৭.
এরপর সিদ্ধান্ত নিই এবার সত্যি বিয়ে করে ফেলব। বিয়ের চিন্তা মাথায় আসতেই ভাল-মন্দ দিকগুলো ভাবতে শুরু করলাম। যদিও এ ব্যাপারে কারো সাথে আমার আলোচনা করার সুযোগ ছিল না। সিদ্ধান্ত যা নেবার আমাকেই নিতে হয়েছে। ভেবেচিন্তে মনে হল, আমার আসলেই বিয়ে করা উচিত। বিয়ের ফলে ঘরের কাজ হয়ে যাবে, রান্নাবান্নায় সাহায্য পাওয়া যাবে, আর যাই হোক অন্তত একজন কথা বলার সঙ্গী পাওয়া যাবে। এমনও হতে পারে বিয়ের পরে স্ত্রীর সাথে অভ্যস্ত হয়ে যাব। তখন মানসিকভাবে আরো চাঙ্গা থাকতে পারব। আমার ভেতরের অসুস্থ দানবটাকে দমিয়ে রাখতে পারব। ছোট ছোট মেয়েদের প্রতি আমার যে ভয়ংকর আকর্ষণ ছিল, সেটা অন্তত এই সুযোগে এড়িয়ে যাওয়া যাবে। বিয়ে করলে নিজেকে আরো গুছিয়ে নিতে পারব, একটা রুটিনের ভেতর চলতে চলতে এক সময় সব ঠিক হয়ে যাবে। একজন স্ত্রী থাকা মানে নিজেরও বাড়তি নিরাপত্তা, সুখে দুঃখে সব সময়ই একজনকে পাশে পাওয়া, কম কি? সব ভেবে শেষমেশ বিয়ের সিদ্ধান্তেই অটল রইলাম।
বাবার মৃত্যুর পরে হোটেল মিরানা বিক্রি করে দিই। তাতে কিছু টাকা জমানো ছিল। টাকাটা বিয়ের সময় কাজে দেবে। পাত্রী খোঁজা কষ্টের কোনো কাজ ছিল না। আমি দেখতে একজন অত্যন্ত সুদর্শন পুরুষ ছিলাম। যে কোনো নারীর মন জয় করা আমার জন্য কয়েক মুহূর্তের ব্যাপার। বিয়ের সিদ্ধান্ত নেবার পর মনে মনে পাত্রী খুঁজতে থাকি। একজনকে পছন্দও হয়ে যায়। মেয়েটার নাম ভ্যালেরিয়া। বহুদিন ধরে আমার হৃদযন্ত্রের সমস্যা ছিল। সাথে ইনসোমনিয়া আর সাইকোলজিক্যাল সমস্যার কথাও আগে বলেছি। নিয়মিত ডাক্তারদের কাছে যাওয়া আসা করতাম। এইভাবে প্যারিসে এক পোলিশ ডাক্তারের সাথে আমার আলাপ হয়ে ওঠে। পরিচয় শেষে তাঁর সাথে আস্তে আস্তে আমার ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। ভ্যালেরিয়া তাঁরই মেয়ে। প্রায়ই সেই ডাক্তারের বাসায় আমি আসা যাওয়া করতাম। আড্ডা হতো, দাবা খেলতাম দুজন। আর ভ্যালেরিয়া দূর থেকে আমাকে লক্ষ্য করত। লুকিয়ে লুকিয়ে দেখত।
একটু আগেই বলেছি, আমি দেখতে অত্যন্ত সুদর্শন ছিলাম। অসম্ভব সুদর্শন পুরুষ যাকে বলে, একবার কেউ তাকালে আমার দিকে দ্বিতীয়বার সেই মেয়ে ফিরে তাকাবেই। সুদর্শন ছিলাম বললে একটু ভুল হবে, কারণ হলপ করে বলতে পারি আমি এখনো যথেষ্ট সুদর্শন। আমার চেহারা, কথার ধরণ, শান্ত চিন্তাশীলতা, ব্যক্তিত্ব সব কিছুই আকর্ষণীয় ছিল। যে কোনো মহিলাকে আমার জালে আটকে ফেলা ছিল সময়ের ব্যাপার। এটা আমার কাছে একটা খেলা ছিল, মহিলাদের এক মুহূর্তে পটিয়ে আবার পর মুহূর্তেই তাদেরকে পাত্তা না দেয়াটা উপভোগ করতাম। তারা তখন দ্বিধান্বিত হয়ে যেত। মেয়ে মানুষকে দ্বিধায় ফেলে দেয়া মানে সে প্রায় আপনার জালে ফেঁসে গেছে। আমার এরকম রহস্যময় আচরণের কারণে অনেক ইগোবতী সুন্দরী মহিলারাও ‘হামবার্ট হামবার্ট’ নামে পাগল হয়ে যেত। যে কোনো মহিলা, সে যত আহামরিই হোক না কেন, তাদের সাথে আমি তাচ্ছিল্য নিয়েই মিশতাম। চাইলেই প্রেমিকা হিসেবে, স্ত্রী হিসেবে হাজার হাজার সুন্দরীর ভিড়ে আকর্ষণীয় দেখে, চোখের লম্বা পাপাড়ির মহিলাদের কাউকে আমি বেছে নিতে পারতাম, সে সুযোগ আমার ছিল। আমি চাইলেই ভ্যালেরিয়ার চেয়ে বহুগুণে সুন্দরী, বুদ্ধিমতী, জাঁকজমকপূর্ণ কাউকে বিয়ে করতে পারতাম। কিন্তু তাতে আমার কী লাভ?
