আর্যনীল মুখোপাধ্যায়
ছবি: ছায়াছবির স্থির চিত্র
ব্যক্তিগত অ্যালবাম– আর্যনীল মুখোপাধ্যায়
যেখানে এক অবলোকন ধরা পড়েছে আর এক দেখায়
কেউ দেখছিলো সেই অবলোকন পেছন থেকে
ক্যামেরাবাস্তবের মনশ্চক্ষু দিয়ে
আর সেইটেই আমি দেখছি সেই দেখা
সেটাই আমি দেখাই আমার তিন নম্বর চেতনা দিয়ে
আপনতার অজর অকৃত্রিম ছায়া ফেলে
শিল্পবস্তু চেয়ে দেখে আহৃত শিল্প
এই পাশ্চাত্য তুলে পরিচালক এক জায়গায় পৌঁছতে চেয়েছিলো
অথচ আমি পৌছলাম আরো পেছনের ড্রেস সার্কলে
যেখানে সবাই কৌপিনহীন
বনানীর তালিকাহীন গাছ যাদের নামের প্রহসন নেই বাকল নেই
সবার নাম ‘গাছ’ পদবী মনে নেই
সবার পিঠ সবার নিতম্ব খালি
চেয়ে থাকবার শক্তির খোঁজে
আমি অনলুকারের কাছে যাই যার অন্বেষা ব্রীক্ষা ও জিজ্ঞাসা
কোন বস্তুকে দৃশ্যকে শিকার করেছে
সে আমার অস্তিত্ব টের পায় না
টের পায় না তার পেছনেও সজাগ ইশারা বন্দুকদৃষ্টি
এ সেই খাদ্য-পিরামিডের শিকার-শিকারী সম্পর্ক
এই সেই পৃথিবীর অধিলিপির ওপর
নদীর লেখার গল্প
প্রস্তরের পর প্রস্তর
আড়াল টাড়াল নয় সবাই সবাইকে শিখে সবাই সবাইকে মুছে
চেনাকে ক’রি চয়নে অচেনা
তিনটে অক্ষ যে বিন্দুতে বাঁধা যদিও সেটাই সূত্র সেটাই জন্মক্ষণ
তবু তারা ক্রমাগত ঘুরছে আর পড়ছে
একে অন্যের ওপর
যারা মানচিত্র দেখছে তারা কোথাও যাবে
যারা গান শুনছে তারা কোথাও ফিরে যাচ্ছে
বর্তমানের বোধ ও হুঁশকে বাড়াতে উইন্ডস্ক্রীনের ওপরেই রাখা হয়েছিলো রিয়ার-ভিউ আয়না। অথচ সে শেখালো বর্তমানকালকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করার কায়দা। যে দৃশ্য ফেলে আসছি তারই সামান্য বদলানো প্রলম্বিত পথের ওপর আগুয়ান স্ক্রোলচিত্র। পেছনের গাছের সারি যতটা ফেলে আসা সামনের টিলার ধারে ওই সুছায়ায় জোছনাবারান্দা ততোটাই সহজ প্রক্ষেপ। ঘটে যাওয়া আর ঘটবে’র জোড় এতটা গতিবিদ্যক এই মুহূর্তের কোনো অস্তিত্ব নেই। কোনো অর্থপূর্ণতা। বিরিঞ্চিবাবাকে নিয়ে আর কোনো ঠাট্টা নয়। কাল আছে আজ নেই। আমরা ভাবি বটে উইন্ডস্ক্রীনের বৃষ্টিই বুঝি রিয়ার-ভিউয়ের অস্পষ্টতা। আসলে নেপথ্য দৃশ্যের বর্ষাতেই উইন্ডস্ক্রীনের দুপাশে তোলপাড় ল্যাভেন্ডার।
বাস নিয়ে এসেছিলো গ্রন্থাগারে এক পাল আলজাইমার রুগী
তারা মার্সেল প্রুস্তের স্মৃতিবিষয়ক ভাষণগুলি তুলে নিয়ে যায়
