৬.
আমি প্রায়ই ভেবে অবাক হতাম এই নিমফেটদের এরপর কী হয়? মানে নিমফেট বয়স শেষ হবার পরে এদের জন্য কী অপেক্ষা করছে? সাংঘাতিক কিছু? এমন কিছু যে ব্যাপারগুলো ওরা ভাবতেই পারেনি? আমি যে ওদের ভেতরের স্পন্দন, নিমফেট স্বাদটুকু চুরি করে নিচ্ছি ওদের পরের বয়সটাতে এর কোনো প্রভাব পড়বে না? ব্যাপারটা কি ওদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে না? উত্তরটা যে ‘হ্যাঁ’ হবে তাতে অবাক হবার কিছুই নেই। প্রতিটি নিমফেট মেয়ের সংস্পর্শে আসার পরে আমি আর তাদের কথা ভাবতে পারিনি। তাদের স্বার্থ তুচ্ছ করে দেখেছি। নিজের ক্ষুধার্ত দানবটিকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে এই নিমফেট মেয়েদেরকে একেবারে নিংড়ে শেষ করে ফেলেছি। ওদের দেহের সৌন্দর্য, জ্যোতি, নিষ্পাপ কমনীয়তা সবই নষ্ট করে ফেলেছি। নিমফেট বয়স শেষে ওদের জন্য অসহায় একটা দেহ ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকার কথা না। এরচেয়ে নিষ্ঠুর বাস্তবতা আর কী হতে পারে?
আমি ওদের পাগলকরা আকর্ষণ এড়াতে পারতাম না। যেভাই হোক, সুযোগ বুঝে ওদের সংস্পর্শে আসার চেষ্টা করতাম। ওদের পাতলা পোশাকের ভেতরের নগ্ন দেহকে মনে হত একমাত্র আরাধ্য বিষয়। আমি যেসব নিমফেটদের সাথে মিশেছি তাদেরকে বড় হতে দেখেছি। নিমফেট বয়স শেষ হবার পরে ওদের ভয়াবহ অবস্থা নিজের চোখে দেখেছি।
ছোট একটা উদাহরণ দিই। যতদূর মনে পড়ে সময়টা বসন্তের কোনো বিকেল ছিল। ম্যাডেলিনের কাছে একটা রাস্তা দিয়ে আপনমনে হাঁটছিলাম। ঠিক তখন উল্টোদিক থেকে শুকনো শরীরের একটা মেয়ে দ্রুত গতিতে হেঁটে আসছিল। পায়ে উঁচু হিল, হাঁটার সময় রাস্তার সাথে ঘষা খাবার শব্দ হচ্ছিল। আমাকে পার হয়ে যাবার পরে ঘুরে এক নজর তাকালাম। দেখলাম মেয়েটাও হাঁটা থামিয়ে একইসাথে আমার দিকে তাকিয়েছে। ভদ্রতাবশত মুচকি হাসি দিলাম। মেয়েটি আমার কাছে এসে দাঁড়াল। একেবারে আমার বুকের কাছে, আমি ওর শরীরের সস্তা পারফিউমের গন্ধ পাচ্ছিলাম। অধিকাংশ ফ্রেঞ্চ মেয়েদেরই হাসার সময় গালে টোল খেয়ে যায়। ওই মেয়েটিরও হাসির সময় গালে টোল পড়ছিল। চোখের লম্বা পাপড়ি আমার পছন্দ। ওর চোখের পাপড়িগুলো লম্বা লম্বা। শরীরের সাথে আঁটসাঁট করে পরা জামা, উদ্ধ্যত বুক আমার ভেতর এক ধরণের আকর্ষণবোধ জাগিয়ে তুলছিল। চোখে আনন্দের উচ্ছাস, দুষ্টু চাহনি, রহস্য ধরে রাখা ঠোঁট, সমস্ত শরীরে নিমফেটিক প্রতিধ্বনি, সব মিলিয়ে একজন পেশাদার বেশ্যা হিসেবে পারফেক্ট। সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় ছিল ওর পেশাদারী চেহারার মাঝে শিশুসুলভ আচরণ। আহ! নিমফেট! একদমই নিমফেট!
জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কত?’
মেয়েটার কথা বলার স্বর সুন্দর। অচেনা পাখির মত সুরেলা গলায় জবাব দিল, ‘এক সেন্ট!’
আমি দরাদরি করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু বোঝা গেল সে পাকা ব্যবসায়ী। আমার দিকে বিরক্তি মেশানো চাহনি নিয়ে বলল, ‘এত সস্তা? হাহ! অন্যদিকে দেখো!’