আমি কী চাইতাম সেটা তো শুধু আমি জানি! আমার কাছে নিমফেট বালিকা ছাড়া অন্য কেউই আকর্ষণীয় ছিল না। ভ্যালেরিয়াই হোক বা বিশ্ব সুন্দরীই হোক বা বিশ্রী চেহারার কেউ হোক, শরীরের প্রশ্নে আমার কাছে এদের কোনো পার্থক্য নেই। বয়স্ক যে কোনো মেয়ে বা মহিলা সবাই আমার কাছে একইরকম, সুতরাং ভ্যালেরিয়াই ঠিকঠাক। ‘ভ্যালেরিয়াই ঠিকঠাক’- ভাবতে ভাবতে নিজেকে শুধু অসহায় মনে হচ্ছিল। আমি এত সুদর্শন সুপুরুষ যুবক, অথচ শরীর প্রসঙ্গে কতটা অতৃপ্ত, কতটা অসহায়! হায়, বেচারা হামবার্ট হামবার্ট!
৮.
আমি আগেই বলেছি আমার শুধু সঙ্গ দরকার ছিল। কথা বলার মত কাউকে দরকার ছিল। একা থাকলেই অসুস্থ বোধ করতাম। পাশে কারো উপস্থিতিই আমাকে রেহাই দিতে পারত। ভ্যালেরিয়ার ব্যাপারে আকর্ষণের কিছু কারণ ছিল। ওর ভেতরে আমি একজন নিমফেট মেয়েকে দেখতে পাই। যে নিমফেট মেয়ে ভ্যালেরিয়ার বয়স বাড়ার সাথে ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে পড়েছে, আর জাগবে না। জেগে ওঠার বয়স সে বহু আগে পার করে এসেছে। ভ্যালেরিয়া নিমফেট ছিল না, তবে ওর মধ্যে কিছু নিমফেটিক বৈশিষ্ট্য ছিল। যদি কিছু নিমফেট স্বাদ পাই, মন্দ কী! চাতুর্য ছিল ওর প্রতি আকর্ষণের আরো একটা কারণ। আহ্লাদ করতে জানত, প্রেম আদায় করে নেয়ার মজ্জাগত কৌশল ছিল। এমন নয় আমাকে খুব ভালবাসত, কিন্তু যতটুকু করত, তার পুরোটাই আমার মনোযোগ কেড়ে নিত।
ভ্যালেরিয়ার আচরণ সে অর্থে মেকি ছিল। কিন্তু আমার কাছে কখনোই মেকি মনে হতো না। যেন মানিয়ে গিয়েছিল, যেন ওর ধরণটাই ওরকম। আমি সেই ধরণটার প্রেমে পড়ে যাই, ওকে আমার ভাল লাগতে শুরু হয়। ভ্যালেরিয়ার তখন বয়স আনুমানিক ত্রিশের কাছাকাছি ছিল। ওর সঠিক বয়স কত ছিল সেটা কখনোই জানতে পারিনি। এমনকি পাসপোর্টে দেয়া জন্ম তারিখের তথ্যটাও সঠিক ছিল না। কুমারীত্ব হারানোর পরে বহুদিন কোনো পুরুষের স্পর্শের বাইরে ছিল বলে ওর মাঝে আপোষ করে মানিয়ে নেয়ার একটা আচরণ কাজ করত। হয়ত এই কারণেই ওর চেহারায়, আচরণে আমার সাথে সবসময় একটা সুখী ভাব থাকত। আমি নিশ্চিত না।
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ঘরের ভেতর ঢোলা গাউন পরা অবস্থায় হাঁটাচলা করত। আমি ঘুম জড়ানো চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতাম। ওর পরনের গাউনটা ছিল নিতম্ব ঢেকেই শেষ। বাকি অংশ পা খোলা, আয়নার মত মসৃণ পা, সেই পায়ে স্যান্ডেল থাকত, হাঁটার সময় সেই স্যান্ডেলে শব্দ হতো, সেই শব্দে জগতের সুর খেলা করত, চলাফেরার চমৎকার ভঙ্গি, সোনালি চুল, মায়াবী চোখ, সেই মায়াবী চোখের উপর রাখা চশমা, সেই চশমার ভেতর দিয়ে ওর বিশাল পৃথিবীর পরিধি আমাকে মুগ্ধ করে ফেলত। ভ্যালেরিয়া প্রচুর বই পড়ত, এবং যথেষ্ট জ্ঞানী ছিল। ওর চিন্তার পরিধি আর সেগুলোকে কাজে লাগানোর বাস্তব জ্ঞান দেখে আমি মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যেতাম। কাউকে মোহাচ্ছন্ন করে রাখার কৌশল ওর ভালই জানা ছিল।
