১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ সাল।
মা চলে যাবার ঠিক ১মাস পূর্ণ হলো আজি।
আমাকে ঘিরে রেখেছে মায়ের পত্রে-পুষ্পে ঠাসা স্মৃতিবাহী এক অতলান্তিক মায়াবী নদী। এক জীবনে এর অবগাহন শেষ হবার নয়।
মা চলে যাবার পরে আমাকে দেখতে এসেছে কেউ কেউ।আমাকে মনে করে শূন্যগৃহ দেখে ফিরে গেছে কোনো কোনো প্রিয়জন। যেহেতু আমি খুব দ্রুতই সন্তানদের অনুরোধে আবার চলে এসেছি টরন্টোতে। কাজেই অনেকেই পায়নি আমাকে। তবে এই করোনাক্রান্ত সময়ে কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক নিজের নিরাপত্তা অগ্রাহ্য করে কবি পিয়াস মজিদসহ আমাকে যেদিন দেখতে এসেছিলেন—আমি তার এই মধুর মহানুভবতায় বিমুগ্ধ হয়েছি, এবং তার প্রতি আমার ঋণ যেমন বেড়েছে আরো, তেমনি চিরকালের কৃতজ্ঞতায় মনে হয় আরো গভীরভাবে বাধা পড়েছি।
যেমন অপর এক হৃদয়-ঋণের বোঝায় আমাকে ভারাক্রান্ত করে রেখেছেন কবি আসাদ চৌধুরী। ২০১৬ সালের ১২ মার্চ মুক্তিযোদ্ধা ও কবি রফিক আজাদের প্রয়াণের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে আমার মাথায় যে সান্ত্বনার হাতখানি রেখেছিলেন বড় ভাইয়ের মতো—নির্বাক সেই ছায়াময় সান্ত্বনার স্পর্শ আজো অনুভব করি।
কবির চল্লিশ দিনের আয়োজন উপলক্ষে স্ব-উদ্যোগে গুণীগ্রামে আসাদ ভাইয়ের সশরীর অবস্থান এবং সকল কাজে তার পরামর্শ আমাদের আয়োজনটি সুনিপুনভাবে সম্পন্ন করতে শক্তি যুগিয়েছে শোকের সেই অধীর সময়ে। কাজেই আমৃত্যু তার সঙ্গে দেখা করা আমার পরম দায়িত্ব-কর্তব্যের অংশ বলেই মনে করি। ফলে কবি ফেরদৌস নাহার যেদিন আমাকে ফোনে বললো, আপা যাবেন নাকি, আমি আসাদ ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাবো তার অশোয়ার বাড়িতে। আমাদেরকে নিজস্ব বাহনে করে নিয়ে যাবে কবিভক্ত ও আবৃত্তিকার হিমাদ্রি রায়—- আপনিও তো চেনেন ওকে।
ওহ, তাহলে তো কোনো কথাই নেই ফেরদৌস।
এক বাক্যে ওকে আমি হ্যাঁ বলে দিলাম। কেননা, দীর্ঘদিন আমিও যাবো যাবো করে—করোনার দাপটে, ভয়ে, পরস্পরের নিরাপত্তারকথা ভেবে অশোয়া যাবার আর নাম করিনি সন্তানদের সামনে। ধন্যবাদ ফেরদৌসকে, ওর এই পরিকল্পনার জন্যে। তবে এ যাত্রায় অশোয়া যাওয়া হয়নি, হিমাদ্রির টরন্টোর বাড়িতে দেখা হবে আমাদের। অনেকদিন পরে হলেও তবু দেখা হলো আমাদের।
দীর্ঘদিন টরন্টোতে আছে আবৃত্তিকার হিমাদ্রি রায়। আজ তার লাল টুকটুকে গাড়ির চালকের সীটে সে নিজেই। পাশে বসে আছে কবি ফেরদৌস নাহার। গাড়িটি থামলো এসে ২১নং আইসবোট টেরেসের কন্ডোর সমুখভাগে। আমি আগে থেকেই চেস্টনাট গাছের ছায়ায় মৃদুমন্দ বাতাসে বসে ওদের জন্যে অপেক্ষায় ছিলাম।
এই বয়সে তো ‘অপেক্ষা’ শব্দটি বিশেষ কোনো তাৎপর্য বা অর্থ বহন করে না, তবু একজন কবির জন্যে অপর কবির অপেক্ষার সময়টুকু যেন অস্তগত প্রণয়ের শেষবিন্দুর শিশির বারিতে সজীব ও সতেজ হয়ে দেখা দিলো এই পড়ন্ত বেলায়। এখনো মনে হয় কবিদের পরস্পরের জন্যে রোমাঞ্চকর ভালোবাসাটুকু শেষ হয়ে যায়নি। কবি ছাড়া অপর কবি কাকে আর ভালোবাসবে এভাবে? একজন প্রকৃত মানুষ কিংবা কবি ছাড়া মিহিমায়া সুরে কথা সে বলবে আর কার সঙ্গে?
