ফিরিয়ে নাও, গোলাপকাঁটা
সব উপেক্ষা ফিরিয়ে নাও
ফিরিয়ে নাও পায়ে হাঁটা সব পথ, অনিদ্রারাত
ফিরিয়ে নাও মুখের দিকে চেয়ে থাকা
যাবতীয় বিস্ময়,
অপেক্ষার সব নদী ও গাছ
সেই কবে উড়ে গেছে নিছক হাওয়া
এঁকে দিয়ে পতনের পাটাতন,
কিছু ভুল অপেক্ষা করতে করতে
পাথর হয়ে গেছে,
মেঘের চিৎকারে
বৃষ্টি নামে অন্ধ জানালায়-
আমার হৃদপিন্ডে একটি মুখ দলা পেকে বসে থাকে।
ফিরিয়ে নাও, এই গোলাপকাঁটা, বিষণ্ণ সুন্দর।
আমাকে পাবে না কোথাও
আমাকে খুঁজে পাবে না কোথাও, সারি সারি রোদনগুচ্ছে
খুঁজে পাবে শিরিষের ডালপালা, ঘুমন্ত জংশন হাই তুলে
চলে যাবে নিরুদ্দেশ— পাতার সংসারে একাগ্র বুদবুদ
পাল তুলে চলে যাবে ঘনিষ্ঠ ঠোঁটে, বেসামাল মূহুর্তে-
আমাকে পাবে না কোথাও, বেলকনি জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকবে
মৃতদের মহল্লা, নিজেকে পেরুতে চেয়ে বার বার ফিরে আসা
মানুষ, একান্ত ঘরদোর, বৃহষ্পতিবার রাত, একাকি আঙুল—
দীর্ঘায়ু মেঘ উড়ে যাবে মাটির দরগায়, প্রদোষের পাটাতনে—
আমাকে পাবেনা একান্ত পাপে, প্রার্থনার গুঞ্জনে, নিজস্ব রাতে—
পায়েরতলে লুকিয়ে রেখেছো মহাকাল— অথচ একটি সেকেন্ড
পেরুতে পেরুতে তুমি জেনে যাবে—সময় কেবলি বুকের বাঁ
পাশে ভেঙেপড়া বেইলি ব্রিজ, অথই আঁধার, ধূপছায়া, বৃষ্টি।
বহুবার পেয়েও তুমি আমাকে পাবে না— পাবে না কোথাও।
পুষে রাখি অনন্ত ঊড়াল
জন্মের আগেই পাখির সাথে জীবন বদল করে এসেছি-
পাখিদেরও ছিল এমন ভুলভাল বিষণ্ণ সংসার,
নিদ্রাহীন রাত, কান্নার গোপন রেসিপি
ডানায় মিলনের ঘ্রাণ, পালকে ক্ষত, স্মৃতিচিহ্ন—
তুমুল সংসার ফেলে পাখিও ফেরারী হয়, ভবঘুরে বসন্তে।
মেঘের অলিন্দে ঢেকে রেখেছি নক্ষত্রের মুখ, পলাতক প্রেম,
করতলে ছটফটানি- সময়ের নাতিদীর্ঘ ছায়া—
কেন পুষে রাখি অনন্ত উড়াল! প্রিয়তম মুখ! দৃশ্যজট!
পরের জন্মে প্রেমিক হব- ভুলে গিয়ে পাখিদের পূর্বপরিচয়।
দুঃখগুলো, পায়ে হাঁটা পথ
জীবনকে উড়িয়ে দিয়েছি, ক্ষোভে নয়— উল্লাসে
নেশার পেয়ালায় সেদ্ধ হয় ঘুমের হাঁড়ি, অস্থির আলিঙ্গন—
হাতে হাত রাখলে
আঙুল বেয়ে উঠে আসে অনুচ্চারিত ধোঁয়া,
প্রতিধ্বনি ফিরে গেলে হাসপাতাল আমাকে দেখতে আসে—
তোমার নাভীর নিচে ঘুমিয়ে গেছে দুপুর, তার রেলিং ধরে
ঝুলে আছি কুয়াশার উপকূলে,
দুঃখগুলো পায়ে হাঁটা পথ, সূর্যমুখীর বহুতল উঠোন—
আবার কবে বসবে দ্বিপাক্ষীয় ঘামের বৈঠক, রন্ধন-খানাপিনা?
একদিন ঢেকুর তুলতে গিয়ে মারা যাব—
মৃত্যুশয্যা থেকে ফুটবে ফুল, থোকা থোকা নক্ষত্রের চিৎকার।
অন্যমানুষ
চলে যাওয়ার সময় বার বার পেছনে তাকাই-
যদি কেউ ডাকে শেষবার!
ছায়ার মতো হাত নাড়ে—
যদি বলে—ফিরে এসো!
হাওয়ার পৃষ্ঠায় নিলাম হয়ে গেছে পিছুটান, নিদ্রিত মুখ—
যেতে যেতে পতনের শব্দ শুনি
প্রতিধ্বনি গিলে খায় নৈশব্দের ভাষা, ব্যঞ্জনের মুখমন্ডল
অনর্গল চেয়ে আছি—
পেছনে চোখ রেখে সামনে হেঁটে যাই, অন্যমানুষ।
যতোটা পাই, যতোটা পাই না
যতোটা পাই তোমাকে, ততোটা পাই না—
নিজের মৃত্যু ঘেষে একান্তে বসে থাকে বয়স্ক বৃক্ষ,
মর্মর ধ্বনি, ক্লান্ত ওড়াউড়ি—
অথচ ঘরে ফেরার অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে সমস্ত উড়াল
ঠোটের ভাজে গুম হয়ে গেছে অসংখ্য পথরেখা
যতোটা দেখি তোমাকে, তোমার দ্বিতল শয্যা ও ঘুম
এক ফালি রোদ ঘুরে ঘুরে এঁকে যায় নিপুণ অন্ধতা—
বধির দৃশ্যাবলী— ছায়াদের মৃতমুখ
চলো, একবার হেঁটে আসি ঘৃণার পৃথক পাতায়, জলঘামে—
চলে গেলে কেন তোমার নামে ডাকে পাখি—মায়াবন,
পড়ে থাকে অধীর গুঞ্জন!
মালেক মুস্তাকিম
এই সময়ের একজন তরুণ কবি। সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলায় জন্ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। পেশায় সরকারী চাকুরে। সাহিত্য সাময়িকী ও ছোট কাগজে নিয়মিত লিখছেন।
প্রকাশিত কবিতার বইঃ ভুলের ভূগোল, ২০১৩; বিষণ্ণতাবিরোধী চুম্বনগুলি, ২০১৬; তোমার সাথে হাঁটে আমার ছায়া, ২০১৮; একান্ত পাপগুচ্ছ, ২০২১
[email protected]