গীতি ৫.
বহুকাল পরে তীর্থ বসেছে দূরে
আলো জ্বলে আজ ওই দ্যাখো ওই উজ্জ্বল রূপপুরে ।।
মন যেতে চায়, আহা কীভাবে যে যাই!
ঠিকানা জানি না, পথও চিনি না, হায়
শেষ নৌকাটি সেও গেছে ছেড়ে কোথায় যে কোন্ দূরে!
আলো জ্বলে আজ ওই দ্যাখো ওই উজ্জ্বল রূপপুরে ।।
বহু ধাঁধাপথ বহু ঘুরপথ ঘুরে
তা-ও যদি পারি পৌঁছি রাতদুপুরে
যাব পথে পথে হারিয়ে হারিয়ে পথহারানোর সুরে
আলো জ্বলে আজ ওই দ্যাখো ওই উজ্জ্বল রূপপুরে ।।
তুমি যদি যাও একই তীর্থের পথে
আমারে মিশায়ো তোমারই রূপের স্রোতে
আমারে মেশাও আর বয়ে নাও অরূপ রূপের সুরে
তোমার অরূপ রূপের সুরে
আলো জ্বলে আজ ওই দ্যাখো ওই উজ্জ্বল রূপপুরে ।।
গীতি ৬.
তোমার হাত ফসকে আসলো উড়ে একটি পাখির পালক
পালক ফেলল ধরে খপ করে এক মিথুন রাশির বালক ।।
বইছে হাওয়া জোরে
মধুমাসের ভোরে
বালক, কোন্ আড়ালে এসে দাঁড়ালে ধরতে নরম আলোক!
হাত ফসকে আসলো উড়ে একটি পাখির পালক ।।
মিথুন রাশির এমনই ধারা
উজান দিকে বইয়ে ধারা
ফিরতে পারে ভাটির ধারে উথালপাথাল ঝলক
হাত ফসকে আসলো উড়ে একটি পাখির পালক ।।
গীতি ৭.
ফুলের কাছে মৌমাছি যায় মধু-আহরণে
মাকড়সা যায় অন্য কাজে, বিষের সন্ধানে ।।
ভ্রমর যায়, গুনগুনায়
প্রজাপতি অযথায়
এমনি-এমনি যায় সেখানে রূপের আকর্ষণে
ফুলের কাছে মৌমাছি যায় মধু-আহরণে ।।
জাদু আছে ফুলের কাছে
যে যা চায় সবই আছে
যে যেমনটা নিতে জানে গিয়ে ফুলবনে
ফুলের কাছে মৌমাছি যায় মধু-আহরণে ।।
রসের কাছে রসিক বশ
যেমন রসিক তেমন রস
সবার আগে রসিক জানে ফুল ফোটার মানে।
ফুলের কাছে মৌমাছি যায় মধু-আহরণে ।।
গীতি ৮.
মাছরাঙার রূপের ছটায় পাগল হলো মাছ
এই-না বুঝি কখন জানি ঘটে সর্বনাশ ।।
চঞ্চু রঙিন, পালক রঙিন, রঙিন নিঃশ্বাস
সম্মোহনে ক্ষণে-ক্ষণে রঙিন অনুপ্রাস
এই-তো বুঝি কখন জানি ঘটে সর্বনাশ ।।
মাছরাঙার এক ইশারা
মাছ তাতেই দিচ্ছে সাড়া
জাদুর জোরে শিকার পরে শিকারীর ফাঁস
এই-না বুঝি কখন জানি ঘটে সর্বনাশ ।।
দুই জীবে দুই স্বভাব
জল আর ডাঙার প্রভাব
মায়ার ঘোরে তির ছোঁড়ে প্রেমের দেবরাজ।
এই-না বুঝি কখন জানি ঘটে সর্বনাশ ।।
একই তিরে দুজন ফানা
যুগলরূপে প্রেমসাধনা
নতুন করে তৈরি হলো প্রেমের ইতিহাস।
এই-তো বুঝি কখন জানি ঘটে সর্বনাশ ।।
গীতি ৯.
পথ দেখালে, পথে নামালে, পথের কোনো পাথেয় দিলে না
থেমে ছিলাম, গতি পেলাম, গতির তো আর যতি মিলে না ।।
চলছিলাম সহজ-সোজা পথে
কি জানি কোন্ দুষ্ট গ্রহের দোষে
মন ঘুরে যায় বাঁকার ঘোরে, এদিক-সেদিক, হিসাব মিলে না
কিছুতে সেই হিসাব মিলে না
থেমে ছিলাম, গতি পেলাম, গতির তো আর যতি মিলে না ।।
বাঁকা পথের শেষে গহিন বন
পথ হারিয়ে মনটা উচাটন
সকল চলার শেষে কোন্ চলাচল, কী ফলাফল, তা-ও জানিলে না
থেমে ছিলাম, গতি পেলাম, গতির তো আর যতি মিলে না ।।
গীতি ১০.
তির ছোঁড়া হয়ে গেলে একবার
ফেরানো কি যায় কখনো তা আর? ।।
ছাড়া-পাওয়া তির ছোটে নিশানায়
গতিমুখ তার ঘোরানো না যায়
তারপর থেকে কোনো কিছু আর
থাকবে না ঠিক মতো আগেকার।
ফেরানো কি যায় কখনো তা আর? ।।
বুমেরাং তবু ফিরে চলে আসে,
শিকার না পেলে, শিকারীর কাছে
তিরের তো আর নাই প্রতিকার
একরোখা তার গতি দুর্বার।
ফেরানো কি যায় কখনো তা আর? ।।