তিনটি কবিতা: দীপেন্দু

রাবেয়া আক্তার আমাকে কথা দিয়েছিল

জিপসিদের ভিড় ঠেলে উঠে আসা
তোমার কোমল হাসিটা দেখতে এসেছে
অ্যাপোলোর পোষা সাদা কাকটা।
রাবেয়া আক্তার আমাকে কথা দিয়েছিল–
যারা তার নরম যোনিতে সম্মতিহীন সংগম চেয়েছে
তাদের দেহগুলো নির্জন কোনো দ্বীপে,
কুকুরের খিদে মেটাবে।
সালোকসংশ্লেষণকারী তোমার কপালের ব্রণগুলো, জানে না
এই সুন্দর পৃথিবী ততটাও সুন্দর না।
টেবিল ফ্যানে ঘষে যাওয়া হৃদপিন্ডগুলোকে;
ক্যাথিড্রালের শক্ত পাথর জড়িয়ে নিয়েছে নিজের বুকে।
রাবেয়া আক্তার সোনালী হরিণের পিঠে চড়ে
ঘনঘন দেবতার
প্রাসাদে আসা যাওয়া করে।
এমন সৌভাগ্য এখনো
হাজার বছর তপস্যায় বসে থাকা
ডাচ কন্যারও হয়নি।
কত কত নাবিক ছাড়া জাহাজগুলো
জীবনের জলে তলিয়ে যাচ্ছে।
তুমি তো তাও মানুষ।
আর ঈগলের বৃদ্ধ চোখ থুথু ধিক্কার দিচ্ছে;
তবু দেবতার কোন সাক্ষাৎ নেই।
রাবেয়া আক্তার আমাকে বলেছিলো ভালোবাসে;
আমিও তার মৃত্যুর পর তাকে ভালবাসি।
চলো তবে অলস আপেলবাগানে তোমার শরীরে
কান পেতে একটু রক্তপ্রবাহের শব্দ শুনি।
সামদ্রিক বমি গায়ে মেখে,
পৃথিবীর পাপ থেকে মুক্ত করো নিজেকে
বিকট শয়তানের ফর্সা মুখে দেবতাও দেখো
শান্তির বীর্য ছিটিয়ে দিয়েছে ওদের শাস্তি হিসাবে।
রাবেয়া আক্তার আমাকে কথা দিয়েছে এই ক্ষুধার্ত
নিরেট বোকাচোদাদের পৃথিবীতে আর কোনোদিন ফিরে আসবে না।

 

রক্তের তেষ্টা

কসাইয়ের দোকানে আমার বেশ কিছুদিন ধরে
ঘনঘন আনাগোনা বাড়ছে শুধু রক্তের খোঁজে।
মরা সিগারেট জানেনা আমার খবর–
জানেনা দামি পেন্সিলে ঝুলে থাকা আঙুলের স্পর্শ।
স্মৃতি–চুল দাড়ি–সাবানের গন্ধ–
গোপনাঙ্গে বেড়ে ওঠা তিল থেকে শুরু করে
আমার প্রথমবার দেওয়া তোমাকে একটা লাশের কাটা কান,
কেউ জানেনা আমার খবর।
রক্ত আমার আজকাল খুব পছন্দের খাবার।
আমি রেশনের লাইনে দাঁড়িয়ে মোটা ভাত কিনে আনি অতি সস্তায়
তারপর এ শহরের গুরুত্বহীন কবিদের কাঁচা রক্ত মেখে খাই মোটাভাতের সাথে।
হাংরির কবিরা আমাকে ধিক্কার দেয়–
আমাদের ক্ষুদে খিদেহীন পেটের ট্রামলাইনে শুয়ে থাকে
এখানে জীবনানন্দ।
সেফ-টিপিন আজকাল আর একটুও সেফ নয়;
বাসে পরিচিত মেয়েটার কেটে যাওয়া মাংস পিঠে
আমার রক্ত দেখে যৌনতা জেগে ওঠে।
আমরা অজস্র নিখোঁজ নক্ষত্র খেয়ে ফেলেছি খিদে পেটে কোনো সালা প্রশ্ন করেনি।
সূর্যের অনুপস্থিতিতে এ রাতের অন্ধকারে ডুবে থাকা
কালো কালো কত মাথা গাছ হয়ে ফুলের মত ফুটে ওঠে
আর ভোর হওয়ার আগেই ঝরে যায়।
আমার রক্ত চাই–
ভিড় ট্রেন থেকে বেশ্যার যোনিতে আমি রক্ত খুঁজে বেড়াই!
শেষবারও তো ছোট শিশুর মত তোমার স্তন থেকে দুধের বদলে রক্ত খেয়েছিলাম;
সেই স্বাদ আমি এখনো খুঁজে বেড়াই কত শত প্রেমিকার বুকে।

 

বিসর্জনের জলে ভাসছে শরীর

লাসকাটা ঘরে চিৎকার;
উনুন জ্বলে– দেবদারু কাঠের গিটারে গান ধরে
আমাদের অকারণ সব মিলিয়ে যাওয়া গাণিতিক হিসাবগুলো।
গলে যাওয়া সূর্য হাতে নিয়ে শরীরগুলো ঘুরেছে নেতাদের দরজায় দরজায়।
কথা ছিল স্কলারশিপের টাকায় আমার বাড়িতে একটা নতুন টিভি আসবে
তাতে সাড়া দেশ বিদেশের টাটকা খবর পাওয়া যাবে।
বাবার মৃত্যুর খবরটাও হয়তো লাইভ টেলিকাস্ট দেখা যেতে পারে।
লাশকাটা ঘরে ইঁদুর ঢুকতে পারে; সাংবাদিক ঢোকা নিষেধ।
জলজ্যান্ত কাঁচা কাঁচা শরীরগুলো ছিড়ে ছিড়ে খেয়েছে;
আমাদেরই পরিচিত সমাজের তর্জনী কিংবা মধ্যমা।
মঞ্চের ওপর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু বোকা জাতির পিতা ভাগ করে দিয়েছে
আমাদের আবার একটা পৈতৃক সম্পতি।
এক কবি একবার আমায় জিজ্ঞাস করেছিল–
কেন আমরা জন্মাই–
শুধু খাবো আর বাঁচবো বলে?
তাহলে তো পশুর জীবনই ভালো ছিলো;
অযথা দেবতারা আমাদের মানুষ বানাতে গেল কেনো!
আমার পঁচে যাওয়া লিভারের যন্ত্রণায় কতবার ভেবেছি মরে যাবো
কোনো সহজ মরার পদ্ধতি বেছে নিয়ে।
নষ্ট স্ফিংটার দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসে–
আমি আমার শরীরটাকে বিসর্জন দিয়েছি বোকাদের পুজোর শেষে।
এখন তাই সবার মন খারাপ।

 

দীপেন্দু

৯ সেপ্টেম্বর, ২০০০ সালে জন্ম। বারাসাত নিবাস। পেশায় প্রকৌশলী। 

 

 

Facebook Comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top