কীর্তনখোলা নদীর ধারে দাঁড়িয়ে যখন বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ করছিলাম, তখন তার সঙ্গে দেখা। এতদিন শুধু সে ছিল ফেসবুকে। তারপর একটা বিচিত্রানুষ্ঠানে যখন বরিশাল যাই, তখন সে এসে আমার সঙ্গে দেখা করল। তাও জাহাজে ওঠার আগে আগে।
তাকে চোখে দেখা মাত্র আমার শরীরে প্রচণ্ড এক কম্পন টের পেলাম। এর আগে কখনো আমার কারো সাথে দেখা করার সময় এরকম হয়নি। অথচ জুবায়েরকে আমি ফেসবুকে অন্তত বছর খানেক ধরে চিনি। তবে সে আলাপ ভাসা ভাসা।
বরিশালে গিয়ে সামনা সামনি চেনা হল। না, সে বরিশালের ছেলে নয়। তবে বরিশালে তার চাচারা থাকেন। সে ওখানেই নাকি বেড়াতে এসেছিল। আমাদের ট্রুপ বরিশালে রবীন্দ্রসন্ধ্যা করতে গেলে সেখানে আমার তার সাথে চাক্ষুষ দেখা।
তার চোখে যখন আমার চোখ পড়ল, আমি যেন কেমন সম্মোহিত হয়ে গেলাম।
জানি, এক কথাই আমি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলছি।
বলছি এ কারণে যে বিগত কয়েকদিন ধরে আমি ঘর থেকে বেরোই নে, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করিনে, গানের প্র্যাকটিস বন্ধ, আমার মনের ভেতরে শুধু ঝাউপাতার দীর্ঘশ্বাস।
এই সময় জুবায়েরের ফোন। সে বলল, হাই। আমিও উত্তরে, হাই।
জুবায়ের বলল, কেমন আছো?
আমি বললাম, ভালো নেই।
জুবায়ের বলল, কেন?
আমি বললাম, কী জানি। তোমাকে দেখার পর থেকে
জুবায়ের আমার কথা শেষ হতে না দিয়ে বলল, আমিও ঠিক তাই। আমিও…
তারপর মোবাইল রেখে দিল জুবায়ের। এতবার চেষ্টা করলাম, কিন্তু উত্তর নেই। ফেসবুকে খুলে মেসেজ পাঠালাম। আমার ছবি পাঠালাম।
কোনো সাড়া পেলাম না।
এরপর একদিন আমি মোবাইলে তাকে পেলাম। বললাম, আমাকে কেন কষ্ট দিচ্ছ?
সে বলল, কষ্ট আমিও কি পাচ্ছি নে। এই দেখ আমি তোমার চিন্তা করে নিজেকে কীভাবে আঘাত করেছি। একথা বলে সে স্কাইপে তার হাত দুটো তুলে ধরল।
আমি তাকিয়ে দেখে হতভম্ব হয়ে গেলাম।
দেখি তার দুহাতের কব্জির ওপর থেকে অজস্র কাটা দাগ। তরতাজা কাটা দাগ।
এরপর জুবায়ের আমার দিকে স্থির দৃষ্টি ফেলে বলল, যদি তুমি আমাকে ভালোবাসো, তাহলে এভাবে প্রমাণ দেখাও!
তার কথা শুনে আমি শিউরে উঠলাম। ছেলেবেলা থেকে আমি রক্ত চোখে দেখতে পারিনে। আমার ভয় করে। শরীরে কোনদিন ইনজেকশন ফোটাইনি। সেখানে…
কিন্তু জুবায়েরের কথা শুনে আমার ভেতরে কী যেন একটা ঘটে গেল। হ্যাঁ, জুবায়ের যদি আমাকে ভালোবেসে তার শরীর এভাবে ক্ষত বিক্ষত করতে পারে, তাহলে আমিই বা পারব না কেন? আমি কে?
