শব্দ কিংবা মুখোশ
কাঠামোহীন সংঘের চেয়ে বড় ঘাতক কে আছে লেখকের?
অথবা সেই অর্থে যে কোনও সৃষ্টিশীলতার,
একবার সভাক্ষেত্রে হাততালি উঠে গেলে
ছারখার হয়ে যায় বুকের জমিন, যায় না?
মাতৃভাষা বিমুখ হয়, মুখ ফিরিয়ে চলে যায় সমস্ত ঈশ্বর
এবং দানব।
প্রতি-ঈশ্বর ছেড়ে যান সবার আগে।
স্তাবকের শ্মশানে অর্বাচীন উড়তে থাকে কতশত কবিতার কংকাল…
শব্দের সংকীর্ণতায় অব্যক্ত থেকে যায় কোনো কোনো শকুন সম্পদ;
শব্দহীন সেইসব রাতে—
অপরাধবোধ ছাড়া আমাদের পরস্পরকে দেওয়ার মত আর কিছু থাকে না,
তবু আলো
তবু বিষাদ—
শব্দশরীরে সুখের নিষাদ!
দয়া করো, বিস্ময়!
হে আশ্চর্য, তুমি বেশভূষণ খুলে কিছুটা সময় স্থির হও।
আমি চোখের মোহে, শৈশবের আবেশে মুহূর্তকাল দেখি।
ছককাটা এই রাস্তায় আমি হারিয়ে ফেলেছি হারিয়ে যাওয়ার ভয়;
তবুও কোনও কোনও সন্ধ্যায় আমার ঘুরপাক খেতে হতে পারে
পরিচিত চৌকোণে, পরিকল্পিত দিনযাপনে –
আমাকে ছেড়ে গেছে যা কিছু – একেক করে ফিরে আসতে পারে
কতকাল হয়ে গেলো…আজ কতকাল—
কোনোকিছুই আমাকে বিস্মিত করে না।
দয়া করো, বিস্ময়! দয়া করো সমস্ত দৃশ্যপট!
শিকড়ের দিকে
কিংকর্তব্যবিমূঢ় ঘৃণায় একা দাঁড়িয়ে আছি, থাকি এমন।
দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি শোভন বালিকা যেন
আজও দশমবর্ষে; আজও বৃদ্ধ মাতামহের জীবনের অবিকল ক্রোধ
এসে পড়ে থাকে সবুজতর আঙ্গিনার কোণে। এই বুড়ো হতে থাকা –
এখোনো- অভ্যাসবশে মিথ্যা বলি সুকুমার বোধের মড়ক কণ্ঠে;
এইভাবে ভালো লাগে বুড়োদের বেঁচে থাকা,
এই ভালো থাকা সার্থক কেন সেইসব বুড়োদের দল জানে?
জানে বোধহয় তারা। যেমন আমার গায়ের ভেতর সাঁওতালীয় রক্তের ধুম
আমি সেই আদিজননীর নাম জানি না। আমি জানি নাই –
সেইসব জানে কারা? সেইনাম আদৌ প্রয়োজনীয় কিনা জেনে রাখা?
অপর্ণা হাওলাদার
জন্ম ২০শে অক্টোবর, ১৯৮৫। ঢাকা শহরের উদয়ন বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ভিকারুন্নিসা নুন কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স করেন। ২০১১ সাল থেকে উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনে প্রবাসে, ২০১৯ সালে অর্থনীতিতে পিএইচডি শেষ করেন আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় থেকে। বর্তমানে আমেরিকার পিটসবার্গের চ্যাথাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।