পটে আছে ঘাস
জেনগল্প হৈতে প্রবাহিত…
পটিয়া জেলার কথা কহিতেছিলাম।
#
কী কৈরা কোন কুমার, কোন পটে পটিয়া গিয়া অনন্তর, একটি অনড় জায়গার নাম বদলাইয়া দিয়াছিল জোরেসোরে তথায়, পটিয়া নামকরণের ভেতর, গাড়িয়াছিল বিছায়ে মোহর কোন মঞ্জিল মোকাম, কোন অখ্যাত পট হৈতে অস্তে অস্তে লুপ্ত কবে একদিন নথির বিলোপে দেখি—
#
সে’ সুর আজিও অমালুম।
#
ইতিবৃত্ত ইহার জানিবে, প্রাচীন মানুষের খোলা জবানে, পটিয়া গিয়া তবে। আরও নজীর দেখিবে উহার প্রাচীন আসবাবাবে ও বিবিধ তৈজসপত্রে।
আরও শোনাকথা, হয়ত গুলকথা, যত পট ছিল তথায়, সে-পটে সকলেই পটিয়া যাইত বলে কালে, জায়গাটি বিখ্যাত হয় ‘পটিয়া’ নামে।
#
ফলে জনশ্র“তি হয়, এতদঞ্চলের সমুদয় কুম্ভকারদের দিনগুলি রাতগুলি যাইত বড় তোফায়, তোফায়, ঘটনার আগেই শুম্ভ-নিশুম্ভ হল্কা ছোটান মসলিন হাল্কা-হাল্কায় চরাচর জুড়ে।
#
তোমারঅ যদি বিয়েতরী ভেঙে যায় পিছিয়ে যায় আর, কোন মানিক সূত্রে—
#
তবে তুমিঅ তথায় ঠাঁই করিয়া লৈঅ কোন ফাল্গুনি হাওয়ায়। সাত সকাল দেখিঅ আর অমেয় সময়ের সাক্ষর এসে আছড়ে পড়ে যেখানে। ছাড়া বাড়ির প্রাচীন দীর্ঘশ্বাস এসে আছড়ে পড়ে যেখানে। বৈয়া থাকিঅ এবঙ তথায় আঁকড়াইয়া পীড়িত পিড়ায় পিছারার পিতৃভিটাদিললাগি দোআঁশ মাটিভরা কোন পটে—
#
তবে, এখানেই দিতি অদিতির কোলে ডুবে যাক চাঁদ।
#
ঘটে কৈরা যে-কেউ তথায় অবিরতিতে ঢালুক জল, তালুক হারানোর ভয়ে না-রৈঅ তুমি কোন জড়োসড়ো বড়।
ঘাসও জন্মাইতে দিঅ, জল খসানোর ভয়ে ঘোড়া মুছিবতে আগাছা মনে কৈরা না-কৈর কভু
#
সাফসুতরা।
#
পটে যে পটিবে, লা শরীরীক, পটিতে দিঅ, না-চটিয়া, যে দেয় দিক ঢুস, যাক ঠেলে কমলে। না কইর মুলামুলি। না রইঅ রটনার অধিক, দেখুক সকলে বকনার ভরা কোলে এ উভচরে জলের জরায়ুডোবা পদ্ধের হাসিতে,
#
নবমীর মেঘে কাটা চাঁদ।
#
কৈঅ এবং —
#
এ পটে পটিয়া যাও রাজন, আগুন না নেভা রসের এ দেশের পটে।
এ পটে আছে বোবা ঘাস।
#
শিশিরপরশডোবা হাঁস উদাস ত্বরিত অনায়াস উদ্ভাস।
বাঁক পার হৈয়াই বাঁকখালী
জেনগল্প হৈতে প্রবাহিত…
কীমতি ভরা বাঁক ছিল তাহার! নদী, আহা কুমারী রাজার!
