ফেরদৌস নাহার
তোমাকে আমার নিজের মনে হয় না।
সব আপন যেমন নিজস্ব নয়, ঠিক সেরকম তুমি কেউ
দরজায় কড়া নাড়ো, ভুল করে নাম মনে রাখ
মাঝে মাঝে শাসনে বিদায় দাও, আপ্রাণ স্বপ্নে
তোমার মনের দেশ ঘোলাটে স্রোতের টানে একা,
হিজিবিজি কথা টানা অর্থহীন আনাগোনা
ভিজিয়ে রেখেছ কোনো কঠিন তেতো।
ভুল করে মাখামাখি, ভুল নামে ডাকাডাকি
সব ফাঁকি, জাদুমন্ত্রের প্রতিশোধ টানা এতটা অজানা
এতটা নাবালক শক্তির আপ্রাণ অপচয় তলে তলে
বিষবলে করছে ঝাঁজরা এ পাঁজর। পরভূক আপন
তোমার পরিচয় যত পাই ততই অবাক আমি
নির্বাক যুগের চলচ্চিত্র। আজ রিক্ত, আজ শূন্য
গোপন কোষাগারে জমা পড়ে বারে বারে লুণ্ঠনতীর্থ।
২
বিদগ্ধ আঁধারের পাখি
কোথায় হারিয়ে এলি খাঁচার চাবি?
অন্ধকারের জমাট বোতাম খুলে
হিজিবিজি লিখে দেই কিছু
আর একটু পরে ডেকে দিস শোন
অন্ধকারে গুটি গুটি পায়ে
কাছে এসে দাঁড়াতেই ভুলে গেছে নাম,
বার বার তাকালাম
বিস্মরণের ওপার থেকে বলে উঠলাম,
আমি কেন মনে করতে পারছি না কিছু…?
বাতাস ঘুরে ঘুরে বিদায় জানাবে
অন্ধকার ঘুরে যাবে আলোর দিকে
অনেক পথের পরেও পথ পাব না
খলনায়কের চোখ দেখে নেবে ঠিকই
কে ছিল তার চেয়েও খল
আগুন চাবুকদিন আগুন অন্তলীন
ঠেলাগাড়ির নীচে ঝোলে লন্ঠণের হাসি
স্টেশনে রেল থামে তা থেকে নেমে আসে
গুনগুন গান গাওয়া প্রভাতসঙ্গীত
ডানা মেলে খুলে যারে খাঁচার চাবি!
৩
চক্র কাটে পায়ে পায়ে
কবে লিখেছিলাম মনে পড়ে না
কবে লিখেছিলাম জন্মকালের সবকথা মনে পড়ে না
জন্ম মুছে যাচ্ছে আর ভালোবেসে পথে নেমেছে যারা
তাদের কথা কী আর লিখব
উদভ্রান্ত তারা সব ঘোর পায়ে চক্র কাটে।
মাথার আনাচে কানাচে বিষ্যুদবার রাত
ঘুরঘুর ঘুরে যায় নিঃশব্দ হাহাকার
মনে পড়ে ট্রেনে ট্রেনে এলেবেলে স্টেশনে নেমে পড়া
প্ল্যাটফর্মে হকার আর পত্রিকা হাতে সুব্রত’দার ডাক—
এ-ই তোমরা চা খেলে নেমে পড়!
সেবার শীতযাত্রা ছিল খুব জমানো
পাহাড়ে পাহাড়ে প্রতিধ্বনি, ডেকেছিলে অনেকবার
আর আমি প্রতিবার চমকে ফিরে তাকিয়েছি!