মেইরিতে আমাদের বিয়ে হয়। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে ভ্যালেরিয়াকে আমার বাসায় নিয়ে আসি। নতুন ভাড়া বাসা। বিয়ের আগেই খুঁটিনাটি ভেবে রেখে পরিকল্পনামত সব ব্যবস্থা করে রেখেছিলাম। একটা বড় বাসা, দুইজনের আলাদা আলাদা ঘর। বাসররাতে ভ্যালেরিয়াকে চমকে দিতে ওর জন্য কিছু পোশাক যোগাড় করে রেখেছিলাম। ঘরে ঢুকে ওকে ছুঁয়ে দেবার আগে ওই পোশাকগুলো ওর সামনে হাজির করলাম। এই জামাগুলো কাছের এক এতিমখানা থেকে চুরি করে রেখেছিলাম। রাতটা মন্দ কাটেনি, কিন্তু ঝামেলা হয়ে গেল অন্যখানে। খুব দ্রুতই বাস্তবতা ফুটতে শুরু করল। পরদিন সূর্যের আলো ফুটতেই যেন আমি আমার বাস্তবতা অনুধাবনের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেলাম। ভ্যালেরিয়ার ভেতরের সেই কিশোরীসুলভ আচরণ আর নেই। কে ও? যেন কোনো বয়স্ক স্ত্রী ছাড়া আর কিছুই না। আমার দেয়া চুরি করা জামাগুলো পরে শুয়েছিল। সকালবেলার সেই কুঁচকানো জামার মতই মনে হচ্ছিল ওকে। কোথায় সেই আয়নার মত মসৃণ পা? সোনালি চুলের সৌন্দর্য? কোথায় সেই চুলে খেলে যাওয়া বাতাসের দোলা? কোথায় সেই শিশুসুলভ ভ্যালেরিয়া? কিছুই খুঁজে পেলাম না। উল্টো দেখা দিল এক সংসারী স্ত্রী, মধ্যবয়স্ক ভদ্রমহিলা। মধ্যবিত্ত দশজন স্ত্রীর মতই একঘেয়ে, বিরক্তিকর মনে হলো। যেন রাস্তায় হেঁটে যাওয়া কোনো সাধারণ মেয়ের মানুষ। বিয়ের আগে যে ভ্যালেরিয়া প্রেমিকার মত ছিল, বিয়ের পরদিনই তার কিছুই আর অবশিষ্ট ছিল না
।
১৯৩৫ থেকে ১৯৩৯ পর্যন্ত চার বছর এভাবেই কেটে গেল। ভ্যালেরিয়ার সাথে চার বছর কাটাতে আমার কোনো অসুবিধাই হয়নি। প্রথমত, ভ্যালেরিয়ার আচরণ ছিল অমায়িক, ওর আচরণ নিয়ে কোনো অভিযোগ করার সুযোগ নেই। ওর চুপচাপ স্বভাব আমাকে একা থাকার সুযোগ করে দিয়েছিল। দ্বিতীয়ত, আমাদের বাসাটা ছিল বেশ বড়। একটি জানালায় কুয়াশাময় দৃশ্য, অন্যটির সামনে উঁচু ইটের দেয়াল। ছোট একটি রান্নাঘর, জুতার আকৃতির একটা বাথটাব। বাথটাবে শুয়ে শুয়ে নিজেকে মারাট মনে করতাম। পার্থক্য শুধু পিছন থেকে কোনো আততায়ী ছুরি নিয়ে মারতে আসত না। (মারাটের কাহিনী যারা পড়েছেন তারা বুঝতে পারবেন।) যাই হোক, সবকিছু মিলিয়ে খারাপ ছিলাম না। আমি আমার ঘরে নিজের মত করে থাকতাম, ভ্যালেরিয়াও তার মত করেই ভাল থাকত। ও ওর কাজে যেত, আমি ভাঙাচোরা একটা টেবিলে আমার লেখালেখির কাজ চালাতাম। কাজের চাপের ফাঁকে কোনো কোনোদিন সন্ধ্যায় আমরা একসাথে সিনেমায় যেতাম, রেস দেখতে যেতাম, বক্সিং খেলা দেখতে যেতাম।
ভ্যালেরিয়ার শরীরের প্রতি আমার আকর্ষণ ছিল না বললেই চলে। একেবারেই প্রয়োজন না হলে ওর সাথে সচরাচর বিছানায় যেতাম না। বাসার সামনে এক মুদি দোকানী বাস করত, তাদের ছোট মেয়েটা নিমফেট ছিল। মেয়েটাকে দেখলেই আমার ভেতরের দানবটা জেগে উঠত। মাঝে মাঝে আমি উন্মাদের মত হয়ে যেতাম। মুদি দোকানীর মেয়েকে পাওয়া যেহেতু সম্ভব ছিল না, তাই ভ্যালেরিয়াকেই তখন কাছে টেনে নিতে হতো। ভ্যালেরিয়া আমার যৌনরুচি সম্পর্কে জানত না। না জানলেও এই ক্ষেত্রে ও যে আমাকে কতটা সাহায্য করেছে সেটা আমি ভাল করেই জানি!
