ঢেউ ডুবে যায়
ঢেউ ডুবে যায় চোখের ভেতর
বুকের ভেতর তুফান;
সবুজতর বাতাসে কাঁপে
নতুন রোয়া ধান।
জলে ভাসে চোখের তারা
নয়নে অবিশ্বাস
হারিয়ে যায় রোদের পাহাড়
সমূলে সর্বনাশ।
স্বপ্নজাল
কী আসে যায় তোমায় যদি হারিয়ে ফেলি স্বপ্ন জালে,
হারাতে হারাতে নিঃস্ব যদি হতেই পারি
অনাগত দিন বদলের অপেক্ষাতে
কী আসে যায় তাতেই কোনো।
জীবন নামের ব্ল্যাকহোলে আর কটা দিন
বেশি বেঁচে কীইবা এমন ক্ষতি বৃদ্ধি সাধনাতে?
অথৈ জল
ভালোবাসা অথৈ জল
জলের ভেতরে পাল্লা দিয়ে বাতাসের সিম্ফনি;
দুরন্ত সাপের মণিময় হিস হিস ধ্বণিবাণ
পুরোটা শরীর যেন আত্মার তরল,
ঈশ্বরের চোখে আনন্দের-অশ্রুপাত
মনে মনে কী যে ভয়!
হারাই হারাই ভাবনায় হাঁটে বিজন পাথার॥
ভাবি আমি মাত্রাবৃত্তে
ভাবছি আমি এমন দিনে
প্রেমের কিছু কবিতা লিখি
লেবু-ফুলের মন-উড়ানো
উ-হু-হু আহা গন্ধ-মাখা
বয়সটাতে দাঁড়িয়ে পড়ি,
মোরগ-ফুল খোঁপায় খুঁজে
প্রত্ন রসে ভাবনা আঁকি—
বিরহ এসে দুইপা মেলে
দরোজা এঁটে থাক না বসে
কীইবা করি,বলি যে কাকে!
দু’চোখে আজ হারিয়ে ফেলা
দোপাটি রঙ স্বপ্ন দেখি
ধূলি-কণায় যতই খুঁজি,
আলোর ভাঁজে, রক্ত-লালে
দেখিনা তাকে পলাশ ফুলে
সুর-হারানো পাখির মতো
এখনো আমি অধরা মন
পেছন-ফেরা তপস্যাতে
হারিয়ে ফেলি হৃদয়টাকে…
প্রকৃতি ও নিসর্গ
যে যাবার সে যাবেই
হয়তো পথের দুইধারে উষ্ণতা ছড়াবে অকাতরে,
কিছুটা কাঁঠালিচাঁপা গন্ধ তার মানে-অভিমানে,
মেঘের হতাশা তবু উঁকি দেবে মনে
ঝড়ের আকারে আসে, যদিবা সে বিদ্যুৎ-চমকে
অঞ্চলে যেটুকু পারো তুলে নিও সেই ক্রোধ,
লহরীর মতো কণ্ঠে সাজিয়ে গোপনে রেখে দিও তাকে।
তবু-তো তুমিই ছিলে পানকৌড়ি জলচর
এখনো আছো তো এই অন্তরে বধির
প্রকৃতি ও নিসর্গ যেমন!
বয়স
চাইলেই এ বয়স আজো ছুঁতে পারতো তোমাকে
মন চেয়েছিল যাকে চাপা আগুনের ছাইভস্মে
শাড়ির সামান্য স্পর্শে, একদিন কেঁপেছে বাতাস,
আকাঙ্ক্ষার সে চড়ুইভাতি ভেসে গেছে যুমনায়,
এতো যে বয়স, দু’জনার—তবু রয়ে গেলে দূরে
মনেও পড়ে না আর শেষ কবে দেখেছি তোমাকে,
দেবেন্দ্র কলেজে, না জ্যোতিনদার মিষ্টির দোকানে,
নিঃসঙ্গ পথিক যেন এক; নীরবে দাঁড়ালে সরে—-
লালনের আখড়ায় এখনো কী আসা-যাওয়া করো
আগের মতোই গান করো? নাকি ছেড়েছ সবই;
জীবনের যোগ-সাধনায় পেয়েছ যোগিনী কোনো?
মায়া সূর্যের মতন ছিল তোমার কথার দ্যুতি
আড্ডায় হেরেছে কত শিমুল তুলোর উড়াউড়ি
গোপন ইচ্ছের মতো না-লেখা চিঠির সে আকুতি
বরফ কণায় ছিল প্রতিসরিত আলোর মতো…
তোমার গাওয়া সেই গান আজো ভাঁজ করে রাখি
“ও যোগী ভিক্ষাও লয় না, কথাও কয় না রে যোগী…
ও যোগীর মনে কী তাও বোঝাও যায় না রে যোগী”।
দিলারা হাফিজ
কবি দিলারা হাফিজ। ১৯৫৫ সালের ২০ নভেম্বর মানিকগন্জের গড়পাড়া গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। পিতা বখশী হাফিজ উদ্দিনআহমেদ, মা রহিমা হাফিজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বি. এ অনার্স ও এম এ করেছেন। ১৯৯৮ সালে ঢাবি থেকে পি এইচ ডি ডিগ্রিলাভ করেন। ৩৭ বছর শিক্ষকতা জীবনে সরকারি কুমুদিনী কলেজ, ইডেন কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যায় ছাড়াও মিরপুরের সরকারি বাঙলাকলেজ ও তিতুমীর কলেজে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, ঢাকার চেয়ারম্যানহিসেবে চাকুরি থেকে অবসরে যান।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ:
১।ভালোবাসার কবিতা, ২।পিতা কিংবা পুত্র অথবা প্রেমিক ৩। প্রেমের কবিতা ৪। কে নেবে দায় ৫। খুঁজে ফিরি ভিক্ষালব্ধ জ্ঞান ৬। অবিনশ্বর আয়না ৭। নির্বাচিত কবিতা
৮। নারী সংহিতা
গবেষণা গ্রন্থ: বাংলাদেশের কবিতায় ব্যক্তি ও সমাজ (১৯৪৭–১৯৭১)
স্মৃতি গদ্য: আনন্দ বেদনাযজ্ঞে রফিক আজাদ
স্মৃতি উপন্যাস: কে প্রথম কাছে এসেছি
শিশুতোষ:সুষমার গল্প
অনুবাদ:মার্কিন কবি ক্যারোলাইন রাইট ও ভারতীয় বহুভাষাবিদ পণ্ডিত শ্যাম সিং শশী নারী অধিকার সম্পর্কিত তাঁর অনেককবিতার অনুবাদ করেছেন।
সম্পাদনা : গদ্যের গহন অরণ্যে
১৯৮৩ সালে কবিতার জন্যে লা ফর্তিনা সম্মাননা ও ২০১২ সালে বাংলাদেশ ও নেপাল ফ্রেণ্ডশীপ সম্মাননা লাভ করেন। বিটিভির বহুল প্রচারিত ও জননন্দিত গণশিক্ষামূলক অনুষ্ঠান “সবার জন্যে শিক্ষা” গ্রন্থনা ও উপস্থাপনার দায়িত্ব পালন করেছেন ২২ বছর। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অন্যতম প্রধান কবি রফিক আজাদ (প্রয়াত) এর স্ত্রী। দুই পুত্র সন্তান অভিন্ন ও অব্যয় এর জননী।