গীতি ১.
দেহখানা এই দেহ নয় ঠিক, শুধু সন্দেহ, ঘোর নেশা
আজব ভাণ্ড, কীর্তিকাণ্ড, ভাণ্ডটা খুব পর-ঘেঁষা ।।
আগুনকে বশ করছে পবন
পবনকে বশ করে কোন্ জন?
তরলে বায়ুর শাসন মণিতে আয়ুর আসন, অন্বেষা…
আজব ভাণ্ড, কীর্তিকাণ্ড, ভাণ্ডটা খুব পর-ঘেঁষা ।।
মাটি ও লবণ, দুজনেই বশ জলের কাছে
মোম থাকে ভীরু, গলনপ্রবণ, আগুনের আঁচে
মোমে ও মাটিতে, লবণে-পবনে, আগুনে-পানিতে সব মেশা…
আজব ভাণ্ড, কীর্তিকাণ্ড, ভাণ্ডটা খুব পর-ঘেঁষা ।।
একে তো ভীষণ মাটির তাপ
তার ওপর ফের পবন-প্রতাপ
কোন দিন এই চিলেকোঠা ফেলে কোথা যে পালাই, হারা দিশা
আজব ভাণ্ড, কীর্তিকাণ্ড, ভাণ্ডটা খুব পর-ঘেঁষা ।।
গীতি ২.
আঁচলে করে আগুন আনতে যাও তুমি দূর বনে
কোন-সে আগুন, কী-বা দোষগুণ, কিছুই তা না জেনে।।
বনের আগুন হু-হু করে ছোটে
আগুনে ছুঁলেই কলঙ্ক রটে
জাতকুলমান সবই যায় চ’লে কোন-বা কুলক্ষণে।।
আগুন আনতে যাও তুমি দূর বনে
আহা রে আপন ধর্মের কাছে
আগুন কেমন বশ হয়ে আছে!
বলা তো যায় না, কখন কী ঘটে বনের নির্জনে।
আগুন আনতে যাও তুমি দূর বনে ।।
কে জলে কৌশলে আগুন মেশায়
আকুল-করা এক অবাক নেশায়
ঘোরের ভেতর কাল কেটে যায় উন্মন উচাটনে।
আগুন আনতে যাও তুমি দূর বনে।
আঁচলে করে আগুন আনতে যাও তুমি দূর বনে
কোন সে-আগুন, কী-বা দোষগুণ, কিছুই তা না জেনে ।।
গীতি ৩.
বাতাস তোমার আভাস এনে দিলো
সেই আভাসে তোমার খোঁজে যাই
খুঁজতে খুঁজতে অনেক দূরে এলাম
এখন তো আর ফেরার আশা নাই ।।
একঝলক দেখেছিলাম তোমায়
বিজলিদিনে, ছায়া-ছায়ার মতো
ওই একবারই দেখা আমাদের
হঠাৎ-আলোয় হঠাৎ-ছবির মতো।
তারপর তো কিছুতে হায় আর দেখা না পাই
এখন তো আর ফেরার আশা নাই ।।
তোমায় খোঁজা এখন আমার হায়
সারাদিনের সারাক্ষণের নেশা
জাগরণে স্বপ্নে ধ্যানে শুধু
তোমার মায়া তোমারই ঘ্রাণ মেশা।
তোমার খোঁজে সাগর পাহাড় কত কী ডিঙাই
এখন তো আর ফেরার আশা নাই ।।
গীতি ৪.
ভিন্ন ভুবনে ভিন্ন নদীর বাঁকে
আমার বন্ধু নদীর কিনারে থাকে ।।
নাম তো জানি না, ধাম তো চিনি না, তা-ও
বন্ধু আমার বিরাজ করে কোথাও না কোত্থাও!
দূরে তার দেশ কাঁপা-কাঁপা রূপকাহিনির মতো কাঁপে
বন্ধু আমার নদীর কিনারে থাকে…
অপর ভুবনে অপরা নদীর বাঁকে
আমার বন্ধু নদীর কিনারে থাকে।।
তার দেশ থেকে আসে সন্দেশ সন্ধ্যাবাতাসে ভেসে
অচেনা পুলক শিহর তুলছে পুরনো শরীরে এসে
কিছু তার পাই অচেনা হাওয়ায়, আর কিছু পাই ডাকে
আমার বন্ধু নদীর কিনারে থাকে…
ভিন্ন ভুবনে ভিন্ন নদীর বাঁকে
আমার বন্ধু নদীর কিনারে থাকে।।