তাহার জন্যেই এই অশ্র“পাত আজ। খু’ব করিয়া করিতেছি। বাঁকে বাঁকে কীমতি মদগর্বী চর্বির চাপ ও ভাপ ছিল তাহার। বাঁক সেই, যেন তরবারীর খাপ। আজ সেই চর্বিও নাই, চাপও নাই, নাই সেই খাপ। সেই বাঁক খালী আজ তাহার। উঠে না ভাপ ও ভাব, ভোরের কুয়াশার মতো সেই তাহার।
স্বপ্নের মতো সে-ই, দূরে সমুদ্র সৈকতে পারদ বিছানো ভোর, লাখে লাখে লম্ফাতুর মাছে মাছে যেমতি ওড়ে। তাহার কথাই আজ পাড়িতেছি খুব। সঙ্গী আমার আর তাহারই জন্য পাশে বিষণœ কাজুবাদাম।
#
ছিল নদী কুমারী রাজার। রাজা নাই, রাজ্যও নাই। নাই রাজপুত্রও আর অমর। শিকারে গিয়া কোন বাঘিনীর বিকারে পড়িল সে বছর। সেই হৈতেই বাঁক খালী হৈয়া পড়িল তাহার, ভরিল না কোনদিন কাঁকালে আর। নদী কুমারী রাজার। তাহার কথাই তুলিতেছি আজ, করিয়া জবর। সঙ্গী কাজুবাদাম, আনিয়াছিল একদিন গোপনে তাহারই খবর।
#
কহিলাম আড়ালে, বিগত সেই বাঁকপূর্ণাকে, ভরা বাঁকের পুনশ্চ কামনায় অশ্র“পাত করিতেছে যে আজ, অথচ অশ্র“ও নাই, সৈকতের বালি বিভ্রমে চিকচিক করে শুধু, তাহাকেই।
#
‘রাজকন্যা, আজও কি তোমার শরীরে বিকরে, মদগর্বী সেই চর্বির চাপ ও উত্তাপ, যাহা ছিল বাঁকে, বাঁকে -এই শরীরের?’
#
কহিল, বিগত ভরা বাঁক, ‘বর্ষার মওসুমে ভরিতাম বটে বাঁকে বাঁকে আমি, তুলিয়া বাঁকে বাঁকে অঙ্গের, তরঙ্গের পাক। সেই পাকে পড়িয়া যুবা আর বুড়া হৈয়া লবেজান প্রাণ, বাঁক খালী করিয়া আমার চাহিত খালি ভাদ্রের পরিত্রাণ।’
#
‘করুণা করিয়াছিলাম, ফিরিয়া আসে নাই আর, কার্তিকে। পরবর্তী পৌষ হৈতেই বাঁক খালী আমার, বাঁকখালী নামে ভুলিতে বসিয়াছি ভরা বাঁক সেই, যমে আর নামে। জল থাকে না পাত্রে আমার কখনও, থাকি চামড়ার মরামাসে বারোমাস চৈত্রে।’
২২.০২.০৭
পালামৌ : হায়ারার্কির গুমর
হায়ারার্কির কথা সেদিন দ্বীপান্তরিত কি ভাষান্তরিত করিতেছিলাম।
#
যখন আমি যুগপৎ মার্ক্সিস্ট কি হেগেলিয়ান, রেডিক্যাল কি লিবারাল বা “কিছুই না”- সহজ সাংসারিক— দিন দুনিয়ার। আর সেই সময়েই
#
‘একদিন সন্ধ্যার পর চিকপর্দা ফেলিয়া তাঁবুতে একা বসিয়া সাহেবী ঢঙ্গে কুক্কুরী লইয়া ক্রিড়া করিতেছি, এমত সময় কে আসিয়া বাহির হইতে আমায় ডাকিল, “খাঁ সাহেব।”
আমার সর্ব শরীর জ্বলিয়া উঠিল।’
#
‘কারণ নং এক এই যে আমি মান্যব্যক্তি; আমাকে ডাকিবার সাধ্য কাহার? আমি যাহার অধীন, অথবা যিনি আমা অপেক্ষা অতি প্রধান, কিংবা যিনি আমার বিশেষ আত্মীয়, কেবল তিনিই আমাকে ডাকিতে পারেন। অন্য লোকে “শুনুন” বলিলে সহ্য হয় না।’
#
কারণ নং দুই, সকলেই বুঝিতে পারেন ইহা হায়ারার্কির উপরই ইয়ার্কি আরেক।
#
আর সহি, এই ইয়ার্কি সহিত হায়ারার্কিই ত ‘রাষ্ট্র’ সংহতির প্রধান হাতিয়ার- স্মারক প্রস্তর যুগের। আমি আর তুমি দাস্যতর ইহার, লাগাতার ‘মান্য’ করিয়া আসিতেছি যুগ যুগ। কিন্তু দেখিতেছি বিস্ময়ে যারপরনাই, কাপড় খুলছে এই পুরুষ, তাহার একান্ত কিংবা বহিরান্ত নারীর সমীপস্থ কি বেলাভূমিতে, কিংবা এই নারীই তাহার পুরুষের সমীপে- ইয়ার্কি ছলেই ফাঁস করিয়া ইহার সকল হায়ারার্কির গুমর। পালামৌ-ক্রমে রাষ্ট্র কি রাজ্য তৈয়ারীর আদিম ট্রাইবাল কারখানায়। সুগম পথ করিয়া রস বেসাতির। দুর্গম গাছের গোড়ায়-গোড়ায়, হাট না হইল যদি বা ইহার কোনকালে।
#
আর এই মানুষের হাটেই আমি পালামৌ প্রবাসী পামর, প্রতিদিবস ‘কুক্কুরী লইয়া ক্রিড়া করিতেছি’!
