মমি পুরাণ
মৃত সম্পর্কের মমি থেকে সুগন্ধি পাবে
অমন লোবান জ্বালায় কে
নিষ্প্রাণে ধুপ ধুনো পোড়াবার
আর থাকে কে
মানুষ তো জীবনের কাছে
প্রাণবান জল জোয়ারের ঢেউটুকুই শুধু চায়
প্রাপ্তির খাতায় চুম্বন আলিঙ্গন
স্পর্শের ধারাপাত
অর্জনের সমানুপাতিক সম্পর্কই চায়
মানুষ এমন এক প্রাণ
আবেগের চারকোলে পুড়িয়ে সময়
শুধু সোনাকেই গহনা বানায়
আর সব অকেজো ধাতুর মতো
সম্পর্ক তখন কেবলি ক্লীব
নেহায়েত ধাতব চালচুলো হাঁড়ি-পাতিল
থালাবাসন–যাপন ধর্তব্যের ঝনঝন
ওখানে বাজে না আর আবেগের সেতার সরোদ
প্রাণবন্ত সুরের জন্য জীবন চাই
জীবনের খোঁজে মানুষ নিয়ত তাই
মমিকেই আরো কিছু পোড়াতে চায়
শুধু এক বেহাগ সেতার ছাপিয়ে সকল
সাক্সোফোন শীৎকার–অস্ফুটে বলে ওঠে
যত কিছু কথকথা
ওটুকু শুধুই শোকবার্তা
নেহায়েত লৌকিক সহমর্মিতা
পোশাকের মতো তাতেও মিশে থাকে
প্রদর্শন তৃপ্তি সম্ভার
শব্দেরা অন্য সুর বিন্যস্ত করলেও
হৃদ গভীরে থাকে শুধু বেসুরো ওঙ্কার
আহা-উহু শ্রাদ্ধের সমাহার
১৬ জুলাই ২০২২
অবিন্যস্ত উত্তরাধুনিকে
বৃক্ষ-পত্ররাজির বিন্যাসে ভ্রমণ
ভ্রমরের পথে গুঁজে দেয় বিভ্রম
সূর্যস্নানে ভিজে ওঠা ফুলেরা
মিছেই নিঙড়ে নেয় তার সবটুকু শ্রম
সুবিন্যস্ত শব্দরাজির আড়ালে
দুমড়ানো বিছানার মতো
ভীষণ এলোমেলো আকাশ অকস্মাৎ
বৃষ্টি ফোঁটায় নামিয়ে দেয় নিজস্ব প্যারাট্রুপার
কমান্ডো কৌশল পারদর্শী গোপন ছত্রীসেনা
সমঝোতার নামে নেশাগ্রস্ত মানুষ
জীবনের পরতে পরতে মাখায়
হঠকারী অসম্ভবের বাঁধভাঙা প্লাবন সম্ভাবনা
কচুপাতার আচ্ছাদনের চেয়ে আধুনিক
স্বয়ংক্রিয় বাহারি ছাতার যেমন
বাজার কাটতি পুঁজিবাদ আর বিজ্ঞাপন গুণে
পৃথিবীতে সকলই হার মেনেছে
এইভাবে–নতুনের কাছে
পণ্য উৎকর্ষ হেরে গেছে
বর্ণিল মোড়ক চকমকির পাশে
শুধুমাত্র পুরোনো মদেরই এখন অব্দি
উচ্চ মূল্যের বেসাতি আছে
আঙুল স্পর্শ, চুম্বন, আলিঙ্গন
এমনকি শীৎকারও এখন বিজ্ঞাপনী বিভা
বাজার-কাটতি পুঁজিবাদী প্রথা
এসবের ছাঁচে ছাঁচে ধ্বনি অভিনবত্বের
উদ্ভাবনী বন্যায় ভেসে গেছে
বানভাসা মানুষ নিয়ে যেমন
মিডিয়া, মানুষ এবং মন্ত্রীরা অশালীন
সম্প্রদান উৎসব মকশো করেছে
এবার ঠিক করেছি সব টব খালি করে
সুবর্ণ-সুগন্ধি ফুল পাতা উদ্ভিদ উপড়ে ফেলে
নাইন-ও-ক্লক আর বনসাই সূর্যমুখী লাগাবো
হাস্নাহেনা গন্ধরাজ দোলনচাঁপা কদম