রান্নাবান্নায় আলসেমী লাগলেই আমরা বাইরে খেতে যেতাম। রু বোনাপার্টের দিকটায় মানুষের ভিড় বেশি হলেও ওখানকার খাবার, ওদের অতিথিপরায়ণ আচরণ বেশ ভাল লাগত। সুন্দর টেবিল ক্লোথ, ভাল মানের বিদেশি ওয়াইন, চমৎকার পরিবেশ, সাজসজ্জা যথেষ্ট আকর্ষণীয় ছিল। তার পাশের দোকানে হাতের তৈরি আমেরিকান বিভিন্ন সৌখিন জিনিস বিক্রি হতো। ওই দোকানটাও অনেক সুন্দর ছিল। ওদের বাতিগুলো আমার ভাল লাগত। কখনো রাতের বেলা এলে ওই দোকানের আলোগুলোর সৌন্দর্য আমি মুগ্ধ চোখে উপভোগ করতাম। তখন বিভিন্ন রঙের আলোর খেলা চলতে থাকত। অন্যান্য দোকানের তুলনায় ওদের ছাপার শিল্পগুলোও তুলনামূলক দারুণ ছিল।
১৯৩৯ এর গ্রীষ্মের দিকে হঠাৎ করেই আমার আমেরিকা প্রবাসী চাচা মৃত্যুবরণ করেন। সিবিল আন্টির কোনো বাচ্চাকাচ্চা ছিল না। চাচাও আর বিয়ে করেননি। উত্তরাধিকার সূত্রে তাঁর সম্পত্তির ভাগ পেয়ে গেলাম। কিছু শর্ত দিয়ে প্রায় হাজারখানেক ডলার তিনি আমার নামে লিখে দিয়ে গেছেন। শর্তগুলো হল, আমাকে আমেরিকায় গিয়ে বসবাস করতে হবে। এবং তার ব্যবসার কিছু অংশ দেখাশোনা করতে হবে। খবরটা আমার জন্য নিঃসন্দেহে আনন্দের ছিল। চাচা মারা যাবার শোক বাদ দিয়ে আনন্দিত হওয়াটা বেমানান। তাই খুশির ব্যাপারটা চেপে রইলাম। ভ্যালেরিয়ার সাথে একঘেয়ে জীবন কাটাচ্ছিলাম। জীবনে পরিবর্তনের দরকার ছিল। তাই সুযোগটা লুফে নিলাম। স্বাধীন হবার এইই এক বিশাল সুযোগ। কিন্তু আরেকটা জিনিস খেয়াল করে অবাক হয়ে গেলাম। কয়েক সপ্তাহ ধরে লক্ষ্য করছিলাম ভ্যালেরিয়া ঠিক আগের মত নেই। কেমন ক্লান্ত মনে হতো! মাঝে মাঝে আমার প্রতি খুব বিরক্তি প্রকাশ করে ফেলত। এমনকি আমার সাথে ও যেসব মেকি অভিনয় করত সেগুলোও হুট করে হারিয়ে গেছে।
নিউ ইয়র্ক যাবার কথা শুনে ও মন খারাপ করে ফেলল, আমার সাথে হিংস্র আচরণ করা আরম্ভ করল। ব্যাপারটা সুবিধার মনে হলো না। এই ননসেন্স মহিলার কাগজপত্রেও অনেক ঝামেলা ছিল। আমার সাথে তৈরি করা ওর সুইস নাগরিকত্বের পাসপোর্ট ছিল, কিন্তু সেটা দিয়ে কাজ চালানো সম্ভব না। তাই নতুন করে ওর কাগজ তৈরি করার চেষ্টা করলাম। ভ্যালেরিয়াকে দেখে মনে হলো ও আমেরিকায় যাবার কথাটা ঠিকমত মেনে নিতে পারছে না। আমি ওকে আমেরিকার গল্প শোনাই, আমেরিকার সুন্দর সুন্দর গাছপালা, প্রকৃতি, কোমল শিশুদের কথা বলি, উৎসাহ দিই, ওখানে প্যারিস জীবনের চাইতে কত বেশি উন্নতভাবে বাঁচতে পারব সব বোঝালাম। কিন্তু ওর মন খারাপ ভাব দূর করে কার সাধ্য!