#
আমি ইহা করিয়া আমদে ভাসি, তোমরাঅ ইহা দেখিয়া আমদে ভাসিঅ। কেননা, বুঝিবেই বুঝিবে—
#
‘পালিত মহিষ যখন নিকটে, তখন গ্রাম আর দূরে নহে।’
২০.০২.০৭
পালামৌ : ‘মৌয়া গাছ’, নারী(আ)বাদ প্রমাদে
পৃথিবী পৃষ্ঠে কোন পুরুষ পালামৌ প্রকৃতি হইতে পারেন না। যে, যাহাতে কোলেরা, তাহাদের কোল ভরাট করণার্থ পালা করিয়া একে একে মৌ পানার্থ দোহাইতে পারেন। ছহি পুরুষ প্রকৃতিও কদাপি তদ্রুপ পালামৌসম্মত নহেন।
#
উপর্যুপরি জ্ঞান করি, ‘পালামৌর প্রধান আওলাত মৌয়া গাছ। সাধু ভাষায় বুঝি ইহাকে মধুদ্রুম বলিতে হয়। সাধুদের তৃপ্তির নিমিত্ত সকল কথাই সাধু ভাষায় লেখা উচিত। আমারও তাহা একান্ত যত্ন’
#
বৌদ্ধ সম্মিলনে গিয়াছিলাম। ভিক্ষু, ক্ষণেক পর পরই, মন্ত্র পাঠ শেষে, ‘সাধু, সা-ধু, সা–ধু’, উচ্চারিতে ছিলেন।
#
বোধ করিয়াছিলাম, সেই ‘সাধু’ ভাষাও কোল সংহিতারই স্মারণ বিশেষ। মধুদ্রুম হইতে প্রেরিত ক্রমে। অর্থাৎ, পালামৌ-ক্রমে আমিও সেই এক চোঙা ‘কোল’ প্রেরিত ‘পুরুষ’। নারী(আ)বাদ প্রমাদে। কারণ,
#
‘সাধুদের গৃহিনীরা নাকি সাধুভাষা ব্যবহার করেন না। তাঁহারা বলেন, সাধুভাষা অতি অসম্পন্ন, এই ভাষায় গালি চলে না, ঝগড়া চলে না, মনের অনেক কথা বলা হয় না। যদি এ কথা সত্য হয়, তবে তাঁহারা স্বচ্ছন্দে বলুন, সাধুভাষা গোল্লায় যাক।’
#
সেই সঙ্গে দড়ি পাকানো সু-নাপিত বিশেষ সু-শীল সমাজ প্রেরিত ক্রমে, আরও ‘ষোল চোঙা বুদ্ধির’, নারী-বাদী করিয়া অনাবাদ।
২৮.০২.০৭
পালামৌ : ‘জঙ্গলী পাখী’
‘আবার পালামৌর কথা লিখিতে বসিয়াছি; কিন্তু ভাবিতেছি এবার কি লিখি?’ কথা সামান্যই। তবু ফুরায় না। ফুরাইতে চাহে না। এক কপি হইতে আরেক কপিতে ইহাকে দেখা যায়।
কিন্তু কথা ত সকলই পাখীকেই ঘিরিয়া হয়। আর ইহার ভাষার ব্যঞ্জনা ধরিয়া রাখে কেবলই যুগ থেকে যুগে গাছেরই ডাল। যাহা উদ্গম হয় পাতার ফাঁক দিয়া দিয়া। দেখিতে পাইনা একত্রে আকাশের নাগাল। সে জন্যেই আমি নাকাল হইতেছি যুগ যুগ।