এসবের দিন সব হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে
এইবেলা বিলীন হয়েছে প্রতীক্ষার প্রহরেরা
চোখের কথায় সাজানো বুক জুড়ে ক্ষরণের
সঞ্চয়–ডাকবাক্সে ফিরতি চিঠিরা
১৪ জুলাই ২০২২
বজ্রপৃষ্টতার ঘোরে
জগৎ ক্লান্ত হলে ঝড় তবু থেমে যায়
কোনো এক নিস্পন্দ সন্ধ্যায়
অকস্মাৎ তীব্র হাওয়ার তোড়ে
বুকের তুফান জুড়ে অদম্য বিক্ষোভ ওড়ে
গোপন তাণ্ডব নিউরনে বিক্ষিপ্ত ওড়ায় জীবন
মাতাল ভাঙচুরে
সে ঝড়
মহুয়া মাতোয়ারা হাওয়ার দল
ভুল করেও
থামে না কখনো
অগ্নুৎপাত প্লাবিত লাভার স্রোতে
লেলিহান সঙ্গমের মতো নিয়তই দগ্ধে দগ্ধে মারে
অদম্য মৃত্যু তৃষ্ণায়
জীবনের শুধু মরবার নেশা ধরে
অগণন মৃত্যুর দিকে ছুটে
এক প্রজাপতি
ফিরে ফিরে বারে বারে মরে
সুখের আস্তিনে চুম্বনসিক্ত মৃত্যু চেখে
নিয়ত তার সাত আসমান ওড়ে
২৯ জুন ২০২২
সংবেদ
একবার শুকায়ে যাবার পর
নদীও মনে রাখে না
বহতা জলের অতীত
চলিষ্ণু মেঘের মতো
বৃষ্টিও ফিরে যায় অন্য সীমানায়
ভরা জলে নৌকাডুবির ভীতি
দুষ্প্রাপ্য হতে হতে
হারিয়ে যায় নাগরিক সন্ধ্যায়
জোনাকি স্মৃতির মতো
নদী মরে গেলে জনপদও
হয়ে ওঠে অশ্লীল স্বার্থপর
মাটি ভরাটের খেলা
মানুষের রক্তে রক্তে
লোভ-লালসার নিমজ্জনে
বাজায় যে সুর
লোকে তাকে রাগ পঞ্চমী
বলে কী বলে না
সেইসব উহ্য থাকে
সংবাদের সকল প্রহর
বিদায় ভেঁপু গুনে গুনে
বাজবার পরে তবু
লোকে ওটাকেই বলে ওঠে
সূচনা সংগীত
৩০ ডিসেম্বর ২০২১
লুৎফুল হোসেন
কবি, প্রকাশক ও সাহিত্যকর্মী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর। বিভিন্ন রকমের পোর্টাল ও পত্রিকায় নিয়মিত গল্প, কবিতা, ফিচার, প্রবন্ধ এবং গান লিখছেন। বাংলাদেশের লিটলম্যাগ ও নানা প্রকাশনা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত আছেন সেই ছাত্র থাকাকালীন সময় থেকেই। শৈল্পিক মননশীলতাকে প্রশ্রয় দিয়ে একটু একটু করে গড়ে তুলছেন তার নিজস্ব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘রচয়িতা’।
একবার অগোছালো ভাবে পড়লে শব্দ বা বাক্যের ভিতরে প্রবেশ করাটা কিছুটা কঠিন হলেও সত্যিকার মনোযোগে প্রতি টা অক্ষরের মিলনে যে অব্যাক্ত অনুভূতি প্রকাশ পেল তা মন ছুঁয়ে যায় অজান্তেই!
মমি পুরান যেন বজ্রপৃষ্ঠের ঘোরে আটকে থাকে!
ধন্যবাদ!