একদিন ওর কাগজপত্রের কাজ প্রায় শেষ করে পাসপোর্ট অফিস থেকে বের হলাম। প্রথমে ভ্যালেরিয়ার অদ্ভুত আচরণ খেয়াল করিনি। খেয়াল করতে মনে হলো ওর ভিতরে কী এক দ্বন্দ্ব চলছে! একটা কথাও না বলছে না। বারবার মাথা নেড়ে অদৃশ্য কিছুর প্রতি অবিরাম আপত্তি করে চলেছে। ও কিছু লুকাচ্ছে কিনা জানতে চাইলাম। সে ফরাসি ভাষায় জবাব দিল, ‘আমার জীবনে অন্য কেউ আছে। আমি অন্য কাউকে ভালবাসি!’
কথাগুলো যে কোনো স্বামীর জন্যই অপমানজনক এবং অস্বস্তিকর। রাগে আমার গা জ্বলে উঠল। এক মুহূর্তেই মাথায় খুন চেপে গেল। শান্ত থাকার চেষ্টা করছিলাম। নিজেকে বোঝাচ্ছিলাম এই ব্যাপারে কোনোরকম বোঝাপড়া করার জন্য এই পাবলিক প্লেস মোটেই সুবিধার জায়গা না। রাস্তাঘাটে ঝগড়া করা একদমই ভাল দেখাবে না। নির্জন কোথাও যাওয়া যাক!
বছরের পর বছর বয়ে বেড়ানো গোপন কষ্ট, ভোগান্তি যে কোনো মানুষকেই ধৈর্যশীল করে তোলে। এবং সেই মানুষগুলো ভাল আত্ম-নিয়ন্ত্রণ করতে জানে। আমিও সাময়িকভাবে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণে নিলাম। নির্জন পরিবেশ দরকার! এই ব্যাপারে কথা বলার জন্য নির্জনতা পেতে একটা ট্যাক্সি ডাকলাম। ট্যাক্সিতে উঠেই সব বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা শুনতে চাইলাম। আমার প্রচণ্ড খারাপ লাগছিল। খারাপ লাগার কারণ ‘ভালবাসা’ নয়, অন্যকিছু। ভ্যালেরিয়া আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, আমাকে অপমান করেছে, আমার আত্মসম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। আমার স্ত্রী অন্য কাউকে ভালবাসে, এটা আমি কীভাবে মেনে নিব? সমাজকেই বা মুখ দেখাবো কীভাবে? এবং বাজে ব্যাপার হলো এই বিষয়ের বৈধতা ও অবৈধতা যাচাইয়ের পুরো ভার ছিল একমাত্র আমার উপর। মধ্যস্ততা করার জন্য আর কেউ ছিল না। আমার এই হতচ্ছড়া স্ত্রী ভ্যালেরিয়া, যে কিনা আমার সম্মান, আমার ভাগ্য নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করেছে, তাকে আমি ক্ষমা করতে পারি না! সে ক্ষমা পাবারও অযোগ্য ছিল। আমি প্রচণ্ড রাগে কাঁপতে থাকি। ট্যাক্সিতে বসে প্রথমে আমি ওর প্রেমিকের নাম জানতে চাইলাম।
ভ্যালেরিয়া চুপ করে রইল। আমি চিৎকার করে বারবার একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে লাগলাম। কিন্তু ভ্যালেরিয়ার কানে আমার প্রশ্ন ঢুকছিল না, শুধু অনর্গল নিজের কথা শুনিয়ে যাচ্ছিল। আমার সাথে সে কতটা অসুখী, ওর জীবন আমি কতটা অসহ্য করে তুলেছি, ওর স্বাধীনতা আমি ছিনিয়ে নিয়েছি ইত্যাদি এবং ইত্যাদি! এক পর্যায়ে আমার কাছে সে ডিভোর্স চেয়ে বসল।
আমি রাগ সামলাতে না পেরে ওর হাঁটুতে প্রচণ্ড জোরে আঘাত করে বসলাম। চিৎকার করে আবার ওর প্রেমিকের নাম জানতে চাইলাম! ও তখন কিছুটা সহজ হয়ে এলো। হাঁটুর ব্যথার স্থান চেপে ধরে সহজভাবে আমার প্রশ্নের উত্তর দিল, কোনো কথা ছাড়াই উত্তর, যেন এই উত্তর এত সহজ যে তার জন্য কোনো শব্দ উচ্চারণ করার প্রয়োজন ছিল না। তর্জনীর ইশারায় আমাদের ট্যাক্সির ড্রাইভারকে দেখাল। ট্যাক্সির ড্রাইভার পিছনে ঘুরে আমার দিকে ক্রূর দৃষ্টিতে তাকালো। মাঝখানের জানালার কাঁচ খুলে লোকটা নিজের পরিচয় দিল। এতদিন পরে এসে সেই জঘন্য লোকটার বিশ্রী নাম আমার মনে নেই, তবে এতটুকু স্পষ্ট মনে আছে লোকটার ছিল ক্রু কাট চুল, জঙ্গলের মত গোঁফ, সম্ভবত রাশিয়ান প্রাক্তন কর্নেল ছিল। জোর দিয়ে বলতে পারি, ওরকম আহাম্মক চেহারার লোক খুঁজলে বেশি কষ্ট করতে হবে না, রাশিয়ার পথেঘাটে হাজার হাজার পাওয়া যাবে ভিক্ষার থালা হাতে!