কেউ বই কেউ সিডি
সপ্তাহান্তে বাস তাদের ফেরত দিতে আনে
কেউ কাউকে চেনে না সেদিন
কেবল ড্রাইভার জানে মুখের সাথে নামের জরাসুতো
নামের সাথে নম্বর বাড়ি পথ
মনে নেই কি গান গেয়েছিল
রেলজানালার ওড়নাফেলা নথ
এক উন্মুক্তমুখ তেকোনা গুহার কথা
যে বেড়ানোয় গিয়ে মনে পড়ে হঠাৎ এত বছরের আলো এসে
আজকে ঝলসে জানায় কেন তৃতীয় দুয়ার খোলা
কাজললতার দিকে তাকিয়ে আছে যে চোখ তাকে সকলে দেখছে
আর তখন সামুদায়িক দেখা থেকে প্রস্তুতি নেয় এইসব লেখা
সিংহ বিক্রমের সামনে ন্যুব্জ নিরীহকে মটকে বেরিয়ে আসা
মরণোন্মুখ শয়তানের সামনে
প্রাণপ্রতিষ্ঠা পাওয়ায় মায়ের মুখে যখন নিখিল নিবিড়
পশ্চাদপটে এই আমাদের আধাঅন্ধকার চালচিত্র রচনা
এই আমাদের তিন নম্বর সাহিত্য
আমাদের তৃতীয়বিশ্ব চেতনা
মনে আছে থিকথিকে ভেড়ার পাল
আমাকে থামিয়ে দিয়ে লোরকায়
তাদের কোনোকোনোটা লাল আবিরে শনাক্ত
বেড়া ভেঙে ভেঙে দেখেছি ঘনবুনোট বেড়া
অন্ধকারের সাথে অন্ধকারাচ্ছন্নের
তার ভেতরেও ভেসে বেড়ায় ভেড়া আমাদের উলের দোকান
ওদের নিরীহ গা কামিয়ে
নাকি উল নয় মাংশ
গুঁড়ির নীচে চায় ছড়িয়ে থাকা রক্তগ্রাফি
মৃত্যুর পর সঙ্গম নেই জন্ম নেই
তাই নেই জিনে জিনে ছড়ানো মৃত্যুভয়ের পরিশিষ্ট
অথচ ভুলে যাওয়া সমষ্টির যেমন গৌরব গেছে
তেমনি ভয় রোষ যুদ্ধপ্রবণতা
হাওয়া চিরে বেরিয়ে যাবার পর
পাশাপাশি দুটো গাছের লড়াই
কুকুর নিয়ে বেরোনো হারাধনের দশটি মেয়ের একটি পুতুলপড়া
গাছ পড়া তার শিঁথির রক্তক্ষরণ শনাক্তকরণ
সময়ের তবু কত আস্তরণ আছে
কাচের ওপাশে চিনেমাটির সন্দর্ভ
তাকে স্বচ্ছতার প্রকৃত চেতনা দেয়
দেয় নিরাপত্তার বুর্জোয়া রঙঢাল
মেঘ ক’রে দেখাচ্ছে একটা পালক
তার ডগায় কালি
সে ক’রে দেখায় ভাষা মেঘমনোচিত সদাবাহারী
কিশোরীর পাল্টে পাল্টে যাওয়া মুখ
মুখরতা আচ্ছাদন ব্যবহারিক
তবু সে কাদামাটির কলসির সাথে উনুনে যায়…
আর বেরিয়ে আসে মিথের সাথে তবে ছাই হয়ে
বস্তুহরণ হয়ে পাপড়ি পড়া মামড়ি পড়া
তবলচির পাশের ব’সে পড়েছে পিয়ানিস্ট
এখন বগল বাজানো ছাড়া গতি কি
এখন ভুল ইংরেজিতে ভরাভাদর বাংলা কবিতা
ঋতুর ষড়ভূজের ভেতর এই উপদ্রুত যাতায়াত যার বিনাকারণ বহু
তবু এই পাখা ঝাপটানো রঙিনের উৎপাদন
এলোমেলো ছটফটানি নিয়ে এলো