বলেই উল্টোদিকে ঘুরে চলে যেতে লাগল। মেয়েটাকে ভাল লেগে গিয়েছিল, এই ভাল লাগার ব্যাপারটা সেও টের পেয়ে স্পষ্ট চেপে বসেছিল। আমার বারবার আফসোস হচ্ছিল, ইশ! একে যদি মাত্র তিন বছর আগে কোনো স্কুলের পোশাকে দেখতে পেতাম! মাত্র তিন বছর আগে!
সাতপাঁচ ভেবে শেষে রাজি হয়ে গেলাম। কারণ মেয়েটার শরীরে এখনো নিমফেটিক বৈশিষ্ট্য রয়ে গেছে। জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কী নাম?’
আগের মতই সুরেলা কন্ঠে উত্তর দিল, ‘মনিকা।‘
‘বয়স কত তোমার?’
‘আঠারো। কেন?’
‘এমনি।‘
আঠারো বছর বয়সী মনিকার শরীরে তখনো নিমফেট সুগন্ধ। ওর চোখের বড় বড় পাপড়ির প্রতিটি পলক আমাকে সম্মোহন করে ফেলছিল। মনিকার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আমার শরীরে আলাদা আলাদা করে একেকটি আনন্দের উৎস হয়ে উঠল। আমি ওর শিশুসুলভ হাত পরখ করতাম, আঙুল নিয়ে খেলা করতাম। অদ্ভুত সেই খেলা, অদ্ভুত সেই আকর্ষণ। ওর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ হয়ে ওঠে। মাঝে মাঝে বেখেয়ালে হাতের নখ কাটতে ভুলে যেত। সেই অপরিষ্কার নখ দেখিয়ে বলতাম, ‘শেষ কবে নখ কেটেছিলে?’
ও খেয়াল করে জিভে কামড় দিয়ে বলত, ‘এহহে! কী বিশ্রী দেখাচ্ছে।‘ বলেই দৌড়ে বাথরুমে চলে যেত। বেসিনে অনেকক্ষণ সময় নিয়ে হাতের নখগুলো পরিষ্কার করে আসত।
আমি বলতাম, ‘আরে, সমস্যা নেই তো!’ কে শোনে কার কথা! ওর হাতের অপরিচ্ছন্ন নখও যে আমার ভাল লাগত সেটা কিছুতেই ওকে বোঝাতে পারতাম না।
মনিকার চুলগুলো সুন্দর ছিল, ববকাট করে রাখা, ওর চোখে অদ্ভুত নেশা, ধূসর মায়া জড়ানো চাহনি, মলিন সোনালিরঙা শরীর, সব মিলিয়ে বেশ আদুরে একটা মেয়ে ছিল। অন্যান্য পতিতাদের খেয়াল করলে দেখা যাবে তাদের কোমর বিদঘুটে রকমভাবে ছড়ানো থাকে। বাকিদের মত মনিকার কোমর মোটেই ছড়ানো ছিল না। এই প্রশংসা, ভাললাগাগুলো ওকে সরাসরি বলেও ফেলতাম। ও লাজুক চোখে প্রেম প্রেম ভাব নিয়ে খুশি হতো। চোখে মুখে সেই খুশি ছড়িয়ে যেত। এরকম কিছু আলাদা কারণ থাকায় সে স্মৃতিতে গেঁথে যায়। আমার ছোট্ট থাকার ঘরটিতে যতদিন ছিলাম, মনিকার স্মৃতিও ততদিন রয়ে যায়। এখনো সেই স্মৃতিগুলো ভাবতে ভাল লাগে।
মনিকাই একমাত্র মেয়ে ছিল তখন, যে কিনা আমাকে সম্পূর্ণভাবে সন্তুষ্ট করতে পেরেছিল। সহস্র বেশ্যার চেয়েও নিখুঁত ছিল ওর পেশাদারিত্ব। ও আমার দেহের ব্যাকরণ বুঝত, আমার শিল্পের চাহিদা ধরতে পেরেছিল। আমি ওর কাছ থেকে যে আনন্দ পেয়েছি, এভাবে আর কেউ পারেনি সেই সময়। কথাগুলো মনিকার কাছে অকপটে স্বীকার করতাম। মনিকা দ্রুত পোশাক পরে নিতে নিতে অমায়িক সুর তুলে বলত, ‘তুমি তো দারুণ স্মার্ট দেখছি, অনেককিছু খেয়াল করেছ!’
