মলয় রায়চৌধুরী
বিশ্বাসঘাতকতা
হে রাজদ্রোহের স্বর্গসুখ
হে বিশ্ব যা আমার পদচিহ্ন জুড়ে—
হে প্রাচীন মৃতদেহ—
হে জগত যার প্রতি আমি বিশ্বাসঘাতকতা করেছি
আর আজও করে চলেছি
আমি সেই ডুবন্ত মানুষ
যার চোখের পাতা প্রার্থনা জানায়
জলের গর্জনের প্রতি।
আর আমি সেই ঈশ্বর
যে অপরাধের জগতকে আশির্বাদ করে
আমি একজন বিশ্বাসঘাতক
আমি নিজের জীবন বিক্রি করি
শয়তানির অলিগলিকে।
আমিই বিশ্বাসঘাতকতার শাসক।
সূর্য
এখানে ওর আঘাতে রয়েছে সূর্য
নারীটি ওর বিছানায়
তার চোখের পাতার বিয়ে হয়েছে ওর সঙ্গে
আয়না
ওর নিজেরই চোখের জলের প্রতিবিম্বে
দুস্হদের যন্ত্রণার গুপ্তচর সে
ওর খামখেয়ালের অভিধার আয়নায়
কবিদের আত্মশ্লাঘা উপভোগ করছে
হারিয়ে যাওয়া
তোমার বাহুতে হারিয়ে গিয়েছিলুম একবার,
আমার দুই ঠোঁট অবরোধে মুগ্ধ
ঝোড়ো বিজয়ের আকুল আকাঙ্ক্ষায়।
আর তুমি এগিয়ে এলে ।
তোমার কোমর একজন সম্রাট
তোমার বাহু সৈন্যবাহিনীর আগুয়ান দল,
তোমার চোখ লুকিয়ে থাকার জায়গা আর বন্ধু।
আমরা মিলিয়ে গেলুম পরস্পরের মধ্যে, হারিয়ে গেলুম দুজনে
প্রবেশ করলুম দাবানলে—
আমি প্রথম পা ফেললুম
আর তুমি পথ মেলে দিলে….
গানের মুখোশ
ওর নিজের নামের ইতিহাসে
পাঁকে ডুবে থাকা এক দেশে
যখন ক্ষুধা ওকে কাবু করে
ও নিজের কপাল খেয়ে ফ্যালে
ও মারা যায়।
ঋতুগুলো জানতে পারে না কীভাবে তা ঘটেছে।
গানের অক্ষয় মুখোশের আড়ালে ও হারিয়ে যায়
একমাত্র অনুগত বীজ
জীবনের গভীরে কবরস্হ ও একাই বসবাস করে।
চক্রিদলের শহরে
১.
মেলে ধরো তোমার দুই হাত
হে চক্রিদলের শহর
কাঁটা বিছিয়ে ওকে স্বাগত জানাও
কিংবা পাথর মেরে।
মাথার ওপর ওর দুই হাত বেঁধে দাও,
যেন গোরস্তানে ঢোকার তোরণের মতো দেখায়,
কপালে উল্কি দেগে দাও
কলঙ্কময় ছবি, জ্বলন্ত কয়লা দিয়ে ওকে ছ্যাঁকা দাও
আর অগ্নিশিখা ঘিরে ফেলুক মিহয়ারকে
২.
একটি অলিভগাছের চেয়েও বড়ো, নদীর
চেয়েও বিশাল, মৃদু
বাতাসের চেয়েও
নিয়ন্ত্রিত আর পুনঃনিয়ন্ত্রিত,
একটি দ্বীপের চেয়ে
বনানীর চেয়ে,
একটি মেঘ
যা অলস পথে আলতো ভেসে যায়:
সবকিছু এবং আরও কিছু
তাদের একাকীত্বে
ওর কাব্যগ্রন্হ পড়ছে ।
নিউ টেস্টামেন্ট
ও এই ভাষা বলতে পারে না
ও এই প্রান্তরের কন্ঠস্বর জানে না—
পাথুরে ঘুমে একজন দৈবজ্ঞ নাকি ?
বহুদূরের ভাষার ভার বইছে ও।
ধ্বংসাবশেষের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে ও
নতুন শব্দাবলীর আবহাওয়ায়,
বিলাপরত বাতাসকে অঞ্জলি দিচ্ছে ওর কবিতা
পালিশ করা না হলেও কাঁসার মতন সন্মোহক।
মাস্তুলের মাঝে ঝলমলে ও এক ভাষা,
অচেনা শব্দের পথদস্যু…
সিংহাসন
নিজেরই আয়নাকে ঝকমকে করে তোলার এই সিংহাসন—
আকাশের একটি প্রতিবিম্ব,
আর নিজেরই চেয়ারকে পালিশ করেছে
মাথার টুকরোটাকরা দিয়ে
রক্তের ধারা দিয়ে
সেই তালগাছ
ওই তালগাছটি মন দিয়ে শোনে
যখন আমি ওকে শোনাই
আমার বাবা-মায়ের কাহিনী,
আর আমি কি বলছি তা ও বুঝতে পারে।
মৃত্যু
এই মুহূর্তগুলোর পরে আসবে সেই ছোট্ট সময়,
আসবে দুরারোহ উৎরাই আর পথ, বারবার।
এই মুহূর্তগুলোর পর বাড়িগুলো বুড়ো হয়ে যাবে,
দিনগুলোর আগুন
নিভিয়ে দেবে বিছানা
আর তারপর মারা যাবে।
আর, বালিশগুলোও, মারা যাবে।
হেমন্তের মৃতদেহের জন্য আয়না
দেখেছো কি একজন নারীকে
যে হেমন্তের মৃতদেহ বয়ে বেড়ায়,
নিজের মুখশ্রীকে মিশিয়ে ফ্যালে পাথরপ্রতিমার সঙ্গে
আর বৃষ্টির আঁশ দিয়ে বুনে ফ্যালে
নিজের পোশাক,
যখন জনগণ
ফুটপাতের ছাইগাদায়
স্ফুলিঙ্গের গনগনে শবে রূপান্তরিত ?
দুটি মৃতদেহ
তোমার গোলামির আঁতে নিজেকে গোর দিয়েছি আমি,
মাথার ভেতরে, দুই হাতে আর দৃষ্টিতে,
একটি মিনার;
দুটি মৃতদেহকে গোর দিয়েছি,
আকাশ আর পৃথিবীকে।
হে জাতিগোষ্ঠী,
হে মৃতদেহের জরায়ু,
আর হে শস্য-ওড়ানো হাওয়া…
একটি পাথর
এই শান্ত পাথরটিকে পুজো করি আমি
যার প্রসন্নতায় আমি দেখতে পাই
আমার মুখ
আর আমার হারিয়ে-যাওয়া কবিতা।
valo lagche bes…
porhchi ekhon…..besh bhalo laagchey….