গাড়ি থামিয়ে আমরা একটা ক্যাফেতে ঢুকলাম। একটা টেবিল বেছে নিয়ে সেখানে বসে পড়লাম। ড্রাইভার লোকটা ওয়াইন অর্ডার করল। ভ্যালেরিয়া খোঁড়াচ্ছিল। চেয়ারে বসে ওর আঘাত পাওয়া হাঁটুতে ভেজা রুমাল ধরে রাখল। আর এমনভাবে কথা বলতে লাগল যেন আমাকে বলছে না, আমার ভেতর থেকে ভেতরে কথাগুলো প্রবেশ করিয়ে দিচ্ছে। প্রতিটি কথায় তার প্রেমিকের সাথে তার সম্পর্কের কথা, ওদের পরিকল্পনা, কী কী করেছে, কী কী করবে, সব যেভাবে বলতে লাগল তাতে আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম ভ্যালেরিয়া বহু আগেই আমার সীমানা পেরিয়ে গেছে। যাকে আমি আমার স্ত্রী হিসেবে ভেবে এসেছি সে আসলে কখনোই আমার ছিল না। শেষমেষ জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তাহলে তুমি আমাদের কাকে বেছে নিতে চাচ্ছো?’
ট্যাক্সোভিচ (নাম যেহেতু ভুলে গেছি তাই ট্যাক্সি থেকে উদ্ভূত নাম, খারাপ না, মানিয়ে গেছে!) মুচকি হেসে ভ্যালেরিয়ার হয়ে জবাব দিল, ‘আমার ধারণা, সে আমাকেই বেছে নিচ্ছে।‘
শেষমেশ আমি ভ্যালেরিয়াকে সবকিছু গুছিয়ে চলে যেতে বললাম। এই অবস্থার পরে আর আমার সাথে ভ্যালেরিয়াকে মানায় না। আমি ভ্যালেরিয়াকে একা পাবার অপেক্ষা করছিলাম। ড্রাইভার আমাদেরকে ট্যাক্সিতে তুলে নিজেই পৌঁছে দেবার দায়িত্ব নিল। উপায়ন্তু না দেখে সেই ট্যাক্সি চেপেই বাসায় ফিরলাম। সারাপথ ওই ফালতু ট্যাক্সি ড্রাইভারটা ভ্যালেরিয়ার সাথে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালাতে লাগল। আমি রাগে, অপমানে চুপ করে বসে রইলাম। ভাবতে লাগলাম আমার কী করণীয় এখন! ভ্যালেরিয়াকে খুন করার বা প্রেম করার বা দুটোই একসাথে করার বা কোনোটা না করার, কিছুরই সুযোগ আমি পেলাম না। বাসার সামনে এসে ট্যাক্সি থামে। ভ্যালেরিয়ার সাথে কথা বলতে বলতে ওই অসুভ্য লোকটা বাড়ির ভেতরে পর্যন্ত ঢুকে গেল। আমি কিছুই বলতে পারলাম না। আমি তখনো ভ্যালেরিয়াকে একা পাবার সুযোগ খুঁজছিলাম।
আমার মাথায় তখন পুরোপুরি খুন চেপে গেছে। ভ্যালেরিয়াকে খুন করার সুযোগ আমি কিছুতেই হাতছাড়া করতে চাই না। কিন্তু ওই নির্বোধ ট্যাক্সি ড্রাইভার আমাদের একা থাকার কোনো সুযোগই দিচ্ছিল না। ভ্যালেরিয়া যতক্ষণ ওর জিনিস গোছাচ্ছিল লোকটা ঘরের ভেতর ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। আমি একবার ওই এলাকাতেই এক বখাটে ছাত্রের হাতে একটা পিস্তল দেখেছিলাম। ছেলেটার সাথে কখনো কথা হয়নি, কিন্তু আমি পরিকল্পনা করলাম ওর কাছ থেকে পিস্তলটা ধার নেয়া যায় কিনা! ছেলেটাকে চিনি, কারণ ওর ছোট বোন নিমফেট ছিল। আমি প্রায়ই ওই মেয়েটার সাথে আলাপ করার চেষ্টা করতাম। আমি আজও ভাবি, যদি ভ্যালেসকাকে (ভ্যালেরিয়াকে ওর সম্রাট ড্রাইভার সাহেব ভ্যালেসকা বলে ডাকছিল। ভ্যালেসকা? ইয়াক!) আমি গুলি করতাম বা ওকে পানিতে ডুবিয়ে মারতাম বা ছুরি দিয়ে খণ্ড বিখণ্ড করে ফেলতাম, তাহলে এ জীবনে আমার চাওয়ার আর কিছুই বাকি থাকত না, আমি এতটাই রেগে ছিলাম। নিজেকে চেপে রেখে সুযোগ খুঁজতে লাগলাম।