ভ্রম শুধু ভ্রম, বাতাসে গেঁথে গেছে বিরহী উপকথা
তারপর কতবার পাহাড়ে গিয়ে খুঁজেছি সেই ডাক
পারলে অচেনা মানুষকে ধরে অনুরোধ করে বসি
অন্তত একবার সে-ইভাবে নাম ধরে ডাকবার…
জন্মজয়ের পথে পথে ছড়ানো কিছু ডাক, কিছু হারানো বিজ্ঞপ্তি
৪
নাভির গভীরে
দূরে থাকি। বসে বা হেঁটে যেভাবেই থাকি না কেন
দূরে থাকি।
ভাষা ভেসে আসে, মেঘ ও বৃষ্টির আদুরে স্বভাব
কোথায় এসেছি ফেলে ধ্রুপদী ক্ষুধার খেয়ালে,
শীতল আগুনের শিল্পকর্ম অচিরেই প্রকাশিত হলে
সৌন্দর্য কেঁপে ওঠে উষ্ণতার দেশে, এ কেমন দিন!
কতদিন চূড়ান্ত মেঘের অবকাশে
কত কিইতো হতে পারতো অন্তরে অন্তরে,
শুধু ছাই, হাড়ের খোঁড়লে একা নির্বাসনে গেল
কে পাঠাল তাকে?
কোন আয়ুর পুতুল স্বর্ণযুগ ভুলে ছবি আঁকে দেয়ালে দেয়ালে
উড়ে উড়ে গাইছে সে নিদ্রা-উদ্ধৃতি অরণ্যের ঊর্মি হাওয়া
ঝাপসা বৃষ্টি,
বেসামাল খেয়ালে তাল ঠোকে আনমনা যেভাবে
তার চোখ ভেসে গেল সৌরসখার স্পর্শ আর নদীর কাঁপনে…
দূরে থাকি। হেঁটে বা বসে যেভাবেই থাকি না কেন
কাছে পিঠে কেউ নেই শহরের মানচিত্রে স্টিম টানেল
নাভির গভীরে তার ডাক ডেকে ওঠে!
৫
গল্প ফরাজির গল্প ও সাইরেন
ব্যক্তিগত সময়ের ভাঁজে বয়স লাগতে থাকে—
সেলুলয়েডের গায় জমে দীর্ঘছায়া
আর পুরনো বইগুলো নাম লেখা হয়ে গেলে একান্ত ব্যক্তিগত।
একদিন ঘোষিত হলো শেষ কথা, কেউ কেউ
সাইরেন বাজবার সাথে সাথে দৌড়ে চলে গেল বউ-বাচ্চা ফেলে।
যেটুকু সম্বল ছিল কুড়াতে কুড়াতে ভয়ার্ত চোখ মেলে দেখল
পুরাণের ঘোমটা খুলে কী করে বুনোমোষ সব শেষ করে দেয় !
দুঃসময় সঙ্গম করছে, তলপেটে লাথি
বরিশালের এক ছোট্টগ্রামের মাঠে স্মৃতিঘোড়া দৌড়াচ্ছেন হাশেম ফরাজি…
বিষাদ নগরীর চৌরাস্তা থেকে একজন বাঁশিওয়ালা বেরিয়ে এল
সে কিন্তু হ্যামিলনের নয়— চৌরাস্তার বংশীবাদক এমন সুর ধরল যে,
সকলে হু হু করে কেঁদে উঠল,কাল পর্যন্ত যত অভিযোগ ছিল
আজ তার সবশেষ। অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ সব ভেঙেচুরে ধুয়েমুছে
একাকার হতে হতে বিস্তৃত কোনো দগ্ধ বাতাসে মিলিয়ে গেল।
বৃদ্ধরা হাঁটু মুড়ে বসে পড়ল, শিশুরা ভয়ে শুয়ে পড়ল এলোমেলো
এমন কী যুবকেরাও আর দাঁড়াতে পারছে না
শুধু নারীদের দুচোখে জ্বলছে রহস্য কৃপাণ …
স্মৃতিঘোড়া দম নেয়, দূরদৃশ্যে বাজে কারসাজি
রহস্য কৃপাণ ফেলে আলগোছে হেঁটে যান গল্প ফরাজি।
অনেক সুন্দর হয়েছে লেখাগুলো।
কবি ফেরদৌস নাহারের কবিতা মানে একজন সত্যিকারের কবি’র কবিতা পাঠের আনন্দ…
“পাহাড়ে পাহাড়ে প্রতিধ্বনি, ডেকেছিলে অনেকবার
আর আমি প্রতিবার চমকে ফিরে তাকিয়েছি!