প্রথম দিন যেদিন ব্লেড কিনে এনে নিজের হাতের কব্জিতে ব্লেড চেপে ধরে টান দিলাম, সেদিন মুখ আমি অন্যদিকে ফিরিয়ে রেখেছিলাম। আমার খুব ভয় করছিল। থর থর করে কাঁপছিলাম। অবশ্য নতুন ব্লেড। জুবায়ের বলে দিয়েছিল, যতবার কাটবে, নতুন ব্লেড ব্যবহার করবে। পুরনো ব্লেড কখনো নয়, টিটেনাস হবার সম্ভাবনা থাকে। সবচেয়ে ভাল হয়, দোকানে গিয়ে একটা অ্যান্টিটিটেনাস ইনজেকশন দিয়ে আসা।
তার উপদেশ আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি। আমার দয়িতের উপদেশ আমি মানব না, এটা হতেই পারে না।
হাত কেটে আমি স্কাইপে জুবায়েরকে যোগাযোগ করলাম। হাত তুলে দেখালাম। দেখি, আমার হাত দেখে জুবায়েরের চোখ অশ্রু টলমল করে উঠল। জুবায়ের বলল, আমি মা হারিয়েছি ছেলেবেলায়, সৎ মায়ের লাথি ঝাঁটা খেয়ে মানুষ, আজ আমি সেই মায়ের স্নেহ তোমার ভেতর দিয়ে অনুভব করলাম, লাকি।
এরপর জুবায়ের বলল, এবার তোমার সঙ্গে আমি দেখা করতে চাই, কীভাবে সম্ভব। আমি তো খুলনায় থাকি। তবে সামনের সপ্তাহে ঢাকায় আসব।
শুনে আমি বললাম, আমার মা বাবা দুজনেই সকাল বেলা বেরিয়ে যান। ছুটা বুয়া বেলা বারোটার সময় কাজ সেরে চলে যায়। তখন তুমি আমার বাসায় আসতে পারো।
তো পরের সপ্তাহেই জুবায়ের এলো আমার কাছে। একেবারে আমার বেডরুমে। তাকে দেখে আমার চোখ ফেটে পানি বেরিয়ে এলো। আমি দুহাতে তাকে জড়িয়ে ধরলাম। জুবায়েরও আমকে জড়িয়ে ধরল। তারপর আমার হাত দুটো তুলে প্রতিটি ক্ষত স্থানে সে গভীর মমতায় চুমো খেল।
দেখে আমার চোখে যেন অশ্রু বাঁধ মানল না।
এরপর আমরা বিছানায় পা তুলে বসে গল্প করতে লাগলাম। তারপর আরও অনেক কিছু। সব শেষ হলে আমি জুবায়েরকে বললাম, এখন আমার মন খারাপ লাগছে, নোটন।
জুবায়েরের ডাক নাম নোটন। তার মা মৃত্যুর আগে এই নামে ডেকে গেছে।
জুবায়ের বলল, কেন, মনি?
আমি বললাম, কাজটা কি ঠিক হল? আমার মা বাবা জানলে খুব শকড্ হবে।
জুবায়ের আমাকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে করতে বলল, না, তারা জানবেন না। কী করে জানবেন? তবে প্রেমে পড়লে মানুষ তো এভাবে চুপ থাকতে পারে না , সোনা!
এভাবে অনেক সুন্দর সুন্দর কথায় আমাকে আদরে ভরিয়ে দিল সে। বিকেল চারটে বাজার সঙ্গে সঙ্গে জুবায়েরকে আমি বিদায় দিলাম। সে যেতে চায় নি, আরও থাকতে চেয়েছিল, কিন্তু আমি ঝুঁকি নিতে পারলাম না।
জুবায়ের সেদিন চলে গেলে আমার মন আরও অস্থির হয়ে গেল। দিন রাত যেন ওকে ছাড়া অসহ্য মনে হতে লাগল। অথচ আমার বয়স মাত্র উনিশ। জুবায়ের একুশ। ওরও তো লেখাপড়া শেষ হয় নি। এখনও কতদিন আমাদের আলাদা ভাবে বেঁচে থাকতে হবে।
এখন আমার কী হবে?
আবার বাবা মাকেও এভাবে চিট করলাম ভেবে ভীষণ অনুশোচনা হতে লাগল। কী করি!
