ভেসে যাক
তোমার দেয়া বইগুলো আর হয়নি পড়া
নিরিবিলি বন হাতের তালুতে,
আর আমাদের মুখের উপর শিরার মতো চারণভূমির কণা
গ্রীষ্মের এই পৃথিবীতে কই আসে রাত
তুমি ঝরালে শতাব্দীর সব মুখে বৃষ্টি
তোমার আমার চিঠিগুলো, যায় ভেসে যাক…
আমি হাড়জীর্ন সপুষ্পকের সহজ পতঙ্গ
বয়সহীন মহাযাত্রার ভিড়ে
ভেজা মুখটির মতো;
মরে যাওয়া গাছ প্রমত্ততায় পূর্ণ।
যাত্রা
এখানে ওখানে মানুষের মুখগুলো
বেলে নদীর রঙিন মাছ
ও অর্থের মতো জ্বলজ্বল করে
সময়ের থেকে দূরে আমি হেঁটে যাই
বহু মানুষের রূপ ধরে।
আসলে কোথায় কোন আশ্রিত আমি?
কোথায় আমার মন্ত্রমুগ্ধ গ্রাম?
সান্ধ্য আকাশ— একটি দূরের পাখি
কেউ বলেছে—একটু দাঁড়াও একটু দাঁড়াও,
কোনটা তোমার নাম?
উড়ন্ত ফুল
উড়ন্ত ফুল উপসাগরের সরে সরে যাওয়া জলে,
অস্পৃশ্যভাবে, দেখতে পাচ্ছে— তৃপ্তবৃষ্টি ডুবন্ত টুপটাপ,
থরোথরো।
উড়ন্ত ফুল নীল তারকার দীপ্তি ছাপিয়ে
ঊর্মিমুখর হবে। ঝরো চূর্ণ জল, ঝরো!
সে তো শুধু তার একটি ঋতুরে কুড়ায়ে নিয়েছে হাতে,
জরাজীর্ণতা, জাফরান সূর্য-টলোমলও।
আগামীকালও আসবে জোয়ার তাতে,
ওদের কে কাহার থেকে ভালো?
বসন্ত আলোর চোখে ডুব দেয় বণিকের বেশ
উড়ন্ত ফুল ভাসতে ভাসতে দেখে,
কাটেনি যে তার গভীর ঘুমের রেশ
নোনতা বাতাস দেনার দায়ে রাজ্য ছেড়েছে কবে
একদিন সবকিছু ভাল হবে
উড়ন্ত ফুল জন্মান্তরে
তটের বুকে উড়বে একাই ডালপালাদের লোভে।
যে ভোর আসেনি এখনও
একরত্তি শ্বাস ভাঙ্গা আয়নায়
ফিসফিসিয়ে বড্ড জ্বালায়
কে জানে তার জন্ম কোথায়;
ভুলো মন-হায় গোলমেলে হয়
অল্প-সল্প গল্প বলা,
সুর ভাঁজানোর প্রবল আশায়—
তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় প্রাচীন পাতায়
বৃষ্টি-ফোটা শীতল ছায়ায়।
একদা শীতল দেশে
চাঁদের গোলক খুব ফ্যাকাশে শব্দহীন এক সুরে
আমার থেকে দূরে—কতই না সুন্দর!
তখন অদ্ভুত আয়োজনে
আমি দূর সকালের এক ফোঁটা ছাপ, ঘাসের ডগায়-
হাতড়ে বেড়াই ভোর।
তোমার বাতির ডালপালা গুলো
থাক অন্দরে সুতো দিয়ে বাঁধা বাক্স-কাঠে।
তুমি আরও দূরে
জন্মের আগে জন্ম নেওয়া ফুলের মাঠে।
সেইসব রঙে
ফুল নেই তবু বাগানের মতো জ্বলজ্বল!
জীবনের যত আক্ষেপ
আর কী কী সব যেন থাকে-
আমি সবকিছু ভুলে যাই;
আমি একবারই সেই আকাশের দেখা পাই।
ওরা কি অসীম, নাকি ওরা কোনো চিরকাল?
ওরা কি রঙ, নাকি ওরাই সব তারাদের স্নান?
সেইসব রঙে,
আমি আকাশ পালানো ছায়া।
শীতের ধূসর কাপে আগের দিনের মতোই
আজকে হেসে কাল মরে যাওয়া ফুল।
আমার উড়ন্ত সব ডানা
শেষ না করে দাঁড়িয়ে থাকার যুদ্ধে
দমকা হাওয়ায় নকশা বোনার মতো
উড়ে যাওয়া, দিন ফুরিয়ে যাওয়ার ভুল।
লেখক পরিচিতি
নুশান জান্নাত চৌধুরী বর্তমানে সুইডেনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক হিসেবে কর্মরত। পড়তে ও ঘুরতে ভালোবাসেন।