টরন্টোর ডাউন টাউনের বিখ্যাত সিম্বল হলো ’সিএন টাওয়ার’ —এই টাওয়ার সংলগ্ন স্টেডিয়াম ‘রজার্স সেন্টার’ —যা একদা স্কাইরুম হিসেবেও পরিচিত ছিলো। এই ‘সিএন টাওয়ারে’র প্রায় পাদদেশের একটি রাস্তার নাম নেভী ওয়ার্ফ, অপরটি আইসবোট টেরেস। এই আইসবোট টেরেসে নির্মিত পঞ্চাশতলা কন্ডোর পঁয়তাল্লিশ তলায় আমাদের প্রথম সন্তান অভিন্নের ৪৫০৭ নম্বর ফ্ল্যাট। এদেশে আমার জন্যে এক রাজকীয় রাজ্যঅতিথি ভবন। যতদিন থাকি ওর সমাদরে—আদরে—অনুপ্রেরণায়—উৎসাহে লেখালেখিতে ব্যস্ত থাকি। মাঝে মধ্যে আবার ঝগড়া-ঝাটি, মনোমালিন্য, মান-অভিমান, দেশে ফিরে যাবার অস্থিরতাও থাকে। বাকী সময় মিউজিক পার্কের বনে বাদারে ঘুরি—নিঃসঙ্গতার সঙ্গ লাভ করি। সুবোধ বালিকার মতো হাঁটাহাঁটি করি। অভিন্নের কথা মতো কম খেয়ে সুস্থ ও সুস্বাস্থ্যে বেঁচে থাকবার আরাধনা করি।
নেভী ওয়ার্ফে থাকে প্রিয়নাতি অহমসোনা এবং তার বোন অবনী মনোবীনা। তারা দু’জনে আমার পূর্বরাগ, অনুরাগ-ভালোবাসা, প্রেম ও প্রেরণার উৎসকণা। তার পরিবারের সান্নিধ্যে থাকা মানে গভীর ঘন বনাঞ্চলে সবুজের বন। সেই সবুজ আলোর মাধুরীকণায় পাখির কূজন ওকলতানমুখর সময়টুকু আমার জন্যে জীবনদায়ী অনন্য এক কটেজ-বাসের সুরভিত অক্সিজেন-প্রবাহ যেন।
তবু দেশের জন্যে মন কেমন করে। মন কেমন করে!
রফিক আজাদের সমসাময়িক শ্রদ্ধেয় কবি আসাদ চৌধুরী এ শহরে বাস করছেন, তিনি পাশে আছেন বলে মাঝে মধ্যে এদেশটিকে আপন বলে ভুল করি। টরন্টোতে এখন প্রায় পঞ্চাশ হাজার বাঙালির বসবাস বলে শুনে থাকি। ডাউন টাউন থেকে এক ঘণ্টা ড্রাইভে স্কারবোরো এবং দেড় ঘণ্টাড্রাইভে ব্রামটোন যাওয়া যায়। আপাতত এই দুই অঞ্চলেই বাঙালি পরিবারের আধিক্য। উপরন্তু বাঙালি পাড়া বলে খ্যাত ড্যানফোর্থ ইন্টারসেকশন এবং ভিক্টোরিয়াতেও বাংলাদেশী বাঙালিদের সংখ্যা নেহাইত কম নয়।
হিমাদ্রি রায় এবং কবি ফেরদৌস নাহার— দু’জনেই বাঙালি অধ্যুষিত স্কারবোরো এলাকার নিকট প্রতিবেশী। এই দু’জন মিলে আমাকে তুলতে এসেছে হরিণ বাতাসে শীতের আগমনী বার্তা উড়িয়ে। পুনরায় সেখানেই যাচ্ছি—হিমাদ্রির সদ্যকেনা নতুন বাড়ির অতিথি সেবা পেতে এবং সেখানে হিমাদ্রির জীবনসঙ্গী বাঙালি নারীর মতোই অসীম ধৈর্যশীলা একজন ফিলিপিনো মেয়ে জিনা আছে। তাকেও আজ প্রথম দেখবো, একজন বাঙালির বিদেশী বধূ হিসেবে।
কবি ফেরদৌস নাহার ডাউন টাউন দেখতে ভালোবাসে একথা হিমাদ্রিও জানে। হিমাদ্রি তাই একা না এসে ফেরদৌসকেও সঙ্গে নিয়ে এসেছে পাশাপাশি বসিয়ে—এই জার্নিটুকু উপভোগ করতে। কথাটি শুনে প্রাণটা জুড়িয়ে গেলো।
মনে মনে ভাবলাম হিমাদ্রি নিশ্চয় এও ভেবেছে যে, কবি ফেরদৌস নাহারকে দেখে আমিও প্রাণ ফিরে পাবো। এদেশের সবুজ আমার দু’চোখে আরো একটু বেশি সবুজ হয়ে ধরা দেবে। কবিতা প্রেমিক বুদ্ধিমান ছেলে যাকে বলে।কবিদের প্রতি এই মমত্ববোধ ও ভালোবাসাটুকু কম কিসে?