‘একদিন অপরাহ্নে বন্দুক স্কন্ধে পক্ষী শিকার করিতে গিয়াছিলাম। তথায় কোন বৃক্ষের শুষ্ক ডালে একটি ক্ষুদ্র পক্ষী অতি বিষণœভাবে বসিয়াছিল। আমি তাহার সম্মুখে গিয়া দাঁড়ালাম, আমায় দেখিয়া পক্ষী উড়িল না, মাথা হেলাইয়া আমাকে দেখিতে লাগিল। ভাবিলাম “জঙ্গলী পাখী হয় ত কখন মানুষ দেখে নাই, দেখিলে বিশ্বাসঘাতককে চিনিত”। চিনাইবার নিমিত্ত আমি হাসিয়া বন্দুক তুলিলাম; তবু পক্ষী উড়িল না, বুক পাতিয়া আমার মুখপ্রতি চাহিয়া রহিল।’ দেখিয়া ‘আমি অপ্রতিভ হইলাম’, ভাবিলাম, এখানকার পক্ষীরা বোধ হয় মানুষ না দেখিতে দেখিতে চিনিতে পারে নাই কোনদিন মানুষের হাতে তড়াক করিয়া উঠা দু’নলা বন্দুক। চিনিতে পারে না তাহে কোনটা শুষ্ক ডাল আর কোনটা তরতাজা ডাল। কোন ডালে পাতার পুনরুদ্গম হয়। ইহার পর পরই দেখিলাম, পক্ষীটি উপর্যুপরি তাহার চঞ্চু যোগে শুষ্ক ডালটিই চুম্বন করিতেছে, ঠুকিয়া ঠুকিয়া। ভারি আমদে।
#
বয়স লইয়া তঙ্কে ছিলাম, দেখিয়া অঙ্কে অঙ্কে প্রীত ও ভরসা পাইলাম।
২৮.০২.০৭
ক-লিঙ্গে সু-শীল সমাজ ও সু-না-পিত সমাজ
জেনগল্প হৈতে প্রবাহিত…
এক বার ইলিশের আঁশটের মতো চকচকে কোন এক ভোরের পূর্ব কালের উত্তরে রেশমি হাওয়ার ভেতরে অশোকের ক-লিঙ্গ আ-লিঙ্গন উদ্দেশে স্ব-দেশ অতিক্রান্ত হৈলাম, শোক কাটাইতে কাটাইতে অশোকের।
#
আর কতদূর ছাড়াইয়া গিয়াছে ‘ক-লিঙ্গ সমাজ’ ইহকালের, এমতি মনস্কামে সঙ্গী কাজুবাদামকে লৈয়া বাহিরিয়াছিলাম।
#
আর পরকালে আম্রা, ক-লিঙ্গ, আ-লিঙ্গন করিয়াই দেখিতে পাইলাম, সে-ই তামাম ভূমণ্ডলে কিমতি বহুদলে ‘ব-হু লিঙ্গ কর্পোরেট’ হৈয়া বসিয়া রহিয়াছে, লাখে লাখে মানুষের চিপায়, চাপায়।
#
রুদ্ধশ্বাস প্রায় কহিলাম : ‘কাজুবাদাম এই মুল¬ুকে কি না-পিত সমাজ নাই? ষোল চোঙা বুদ্ধির?’
#
কহিল কাজুবাদাম : ‘গুরু এইসা দেশে ত এলা কেউ আর ইহাদের নাপিত বৈলা ট্রীট করে না, কেউরে!’
#
‘ইহাদিগকে শীল বলিয়া না-সম্বোধিলে বড় কসুর হয়। পাছে কুল-মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়, ধরেন আরও অধিক তোফা হয়, যদি কয়েন,
#
ইহাদিগকে সু-শীল!’
#
কহিলাম, ‘যে-নামেই ডাকো না কেন, ইহাদের ভাব-মর্যাদার সে-ই ষোল চোঙা বুদ্ধির কি কোন কমতি বাড়তি হৈয়াছে, কাজুবাদাম?’