নিরন্তর যাওয়া-আসা অকর্মক ক্রিয়ার কত ছোটাছুটি
মক্ষির সমাজ সভ্যতারই এক ফালি সত্য
এইসব ভয়ার্ত অস্থিরতার অতলে তবু একফোঁটা একফোঁটা ক’রে কি যেন নিবিষ্ট মধুরতা জমা পড়েছে ভোরবেলায় দেখলাম
ফুলকুড়ানি
বিষাক্ত ব্যাঙছাতা খেয়ে মরে পড়ে আছে ষড়ভূজের কেন্দ্রে
যেখানে ছটা সমবাহু ত্রিকোণের নিব গিয়ে ঠেকেছিল
শুরু হয়েছিলো বিকেন্দ্রিকরণ
একে একে আড়াল স’রে যাচ্ছে বাড়ি পর্দা দোকান
লাইন পেরিয়ে রেল চ’লে গেলে দেখা যায় মেটিয়াবুরুজের মাঠ
অরৈখিক অসংখ্যক সাদা উড়ানের নিরক্ষরতার ফাঁক দিয়ে তবু হাওয়া
আর হাওয়ার সাথে কত কি যা এত বছর পরেও হাওয়া হয়নি
শেষ পযর্ন্ত সময়ের খোলাতেই এই মুহূর্ত ভাসে
কেলাসিত পুঞ্জে ঢুকে সদস্যদের সমস্ত ধর্ম ছারখার ক’রে দেবার পরেও
আমি কি অন্য কেলাস অন্য শ্রেণীর?
রসুন উৎসবের মাঠে সেকালের গেনো সৈকতে
কামপ্রভ হস্তান্তরিত ছেলেমেয়েরা আচমকা
যে বেহালা ও তুম্বেলিকি বাজায়
তার ভুল ব্যাকরণের জন্য ছটপট করছে আমাদের ভাষা
সাগর ডাকের কথা
ছুটে ছুটে ফুলে এসে চিরদিন খেলায় জুটে
উচ্ছ্বাসে নেশায় আমারে ঢেউ-বুকের ভালোবাসা
আমার গানে জীবনে আনে চলার ইশারা
স্রেফ সংজ্ঞাতেই আলাদা হয়ে যাচ্ছে আমাদের সময়
এখন হাতে হাতে বাদামভাজার শঙ্কুর মতো
প্রত্যেক শঙ্কুর উচ্চতা আলাদা বাদামের সংখ্যা কম বেশি
ঝালু-নুন ভিন্ন– এইভাবে একটা মোছামুছি শুরু হয়
নিজের সমস্ত অনুভূতি– অতীত তুলে ফেলে এরপর
মূকাভিনেতা এলেন সাদা রঙের মুহূর্তে
খুব সন্তর্পণে আমরা করিডোর মাড়াই
বিচ্ছিন্ন নিস্তব্ধ সবুজ গালিচার ঠাণ্ডা বুকে ঝকঝক করে
ভেতর থেকে যে হলুদ ছিনিমিনি দোলে
দোদুল দোলে ঝুলনা
পাহাড় চূড়োয় তিনটে গাছের উইকেটের সামনে আমি এই সকালবেলা
ব্যাটস্ম্যানের মতো দাঁড়াই আর অপেক্ষা ক’রে থাকি
পিচে বল পড়ায় আগেই কখন শুনতেই পাবো সেই ট্টি ট্টি ট্টি ট্টি
ভুটিয়া সরাইমালিক গাছের ভেতরে ডানার রঙটা খুঁজবে আর তার
ছোট মেয়েটা বলে উঠবে– গংতালি
সুহানা সফর আর সেরকম মৌসুম
আলোসকল বদলে দেয় আমার সময়ের আভাস। হারায়নি সে কেবল
লেগোখেলনার খণ্ডখণ্ড কাল জুড়ে এই একচালা জীবন
অবিরত অসম্পূর্ণ। চলমান। খাঁড়ির ওপর ঐ স্পিডবোটের মত
আর খাঁড়িও তাই। সাগর নয় জমিও নয়
সেখানেই আমার এখন দাঁড়িয়ে আছে কমলারঙের ঘাসফুলের পাশে