খেয়াল করছিলাম ভ্যালেরিয়াকে ওই বলদ লোকটা যতবার ভ্যালেসকা বলে ডাকে, আমার তত বেশি রাগ হয়। ব্যাপারটা আমাকে আরো বেশি অসহায় করে তুলছিল। ভাবতে থাকি, কী করা যায়! শক্ত জুতোজোড়া চোখে পড়ল। ওটা পায়ে দিয়ে ভ্যালেরিয়ার পেটে দুম করে একটা লাথি মেরে দিব? কিন্তু সেটাও সম্ভব ছিল না। ওর প্রেমিক সব সময়ই আশেপাশে ঘুরঘুর করছিল। এমন না যে ভ্যালেরিয়াকে সে পাহারা দিচ্ছিল, এমনি ঘুরতে ঘুরতে ঘরের বিভিন্ন জিনিসের দিকে তাকাচ্ছিল, ভ্যালেরিয়াকে সুটকেস গোছাতে সাহায্য করছিল।
একবার লোকটা একটু সরে গিয়েছিল। ভ্যালেরিয়া তখন ওর গোলাপি রঙের প্যান্টি গোছাচ্ছিল। এই সুযোগ! ওকে শেষ করে দেয়া যায়। তারপর থেমে যাই! আমার মনে হতে লাগল ড্রাইভার লোকটা একইসাথে সবখানে চোখ রাখছিল। ভ্যালেরিয়া কখনোই তার চোখের আড়ালে না। পুরো বাসা একবার ঘুরে দেখল, চেয়ারে রাখা খবরের কাগজ পড়ল, সিগারেট ধরালো কয়েকটা, একবার বাথরুমে গেল, ভ্যালেরিয়ার বাবার দেয়া ফ্যানটা গুছিয়ে নিতে সাহায্য করল। লাগেজগুলো নামাতে সাহায্য করল। আমি চুপচাপ বসে বসে সব খেয়াল করছিলাম মাত্র। দুইহাত বগলে ঢুকিয়ে ঘৃণা আর বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে ছিলাম। খুনের নেশায় নিজেকে শুধু দিশেহারা মনে হচ্ছিল।
সব গোছানো শেষে দুজন একসাথে বেরিয়ে যায়। চলে যাওয়ার সময় দরজার প্রতিটা নড়াচড়া, শব্দ আজও আমার ভেতর অপমান আর অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে বাজতে থাকে। আমি কি সিনেমার মত বীরের বেশে ওদের সামনে গিয়ে লড়ব? চেয়ারে একটা ঘুসি মেরে মুখে পানি ছিটিয়ে শান্ত হতে আমি বাথরুমে ঢুকি। সেখানে আমার জন্য শেষ অপমান অপেক্ষা করছিল। আরামে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজের কিডনি হালকা করার পরে ওই নোংরা লোকটা ফ্ল্যাশ টেনে দেয়নি। কমোডে লোকটার পেশাব যেন আপন রঙ নিয়ে শেষ অস্তিত্ব ঘোষণা করে যাচ্ছিল। আর তার উপর একটা সিগারেটের ফিল্টার টুকরো আপনমনে ভেসে বেড়াচ্ছিল। চূড়ান্ত অপমানবোধে আমি গজগজ করতে লাগলাম। দৌড়ে রান্নাঘরে যাই। রান্নাঘরে একটা ধারালো ছুরি ছিল সেটা আমার খেয়ালই ছিল না। ওটা তুলে নিয়ে দ্রুত বাইরে বেরিয়ে আসি। কিন্তু হায়! ততক্ষণে ভ্যালেরিয়া ওর প্রেমিকের সাথে চলে গেছে। আর চাকার হালকা দাগ আমার দিকে তাকিয়ে শুধু ব্যঙ্গ করে হাসছিল।
আমি সিদ্ধান্ত নিলাম এদের ঠাণ্ডা মাথায় খুন করব। প্রথমে ওই আহাম্মকভিচকে খুন করতে হবে। ওই আহাম্মকভিচকে সরিয়ে দিতে পারলে ভ্যালেরিয়া পুরোপুরি অসহায় হয়ে পড়বে। তারপর ওকে আমি তিলে তিলে মারব। কিন্তু প্রতিজ্ঞা স্রেফ প্রতিজ্ঞার মতই পড়ে থাকে। আমিও সুযোগ খুঁজতে খুঁজতে ওদেরকে হারিয়ে ফেলি । শেষমেশ কিছুই আর হয়ে ওঠেনি। একদিন এক লোকের কাছে শুনতে পাই মিসেস ট্যাক্সিমোভিচ ১৯৪৫ এর দিকে শিশু জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেছে। শুনে খুশি হই, সান্ত্বনা বলতে এতটুকুই। যতটুকু জানতে পেরেছিলাম ওরা ক্যালিফোর্নিয়ায় আমেরিকান জাতিবিদ্যার উপর বেশ ভাল একটা বেতনের কাজ করত। একজন পরিচিত ডাক্তার আমাকে বলেছিল সে নিজের চোখে তাদেরকে ক্যালিফোর্নিয়ায় দেখেছে। সুতরাং অবিশ্বাসের কারণও ছিল না। পরবর্তীতে আমেরিকায় চলে যাই বলে প্রতিশোধ নেবার সুযোগ আমার তখনো ছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় ওই ট্যাক্সিমোভিচের নাম এবং চেহারা আমি দুটোই ভুলে যাই।