দুই.
কাঠের দেয়াল ঘেরা হিমাদ্রির বাংলো টাইপের বাড়িতে প্রবেশ করা মাত্র কবি আসাদ চৌধুরী পরিবারের আগমন বার্তা ভেসে এলো বাতাসে। শাহানা ভাবীর সপ্রাণ উপস্থিতি বলে দিচ্ছিলো আমাদের জন্যে অপেক্ষা করছেন তারাও। দুপুরে হিমাদ্রির বাড়ির বাঙালি ভোজের পরে আসাদ ভাই, কন্যা শাওলি ও জামাতা নাদিম ভাতঘুমে তখনো বিভোর। আমাদের বারণ সত্ত্বেও শাহানা ভাবী কবিকে তক্ষুনি ঘুম থেকে ডেকে তুললেন।
প্রাথমিক কুশলাদির পর কবি ফেরদৌস নাহার আসাদ ভাইয়ের হাতে ওর দুটো বই যথাক্রমে, ‘প্রেম-অপ্রেম যাবতীয় সাক্সফোন’(কবিতা সমাবেশ) ও ‘পশ্চিমে হেলান দেয়া গদ্য’(প্রবন্ধ) তুলে দিলো। বছরখানেক আগেই ওর থেকে এই বই দুটো উপহার পেয়ে আমিও পাঠে দারুণ মুগ্ধ হয়েছি। আসাদ ভাই বই দুটো উল্টোপাল্টে দেখে বললেন, আমি পড়বো ফেরদৌস।
গত বছর বইমেলায় আমার কবিতাসমগ্র বেরিয়েছে। আসাদ ভাই তা আগে থেকে জানতেন। বইটি আসাদ ভাইকে শুধু এক নজর দেখালাম, বিশেষ কারণে বইটি তার হাতে তুলে দিতে পারিনি। তবে অচিরেই বইটি একদিন তার অশোয়ার বাড়িতে গিয়ে যেন দিতে পারি—সেজন্যে আরো একবার কবি-সন্দর্শন বাহানায় অশোয়ার বাড়ির জানালা দরোজার পথ খুলে রাখতে বললাম শাহানা ভাবীকে।
ইতোমধ্যে স্যুইমিংপুল সাইটে চা-কফি-নাস্তাসহ কবিদের জন্যে প্রাণখোলা এক বাঙালি আড্ডার ডগমগ পরিবেশ রচনা করে আমাদের ডাকছে হিমাদ্রি। তার সঙ্গে আরো আছে আসাদ ভাইয়ের একমাত্র কন্যা শাওলি ও তার জামাতা আমাদের প্রিয় নাদিম ইকবাল।
নাদিম ইতোমধ্যেই আলোকচিত্রিশিল্পী ও স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রামান্যচিত্র নির্মাতা হিসেবে বেশ নাম করেছে।
২০১৮ সালে টরন্টোতে নির্মিত তার প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ ছবি ‘মাদার টাং’ বাংলাদেশে রায়ের বাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্তরে বসে দেখেছিলাম।যেখানে বাংলা ভাষার ইতিহাস ও তার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে মাতামহ কবি আসাদ চৌধুরী কথা বলছেন তার নাতনী মিষ্টির সঙ্গে। প্রবাসে বেড়ে ওঠা নবীন প্রজন্মের নাতনী মিষ্টিসহ নবীন প্রজন্মের সকলের জন্যে বাংলা ভাষা শেখা ও জানার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে এই ছবির মূল চরিত্রে কবি আসাদ চৌধুরী অসাধারণ অভিনয় করেছেন। ‘মাদার টাং’ দেখে মনে হয়েছে কবি যেন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দায়িত্বই পালন করেছেন অধিকন্ত।
নাদিম শাওলীর কন্যা প্রবাসী প্রজন্ম কবি-পৌত্রী মিষ্টির চমৎকার অভিনয় এবং তাকে উদ্দেশ্য করে বাংলার ভাষার এই ইতিহাস বলে যাওয়ার অপূর্ব কৌশলে ছবিটি যেমন দর্শকনন্দিত হয়েছে, তেমনি দেশে-বিদেশে আলোচিত ও প্রসংশিত হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছে। এরপর ‘বিদ্যাভুবন’ এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে নাদিমের তৃতীয় স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘শিকড়ের ভাষা’ আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বেশ সাড়া ফেলেছে।
