পরিতোষ হালদার
একাকী খনিজ
ভুলে গেছি সব। কোন হাতে পাত্র রাখি কোন হাতে সোনার গোলক। ঘনকুয়াশার বনে হাঁটতে হাঁটতে ফিরে গেছে আমার সকাল। তিস্তা-বেগবতী-নিলাক্ষী কত শত নদীর নামে তোমারে ডাকতে গিয়ে প্রাণের শ্রাবণে কখন যে হয়ে গেছি জল। রূপালী শস্যের টানে সাঁই সাঁই উড়ে আসে পাখিদের ঝাঁক। ফড়িঙের ঘাস দেহে উদ্যানের প্রগাঢ় মমতা। কেবল ছায়ারা ডাকে, পার হয়ে যাই রোদের বেলা। অনেক গোপন ঘেটে যা কিছু তুলে আনি তার দেহে শ্যামল আঁধার। বুকের ওড়নায় রাত্রি ঘুমিয়ে থাকে, তারে তুমি জাগালে না— জাগালে না সংঘমিত্রা ধ্যানে। অজস্র ধোঁয়ার মতো জ্যোৎস্না নামে—সারারাত ঘুমাতে পারি না, সারারাত চুরি হতে থাকে পাহাড়ের কাঞ্চনজঙ্ঘা ঘ্রাণ। নক্ষত্র তারার নিচে সাড়ে চারশ কোটি বছর পড়ে আছি একা। তোমারে হারাতে গিয়ে অবশেষে জেনে গেছি তুমিও একা আর ভালবাসা একাকী খনিজ।
আলোকলতা
পথ জানা নেই, তবুও পথে পাথে হাঁটি। নিমকষ্টের বনে রাতের নিঝুম। জ্যোৎস্নাপোড়া ছাই নিয়ে হেঁটে যাবো, আমাদের হাতে হাতে চাঁদের পরাগ। সবুজের রঙ ছুঁই, সুবর্ণরেখার কোলে রূপের মহড়া। আমি পাথরে-পাহাড়ে-গুহায়-হাড়ে লিখে নেব তোমার কাওয়ালি— ষোল কলায় গাঁথা পূর্ণবতী বাণী। তুমি আকাশে আকাশ হয়ে ডেকে যেও আমার বিস্ময়। জেনে রেখ আমি আর তুমি ছাড়া নিসর্গের সকলই পুরাণ। সকলই ছিল, আমাদের জন্মের অধিক আগে। জীবন ও মৃত্যু থেকে উঠে আসা আমরা, যারা হাঁটতে হাঁটতে একদিন চলে যাবো অহমের দেশে, ফেলে যাব হাঁস বালিকার শাদা গন্ধ— জলডুবি দিঘি; যুগল জন্মের আলোকলতা।
প্রথম জল
কথা ছিলো মৃত ছায়ার কাছে শুয়ে রবো; এই গাঙপাখি সন্ধ্যায়— তুমি আমি খুব নীরবতা। কতোটা আঁধার পেলে একরাত একা হয়ে যায়। নিজস্ব শাড়ির আড়ালে বিপন্ন বেহাগ, কেঁপে ওঠে চাঁদের গহন। দূর কোনো অতীতের কোনো পাখি পাতাখসা উষ্ণতা নিয়ে উড়ে যাবে আরো দূর ইপ্সিত অন্ধকারে। নরম নৈঃশব্দ্যের মতো আমিও হেটে যাবো প্রগাঢ় তৃষ্ণার দিকে। কে আমার প্রথম জল, প্রথম অগ্নিমালা। কার কাছে আবার হারাবো, ভেসে যাবো সহজ তরলে।