সাবেরা তাবাসসুমের কবিতা

মন্ত্রমুগ্ধের মত একা হতে চাই

বিস্ময় ফুরিয়ে এলে
মন্ত্রমুগ্ধের মত
একা হতে চাই
একা হতে চাই
চতুর বন্ধু ছেড়ে
লোকালয়
ব্যস্ততা ছেড়ে
চলে আসি একমনে
নিরিবিলি ছিমছাম
কাঠের বাড়িতে
মুগ্ধ হওয়ার মত
নিরন্তর অসুখের
মাশুল গুণে গুণে যাই
বিনিময় প্রথাগুলো
চিনে নিতে নিতে
মুচকি মুচকি হেসে
হাঁটি সান্ধ্য-হাঁটা
বিষন্ন নারকেল গাছ
বিমূর্ত ইছামতী
আমাকে দেখেছে
আমিও তাদের মত
বিহ্বল একা
গোপন ছোবল নিয়ে
কী ভীষণ একা
নিভে যেতে চাই
নিবিড় মিশে যেতে চাই
বিস্ময় ফুরিয়ে এলে
জলপাই মধুর
ব্যর্থ সন্ধি গ’ড়ে
নিভৃতিতে যাই
মন্ত্রমুগ্ধের মত একা
একা হতে চাই!

 

মননের তৈজসে

পুনরাবৃত্তি ছেড়ে জীবন
এগিয়েছে মূলত কতটা
অনুষঙ্গে সমুদ্র এসেছে
অনুষঙ্গে বৃক্ষবন্দনা
মাংসাশী জিভ দাঁত
টেনেছে তবু অমায়
অরণ্যে আড়ালে
আমাকে করে নি গ্রাস
মোক্ষ লাভের লোভ
বিচিত্র খনন হতাশা
দেয়ালচিত্রে গাঁথা
অসংখ্য প্রত্নজীবন
অনিরুদ্ধ শিল্পনমুনা
স্মৃতিতে ঝনঝন রাত
স্মৃতিতে কখনও প্রেম
নাজুক পোর্সিলিন
কোন দূর ইতিহাসে
মাইসেনিয় সমাধিতে
লুকিয়ে রাখা দু একটা
ইন্দ্রিয়সুখ হাতে এনে
দিও তো কখনো
শুকনো ফল ও মধু
নিয়ে অভূতপূর্ব সে
সমুদ্র শাসন
করো কি অস্বীকার
শুনেছ কি লুপ্ত প্রায়
মিনোয়া নগরের
বিভোর সংগীত
পুনরায় প্রশ্ন
পুনরায় সর্পদেবীর
পিচ্ছিল হাঁটু চুষে
অশিষ্ট আয়ুর কামনা
ও জলপাই ছায়া
ও আঙুরের বন
হারিয়েছি সংহতি
ধীমান পাথর
যুদ্ধ জাহাজের গল্প
আমাকে ব’লো না
বরং সবুজ ও নিষ্ঠা
তৎপর হোক
বরং বাৎসল্য রস
আর্দ্র নম্র করুক
গুচ্ছ উপাসনালয়
সন্ধ্যায় ফেলে আসা
রত্নদ্বীপ পশমের ঋতু
কালো তারা প্রশ্নমুখর
জেনে নিতে চায়
কতটা বদল এলো
শ্বদন্তে, চোখের তারায়
আধভাঙা পাঁজরের
চোট খাওয়া হাড়ে
কতটা সভ্যতা গুঁজে
তুমি আমি দেবসম্ভাষী
অবশেষে জেনে যায়
অহিংসামন্ত্রগুলো
অশ্রুত, বিগত দিনের
মননের তৈজসে
স্বর্ণপাত্রে আজও
খোদাই করা থাকে
এক অটুট বুনো ষাঁড়!

যেখানেই স্রোত

যেখানেই স্রোত
সেখানেই কিছু না কিছু
অমিয় জীবন
যতিচিহ্নহীন শুভ্র পাথর
এ তুমি কাকে দিলে গান
কাকে বিষাদ, ভেসে আসা
পাতাদের অভিন্ন সংগীত
আমরা শুনেছিলাম
প্রতিধ্বনিটুকু তার
অনেকটা মেঘ, পুঞ্জ রোদ
জমেছে পাথরে, শ্যাওলায়
বরফে তাতানো ছোরায়
সময়ের ঠাণ্ডা মাংস ধীরে
আরো ধীরে কেটে কেটে
সাজানো স্মারক উপহার
এ তুমি কাকে দিলে সুধা
কাকে অবসাদ, নুয়ে পড়া
হৃদয়ের অজস্র ফাটলচিত্র
আমরা দেখেছিলাম
মনোক্রম শৈলীর
অভূতপূর্ব ব্যবহার
যেখানেই স্রোত
জীবন সেখানে, সেখানেই
আসন্ন মৃতের সম্ভার!

 

সাবেরা তাবাসসুম


কবিতা লেখা শুরু পিতা মোঃ সাইদুল হক ভুইয়ার অনুপ্রেরণায়। পড়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগে। এ পর্যন্ত প্রকাশিত বই ১৪টি। ১৩টি মৌলিক কবিতা এবং একটি হিন্দী ও উর্দু কবি গুলজারের কবিতার অনুবাদ-গ্রন্থ। একমাত্র পুত্রকে নিয়ে বেশিরভাগ সময় কাটে। চলচ্চিত্রের প্রতি রয়েছে তীব্র টান। সবকিছু্র বাইরে কবিতাই সাবেরার আরাধ্য ভূমি, পাশাপাশি অনুবাদ ও মুক্ত গদ্য লেখা তো আছেই।

Facebook Comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top