নাদিমকে যখনই দেখি—তখনই খুব চুপচাপ শান্ত শিষ্ট, নিজে বলে কম, অন্যান্যদেরকে শোনে বেশি। ওর আনন্দময় উপস্থিতি, বিনয়, সৌজন্যবোধের প্রকাশে যে কেউ আপ্লুত ও বিমোহিত হবে, আমি তো বটেই। কলকল করে চারপাশ মাতিয়ে রাখে আমাদের প্রাঞ্জল শাওলি মেয়েটা। ওর উপস্থিতিতে পাখি ডাকে, বনে বনে ফুল ফোটে যেন। হিমাদ্রিসহ ওদের দু’জনের ডাকাডাকিতে বাইরে এসে দেখি, উঠোনের আকাশ আর স্যুইমিংপুলের নীলজল মিলেমিশে একাকার। আটকে গেলো নয়ন।চমৎকার কাঁথা বিছিয়ে আসন পাতা হয়েছে, হেলানের জন্যে কতগুলো কুশানও আছে।হাঁটু সমস্যা যাদের, ভয় নেই, তাদের জন্যে চেয়ারও রাখা হয়েছে।
আসাদ ভাই বসবার আগে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কাঁথার সুই-সেলাইয়ের রঙিন ফোঁড়গুলো নিরীক্ষণ করে বুঝে নিলেন এ আমাদের বাংলাদেশের আসল কাঁথাই বটে। তারপর শিশিরের গায়ে হাত রাখার মতো গভীর মমতা ও খুব স্নেহ-আদরের সঙ্গে কাঁথার গায়ে নিজের স্পর্শ মাখালেন। আহা দেশ, সংস্কৃতি এভাবেই বোধ হয় একজন স্পর্শকাতর কবি-হৃদয়ে হারানো কড়ির মতো ফিরে ফিরে আসে। করোনাকালের নিষ্ঠুরতায় দু’বছরের বেশি সময় তিনি দেশে যেতে পারছেন না।সে দীর্ঘশ্বাস তো গোপনেই আছে।
ফেবু মিডিয়ার যুগে আজকাল যা হয়, ছবিতেই যেন সব কথা বলবার একটা চেষ্টা থাকে, ফলে ছবি তোলা আর শেষ হয় না।তবেছবির ক্লিকে ক্লিকে গল্পও এগিয়ে চলতে থাকে সময় ও পরিবেশ বাস্তবতার পথরেখা ধরে।
নাদিমের দক্ষ হাতে ওর চলচ্চিত্রের মেধাবী ক্যামেরা এবং আমাদের ব্যক্তিগত মোবাইলও শৈল্পিকগুণে প্রকৃত ক্যামেরার মতো কাজ করছিলো। একদিকে ছবি তোলায় মনোযোগ অন্যদিকে গল্পের রশি ধরে কফির পেয়ালার চুমুক। সুমধুর আড্ডার এরকম সময়ে বয়স তার সীমারেখা মানে না যেন। যে কোনো বয়সের কবি, শিল্পী-সাহিত্যিক আজকাল নিজেদের মানিয়ে নিয়েছেন টেকনো পৃথিবীর পরিমাপে।
তিন.
আজকের আড্ডার শুরুতেই গল্পের আলো ঠিকরে পড়লো গিয়ে কবি ফেরদৌস নাহারের মায়াবী চোখে-মুখে। সাধারণত এরকম সমাগমে আড্ডাপ্রিয় মানুষের সংখ্যা বেশি হলে দেখেছি যে, ফেরদৌস নাহার চুপ হয়ে থাকে, কান পেতে শোনে শুধু, নিজে প্রায় কিছুই বলে না। কিন্তু আজকের এই স্বল্প সমাবেশে তাকে অন্যরকম দেখছি। পৃথিবী বিখ্যাত পেইন্টারদের পেইন্টিং নিয়ে কিভাবে যেন কথা উঠলো। আসাদ ভাই এবং ফেরদৌস দু’জনেই জগত বিখ্যাত পেইন্টারদের বিভিন্ন প্রদর্শনী দেখার অভিজ্ঞতা শেয়ার করলো।
শিল্পী রুবেন্সর পেইন্টিং নিয়ে কথা বললেন আসাদ ভাই। পিটার পল রুবেন্স ছিলেন একজন ফ্লিমিশ ব্যারোক চিত্রশিল্পী, যিনি তাঁর অমিতব্যয়ী “ইউরোপীয়” চিত্রকর্মের জন্য সর্বাধিক পরিচিত ছিলেন। পেইন্টিংএর প্রতি আসাদ ভাইয়ের প্রীতিও অসাধারণ। যখন যেখানে থাকেন, সুযোগ পেলেই তিনি সেসব দেশের যে কোনো চিত্র প্রদর্শনীতে ঢুকে শিল্পের সহবত লাভ করেন সহজে। চিত্রশিল্পীদের কাজগুলো দেখেন কবির মনশ্চক্ষু দিয়ে, উপভোগ করেন নিজের কাব্যচিত্তের মাধুরি-মদিরায়।
কবি ফেরদৌস নাহারকে চিনি দীর্ঘকাল। আশির দশকে প্রথমে চিনেছিলাম আমার ইডেনের প্রিয় ছাত্রীদের অন্যতম একজন হিসেবে। একই সঙ্গে দুজনেই কাব্যচর্চার সঙ্গী ছিলাম। পরবর্তী সময়ে রফিক আজাদ ও আমার পরিবারের সঙ্গে ঘণিষ্ঠজন হয়ে ওঠে। কাব্য সহযাত্রী, সতীর্থ এবং অনুজপ্রতিম বন্ধু তো বটেই। সেই থেকে জানি, নানা বিষয়ে ফেরদৌসের শিল্প পিপাসাও আকণ্ঠ। শুধু কবিতার জন্যে এক জীবন ব্যয় করা উন্মত্ত প্রাণ এক। সুযোগ বুঝে সে একাই ঘুরতে বেরিয়ে পড়ে বিভিন্ন দেশ ও তার শিল্প-সংস্কৃতি জানবার দুর্বার আকাঙ্ক্ষাকে সঙ্গী করে। নিজের সঙ্গে সময় কাটাতে যারা ভালোবাসেন ফেরদৌস তাদেরই সহোদর।