কষ্ট দূর করতে না পেরে আমি বাথরুমে বসে নিজের হাত কাটতে শুরু করলাম।
এবার আর রক্ত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম না। দেখলাম এভাবে নিজেকে আঘাত করলে মনের কষ্টের উপশম হয়।
এরপর যেন দিন আর আমার কাটে না। শুধু মনে মনে চিন্তা করতে থাকি কবে আবার আমাদের দেখা হবে। কবে বাসাটা কিছুক্ষণের জন্যে আমরা খালি পাব। কবে জুবায়ের খুলনা থেকে ঢাকায় আসবে। সে খুলনায় লেখাপড়া করে। থাকে হোস্টেলে।
ওর বাবা আর সৎ মা থাকে ঢাকায়।
এরপর বেশ কিছুদিন গেল। আমি এখন সর্বক্ষণই লম্বা-হাতা জামা পরি। কারণ আমার দুটো হাতই বর্তমানে ক্ষতবিক্ষত। আমার মা আমাকে মাঝে মাঝে বলেন, কীরে, তোকে যে নতুন কামিজ দুটো কিনে দিলাম, একদিনও তো পরে দেখালি নে। আমি তখন মা কে বলি, হাফ হাতা আমার পছন্দ হয় না আজকাল মা, ফিরিয়ে ফুলহাতা নিয়ে এসো।
আর মা আমার কথা শুনে বলেন, সে কি!
এদিকে রোজ রাতে দুটো তিনটে পর্যন্ত জুবায়েরের সঙ্গে কথা হয়। আর জুবায়ের আমকে বলে, আজ ক’বার আমাকে স্মরণ করেছ সোনা, তো আমি বলি, অসংখ্যবার। কতবার তা মনে নেই। তবে যতবার মনে করেছি ততবার দুহাতে পোঁচ দিয়েছি। এবার যখন আমাদের দেখা হবে, গুনে দেখ।
আমার কথা শুনে আনন্দিত স্বরে জুবায়ের বলে, আমাকে স্কাইপে দেখাও।
আমি তখন তাকে স্কাইপে দেখাই। সে খুশি হয়। মমতার সঙ্গে বলে, আমাকে এত ভালবাস তুমি সোনা?
আমি মাথা নেড়ে বলি, হ্যাঁ তো।
এরকম হতে হতে একদিন আমি নানাবাড়ি বেড়াতে গেলাম। আমি যেতে চাইনি। আমার মা জোর করে নিয়ে গেল। আমার মা মাঝে মাঝে এমন সব বায়না ধরে যে বিরক্ত লাগে। কিন্তু কী করব। আর ময়ের কথা শুনে বাবাও বলল, যাও না, মায়ের সঙ্গে গিয়ে বেড়িয়ে এসো। এসব তো পরে হবে না। লেখাপড়া শেষ হলে তোমাকে তো আমি বিদেশে পাঠিয়ে দেব।
এই কথাটা বাবা আমাকে প্রায় বলে। নিজে কোনদিন বিদেশে লেখাপড়া করার জন্যে যেতে পারেনি তো তাই, একগাদা ভাইবোন ছিল তো, সব মানুষ করতে হয়েছে।
কিন্তু আমি তো জুবায়েরকে ছেড়ে জীবনেও বিদেশ যাবো না। আর জুবায়ের বিদেশে যেতে চায় না। বলে, কী হবে বিদেশে গিয়ে? আমি দেশেই থাকব। দেশ আমি ভালবাসি।
অবশ্য আমি জানি জুবায়ের লেখাপড়ায় বেশি ভাল নয়। ইচ্ছে হলেও যে বিদেশ যেতে পারবে, এমন মনে হয় না। তো তাতে কি। পৃথিবীর সবাইকে লেখাপড়ায় ভাল করতে হবে, সেরকম কোন কথা আছে কি? বরং আমি তো চারপাশে তাকিয়ে দেখি অধিকাংশ ধনী লোকই মূর্খ।
আজকাল আমি আর গান শিখতে যাই নে। আমার ধানাই পানাই ভাল লাগে না। মানুষ কেন যে এত পরিশ্রম করে এইসব ছাইপাশ শেখে! আমার ঘুম হয় না বলে জুবায়ের বলেছে চুরি করে একটা দুটো ঘুমের ওষুধ খেতে। আমি তাই খাই। মায়ের বাকসো থেকে চুরি করে ওষুধ বের করে খাই। আগে মা ই আমাকে বলত, তাকে কৌটো থেকে ঘুমের ওষুধ বের করে দিতে। তো ঘুমের ওষুধ তাকে দিতে দিতে আমার চেনা হয়ে গেছে।
এর ভেতরেই আমার একদিন জ্বর হয়ে গেল। জ্বর আর মাথা ব্যথা। বাড়িতে শুয়ে থাকলাম তিনদিন। জুবায়েরকে বললাম আমার অসুখ হয়েছে। ও বলল, আমাকে দেখতে আসবে। আমি বললাম, না। কারণ বাড়িতে এখন সবসময় মানুষ, কেউ না কেউ।
