কামরুল হাসানের পাঁচটি কবিতা

অশ্ব আমার আস্তাবলে

অশ্ব আমার আস্তাবলে
হাঁটছি তোমার শ্যামসুন্দর পথটি বেয়ে।

আমার পিতৃভিটে পূর্বাকাশে
মেধা এখন মগজে নেই দুই চাতালে
অশ্ব আমার আস্তাবলে।

বনস্থলির শিরদাঁড়া সেই যেমন দাঁড়ায়
বনমোরগের ঘাড় তেজী ঐ
জলের সখ্যে নিরহস্যে দ্বিধা টলে
অশ্ব আমার আস্তাবলে।

পূর্বপুরুষ যেতেন জিতে
দক্ষতাতার রুক্ষ বেশে
চর জাগা গান, পেলব মাটি, বসত চিরে
ঘষছি তোমার পালককাটা করতলে
অশ্ব আমার আস্তাবলে।

 

কীর্তনখোলার কীর্তন

কীর্তনখোলার কীর্তন কাঁদাল আমায়
সখী তন্দ্রাতুর;
ভর মধ্যরাতে জলের সংবর্ত হতে গান উঠে চিকন সুন্দর
খোঁপা খুলে গেছে কালো বন্য স্রোত ও কুন্তল,
স্বপ্নবদ্ধ বসতির না ছোঁয়া সুদূরে
নদীর বাঁকানো কাঁখ বেয়ে ঘুরে যায় করুণ কীর্তন,
স্বর্ণাভ বাহুর সখ্যতা হতে নিযে যায় গানের অন্তঃস্থে
কি মূঢ় বোধ, গান যেন আত্মার অভিঘাত…

নদী কাঁদে, সারারাত ঘুমাতে পারি না।

 

 

পেঁচা

লক্ষ্মী ছেড়ে গেছে তোকে
প্রেতরাত্রির ভগাঙ্কুরের কাছে তোর ডাক;
দাপাদাপি যতি তুচ্ছ ইঁদুরের সাথে
পঁচা মাংসে হানা দিস অমাবস্যা নখে।

দূর বলে তাড়িয়েছে দিনের প্রতিমা
কোটরের গুপ্ত ফেরারী
হামাগুড়ি দিয়ে থাক নিজস্ব গহ্বরে।

আর তোর দুষ্ট জাতকুল
আলোর ফলার ভয়ে
অন্ধকারে ঝাপটায় পাখা।

 

প্রিয় তীর ছাড়ে তীর

ধাবন্ত তীর, জলামুখে ওঠে ফেনা
দাহবুদ্ধুদ ছাড়ল প্রাচীন কূল
পঞ্চপ্রদীপ অমরতা শতশিখা
উজ্জীবনের দীর্ঘ গুটানো মায়া।

প্রাণঅপ্রাণের গুঢ় মীমাংসা ছেড়ে
ঊর্ধ্বে-অস্তে হারাল পথের দিশা,
বায়বীয় তবু সাজিয়েছিল পাট
মহাপ্রপঞ্চ, নিমিষে হল্লা ঘোচে।

ধ্বস্ত জীবন, ধাবন্ত তীর, কাঁচের নির্মিতি
সন্ধিগহন, দাহছেড়া বাহু, সাতকাহনের প্রীতি
ডাঙ্গার শীর্ষে জয়চিহ্নিত তপ্তের নির্যাস
শোভন-ব্যপ্ত পাড়ি দিল ঘোর তমা।

আবর্ত ভেঙ্গে সম্বিত ফের পালাল ঊর্ধ্ববাহু
প্রিয় ফুল কাঁদে, জলের কোমলে গেঁথে প্রিয় ভোর
হঠাৎ উড়েছে অনিত্য ধূলি নিরাকল্পের পথে
দেবীর পতন, পুরাতন জোড় ভেঙে ফেলে।

 

 

যাত্রাবিন্দু

পৃথিবীর শেষপ্রান্তে যাব বলে সে যাত্রা করেছিল।

তার অমন ভয় পাওয়ানো ভরাবুক দিয়েও
সমুদ্র পারেনি ঠেকাতে
পর্বতের গর্বিত ভঙ্গী
সে নিমেষে ভেঙ্গেছে
গেছে নদীর উৎস বেয়ে অরণ্যের কোমর দোলানো পথ ধরে।

সহস্র যোজন মাইল অন্তহীন প্রান্তর ডিঙিয়ে
একদিন ফিরে এসেছিল আরম্ভ বিন্দুতেই।

পৃথিবীর শেষপ্রান্ত যাত্রা বিন্দুতেই সে জেনেছিল।

… …

 

কামরুল হাসান 

জন্ম ২২ ডিসেম্বর, ১৯৬১, শরীয়তপুরে। তিনি মূলত কবি। অনুবাদক, প্রাবন্ধিক ও ভ্রমণ গদ্যকার হিসেবেও খ্যাত। আছে নানা দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা।

ভারতের বিশ্বখ্যাত খড়গপুর আইআইটি থেকে এ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে এমবিএ সমাপ্ত করেন। এছাড়াও স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন যুক্তরাজ্যের ব্রাডফোর্ড ও এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কামরুল হাসান শিক্ষকতা করছেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে। কামরুল হাসান  দু’হাতে লেখেন। এপর্যন্ত ১৪ টি কাব্যগ্রন্থ, ১ টি ছোটগল্প, ১টি প্রবন্ধ, ৪টি ভ্রমণ গ্রন্থ, ২ টি অনুবাদ কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া সমীর রায় চৌধুরী ও তুষার গায়েনের সাথে পোস্টমর্ডান বাংলা পোয়েট্রি ২০০৩ সম্পাদনা করেছেন।

[email protected]

Facebook Comments

One comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to Top