এক অন্য তুমি আমার অন্য সময়ে এলে ভালো হতো
সেই কেবল-সবুজ জুঁইগাছের গান মনে পড়ে–
শুনেছি প্রজাপতি গায়ে বসলে বিয়ের ফুল ফোটে
ফুটুক বসন্ত না ফুটুক এই আজকের ফুল
চলচ্চিত্র কতোটা জীবনের সিমুলাক্রাম জানি না
কিন্তু উৎকৃষ্ট খিচুড়ি বা ৫ তরকারি কিম্বা জাম্বালায়ায়
গুণ এসে পৌঁছয় অনেকটা পার্সলের মতো
দেশের বাড়ির আর বিদেশ বাড়ির এলোমেলো আয়োজন সব
যা মুভিমেকার দিয়ে
গড়ে উঠছে প্রিয় ছবি ছিঁড়েজুড়ে
হিচককি অবগাহনের ঘোলাটে নিকাশিপথে নয়
তাই আকাশ পরিষ্কার রাখতে
সমস্ত পাখিদের আজ দিয়েছি উচ্চতাভীতি
তারা বসে থাকে তারে পাঁচিলে বেড়ায়
আর এই একবার ভূকম্পন তাদের ধ’রে ফেলার সুযোগ পায়
উইন্ডচাইম বলুন বা ‘হাওয়াতান’ ম্যনসনের সমস্ত রন্ধ্রে বাজে
অতিথি জেনে যায় বাশেঁর চালাঘরের সমস্ত ফাটল
অথচ সামনে প’ড়ে করিডোরের বনান্ধপথ
চুমু খেতে এগিয়ে আসা মুখের দুচোখ গালা
কোন দৃশ্য নেই, সব চুলাক্কার
এক কেবল অন্ধকারাচ্ছন্ন স্পর্শ
প’ড়ে আছে আরো হরিৎলতার ফাঁকে পেরিউইঙ্কল
যদিও কালো মর্মরের আয়না বেরিয়ে আসছে এ কোণ ও কোণ থেকে
তোমাকে চেনা লাগছে কেন এই অতিথি সমাগমে
সবটা জলচ্ছত্রের ওপাশে কুয়াশা
থামের পাশে পাশে ব্রোঞ্জের আর্দালি অনড়
তবু ওদের গা ঘেঁষে হেঁটো না তাকিয়ে দেখো না
কাঠ আর ধাতুর অনুপুঙ্খের মাঝামাঝি গোলাপের স্ট্যাচু নুইয়ে
তোমার পিঠের খুব কাছে গিয়ে সন্তর্পণে তিল গুণে গুণে
পাসপোর্টে লেখা সংখ্যার সাথে মিলিয়ে
কি পরিচিতি? জলের মতো
পরী হয়? হয় না । দূরে যে হাওয়াতান সুর করে
সে মাথার ওপরে ঝাড়বাতির এইমাত্র
কুকুরের বদলে মনের উদ্দেশ্য চামড়াদড়ির ঐ প্রান্তে বাঁধা
এইভাবেই জাহাজের পাকচক্রে প’ড়ে ছোট নৌকো এখন তোমার কাছাকাছি
এত কাছে ঘ্রাণের সুতো আমার সূঁচে চোখের গলিয়ে ঢুকে গেলো
বাগানের কোন গাছের ছায়া পড়েনি শুধু তোমার পড়লো
দেয়ালের যাবতীয় রচনা ঝাপসা হয় তাকে ফিসফিস ক’রে পড়ার অনুরোধে
সেই পাঠ-নির্দেশ তুমি পেলে না
পড়তে পারলে না ফ্যাকাশে চামড়ার উল্কি
আমার আঙুলগুলো শেষবার তোমার মুখের মুখোশটাকে পরখ করেছিলো
এমনকি মুখের তন্দুরে ঢুকে লালায় রক্তাক্ত হয়ে
পলাশ কেন জন্মযন্ত্রণার সবটা নিয়ে
এক ফাগুনের ক্রমশ ক্ষুদ্রতর দু সপ্তা-হ বেঁচে আছে?