জুবায়ের আমার কথা শুনে এলো না। তারপর আর এলোই না। বারে বা! তারপর মোবাইলও ধরল না। ধরল না তো, ধরলই না। বারে বা! আমি তো তার কাণ্ড দেখে মনে মনে অবাক। আরে! এসব কি? আমি তো পাগলের মত হয়ে গেলাম। লেখাপড়া থেকে মন উঠে গেল। স্কুলে যাই, কিন্তু ভাল লাগে না। আমাদের স্কুলে মোবাইল নিয়ে যাওয়া মানা। তো নিই না। বাড়ি এসে প্রথমেই জুবায়েরকে ফোন করি। সে ফোন ধরে না। ধরবে কি, ফোন ডেড! আমার মা আবার স্কুলের কীসব ব্যাপারে ভীষণ ব্যস্ত। একসঙ্গে টেবিলে খাওয়ার সময় মা মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকিয়ে বলে, কী হয়েছে মা মনি? মুখটা এমন রোগা লাগছে কেন? দুপুরে ঠিকমত খেয়েছ তো?
এরই মধ্যে বাবা আবার বিদেশে। সিঙ্গাপুর না কোথায়। অফিসের কাজে। সারাদিন বাড়িতে আমি একা। দু’বেলা শুধু স্যাররা পড়িয়ে যায়। একা। একা। একা। আর শুধু এক বুড়ো ফুপু। সে বিধবা। তার কোন ছেলেমেয়ে নেই। থাকলেও কোন লাভ ছিল না। কারণ সে ছেলে মেয়ে ভালবাসে না। আমাকে পাহারা দেবার অছিলায় টেলিভিশনের সিরিয়ালের সামনে রাতদিন বসে থাকে। এতেই তার জীবনের আনন্দ!
ধুর , ভাল লাগে না।
এই সময় হঠাৎ করে রেমিসার মোবাইল। রেমিসা বলল, খবর শুনেছিস?
আমি বললাম, না ।
তোর জুবায়ের তো রেহনুমার সঙ্গে একেবারে ফাটাফাটি শুরু করেছে। দুজনে বেড়াতে গিয়েছিল বান্দরবন, খুব গোপনে, কাউকে না জানিয়ে , রেহনুমার মা বাবা তো এখন বিদেশে। এই ফাঁকে। তা সেটা কোন কথা না, কথা হল যে-
আমার হাত থেকে মোবাইল পড়ে গেল মাটিতে। এত দামি মোবাইল। সিঙ্গাপুর থেকে আমার বাবা কিনে এনে দিয়েছিল আমার বায়না শুনে। তা সেটা-
আমি এখন বাথরুমে। কমোডের ঢাকনির ওপর বসে আছি। এই ব্লেডটা নতুন নয়। একমাস বয়েস হয়েছে। কিন্তু হাতের কাছে আছে। এখন হাতের কাছে যা আছে তাই সই। বসে আছি অনেকক্ষণ। এতক্ষণে মা বাসায় ফিরে বাথরুমের দরজায় ধাক্কা দিতে শুরু করেছে। মনি, মনি দরজা খোল।
দরজা আমি খুলছি নে। কারণ খোলার আর প্রয়োজন নেই।
আমার মা বলে, মানুষের জীবন নাকি অনেক বড়। অনেক অনেক বড়। বড় আর মহৎ। মহৎ আর পবিত্র।
তাই জীবনকে যত্ন করতে হয়! আমার মা স্কুলে পড়ায় তো, এরকম আজেবাজে অনেক কথা বলে।
মা এটা জানে না, আমার মত টিনএজরা এই সব দর্শনে বিশ্বাস করে না।
আমি এখন আমার বাহুতে জুবায়েরের নাম লিখছি। নামগুলো রক্তের ধারা হয়ে ইলিবিলি হয়ে সাপ হয়ে শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। একটা নাম নয়, অনেকগুলো নাম। জুবায়ের, জুবায়ের, জুবায়ের। জু –বা- য়ে- র।
নাম এখন আমার উপাসনা।
নামগুলো এখন ঊর্ধমুখী। হাতের বাজু পার হয়ে গলার কণ্ঠা পর্যন্ত এসেছে। তারও ওপর অনেক জায়গা আছে। আজ যদি সারা রাত ধরেও জুবায়েরের নাম লিখি, তবুও শরীরে অনেক জায়গা আছে। থাকবে।
পরিচিতি
কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক ১৯৪০ সালের ৫ নভেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমান বাংলাদেশ) যশোর জেলার চুড়িপট্টি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা গোলাম রফিউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন একজন ব্যবসায়ী ও মা আছিয়া খাতুন একজন গৃহিণী। শৈশব ও কৈশোর কাটে যশোরে।
লেখাপড়ায় হাতেখড়ি হয় মায়ের কাছে। তিনি ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়তে চাইলেও বাবার আগ্রহে ১৯৫৯ সালে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হন। ১৯৬৫ সালে এমবিবিএস পাস করেন। পরে ১৯৭৩ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য লন্ডন যান। সেখান থেকে ১৯৮২ সালে মনোবিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজে মনোরোগ বিভাগে সহকারী প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৮ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। পরবর্তী ছ’বছর যুক্তরাজ্য ও স্কটল্যান্ডের বিভিন্ন হাসপাতালে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকার বারডেম হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত আছেন।
সাহিত্য জীবন :
আনোয়ারা সৈয়দ হকের প্রথম ছোটগল্প পরিবর্তন ১৯৫৪ সালে দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত হয়। কলেজে পড়াকালীন সময়ে নিয়মিত বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় গল্প, কবিতা লিখেছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়াকালে লেখালেখির পাশাপাশি কলেজের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে ছিলেন। প্রথম উপন্যাস ১৯৬৮ সালে সচিত্র সন্ধানীতে প্রকাশিত হয়। তার ‘সেই প্রেম সেই সময়’ ও ‘বাজিকর’ উপন্যাসে সাধারন মানুষের দুঃখ-দুর্দশা ও আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা বর্ণিত হয়েছে। ‘নরক ও ফুলের কাহিনী’ উপন্যাসে লিখেছেন তার ছেলেবেলার কথা। ‘বাড়ি ও বণিতা’ উপন্যাসে চিত্রায়িত হয়েছে মধ্যবিত্ত পরিবারের সামাজিক সমস্যা।
তিনি বিশাল একটি সাহিত্য ভাণ্ডার তুলে দিয়েছেন পাঠকের হাতে। এপর্যন্ত ১১টি ছোটগল্প, ৩৩টি উপন্যাস, ৬টি কাব্যগ্রন্থ, ৭টি প্রবন্ধ, ২৫টি শিশুসাহিত্য, ১টি অনুবাদ, ১টি
স্মৃতিকথা ও ১টি ভ্রমণকাহিনী রচনা করেছেন। আশার কথা তাঁর কলম এখনও সচল ও বেগবান।
পুরস্কার ও সম্মাননা :
• ভাষা ও সাহিত্যে একুশে পদক- ২০১৯
• উপন্যাস শাখায় নৃ প্রকাশনী থেকে ছানা ও নানুজান-এর জন্য পাঞ্জেরী ছোটকাকু আনন্দআলো শিশুসাহিত্য পুরস্কার – ২০১৯
• উপন্যাসে অবদানের জন্য বাংলা এলাডেমি সাহিত্য পুরস্কার- ২০১০
• কবীর চৌধুরী শিশুসাহিত্য পুরস্কার – ২০০৭
• ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার – ২০০৬
• অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার
• মাইকেল মধুসূদন পুরস্কার
• শিশু একাডেমি পুরস্কার
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বাংলা সাহিত্যের সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের সহধর্মিনী। তাঁদের দুটি সন্তান, কন্যা বিদিতা সৈয়দ হক ও পুত্র দ্বিতীয় সৈয়দ হক।