মাতামহীর ইশকুল
১.
সহজ সরল একটা জীবনের জন্য
কানে তুলো আর পিঠে কুলো বাঁধার পরামর্শ
মেনেছিলেন মাতামহী
মাকেও শিখিয়েছিলেন
অন্ধ-বধির-বোবা হওয়ার গুণ
সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে
মায়েরাই করে,কন্যার চোখ তারা বেঁধে দেয় আঁতুরে
মুখে ত্যানা গুঁজে আর কানে তুলো দেয়
আলপনা এঁঁকে এঁকে বেঁধে দেয় সীমা
পায়ে পায়ে হাঁটিয়ে লক্ষ্মণ রেখায়
আলপনা দেখিয়ে বলে, সুন্দর এই পথে যায়
২.
মাতামহীর ইশকুল ঘরে
কেবল শিখেছি কুণ্ডুলী পাকিয়ে, এঁকেবেঁকে
নিজেকে বাঁচানো
আপোষের পাঠ নিতে নিতে
নিভে গেছে নাভির আগুন
নির্বিবাদে বিদ্ধ করে গেছে কামুক মাতুল
জীবনের তলানিতে পৌঁছে দেখি
আপোষ এক আশ্চর্য জীয়নকাঠি
এক দুই করে অর্ধশতক কেটে গেছে বেশ!
৩.
একটা গোপন নিজস্ব দ্বীপ, নিভৃত নীলপদ্ম
একটা দুরন্ত ফড়িঙ, বিবাগী ভ্রমর
সবই ছাইচাপা দিতে হয়
বানানো ইতিহাস পড়ে পড়ে জন্ম নিতে হয় বার বার
আর সিন্ধুকে লুকানো থাকে পুরো একটা যাপন
ভান নিয়ে বাঁচা ভান নিয়ে মরা মুুখোশ জীবন
৪.
লাজুক পাতাদের ছুঁয়ে দিতে দিতে
ফিরে যাই ছোঁয়াছুয়ির মেয়েবেলায়
সুখী পাতাদের বলি
এইসব ছোঁয়াছুয়ির ইতিহাসে
আজও জমাট বেঁধে আছে বালিকার দীর্ঘশ^াস
বুকের ভেতর অজ¯্র রক্তজবা নিয়ে
বেড়ে ওঠা ভীরু বালিকা
খাঁচায় জমায় অসহায় ভয়
অতঃপর সেই ক্রন্দসী একদিন
মানুষ নয় মানুষের মতো দেখতে হয়
৫.
সর্বগ্রাসী যে আগুন পুড়িয়েছিল সর্বস্ব
একে একে নিভে গেছে তা
মাতামহীর দেয়া প্রেমের চিরন্তণতার পাঠ
আজো বেঁচে আছে ত্বকের তলায়
আমরা তাই হিমহাত বিছিয়ে বসে থাকি
নখেদের জেগে ওঠার প্রতীক্ষায়।
অথচ অভিজ্ঞতায় জানি চিরন্তণ প্রেম বলে কিছু নেই
হৃদয়ের ফুলগুলি ঝরে যায়,
আবার ফোটে অন্য কোথাও অন্য কোন বসন্তে
শরীরের আগুনও নিভে যায় আগুনের নিজের স্বভাবে
অতঃপর আবার জাগে ভিন্ন কোন আগুন উৎসবে।
শাহনাজ নাসরীন
জন্ম ও বেড়ে ওঠা কুমিল্লায় ।
দেয়াল পত্রিকায় ছড়া লেখা দিয়ে লেখালেখির শুরু। গল্প ও কবিতা দুটোই লিখে থাকেন। চল্লিশটির মতো গল্প একটি উপন্যাস অল্প কিছু কবিতা আর প্রবন্ধ লেখা হয়েছে এ যাবৎ।
এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে পাঁচটি কবিতা, তিনটি গল্প, একটি উপন্যাস ও দুটি জীবনী গ্রন্থ।
Email: [email protected]