আমি লোভ সামলাতে পারতাম না। প্রথম দিনই বললাম, ‘আজ সন্ধ্যার দিকে সময় হবে তোমার? আরো সুন্দর করে দেখতে চাই তোমাকে। আরো গভীরভাবে পেতে চাই!’
মনিকা জবাব দিল, ‘ক্যাফেতে নয়টার দিকে দেখা করতে পারব।‘
সেইরাতেই মনিকাকে আমার ঘরে নিয়ে আসি আবার। রাতের আলোতে মনিকাকে চমৎকার লাগছিল। আমি মুগ্ধ হয়ে বলেই ফেললাম, ‘সাংঘাতিক সুন্দর লাগছে তোমাকে।’
সে শান্ত গলায় বলে, ‘তোমার প্রশংসার ধরণটা ভাল লাগে আমার!’
আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। মনিকার সৌন্দর্যে আয়না ভেঙে চুরমার হয়ে যেতে চায়। মনিকার প্রতি আমার আকর্ষণের কারণ আগেও বলেছি। ওর শরীরে তখনো প্রবলভাবে নিমফেট ঘ্রাণ ছিল। সচরাচর নিমফেট মেয়েদের বয়স চৌদ্দর নিচে হয়ে থাকে। চৌদ্দ’র পরে আর এই ঘ্রাণ পাওয়া যায় না। আপনারা জানেন, চৌদ্দ বছরের নিচের মেয়েদের সাথে মেশা আমার পক্ষে আদৌ সম্ভব ছিল না। আঠারো বছর বয়সী মনিকার মাঝে তখনো নিমফেট ঘ্রাণ ওর প্রতি আমাকে আরো বেশি আকৃষ্ট করে তুলত।
‘আমি কি লিপস্টিক তুলে ফেলব?’ জিজ্ঞাসা করে সে। কোনো উত্তর না দিয়ে নিঃশব্দে ওর দিকে এগিয়ে যাই। আলতো করে চুমু খাই মনিকার ঠোঁটে।
কম বয়সী কোনো মেয়েদের সান্নিধ্য একেবারেই পেতাম না বললে ভুল হবে। মনিকার সাথে পরিচয়ের আগেও আমি অনেক কমবয়সী মেয়েদের সাথে মিশেছি। কিন্তু তারা কেউ মনিকার মত ছিল না। তাদের কেউ কখনোই সেইরাতের মনিকার মত হতে পারেনি। মনিকার প্রতিটি স্পর্শে প্রেম, প্রতিটি নিঃশ্বাসে শিহরণ, প্রতিটি শীৎকারে অপার্থিব আনন্দ। মনিকার চোখের লম্বা লম্বা পাপড়ি মেলা পলক এত সহজে ভোলার নয়। আমি সেইরাতে মনিকার প্রতি খুব বেশি সন্তুষ্ট ছিলাম। এতটাই সন্তুষ্ট যে খুশি হয়ে ওকে আরো কিছু টাকা বখশিস দিয়ে দিলাম।
এরপর বেশকিছুদিন আমাদের দেখা হয়, ওকে ঘরে নিয়ে আসতাম। সাধারণত আমরা রাতের বেলা দেখা করতাম। যৌনতার আনন্দের চেয়ে শিল্পের আনন্দ আমাকে এতটাই সন্তুষ্ট করে ফেলে যে, একরাতে আমি ওকে পরদিন দুপুরবেলা বাসায় আসতে বললাম। দুপুর দুইটা পনেরোতে আসার কথা ছিল। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই চলে আসে ও। কিন্তু একী? মনিকার দিকে তাকিয়ে আমি অবাক হয়ে যাই। মনে হচ্ছিল এই কয়েক রাতের ব্যবধানে ওর বয়স দশ বছর বেড়ে গেছে। মনিকার ভেতরে কিশোরী ভাব ছিল, তা হারিয়ে গেছে। কয়েক রাতেই সে যেন আরো বেশি যুবতী হয়ে উঠেছে। কোথায় সেই শিশুসুলভ চাহনি? ওর ভেতরে যে নিমফেটিক বৈশিষ্ট্য ছিল সব কর্পূরের মত উবে গেছে। সে আর বিগতরাতের সেই মনিকা নেই। আমার ভাল লাগল না, মনিকার ভেতরে কোনো আকর্ষণই আমি খুঁজে পেতে ব্যর্থ হলাম। শেষে হতাশ গলায় আমি ওকে চলে যেতে বলি। এই বলার মাঝে শুধু হতাশা ছিল, কোনো দুঃখবোধ ছিল না। মনিকাকে ফিরিয়ে দেবার মাঝে আমার ভেতর কোনো প্রকার অপরাধবোধই কাজ করেনি। সোজা বলে দিয়েছিলাম, ‘চলে যাও!’