যুগান্তের দরজা খুলে দেয়াল
গুপ্তহাতল কোথায় যা ঘুরিয়ে
নতুন ঘরের তুমি?
এই সমস্ত দরজার কতগুলো মিথ্যে?
কেবল মিথ্যে পার্সপেক্টিভ গড়ে তুলতে কতগুলো মিথ্যে দেয়াল?
মর্মরের বাগান রেকাবিতে প্লাস্টিকের ফল
লক্ষ্য করো ওপরের ঐ সমস্ত নিস্তব্ধ কক্ষ
তার গালিচা এত পুরু আমাদের পায়ে ঘন চুমুক দেয়
এই আমাদের নিঃশব্দ হাঁটার ব্যাখ্যা
কার্নিসের নীচের আলসেতে যে পশমের জরি
তার দিকে চোখ তোলো একবার
কালো পলিথিনের মৃতভাব করা গাছের থেকে
ঝ’রে ঝ’রে কারুপাতা পড়ছে না কেননা সে আমাদের চিনতে পারে তার প্ররোচনায়
আমি এগিয়ে যাচ্ছি তোমার সঙ্গে সাক্ষাৎ কথা বলতে ঐ সিঁড়ির শেষ ধাপের
…
…
…
অনেক আগেই
আমাদের গল্প নোটে হয়েছে
চেয়ে দেখার নেপথ্য ফিরে দেখে না
দেখে চেয়ে-থাকাকে
দেখে ভাঙা প্রাসাদের বড় জানলা নৌকো ক’রে চলেছে
আর হাওয়া তাকে খুলে দিচ্ছে বার বার জোয়ারের ওপর
যেন আর কখনো ভাঁটা হবে না
তার গাঠনিক অতীত লেখা হ’য়ে গেল এইমাত্র
যেখানে দেখার প্রস্তুতি ছিলো
যার সবটা এখনো কি বাসী হয়নি?
সেখান থেকে গোপিচাঁদ জাসুসের চোখে তোমাকে দেখছি
আর তুমি আমাকে অজ্ঞান অতীতে রেখে
দেখছো সাগর কি বাড়িটা কি নাগরদোলার চেতনায়
কি এক বস্তু খুঁজছো
কি এক বস্তু
ভায়ালে ভায়ালে টেস্টটিউবদানে জমানো
স্মৃতিরসের ঘনরূপ– এক ফোঁটা আজ বৃষ্টি চেয়ে প’ড়ে থাকে
নদীর দুপুরে ডুব দেওয়া মাত্রই মাছ আসে।
আমাকে টেনে নিয়ে যায় অতলগুহায় তাদের কাঁটাদেহ দেখাতে
যেন দেখাতে চাইলো এই মৎস্যমাস তাদের নিষ্কন্টক
তাই এই দোমড়ানো মোচড়ানো এই রবারিয় দেহবিশ্বাস
তাই সবচেয়ে সাহসী অপরূপা স্তন মৎস্যকন্যাদের
এই সমস্ত নমনীয় ধারণা স্মৃতিভাবনার কবিতাকে
পার্কিংলটের সব গাড়িতে গোপনে সেঁধিয়ে দেয়
আর উইন্ডস্ক্রীনের ওপর যে পশ্চাৎ-দর্শন আয়না
সেখানে তারা ঝুলিয়ে সুগন্ধমালা
মনে পড়ে কাকলি কলতানদের সাথে সেই বনভোজন
প্রেম থেকে স’রে স’রে যাওয়া বনজকাকু
সেদিন একমাত্র বনের লোক সে
বাকিরা সব কাঠ ও ধোঁয়ার যোগাড়ে
আলু না বেগুনভাজা
পায়রা ডিমের অমলেট না ছাতুর বড়া
খিচুড়িতে তেজপাতা বারোটায় না বারোটা বারোয়
এইসব
সকলের ছায়া পড়ছে বনভোজনের মাটিতে
কেবল ঐ দীর্ঘাঙ্গিদের পড়েনি– এসব তখন অলক্ষ্য
পাতা ডাল নিয়ে অল্প অল্প প্রস্তুতি ওদের
নেমে আসা
ঘাড় না হলেও মাথার কাছে শ্বাস দিচ্ছে মাংশাষী রুক
এসব কে জানতো তখন
অন্তত দুজন ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো শর্মির ওপর
ফেটে গিয়েছিলো ওর মুখ মাথা পাঁজর
ওদের একুশ ফুট গুঁড়ির ঘায়ে খিচুড়ি উল্টোলো উনুনে
একমাত্র লালচুলো মেঘাপিসি চিৎকার ক’রে বলেছিলো—
এই হলো বনভোজন, বুঝলি!
