কবির আনন্দ
যেখানে কথার শুরু, সেখানেই তুমি
নিয়ে আসো সুদূর নীলিমা — আমারই আদিম প্রদেশে।
তোমার আকারে কথার আকার —ভাষালগ্ন কবির হৃদয়
আকারেই অর্থের সীমানা, অন্তরালে তুমি,
অন্তরালে অর্থঢেউ,দৃশ্যমান তোমার অধিক
অন্তরালে অনিঃশেষ মধুবন —নারীদেহ বলে
যাকে ভুল করে লোকে।
যেখানে কথার শেষ, সেখানেই অসামান্য ক্ষণ,
নিরঙ্কুশ বৃন্দাবন, কবির আনন্দ।
স্মৃতিঘ্রাণ
বিকেলের বৃষ্টি।
উৎসাহে ভিজে যাচ্ছে শালবন।
আমি ভিজছি স্মৃতিবাহী ঘ্রাণে,আমার অলক্ষ্যে
কোনখানে রেখেছি কৈশোর ! বিরহপরাগ!
বিকেলটা ভিজে যাচ্ছে, ভিজে যাচ্ছে সন্ধ্যার আবেশ,
ঘণ্টা পড়লো স্কুলে —
কোনখানে রেখেছি কৈশোর! কোনখানে নিরুদ্বিগ্ন মেঘদল!
আমি ভিজছি স্মৃতিঘ্রাণে —
অন্বেষণ
দর্শনের ক্লাস। প্রফেসর পড়াচ্ছেন বুদ্ধদেব, বার্ট্র্যান্ড রাসেল —
সুখ ও দুঃখের সুবিন্যস্ত মহাদেশ ।
অবুঝ ছাত্রীটি প্রশ্ন করলো, ‘ সুখ-দুঃখের ওপারে
কী থাকে, জনাব? ‘
প্রফেসর ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রীটিকে শুধু তিরস্কার করলেন।
ছাত্রীটি খাতায় লিখে রাখলো—
‘ সুখ-দুঃখের ওপারে থাকে শূন্য। ‘
অবুঝ ছাত্রীটি খোঁজে দিনের ওপারে দিন, রাতের ওপারে রাত,
নিজের ওপারে খোঁজে অতৃপ্ত নিজেকে, খোঁজে
সুন্দরের ওপারের মধুরতা ।
অবুঝ ছাত্রীটি একা, অগঠিত—শূন্যবোধে ডুবে থাকে।
কিন্তু তার এই অণ্বেষণক্রমে জন্ম হয় যে ভাষাচিত্র,
সেখানেই পেতে পারতো সে শিল্পীর এক অচিহ্নিত সত্য—
সুখ ও দুঃখের সন্ধিসূত্র, জরা ও প্রেমের এপার-ওপার।
ফাগুন দিনের ছয়টি লাইন কবিতার পঙক্তি হলে ক্ষতি নেই
আজ একবার এসো। বিকেলে কি সন্ধ্যায়
ফুলগুলো বোঁটা আঁকড়েই থাক–
হাতের শূন্যতা! জেনো, শূন্যতাই নয়
পাঁচটি আঙ্গুলের অপার বিষ্ময়!
তুমি এলে আবার পঞ্চাশে নামবে পঁচিশের রং
তুমি এলে বাতাস ছড়াবে ঘ্রাণ তরতাজা গোলাপের…
উত্তম চক্রবর্তী
নব্বুই দশকের কবি, প্রাবান্ধিক উত্তম চক্রবর্তীর জন্ম ১৯৬৭সালে জিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে। বর্তমান বসবাস: ভূষণস্কুল পাড়া, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ। বাংলা ভাষা-সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.ফিল করেছেন। পেশা: শিক্ষকতা। লেখোলেখি করেন মূলত লিটল ম্যাগাজিনে। তবে জাতীয় দৈনিক ‘ দৈনিক খবর ’ , দৈনিক মুক্তকন্ঠের ‘ খোলা জানালা ’ , দৈনিক সমকালের ‘ কালের খেয়া ’ সহ অন্যান্য দৈনিকের সাহিত্য পাতায় লিখে থাকেন।
প্রকাশিত গ্রন্থ: ছুঁয়ে আছি আলোর আগুন (কাব্যগ্রন্থ) , প্রকাশকাল ২০১৩।