নিউইয়র্কের The Museum of Modern Art সেন্টার ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতা, বিশেষভাবে ভ্যানগঘের ‘দ্য স্টারি নাইট’ দেখার অভিজ্ঞতা নিয়ে ফেরদৌস দারুণ প্রাণবন্ত এক আলোচনা উৎসমুখ খুলে দিলো যেন। মনে করিয়ে দিলো, ’দ্য স্টারি নাইট’ এর মূলছবির পরিমাপ হলো— (Starry night- size : 29″X 36″)। কিন্তু আজকাল ডিজিটাল প্রদর্শনীর এ্যানিমেশনে দেখায় অনেক বৃহৎ করে। যা কিনা বাস্তবের সঙ্গে মেলে না। এ্যানিমেশন করা দৈর্ঘ-প্রস্থে বিশালকার ‘স্টারি নাইট’ দেখে মূল ছবির স্বাদ খুঁজে পাওয়া আসলেই দুরূহ। অনেক দর্শকের মনে বিভ্রান্তিও তৈরি হতে পারে। তাই সরাসরি চিত্র-প্রদর্শন ছাড়া এরকোনো বিকল্প নাই।
ভ্যান গঘের আঁকা বিখ্যাত ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি ‘দ্য স্টারি নাইট’। ১৮৮৯ সালে ‘দ্য স্টারি নাইট’ এঁকেছিলেন তিনি দক্ষিণ ফ্রান্সের Saint-Rémy’র একটি আশ্রয়কেন্দ্রে বসে, ব্যক্তিগত জীবনে তখন টালমাটাল সময় পার করছিলেন শিল্পী। সেই সময়টায় নিজেই গিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন ওই আশ্রয়কেন্দ্রে। সেখানেই সৃষ্টি হয় ‘দ্য স্টারি নাইট’। অধিকাংশ চিত্র সমালোচকের মতে, ছবিটি গঘের আঁকা সবচেয়ে বিখ্যাত ছবি।
পেইন্টিংএর প্রতি গভীর মমত্ববোধ ও ভালোবাসায় আপ্লুত আর একজন শ্রদ্ধেয় মানুষের কথা জানি আমি। যিনি আমাদের জাতীয় অধ্যাপক, সদ্য প্রয়াত আনিসুজ্জামান স্যার। আমাদের দেশের অধিকাংশ বিখ্যাত চিত্রশিল্পীদের পেইন্টিং দিয়ে সাজানো ছিলো স্যারের বাসার ড্রইংরুমে। ২০১৯ সালে স্যারের আশিতম জন্মদিন উপলক্ষে ‘রফিক আজাদ স্মৃতিপর্ষদের’এর পক্ষ থেকে স্যারকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলাম তার গুলশানের বাসায়। এর ক’দিন আগে রফিক আজাদের ৭৮তম জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তিনিও প্রধান অতিথির দায়িত্ব পালন করতে এসেছিলেন আমাদের ধানমণ্ডির বাসায়।
আমার সঙ্গে স্মৃতি পর্ষদের পক্ষে আরো ছিলেন সদ্য প্রয়াত কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী, কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক, কবি রুবী রহমান, পিয়াস মজিদ, অভিন্ন আজাদসহ আমার পরিবারের আরো অনেকেই। স্যারের মতো এমন শিল্প সমঝদার খুব কম চোখে পড়েছে আমার। কবি রবিউল হুসাইনও উঁচু মাপের একজন আর্ট ক্রিটিক ছিলেন। কালি ও কলমে আমি তার অনেক সমালোচনা পড়ে ঋদ্ধ হয়েছি। পেইন্টিং নিয়ে আসাদ ভাই এবং ফেরদৌসের সরস আলোচনার এক ফাঁকে আমিও খুব স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ছিলাম ব্যক্তিগত ঝরণাতলে।
আত্মঘাতী করোনার তাণ্ডবে গৃহবন্দী হয়ে আছে পৃথিবী। কাজেই অতি প্রিয়জনদের সঙ্গেও দেখা হয় না কতকাল। মানুষ বেঁচে আছে শারীরিকভাবে, মন, মানবিকতা সবই যেন প্রকৃতির ধুলায় গড়ায় আজ। মানবিকতার নতুন সংজ্ঞায় আগামী পৃথিবী নিশ্চয় পথ করে নেবে নিজের মতো করে, আমরা তখন থাকবো না নিশ্চয়।
ভাগ্যিস, ফেরদৌস আর হিমাদ্রির উদ্যোগে বছর দুয়েক পরে হলেও আসাদ ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলো। মুহূর্তেই যেন স্কারবোরোতে উঠে এলো বাংলা একাডেমির গন্ধমাখা একখণ্ড বাংলাদেশ।
চার.