কাজে ডুবে যাই এরপর। লেখালেখি পুরোদমে চলতে থাকে। সারাদিন লাইব্রেরিতে পড়ে থাকতাম। আমি এখনো প্রচুর বই পড়ি। ছোটবেলাতেই আমার বই পড়ার প্রচণ্ড নেশা তৈরি হয়। আমার আইনজীবীর কাছে আমি বিশেষ কৃতজ্ঞ যে এই জেলখানাতেও আমাকে বই পড়ার সুযোগ করে দিয়েছে। প্রিজন লাইব্রেরির ব্যবস্থা খুবই ইতিবাচক একটা কাজ বলে আমি মনে করি। এখানে প্রচুর বই আছে, বাইবেল আছে, ডিকেন্সের বই, শিশুদের এনসাইক্লোপিডিয়া, এই বইতে সুন্দর সুন্দর নিমফেট বালিকাদের ছবি আছে, স্কাউট মেয়েদের গ্রুপ ফটো দেয়া, অনেক মেয়ের সোনালি উজ্জ্বল চুল, আহা! আগাথা ক্রিস্টির ‘মৃত্যু ঘোষিত হয়েছে’ নামে একটি বই পড়লাম সেদিন। পার্সি এলফিনস্টোনের বই আছে, একজনের আরেকটা বই আছে। লোকটা একাধারে অভিনেতা, নাট্যকার, লেখক, প্রডিউসার।
নাম কুইল্টি, ক্লেয়ার; আমেরিকান নাট্যাকার। নিউ জার্সিতে ১৯১১ সালে জন্মগ্রহণ করে। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা তার, ব্যবসায়িক পেশায় নেমেছিল কিন্তু পরবর্তীতে নাটক লেখা শুরু করে। দ্যা লিটল নিম্ফ, দ্যা লেডি হু লাভড লাইটনিং (এই বইটা ভিভিয়ান ডার্কব্লুমের সাথে যৌথভাবে লেখা), ডার্ক এইজ, দ্যা স্ট্রেঞ্জ মাশরুম, ফাদারলি লাভ, এবং আরো অনেক নাটকই লিখেছে এই লোক। তার অনেক শিশুতোষ নাটক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। লিটল নিম্ফ(১৯৪০) নাটকটি ১৪,০০০ মাইল ঘুরেছে, এবং প্রায় ২৮০ টি স্থানে নাটকটি মঞ্চায়ন করা হয়। প্রতি শীতে বিভিন্ন জায়গায় নাটকটি তোলা হয়, এবং শেষ হয় নিউ ইউর্কে এসে। এই লোকটার শখ- দ্রুতগতির গাড়ি, ছবি তোলা, পোষা প্রাণি।
কুইনি, ডলরেস। ১৮৮২ সালে ওহিওর ডেটনে জন্ম। আমেরিকান একাডেমির মঞ্চ নাটকের উপর পড়াশুনা করে অভিনয়ে যোগ দেয়। ১৯০০ সালে প্রথম নাটকে অভিনয় করে। নিউ ইয়র্কে প্রথম অভিনয় করে ১৯০৪ সালে নেভার টক টু স্ট্রেঞ্জারস নাটকে। প্রায় তিরিশটি নাটক করে হঠাৎ উধাও হয়ে যায়।
এদের কথা কেন বলছি আমি জানি না। হয়ত তথ্যগুলো পরে কাজে আসবে। শুধু বলি, এই পুরনো অভিনেত্রীর নামে আমি নতুন কাউকে চিনি। আমার নিমফেটদের একজন! সেও হয়ত অভিনেত্রীই, জীবনের মঞ্চে প্রতি পদে পদে তাকে অভিনয় করে টিকে থাকতে হয়েছে। ১৯৩৫ সালে তার জন্ম। এক নাট্যকারের মৃত্যুতে তার উত্থান। শুয়োর বধের উপাখ্যান! কুইল্টি হত্যার গিলটি! হাহাহা! কী সব বাজে বকছি, না? ললিতা, এই শব্দ ছাড়া খেলা করার মত আমার আর কী আছে?
রনক জামান
কবি ও অনুবাদক ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৯১, মানিকগঞ্জে জন্ম।
প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ : অগ্রন্থিত ওহী [তিউড়ি, ২০১৯] এবং
ঘামগুলো সব শিশিরফোঁটা [অনুপ্রাণন ২০১৬]