আমি যা উপভোগ করেছি সব ছিল নিজের জন্য। মনিকার কথা একবারও ভাবিনি। এক মুহূর্তের জন্য শুধু মনে হয়েছিল, মনিকা আমার ব্যবহারে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে। ওর ভেতরে এক অপরাধী নিমফেট কাঁচুমাচু হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে, ওর মাঝে এক নিমফেটের কবর হয়ে যাচ্ছে। নিমফেট পরবর্তী দুঃসময়ে পা রাখতে যাচ্ছে সে। এতটুকুই! আমার আর কিছুই মনে হয়নি।
এরপর বড়দের ম্যাগাজিনগুলো প্রচুর ঘাটতে থাকি। একদিন এরকম একটা ম্যাগাজিনে কৌতূহল জাগানোর মত একটা বিজ্ঞাপন খুঁজে পেলাম। এমএলএলই এডিথ অফিসের বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপন বলছিল, ওরা গ্রাহকের মনমতো বেশ্যা যোগাঢ় করে দেবে। সাহস করে একদিন সেই অফিসে গেলাম। ডেস্কের ওপাশে এক মহিলা বসা ছিলেন, উনি নিজেকে যৌন বিশেষজ্ঞ বলে পরিচয় দিলেন। প্রথমে আমার কথা মনোযোগ খুব দিয়ে শুনলেন। তারপর যা করলেন তাতে মনে হলো অযথাই এতক্ষণ বকবক করেছি। পুরনো একটা ছবির এলবাম আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। এলবামে অনেক মেয়েদের ছবি ছিল, সেই ছবিগুলো দেখে আমাকে একজন পছন্দ করতে হবে। কিন্তু আমার একটা ছবিও পছন্দ হলো না, এদের কেউই নিমফেট ছিল না। এই ছবিগুলো কেন দেখাচ্ছে আমাকে বুঝতে পারলাম না। রেগে প্রায় ছুঁড়ে ফেলার মতই এলবামটা ফেরত দিলাম। প্রচণ্ড হতাশ লাগছিল নিজেকে, মনে হচ্ছিল আমার পছন্দমত কোনো নিমফেট পাওয়া আদৌ সম্ভব না। এলবাম ফেরত দিয়ে বিব্রত হয়ে গেলাম। ওইভাবে ফেরত দেয়ায় মনে হচ্ছিল উনি বুঝি রেগেমেগে আমাকে চলে যেতে বলবেন। কিন্তু মহিলা একটা কর্পোরেট হাসি দিয়ে জানতে চাইল আমার বাজেট কেমন!
আমি আবার সব ভেঙে বললাম। গুছিয়ে আবার গোঁড়া থেকে বলতে লাগলাম আমি আসলে কী চাচ্ছি, একটা নিমফেট মেয়ে পেতে আমি কেমন মরিয়া ইত্যাদি। দশজন পতিতার সমান খরচ করে হলেও আমার নিমফেট মেয়ে চাই! ডেস্কের ওপাশে বসে মহিলাটি আগের মত খুব মনোযোগী ভঙ্গিতে আবার শুনলেন। এবার মনে হলো কিছুটা বুঝতে পেরেছেন। আমাকে বললেন, তার পরিচিত লোক আছে যে কিনা আমার পছন্দমত এমন মেয়ে খুঁজে দিতে পারবে। তবে খরচ বেশি পড়বে। খরচ নিয়ে আমার ভাবনা ছিল না, আমি খুশিমনে রাজি হয়ে গেলাম। সেদিনই অগ্রিম কিছু টাকা দিয়ে এলাম মহিলাটিকে।
পরের দিন আমাকে এক মধ্যবয়সী হাঁপানি রোগীর সাথে দেখা করিয়ে দেয়া হলো। মহিলার বিশাল শরীর, মুখে পুরু করে মেকাপের প্রলেপ লাগানো, ঠোঁটগুলো যত্নের সাথে গোলাপি রঙে রাঙ্গানো। আর সেই ঠোঁটের উপর একটা গোঁফ ঝুলে ছিল। সেই মহিলার দিকে যতবার চোখ গেল ততবারই ওই গোঁফটার উপর চোখ আটকে যাচ্ছিল। একটা দোতলা বাড়ি, সিঁড়ি ধরে তার পিছন পিছন উপরে উঠলাম। আমাকে দোতলার একটা ঘরে নিয়ে যাওয়া হলো। ঘরটার দিকে একবার নজর চোখ বুলিয়েই বুঝলাম এই ঘরে পুরো একটা পরিবার