#
‘গুরু, তা ত দেকিচ্চি না!’ -কীমতি বোকারু কণ্ঠে কহিল কাজুবাদাম।
#
‘আমাকে তবে এ অনঙ্গ বঙ্গসমাজে সে-ই সু-শীল সমাজ
দেখাইয়া দেও, কাজুবাদাম!’ -কহিলাম।
#
ইহাকালে, কাজুবাদাম আমাকে ক-লিঙ্গ নগরের নাগর উদ্দেশে কিছু ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা কাম্রায় লৈয়া গেল। চোখিব মনস্কামে আরও নাগরক সমাজ।
#
দেখিলাম, আমলাভূষণা মোটাসোটা স্যুটেড বুটেড ভাব-গম্ভীর কিছু সুকান্তি লোক কিছু এক্কুই দর্শন সুকান্তি লোকের চুল ফালাইতেছে। আর কিছু লোক কিছু লোকের শরীর ডৈলা ডৈলা দিচ্চে, নাগরি রগড়ি।
#
‘ইহাদের মধ্যে কাহারা ‘সু-শীল সমাজ’ কাহারা এলিট তা ত বুঝিতে পারিচ্চি না, আর কাহারাই বা নাগর রসের নাগরক সমাজ!
#
আমাকে তলাইয়া দেও, কাজুবাদাম!’ -কহিলাম।
#
পরকালে, কাজুবাদাম আমাকে কোন কিছু না নির্দেশ করিয়াই সে-ই জায়গা হৈতে লৈয়া চলিল ক-লিঙ্গের প্রান্তস্থ কোন এক ছায়া সু-নিবিড় আমগাছ তলায়।
#
দেখিয়া মাত্র চোখ ভ্রূতে জড়াইলাম : দুই চারিটি মরাধরা জোয়ান ও বুড়া নাপিত জলচৌকী বা পিঁড়ায় বৈসা বৈসা তথায় দুই চারিটি মরাধরা লোকের চুল ফালাইতেছে।
#
‘নগরের সুকান্তি রমণীমোহন জোয়ান শীলদের মতো ইহারা ত কেউ খাড়াইয়া, খাড়াইয়া চুল ফালায় না!’
#
দেখিতে একই রকম বিদেহী মরাধরা ইহারা উভয়েই এক্কুই রকম জলচৌকী ও পিঁড়ার আসনে বসিয়া বসিয়া চুল ফালায় এবং চুল কাটায়।
#
কে সু-শীল আর কে সু-নাপিত, ঠাহর হয় না কিছুতেই কিচ্ছুই।
#
কহিলাম, ‘কাজুবাদাম, বুচ্ছি বুচ্ছি, যাহারা খাড়াইয়া খাড়াইয়া গাছের গোড়ায় চুল ফালায় উহারাই ‘সু-শীল’।
#
আর যাহারা বৈআ বৈআ চুল ফালায় তাহারাই ‘না-পিত’।
সু-না-পিত সমাজ। ষোল চোঙা বুদ্ধির। সু-শীলের অ-শীলে।’
#
‘গুরু, আম্রা ত পরকালের মানুষ, বড় ভুল করিয়া আসিয়া পড়িয়াছি ইহকালে, আম্রা কি কিচ্ছুই হৈতে পারিব ইহার?