কবি আসাদ চৌধুরী এদেশেও সমান জনপ্রিয় কবি ব্যক্তিত্ব। শুধু কি বিখ্যাত ও জনপ্রিয় কবি? না, আরো নানা গুণে গুণান্বিত খুবই ইতিবাচক মানুষ তিনি। একদা জার্মানী এবং বাংলাদেশের মিডিয়া কাঁপানো জনপ্রিয় কণ্ঠস্বরটিও যেন সকলেরই চেনা আপনজনের এক অদম্য কণ্ঠস্বর। স্বরচিত তার কবিতা আবৃত্তির ঢংটিও নিজস্ব সৃজনশৈলিতে ভাস্বর। কারু মতোই নয় কোনোমতে। বলা যায় যে, আমাদের কাব্যভুবনে এমন একজনই কবি, যিনি আসাদ চৌধুরী।
কবি রফিক আজাদও খুব সমীহ করতেন তার কাব্যিক সততা, সৃষ্টিশীলতাকে। নির্বিরোধ, নির্মোহ কবি আসাদ চৌধুরীর ব্যক্তি-মানস সর্বত্র প্রংশসিত। তবে এই প্রশ্নও অবান্তর নয় যে, কে না ভালোবাসেন এই কবিকে?
নির্মোহ এই কবিও জানেন, ‘তবক দেয়া পান’ খেতে খেতে কিভাবে এক এক করে ধীরে, অতি ধীরে খুলতে হয় সোনালি অতীতের প্রিয় গল্পের পাপড়িসমূহ। প্রিয় ব্ল্যাক কফিতে চুমুক দিতেই হঠাৎই যেন মনে পড়ে গেলো তার বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের কথা। মৃদুকণ্ঠে বললেন, দিলারা, মনে আছে তোমাদের, ২০০৯ সালের আজকের এই দিনে অর্থাৎ ১২ সেপ্টেম্বর বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। জানোতো, তার একটি গান ইদানীং খুব মনে পড়ে—
“আগের বাহাদুরি এখন গেল কই
চলিতে চরণ চলেনা দিনে দিনে অবশ হই
আগের বাহাদুরি এখন গেল কই ।।
মাথায় চুল পাকিতেছে মুখের দাঁত নড়ে গেছে
চোখের জ্যোতি কমেছে মনে ভাবি চশমা লই।।”
বুঝতে পারি সঙ্গত কারণেই বিশেষ এই গানের বানী আজকের দিনে ভর করেছে আসাদ ভাইকে। তিনি স্বগোক্তির মতো করেই বলে চলেছেন, অনেকদিন থেকে ভাবছি এই গানের ভাব-সম্পদের উপর ভর করে তাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখবো। কিন্তু কিছুতেই হয়ে উঠছে না।
এই সময় হিমাদ্রি বাউল সম্রাটের একটা গানের কলিতে সুরারোপ করে গুনগুন করছিলো। হিমাদ্রির আবৃত্তির কণ্ঠ চমৎকার। ও যে গাইতে জানে—তা জানা ছিলো না। বাউল স্মরণে আমি ওকে একটা গান গাইতে অনুরোধ করছিলাম যখন, তখনই আকাশ ভাঙা বৃষ্টির ছিঁটা হুড়মুড়িয়ে আমাদের তাড়িয়ে নিয়ে এলো ড্রইংরুমে। ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’ আর গাওয়া হলো না। নতুন পরিবেশে গল্পের আঙ্গিক ও বিষয়বস্তুও পাল্টে গেলো দ্রুত।
আগেও শুনেছি কথাটি আসাদ ভাইয়ের মুখে, আজ দ্বিতীয়বারের মতো বললেন তিনি, শোন দিলারা এবং ফেরদৌস, আমাদের সময়ে না কবিদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি একটা শ্রদ্ধাবোধ ছিলো, সহমর্মিতা ও ভালোবাসা ছিলো। আমরা একজন আর একজনের ভালো কবিতার প্রশংসা করতে জানতাম। পরস্পরকে সম্মান করতাম। একটা/ দুটো ঘটনা বলি শোন, আল মাহমুদের সন্তান সংখ্যা তো জানাই আছে তোমাদের। একবার তার কোনো এক সন্তান খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে, ঔষধ কেনার টাকা নেই। খুব দিশেহীন অবস্থায় আমার কাছে এসেছে টাকার জন্যে। আমার হাতেও তেমন টাকা নেই। ওকে সঙ্গে নিয়ে গেলাম ঔষধের দোকানে। বাকীতে ঔষধ কিনে দিলাম। পরে আস্তে আস্তে পরিশোধ করেছি ঔষধের সেই মূল্য। কেন যেন সবাই বিশ্বাস করতো আমাকে। আমি আর কি করতে পারি, বলো?