থাকে। বিভিন্নজনের ব্যবহারের জিনিসপত্র এখানে সেখানে, কাপড় চোপড়গুলো গুছিয়ে রাখা। খদ্দরের সুবিধার্থে বা ব্যবসার খাতিরে তখন ঘরটাতে সেই প্রইবারের কোনো মানুষ ছিল না। শুধু আমি ছিলাম, ওই গোঁফওয়ালী, হাঁপানি রোগী মহিলা ছিল আর আমার সামনে ছিল পনেরো বছর বয়সী একটা মেয়ে। অতিথির জন্য সুন্দর করে সাজগোজ করার চেষ্টা চোখের পড়ার মত ছিল, চুলে যত্ন করে বাঁধা লালরঙা ফিতে, মুখে পাউডার মাখা মেকাপ, ঠোঁটে গোলাপি লিপস্টিক লাগানো। মেয়েটার দিকে একবার তাকিয়েই অপছন্দ হয়ে গেল। ও পনেরো বছর বয়সী সাধারণ এক পতিতা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। কোনো আলাদা আকর্ষণ নেই, বাড়তি বৈশিষ্ট্য নেই। নিমফেটিক বৈশিষ্ট্য তো বহু দূরের প্রসঙ্গ! আমি যেরকম খুঁজছি সেরকম কোনো নিমফেটিক বৈশিষ্ট্যের ছিটেফোঁটাও মেয়েটার ভেতর ছিল না। আমাকে আবার হতাশ হতে হল। আমার অপছন্দের কথা গোঁফওয়ালী মহিলাকে জানালাম। জানিয়ে যেন বিপদেই পড়ে গেলাম! ওই মহিলাকে বোঝানো তখন কার সাধ্য?
পুরো ব্যবসায়ী মেজাজে আমাকে এটা সেটা বলে বোঝাতে লাগল, খদ্দর কিছুতেই হাতছাড়া করতে চায় না। বোঝানোর এক পর্যায়ে ওই ছোট্ট মেয়েটার জামাকাপড় পর্যন্ত খুলে দেখাতে লাগল। আমি বারবার বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম, এবং উনি বারবার কৃতিত্বের সাথে ভুল বুঝে যাচ্ছিলেন। নিজের মতো করে বকবক করে এটা সেটা বোঝাতেই লাগলেন। আমাকে এসব বোঝানোর কোনো দরকার ছিল না। কিন্তু আমার কথা কানে তোলার অবসর কোথায় তার?
শেষমেশ আমাকে রাজি করাতে না পেরে ওই হাঁপানি রোগী মহিলা রেগে গেল। জোর গলায় কাকে যেন ডাকল। আমি ঘুরে বেরিয়ে আসছিলাম ঠিক তখন দুইজন ষণ্ডামার্কা লোক কোত্থেকে এসে পথ রোধ করে দাঁড়াল। কী যন্ত্রণা! তখন রাত ছিল, তাদের একজন সেই রাতের বেলাতেও সানগ্লাস পরে ছিল। তাদের পিছনে ছোট্ট একটা ছেলেকে দেখতে পাই। লোক দুটো বিভিন্নরকম খোঁড়া যুক্তি দিয়ে, চিৎকার চেঁচামেচি করে, আবোল-তাবোল বকে আমাকে বাধ্য করতে মরিয়া হয়ে উঠছিল। সানগ্লাস পরা লোকটা আমাকে হুমকিও দিল, সে নাকি পুলিশের লোক! আমি অবাধ্য হলে ঝামেলা হয়ে যাবে। কিন্তু আমি তো কোনভাবেই ওই মেয়ের সাথে বিছানায় যেতে রাজি ছিলাম না! শেষমেশ মেয়েটাকে তার টাকা পরিশোধ করে দিয়ে বললাম, টাকা রাখো, কিন্তু এই মেয়ের সাথে বিছানায় যাব না।
টাকা পেয়ে ওরা খুশি। আমাকে ছেড়ে দিল। আগে বললেই হতো, টাকা দিয়ে কেটে পড়তাম। শুধুশুধু এরকম করার কোনো মানেই ছিল না। যাই হোক, সে যাত্রায় কোনোরকম রক্ষা পেয়ে যাই। আমি তাতেই খুশি।
রনক জামান
কবি ও অনুবাদক ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৯১, মানিকগঞ্জে জন্ম।
প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ : অগ্রন্থিত ওহী [তিউড়ি, ২০১৯] এবং
ঘামগুলো সব শিশিরফোঁটা [অনুপ্রাণন ২০১৬]