#
আম্রা না-হয় হাঁটা দিতেই থাকি বরং, চাটা দিয়া রাস্তা, পা’টা আরেকটু জলদি জলদি চালাইয়া, এই অশীলের স্ফুলিঙ্গ হৈতে বাঁচিতে যাই যদি চৈল, ক-লিঙ্গের বাহিরে আবার ফিরিয়া যাই, সে-ই ইহকালে, ফালাইয়া আসিয়াছি যাহা পরকালে।’
#
আর চকিতে চোখে বিম্বিত হৈল, হন্তদন্ত কী রকম তামাদি তৃণ মতো বিবর্ণ হৈয়া, মেঘের আবেগে জড়াইয়া কোনক্রমে কহিতে পারিল আর ইহা আমারে কাজুবাদাম।
০৩.০৪.০১
দেশহিতৈষী কথা
ইন্দ্রিয়াণাঞ্চ পঞ্চনাং মনসো হৃদয়স্য চ।
বিষয়ে বর্ত্তমানানং যা প্রীতিরূপজায়তে
স কাম ইতি মে বুদ্ধি কর্মনাং ফলমুত্তমম্।।
মহাভারত।
হালে কী বামালে আমা-তোমা-সম্ভ‚ত দেশহিতৈষীপ্রাণ হৈয়া যেকালে পীড়াইতেছি খুব ওঠকিশতিপর, হেনকালেই ভাবাই আমাকে অন্তর-তোবড়ানো জেব্রাদের কথা।
#
আরও ভাবাই খালের আড়ায় বিড়া-পাকানো সাঁড়াশিশয্যা পাশক্রীড়ার এলেবেলে কথা।
#
আরও ভাবাই, ধুলিসারাৎসারে ভুলুণ্ঠিত জীবিতপ্রাণ মৃত অতীতের কথা। যে-বর্ষে অখণ্ড বাৎস্যায়ন ছিল, উদয়ন-উদ্দালক-বাসবদত্তা ছিল, বহু কাহ্নু ঘুর্ণি ত‚ণীর যোনিমোক্ষ, যোনিপুজা ছিল, শান্ত, সৌম্য, শিবসৌন্দর্যে স্বতোতরঙ্গ শিশুপ্রাণপ্রাচুর্য মিতঅমিত প্রবাহিত ছিল।
#
আর হালে কী চাই টালে টালে মালে? হেন ‘ছিলঅন্তপ্রাণ’ হৈয়া যখন ‘হবেঅন্তপ্রাণ’ হৈ তোমাকে লৈয়া, তখনই তোমাকে-আমাকে মাঠাতে গুলাই! আর তখনই ফেরঅ ভাবাই, ফেলিয়া গড়পরতায় বিগতপ্রাণ কী তিয়াসী নদীতীরস্থ এক লোকায়ত সসম্ভ্রম জাতিস্মরের আমচোষা লবেজান-কথা।
#
এইসা ইল্লতে যেইসা দেশে এত এত জাতিস্মর-প্রাচুর্য যে সেইসা দেশেঅ হামাকে দেশহিতৈষী হৈতে হয়, শতরঞ্চে ডুবিয়া, ভাবিতে হয় খুভান্ত অধীরা আলীঢ়া বিড়া-পাকানো পাশক্রীড়ার এলেবেলে কথা, আর বামালে তোমাকে চোলাই, আ’নালে- অ্যানালে…
#
আর আমাকে নামালে তুমি কোনসা কামালে, খালি দোল খাই তোমাকে দোহাই, হা এ কোনসা দুল্কি জাতিস্মর, যে-দেশে পাশক্রীড়ার এলেবেলে কথাঅ ভাবিতে হয় কী লৌহ-পেষা ভাষার বিড়ায়! ভালবাসি- এইসা বানভাসিতে যে-প্রোথিতমন, দেখি তাকে এত এত শরীরীব্যক্তিত্ব সজাগ-বহু কায়ক্লেশ, বহু দান নির্বিশেষ, বহু নষ্ট পদাবলি, বহু সময়ের বিলয় অপক্ষয়, বহু ঘটনা-তরঙ্গস্রোতা, বহু রদ্দিটান, ঝোপ বুঝে কোপ, মুহুর্মুহু সওদাগরি টোপ, এদিকে উদ্ভূত প্রমাদে, কন্ডম দিআ-দিআ বা খুলিআ, অ্যানাল-ওরালসেক্স, ওদিকে তোমার একানা-দোয়ানা হিসাব, তোমার সতত ক্ষুধা ও শরীরীসজাগতাসমেৎ রাহু রাষ্ট্রকেন্দ্রেরন্ধ্রে, যথারীতি বহাল কামাল সামাল আসন বদলে বদলে সেই ট্যাবুর পৌন প্রশাসন- আ’নালে- অ্যানালে…
#
আমি থাকি মগজে সমঝে আর তুমি থাকো শরীরে সমঝে।
আ-রাম! কী কৈরা হৈব তবে হেন ডিলেমার খটকায়, এইসা তামাম আদার বাণিজ্যশেষে টাটকা আলোবাসা, এইসা দেশে গেরামে সমবোধ আমা-তোমা-সম্ভূত
#
দিতি অদিতির কোলে সশিব, শিশুপ্রাণ মেধাপ্রাচুর্যের আকাশ!