অন্য আরেকজনের কাছে টাকা পেতাম, যার একটা প্রেস ছিলো। সে কিছুতেই আমার টাকা ফেরৎ দিতে পারছে না। কিন্তু বই ছাপিয়ে দিতে পারবে বলে যখন জানালো তখন আমি প্রথমেই রফিক আজাদকে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থের পাণ্ডুলিপিটি দিতে বললাম। রফিক বললেন, আসাদ ভাই, আপনি বরং আবদুল মান্নান সৈয়দের ‘জন্মান্ধ কবিতাগুচ্ছ’ ওখান থেকে প্রকাশের ব্যবস্থা করুন। আমার কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের প্রকাশক পাওয়া গেছে একজন।
এরকমই ছিলো আমাদের বোঝাপড়া। পরস্পরের কাব্য প্রতিভা প্রকাশের সুযোগ করে দেবার জন্যে আমরা আকুল হয়ে থাকতাম। এভাবেই ১৯৬৭ সালে প্রথম আবদুল মান্নান সৈয়দের জন্মান্ধ কবিতাগুচ্ছ প্রকাশিত হলো প্রথম।
আমার দ্বিতীয় সন্তান শাওলি যখন হবে, ডাক্তার কিছু ঔষধপত্র প্রেসক্রিপশন করে দিয়েছে আমার হাতে। আমার হাতেও সেদিনটাকা নেই। রফিক শোনামাত্র আমাকে একটা রিকশায় তুলে নিয়ে সব ঔষধ কিনে দিয়ে হাসপাতালের দিকে একটা রিকশা ধরিরে দিলো।
যে কোনো সাহিত্যের পাতায় আমাদের কারু কবিতা হয়তো প্রকাশিত হয়েছে, সেই কবিতাটি পড়ে ভালো লেগেছে, দেখা হওয়া মাত্রই সেই উচ্ছ্বাসটি প্রকাশ করতাম কিংবা ফোন করে জানাতাম তা। কবি শামসুর রাহমানের মধ্যেও এই চর্চা ছিলো, কল দিয়ে তিনিও উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতেন তার অনুজ কিংবা অগ্রজ কবিকে।
অথচ তোমাদের সম-সাময়িক কবি অনেকের মধ্যে এই সম্মানবোধের প্রকাশ দেখি না। একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে সুযোগ পেলেই। চারপাশে কেবল আমি আমি বোল। অথচ পঞ্চাশ, ষাট দশকের কবিদের দিকে তাকাও— তারা কিন্তু ‘আমি’ নয় ‘আমরা’ ছিলো। সবাই আলাদা কবিতা লিখেছি, কিন্তু এত আমি আমি করিনি।
বাংলাকাব্যের একজন প্রধান কবির মৃত্যু সংবাদের পরে বাজে মন্তব্য করে যদি অনুজ এক কবি স্ট্যাটাস দেয়—তখন এই কবিসমাজের প্রতি সাধারণ মানুষের কি ধারণা হবে—বলো? অথচ জীবদ্দশায় এই কবির পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার জন্যে ক্যামেরা প্রস্তুত করে রাখতে দেখেছি। এমন সব কাণ্ডকারখানাও দেখতে হয় জানতে হয়। তখন ভাবি, যে সময় চলে গেছে, ভালোই গেছে।
এভাবে ঘন হয়ে ওঠা আড্ডার বাঁক নানা দিকে বয়ে যাচ্ছিল। একসময় আসাদ ভাইয়ের কাছে ফেরদৌস প্রশ্ন রাখলো, আসাদ ভাই, কবি আল মাহমুদের ‘কালের কলস’ থেকে ‘সোনালী কাবিন’ পর্যন্ত মানলাম—কিন্তু তারপরের কবিতা আপনি কিভাবে বিচার করবেন?