মানুষের কলজে ফাটিয়ে বনের খাওয়া
কমল চক্কোতির ‘বৃক্ষু’ পড়িস নি তোরা
এসেছিলি বনভোজনে……
সভয়ে আমরা অল্পকথার বনজকাকুর কাছাকাছি স’রে যাচ্ছিলাম
ছবির ফ্রেমের একেবারে বাঁ প্রান্তে
পারিবিারিক স্মৃতির একটাই বাসা
শুধু আমাদের দুজনের দুটো আলাদা দরজা ছিলো
দুপুর রোদের দূরে দাঁড়িয়ে বোঝা যেত অ্যালবামের দুয়ার
কেন কালোরঙের উৎসচিন্তায় ডোবানো
ধূসর আয়তক্ষেত্রের দেহে কেন দুটো কালো চৌকোনা
বাসার পাশে যে কুয়োর কৃষ্ণদর্পণে
আমাদের দুমুখ যুবতী হলো, টলমল আলকাতরা পেরিয়ে
এখন তারা স্থিরমাঘের অনড় শ্যাওলা সবুজের সামান্য হটিয়ে দিলে
তা প্রায় কালোই
বাসাবাড়ির চোরকুটুরিতে কে যেন লুকিয়ে ছিলো
এই এতগুলো বছর সেই যে বছর জাপানি বোমার ভেতর বৃটিশের
বরাদ্দ কেউটে সাপ এসে পড়েছিলো রাজরাস্তায়
সোনামুগের চাষজমি পড়েছিলো ড্র্যাগনের নিঃশ্বাসে
সেইসময় থেকেই কাকে যেন লুকায় এই বাসা
সমবেত সময় ও চিন্তনের এক সুতো আলোই
এই কোলের ওপর সন্ধ্যায় এসে পড়া বৈকালিক জোনাকি
তুতো ভাইবোনদের ডার্করুম খেলার প্রকৃতিই তাই
কে যে কখন কাকে লুকাচ্ছি কোথায়
অথচ একটাই সেদিনের বাসা
একটাই ডাকঘর সব দেশের সমস্ত পাড়ায়
সেবার বিপর্যয় থেকে বাচঁতেই যাওয়া হলো পখিরালয়ে
আর নোনতা পাটাতনে শুয়ে মনে হলো
সমস্ত বিপর্যয়ের পশ্চাতেই রয়ে যায় এক ট্রেসব্যাক–
ফিরে যাচ্ছে মিটার গেজের ট্রেন
দু-মুখো সাপের পশ্চাদপসরণ
ছড়ানো কনফেটি তুলতে তুলতে আনন্দসন্ধ্যার পুনর্লিখন
অবশেষে চক্রান্ত আমি ধরেছি
আগুনের ওপর ধরলে ক্রমশ পড়া যাচ্ছে কাগজের গুপ্তরচনা
একদিন ততোটুকু আলো হোক চন্দ্রিমার
বাতাসের তুলোট কাগজে ধরা পড়ুক
অতীতের সমস্ত পাখিদের জেটরেখা
আমাদের দিশায় ছিলো বিপরীত ছিলো দুবিধার দিকে দু-মুখ
তবু আমরা একই মুহূর্তে ছিলাম
একই জেটিতে
প্রায় একই রক্তমাংশের বাসা মাথার ভেতর
যাকে মুখর করেছিলো একই পাখিদের ভিন্ন ভিন্নতর কুজন
অথচ কুজনের খোঁজে নয় গিয়েছিলাম বিজনের চাহিদায়
ক্যামেরার কারসাজিতে ভ’রে
