে শীত কাটিয়ে কোকিলের গান শোনে— ঝরাপাতায় রাখে মিছে মায়াকান্না অথচ গাছসহ পোড়ে!
মানুষের মন কনেহারা রোদের মতো ম্লান সময়ে খুলে বসে হিসেবের খাতা— ভীতু হয়ে মুখোমুখি দাঁড়ায় নিজের চোখে, ঝাপসা ঘোলাটে চোখ যে আহত পাখির মতো ছটফটিয়ে ছিঁড়ে ফেলতে চায় নিজেরই ডানা— পালক ভাসাতে চায় সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আকাশের মেঘে।
হৃদয়-বিনাশী প্রেমে যে ডুবে যায়— সময়ের বিমর্ষ কষাঘাতে সে হৃদয় বেছে নেয় ডুবুরি-জীবন যেন দিন থেকে ফস্কে যাওয়া আয়ুর খোঁজে সকাল ফেরায় তবু আবারও রাত্রি এসে যায়!
অসময় যে থাকে না, সে থাকে না তার সুসময়েও— আলোতে আঁধার জমলে সূর্য হারিয়ে যায়! কিছু মানুষ বোতাম ছেঁড়া সার্টের মতো খোলা বুকের শীর্ণ পাঁজরে গোপন রাখে আসমান।
মুক্তো হারানো ঝিনুকের খোল, সে-ও পান থেকে খসে পড়া চুন— মিথ্যা অভিযোগের তীরে তরী ডোবে,বিবেক প্রতিনিয়ত হচ্ছে খুন।
মানুষ চিনে গেলে নিজেকে মাসুম লাগে!
চোখেরজলেও চোখ হেসে ওঠে— যে জল ডোবায়,সে জলও বাঁচায় প্রাণ!
পালাবার মতো মন নিয়ে হাঁটি না— এ বুকের ঘের পুরো-পৃথিবী সমান।
..
উড়ালপাখির ডানায় হন্তার ঝিলিক
মানুষ বদলে যায়— শুঁয়োপোকার মতো খোলস পাল্টে রঙিন ডানায় দেয় প্রলোভন! এক সময় সে-ও ঝরে নির্জন একাকী মরণে!
মানুষের মুক্তি নেই— নেই অল্পতেই স্বস্তি!চোখ তার বড় শত্রু— চিরকাল রহস্যে ঘিরে রাখে মন! প্রয়োজন ফুরালে খোঁড়া-যুক্তিতে সাজায় ফুলের বাসর।
যে ফুল অবহেলায় ঝরে থাকে পথে, কে নেয় কুড়ায়ে তাকে— কান্না-নদীর গভীরে পড়ে থাকে নুড়ি যেন শুকিয়ে গেলে জল ক্রাশ করে পাথর বানায় ইমারত যেখানে হাসি আর আনন্দে দোল খায় সুখী জীবন!
বিষের দহনে যে শব ভাসলো অবহেলায় সেখানে বেহুলার মতো কেউ নেই! তামাশার পাড়ে উৎসুক চোখে আততায়ীর হন্তার ঝিলিক!
আমি তোমার— এ মিথ্যার পাশে থাকবে না অভিন্ন হৃদয় যে উড়াল পাখির ডানায় রাখে নতুনের খোঁজ! অভাবীর ঘরে থাকে না গর্বিত নারী।
তীব্র বেদনায় হেঁটে যাই নতমুখে যেন মরণের চেয়ে আপন কেউ নাই— কিছু প্রিয়মুখ, কিছু মিঠেরোদ রাঙিয়ে দিচ্ছে তোমার জীবন।
যে ব্যস্ততা তোমাকে দেখায় মরীচিকার পথ— সে পথে দেখবে একদিন হারিয়ে গেছে সব।
..
আলো
কি নাম দেবো তোমাকে জীর্ণ গলুইয়ের উপর কালোয় ঢাকা চাঁদ— সব নাম নিয়েছে লুটে অমানুষের দল! আমি বরং তোমাকে আলো বলে ডাকি।
আলোর শীর্ষে ফুটেছে যে ফুল— সে ফুলের চোখে বেদনা! নাভীমূলে তার শতবছরের অমোঘ যন্ত্রণা!
দুর্বোধ্য অচেনা পাখি সে সযতনে গোপন করে রাখে কাঙ্ক্ষিত মিলনের মহমান্বিত রাত— হৃদয়ের হংসিনী চোখ আড়াল করতে গিয়েও তারই কথা বলে দীর্ঘশ্বাসের দুরুদুরু বুকে।
আজ হৃদয় খোঁড়ার রাতে কেনই বা জেগে থাকা— মানুষের মন, নিজের কাছেই অদেখা!
যাপনের এই শাস্তি কেন মৃত্যুর মতো অসহায়— সোহাগি স্বপ্নে যে দেখেনি পাখিদের অবশিষ্ট গান হেমন্তের মাঠে যেখানে বিজন বিষণ্নতায় শিশির ভিজিয়ে লেপটে গেছে পথের বাঁকে!
আয়নার চাতুর্জে নির্বাকমুখ দেখেনি মায়ার ছোঁয়া— হারিয়ে যে যায় তার কামনায় ঘুমের ভঙ্গিমায় রাত্রিজাগা সিগারেট পুড়ে আনমনে হয়ে যায় ছাই!
তুমি আলো হও— যেভাবে আঁধার সন্ধ্যার চোখে নামে! যেভাবে জ্বলে ওঠে তারা রাতের গভীরে।
পরিচিতি
জন্ম ৩রা ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩। চরলক্ষ্মীপুর, সিঙ্গাইর, মানিকগঞ্জ