এজরা পাউন্ডের কথা ভাবো, সময়ের বিচার খুব নির্মম। এজরা পাউন্ড(১৮৮৫–১৯৭২) ছিলেন আধুনিকতাবাদ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব। ১৯১০ এর দিকে ইংরেজি কবিতায় নতুনত্ব নিয়ে আসার পিছনে কৃতিত্বের তিনিই ব্যক্তিগত দাবীদার। তারপরেও একথাও অস্বীকার করা যাবে না যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইতালির ফ্যাসিবীদের সহযোগী হিসেবে তাঁর সম্পর্কে সমালোচনাও কম নেই। একজন বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব হিসাবে ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ আছেন বটে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত একজন কবি হিসেবে পরিচিত। তবে, রাজনীতির সাথে সংশ্রব শিল্প আর সভ্যতার প্রতি তাঁর মহৎ অবদানের পথকে কণ্টকিত করেছে বৈকি।
তবে, যখনই তুমি সমকাল থেকে দূরবর্তী হবে, তখন তার হিসেব পাল্টে যায়, যাবেই। আমি মনে করি, কবি বেঁচে থাকে তার কালজয়ী শব্দমালায়। অন্য কোথাও নয়। বাংলা কাব্য সাহিত্যে ধারায় আল মাহমুদ আলাদা একটি কণ্ঠস্বর নিয়ে এসেছেন। তাকে আমি বড় কবি মনে করি। তুমি যেভাবেই দেখো তাকে অস্বীকার করতে পারবে না। সময়-কাল-পরিসরই শ্রেষ্ঠ বিচারক বলে মনে করি আমি। এজন্যে বোধ করি, শিল্প-সাহিত্যের সমালোচনায় শেষ কথা বলে কিছু নেই।
আস্তে আস্তে সন্ধ্যা আরো ঘন হয়ে রাত্রি নেমে এলো। হিমাদ্রির আতিথ্যে রাতের খাবারে নানা বাঙালি পদ খেতে পেয়ে তুরীয় আনন্দে ফিরে আসি যে যার আখড়ায়। ফিরে আসতে আসতে বারবার মনে হচ্ছিল। এইসব আড্ডা কখনোই ফুরাবে না। কবির সঙ্গে কবির আড্ডা হলে কোনো কিছুই সীমানা থাকে না, না বয়সের, না সময়ের। সকল ব্যবধান ঘুঁছে যায় এক লহমায়। তাই এখনো বিশ্বাস করি কবি বলেই হয়ে ওঠে আরেকজন কবির পরম আত্মীয়-আপনজন।
২১/৯/২১
টরন্টো
দিলারা হাফিজ
কবি দিলারা হাফিজ। ১৯৫৫ সালের ২০ নভেম্বর মানিকগন্জের গড়পাড়া গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। পিতা বখশী হাফিজ উদ্দিনআহমেদ, মা রহিমা হাফিজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বি. এ অনার্স ও এম এ করেছেন। ১৯৯৮ সালে ঢাবি থেকে পি এইচ ডি ডিগ্রিলাভ করেন। ৩৭ বছর শিক্ষকতা জীবনে সরকারি কুমুদিনী কলেজ, ইডেন কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যায় ছাড়াও মিরপুরের সরকারি বাঙলাকলেজ ও তিতুমীর কলেজে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, ঢাকার চেয়ারম্যানহিসেবে চাকুরি থেকে অবসরে যান।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ:
১।ভালোবাসার কবিতা, ২।পিতা কিংবা পুত্র অথবা প্রেমিক ৩। প্রেমের কবিতা ৪। কে নেবে দায় ৫। খুঁজে ফিরি ভিক্ষালব্ধ জ্ঞান ৬। অবিনশ্বর আয়না ৭। নির্বাচিত কবিতা
৮। নারী সংহিতা
গবেষণা গ্রন্থ: বাংলাদেশের কবিতায় ব্যক্তি ও সমাজ (১৯৪৭–১৯৭১)
স্মৃতি গদ্য: আনন্দ বেদনাযজ্ঞে রফিক আজাদ
স্মৃতি উপন্যাস: কে প্রথম কাছে এসেছি
শিশুতোষ:সুষমার গল্প
অনুবাদ:মার্কিন কবি ক্যারোলাইন রাইট ও ভারতীয় বহুভাষাবিদ পণ্ডিত শ্যাম সিং শশী নারী অধিকার সম্পর্কিত তাঁর অনেককবিতার অনুবাদ করেছেন।
সম্পাদনা : গদ্যের গহন অরণ্যে
১৯৮৩ সালে কবিতার জন্যে লা ফর্তিনা সম্মাননা ও ২০১২ সালে বাংলাদেশ ও নেপাল ফ্রেণ্ডশীপ সম্মাননা লাভ করেন। বিটিভির বহুল প্রচারিত ও জননন্দিত গণশিক্ষামূলক অনুষ্ঠান “সবার জন্যে শিক্ষা” গ্রন্থনা ও উপস্থাপনার দায়িত্ব পালন করেছেন ২২ বছর। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অন্যতম প্রধান কবি রফিক আজাদ (প্রয়াত) এর স্ত্রী। দুই পুত্র সন্তান অভিন্ন ও অব্যয় এর জননী।
ভালবাসার কালিতে চুবিয়ে লেখা