কয়েক মুঠো বৈতালিক নির্জন
এত বছর পুষে রেখেছিলো
অন্ধকার অ্যাকোয়েরিয়াম
পশ্চাৎ-দর্শন বক্ররেখায় লেখা। যেখান থেকে ‘আসল সময়’ বা রিয়াল টাইমের ভাবনা শুরু। মুগ্ধ নয়নে সামনে চেয়ে
সভ্য স্মৃতির অনাবিল পেছনে কেবল
যা ভবিষ্যতের কামনা বাসনার ভেতরে বৃত্তাকার পাক মেরে কুণ্ডলী খুলে
বেরিয়ে এসেছে
ননী মাখা স্বপ্নের জুস ক্রিম ছিঁড়ে খুঁড়ে
স্মৃতিও অধিবৃত্ত– এই তত্ত্বকে অবলম্বন ক’রেই কুণ্ডলীর ভাবনা।
সেই পশ্চাৎ-দর্শনকে সামনে রেখেই আসল সময়ের কাঠামো
বয়ে শেষ হয়ে যাওয়া
বয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া লগিগুলো
ট্রেন দুর্ঘটনা থেকে ছিটকে পড়া সতীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জড়ো ক’রে
ভাবী নতুনের নন্দনাকে সাজায়
ছবির প্রকোষ্ঠে যে নন্দনতত্ত্ব
আসল সময়ের রক্ত-মাংশ-মজ্জায় গড়া
যদিও আসলে বক্ররেখা কেবল
আসলে পশ্চাৎ-দর্শন
আমাদের শিল্পচেতনা
যে আবার সামনে তাকিয়ে দেখে তার রচিত পশ্চাৎ
প্রস্তরের পর প্রস্তর সামনে চেয়ে দেখা নিজেদের ভূত
কৃতকর্ম ও ভবিষ্যৎ প্রভাব
শেষ পযর্ন্ত একটা খাদ্য-খাদকের সম্পর্ক রয়ে যায় সর্বত্র
লাল বালির ওপর ঘুরে বেড়ায় বাংলা গোসাপ। পরিবার ভারানাদি। বর্গ ভারানাস
দোফলা জিভের ডগা দিয়ে নেওয়া মুহূর্তে স্পর্শ
মুখের টাকরায় ছুঁয়ে একই ভঙ্গি ও অঙ্গ দিয়ে
তার কাছে শিকারের গন্ধ ও স্পর্শ ধরা পড়ে
গোটা লালবালি অঞ্চল ছ’কে মাথায় টুকে নেওয়া মানচিত্র
মানচিত্র
খাদ্য-খাদকের ইতিবৃত্ত লেখার প্রয়োজনে
প্রিয় ভবনকে তাড়াতে তাড়াতে ল্যান্ডস্কেপের ঠিক কোন খাঁজে
ফাঁদের কাছাকাছি এনে ফেলা যায়
ঠিক কোন পাড়ায় কখন কেমন তালি মারলে
একটি দুটি বালক বালিকা
হিজড়ে দলের পিছু নেয়
ভাস্করের সাথে ভাষার সম্পর্ক থাক বা না থাক
ভাস্কর্যের নিজস্ব বাক্যগঠন আছে
মাকড়শার শেখানো জাল
একটা চতুষ্কোণ কোনাকুনি কাটা
যার মধ্যকর্ণ থেকে আবার একটা চতুষ্কোণ
আবার একটা
আবার দুটো
তিনটে
অবশেষে পাতে পড়লো মাছি
Darun laglo