সৈয়দ তারিক
১.
সুরুচিস্নিগ্ধ পোশাকে আবৃত
ভেতরে সমূহ নগ্ন
উদ্দাম স্রোতে ভাসছিলো মন
ওপরে যদিও মগ্ন।
নিস্পৃহ ছিলো যদিও আঙুল
আত্মায় ছিলো তৃষ্ণা,
একবার বলি, ‘নে টেনে দুহাতে,’
একবার বলি,’নিস না।’
২.
এই ভাবি, পা সামনে আগাই
এই মনে ভয় চমক দেয়
এই বলি, ‘আয় বক্ষে আমার’
ওমনি বিবেক ধমক দেয়।
এই রাখি চোখ তোর দুচোখে
দুনিয়া ঢাকে অন্ধকার
খিড়কি পথে আনমনে চায়
সিংহদুয়ার বন্ধ যার।
৩.
বিসর্জনের ঘাটে দাঁড়িয়েছি
মা বলে, ‘ও বাছা, এ বুকে আয়’
মা বিদায় নিলো মাটির শরীরে
মাটিতে তবু মা স্নেহ ছড়ায়।
বোনের আদরে তার সে মমতা
কন্যার ঠোঁটে তিরস্কার
তোমার দুচোখে চোখ রেখে দেখি
মা রেখে গিয়েছে পুরস্কার।
৪.
কী যেন রতিতে বুড়োকালে পায়
লোকমুখে শুধু শুনেছি প্রবাদ
চিরকাল আমি ঘুঘুই দেখেছি
এইবার বুঝি বাগে পেল ফাঁদ।
কী যে লিখি ছাই প্রলাপের ঘোরে
নিজেই বুঝি না নিজের ভাব
এই চোখ বুঁজে ঝাঁপ দিতে চাই
এই মনে হয় বাপ রে বাপ!
৫.
আগুন পোহাই একবার
একবার পা ভেজাই জলে
অপলকে তোমাকেই দেখি :
তুমি নেই এ-ভুমিমূলে।
একদিন কাটে উপবাসে
একদিন মদে চুর চুর
এই মাতি মিলনোৎসবে
এই বাজে বিরহের সুর।
৬.
পোশাকের নিচে সবাই নগ্ন
সকলেরই আছে গোপন দ্বার
রক্তে আমারও নৃত্যনাট্য
ওপরে যদিও নির্বিকার।
কণ্ঠে আমার প্রমিত বচন
অনত্দরে জাগে খিস্তি-খেউর
গদ গদ ভাব কী রাখে গোপন
বুঝবার নাই সাধ্য কেউর।
৭.
হয়তো-বা তুমি মায়া অরণ্যে বাঘিনী
হয়তো চিত্রা হরিনী
আমি কি গোপনে ফাঁদ পেতে শেষে
নিজে তাতে ধরা পরি নি?
হয়তো-বা তুমি ক্ষীপ্র খাবার জাদুতে
শিকারী করেছ বন্দি
চাঁদের কুহকে ব্যর্থ হয়েছে
অমা-রাত্রির ফন্দি।
৮.
চমকে উঠলো মাটির হৃদয়
জ্বললো পাহাড় আবেগে
ভেসে যেতে যেতে কেঁদে ওঠে মেঘ,
‘আমার সঙ্গে যাবে কে?’
দেবদারু চুপ, তালপুকুরের
রোদে ঝলসিত আয়না
প্রতিবিম্বিত মনের ছায়ায়
মন খুঁজে আর পায় না।
৯.
ইচ্ছানদী পেরিয়ে দেখি
ইচ্ছাপাহাড় সামনে দাঁড়ায়
আমার যত খঞ্জ পুতুল
চৌদুনে পা সামনে বাড়ায়।
লাফিয়ে ওঠা মত্ত বাঁদর
চেঁচিয়ে শোনায় পোষ-মানা সুর
নিকটতম বন্ধু আমার,
তুমিই যেন সবচেয়ে দূর।
১০.
ইচ্ছা করে ইচ্ছামতীর
ইচ্ছাতে হই ইচ্ছাপূরণ
আমার যত ইচ্ছাগুলো
বর্ণ হারাক সবর্ণতে।
নাই দুনিয়ার পূর্ণ তিথির
অপূর্ণতায় ফুটছে আলো
শূন্য আমার শূন্য করুক
শূন্যতর সে পূর্ণতে।
১১.
খেলতে খেলতে কুড়িয়ে নিচ্ছি
আনন্দফুল রঙিন নুড়ি
খেলতে খেলতে খেলার ভিতর
অন্তবিহীন তোমার খেলা।
খেলছি আমি খেলার নেশায়
সুতোয় বাঁধা খেলার পুতুল
খেলার আগে খেলাই ছিলো,
খেলার শেষে কেবল খেলা।