০৮.১১.৯৯
কলাশাস্ত্র
আহার্যক্রমে প্রতিদিবস লেবু টিপিতে টিপিতে দেখিলাম রাম
আঙুলের পেলবতায় চড়া পড়িয়া হাত আমার বুনোস্যবুনো
কিমতি বাঁকানো দানো হইয়া রইছে। চিন্তিয়া অন্তর কালে
আগাইয়া আরেকটু ভাবিলাম: মধুপুরি কলা খাওয়ার কথা।
#
হেন অভিপ্রায়ে কলা সন্ধানে যেবেলা দেখি আর ভাবি খাবিপুর
যত কলা ব্যাপারি আছে সকলই তারা যারপরনাই পাখিপোষা
দু:খি দু:খি আদু মুখ। ফলেই আমি তলা-খোয়া কলাধ্বস্ত হই
এবং কলাব্যাপারিগণও জিজ্ঞাসিত হৈল আমা মারফত :
#
‘ভাইডি, তোমাদের মুখ কেনে এমতি দু:খী দু:খী মূর্তি সদাভাব?’
শুনিলাম, তার সদাসদ স্বতোবাকস্ফূর্তি:
#
‘মামু, কলা কারবারি ভোধাই আমরা যে সদা কলা বেচি আর
সদা সদাই বিশদে কলা খাই!
কারণ, আমাদের বৌ বাচ্চাগুলিনও এইরূপে সবে কলা
সাবাড় কইরা দেয় পারি দিনগুলি তাগ ভাগে অখিলে কাবার!’
#
কদলিব্যঞ্জনপ্রিয় কলাপতিরও কি এসব জানার কথা ছিল!
বাহিরে বাসের
বাসের যাত্রী তুমি প্রতিদিন সময় তোমাকে
অষ্টে-পৃষ্টে যায় নিয়ে বেঁধে, ছোটে না সময়
তবু কোনোদিন।
স্মৃতির মসিতে ছাপ পড়ে যায় চাপা বেদনায়।
রাখো মুখখানি, বাহিরে বাসের
চকিত মুখের দেখা যদি পাও, কবে যে কখন
হয়েছে উধাও
মেঘের আবেগে ছিঁড়ে-ছিঁড়ে যাওয়া
রোদের আমোদে হরিষে বিষাদ,
জমানো জামানা তোমার আঁচলে ছোপ পড়ে যায়।
বাঁকে গেলে বাস আবার সটান, সোজাসুজি পথ,
দিগন্তে ভাসা মেঘের ময়ূরী।
ঘোরাও বিমনা তব অঙ্গুরী
গলিয়ে দৃশ্য, হাতের আঙুলে-
পুরনো প্রণয়, ধুনারী ধুনছে।
উড়ে উড়ে দূরে মেঘে মেঘে বেগে
দেখো তুমি স্থির, চোখে ধরা তীর, হিরকের কণা
ছোঁড়া পিগমির। কার ঘরে ফের অতিথি রোদের
গবাক্ষচোখা মোদিত পুলকে ছোটাচ্ছে চাকা
বাঁকা করে দেখা, পথের পুরাণ, আকাশে ভাসান।
বিদেহী মেঘের, শ্বাস ফেলা ধোঁয়া, পথচারী হীন
সহসা ঝাঁপসা, চশমার কাঁচে পাশে বসা দেখে
কে আবার হাঁচে।
এমতি সময় যুগ যুগ বয়
ভাষান্তরিত, হতে হতে লয়, কী মনস্তাপে।
বাসের আবেগে পাও অবসর, পুরনো প্রণয়
উঠে আসে যদি, ভাবনার গুলি খুলে সে অবদি
‘ছুটে যাওয়া দিন, লোটে কে আবার
বয়স কি তার আরো কিছু কম’—
বাসের পিছনে যতটা সময় ছুটে ছুটে যায়
তারো যদি হয় সামনে তোমার, ধাবমান রোদে
ততটা সময় রাখিঅ আবার ভ্যানিটি ব্যাগের
ধরা লাইনারে-কষিঅ হিসেব, যাবে কার ঘরে।
১৬/১২/০৬
মাতিয়ার রাফায়েল
কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার অন্তর্গত শুশুন্ডায় জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব ও বেড়ে উঠা ঢাকায়। পড়াশোনা করেন দর্শনের উপর। ঢাকার তিতুমীর কলেজে। পেশা : সাংবাদিকতা। বর্তমানে দৈনিক যায়যায়দিনে কর্মরত আছেন। শুরুতে কিছুদিন একটি এনজিওতে কক্সবাজার অঞ্চলে চাকরি করেছেন।