ভ্রম শুধু ভ্রম, বাতাসে গেঁথে গেছে বিরহী উপকথা
তারপর কতবার পাহাড়ে গিয়ে খুঁজেছি সেই ডাক
পারলে অচেনা মানুষকে ধরে অনুরোধ করে বসি
অন্তত একবার সে-ইভাবে নাম ধরে ডাকবার…”— অসাধারণ…………!!!
সবকটিই ব্যক্তিজীবনের প্রতিচ্ছবি যেন। একেবারে মন-জাগানিয়া উপলব্ধির সারাৎসার।
বেশ ভালে লাগল।
অনেক অনেক শুভেচ্ছা ফেরদৌস নাহার।
কবিতাগুলোর গতি এতোটাও সুন্দর যে মনে হয়, ভাষা দিয়ে কাঁথা বোনা। সাবলীল হলেও কবিতায় বড় যত্ন আছে। একটুও গুরুচন্ডালী হলো না। পরতটা পেঁয়াজের মত। কিন্তু বড় অনায়াস। এটুকু কবিরই নির্মান শৈলী। প্রখম ৪ টে কবিতা খুব টেনেছে। অনেকদিন পর ফেরদৌসের লেখা পড়লাম। কবিতা ক্যাফে নামটাও অভিনব। একটা বেহুদা শব্দ ঢোকে নি। এসেছে কেবলি মনোভূমির ভেতরের বর্ননা।
Valo laglo. Bishesh kore shesh kabitata veeshon !
কবিতাগুলো পড়ে খুব ভালো লাগলো। এই কবির কবিতা আমাকে সবসময় টানে।
তাকে অনুরোধ, আরো লিখুন, আরো অনেক কবিতা পড়তে চাই আপনার।
সাহিত্য ক্যাফে-কে জানাই উষ্ণ অভিনন্দন। হারিয়ে যাবেন না যেন।
কামনা করি, এই অনন্য প্রয়াস দীর্ঘজীবী হোক।
kobir dorshon o shobdo proyoger dokoley mughdo…
kabbik onubhuti.,,manusher .monmogojmanoshey probhab felbey..
kobir jonno roilo shuvo kamona aar shahitto caffeer jonno roilo prokasonar..shadhubad…
abohomanota jarano kobir ei kobitaguli…
কবিতাগুলো পড়ে খুব ভালো লাগলো। এই কবির কবিতা আমাকে সবসময় টানে।
তাকে অনুরোধ, আরো লিখুন, আরো অনেক কবিতা পড়তে চাই আপনার।
সাবলীল কবিতা!
মনের কথা গুলো মনে মনে বলা!
ভাল লেগেছে!
একই সাথে গদ্য এবং কবিতায় সমান কৃতি ফেরদৌস নাহারকে অভিনন্দন।মায়া ডেরেনের ওপর লিখিত তথ্য সমৃদ্ধ নিবন্ধটি আমাকে ঋদ্ধ করেছে। কবিতা গুলিতে কবি তার নিজস্বতা নিয়ে উপস্থিত।কবিকে সাধুবাদ জানাই।
নতুন করে বলবার কিছু নেই। তাঁর কবিতা মানেই তাঁর কবিতা। কবিকে শ্রদ্ধা অফুরান।
এই একটি ক্ষেত্রে আমি বরাবর নম্র, বিনত, ধোঁয়াশামগ্ন, আবিষ্কার করি অন্যরকম তোমাকে।
বাতাস ঘুরে ঘুরে বিদায় জানাবে
অন্ধকার ঘুরে যাবে আলোর দিকে
অনেক পথের পরেও পথ পাব না
খলনায়কের চোখ দেখে নেবে ঠিকই
কে ছিল তার চেয়েও খল……….yes DiDi..yes…After A long time I read ur poem..