পূজা
ভয়ঙ্কর গানগুলি শব্দহীনতার মধ্যে তৈরী হয়, টের পাই।
বহুকাল গানহীন ভাবে তাই আছি। এই ফাঁকে
কেউ এসে চলে গেছে, আমাকে সম্পূর্ণ ভাবে গানহীন জেনে।
বাতাস এসেছে তবু দূর দূরান্তের ঝর্ণা নিয়ে
গাছ তার ডালগুলি নামিয়েছে অগুনিত জলে
পৃথিবীর ঝিঁঝিঁপোকা আজ রাতে শব্দহীন ভাবে জেগে আছে।
আমিও রয়েছি ঝুঁকে, যদি তার শব্দহীন পদশব্দ শোনা যায়, ছায়া দেখা যায়…
বনভূমি যদি আসে জানালায় দূর পাহাড়ের গান নিয়ে
অথবা অনেক রাতে কোনো ভোর ডাল হয়ে ছোঁয় যদি জল
তুমি বহু দীর্ঘ গান জানো আমি জানি। গুন গুন করে তুমি
মাঝে মাঝে সেইসব গান করো, বাতাসের কেঁপে ওঠা দেখে টের পাই।
তুমিও রয়েছো আজ চুপ করে, আমাকে সম্পূর্ণভাবে গানহীন ভেবে
পিঁপড়া
এখন বিকেলবেলা দৃষ্টিশক্তি কমে গেছে বলে
ঝিঁঝিঁপোকাদের মত নিচু হয়ে নৈকট্যকে লক্ষ করে দেখি
পিঁপড়া শৃঙ্খলাবদ্ধ সর্বদাই পৃথিবীর পথে।
নক্ষত্রের ঢেউ ওরা অনিশ্বর আমার মেঝেতে।
ওদের সমাজ আর অবিচ্ছেদ্য সামাজিক ঐ সংলগ্নতা
বিমর্ষতা বহির্ভূত, বুঝতে পারি আমি। টের পাই
সামাজিক হতে আমি পারি নাই পিঁপড়ার মত,
সেহেতু আনন্দ নেই, রূপ আর মদ নেই কাছে—
শুধু এক সিরিয়াল বিমর্ষতা আছে।
লক্ষ করি, সকল বেদনা ঢোকে চোখ দিয়ে দেহে।
যেমন ছবিতে দেখা তার সেই নক্ষত্র ললাট
আমার ভিতরে ঢুকে এখন সন্ধ্যার ন্যায় জাগে।
বহুক্ষণ নিচু হয়ে পিঁপড়াদের লক্ষ করে, দেখে,
রাত হলে বিছানায় চলে যাই, শুয়ে শুয়ে ভাবি
বরং অন্ধই থাকি, নক্ষত্রকে স্বশরীরে না দেখাই ভাল।
পরিত্যক্ত সিরাপের মত একা নিরুদ্দেশে জাগি।
আলাদা গ্রহের মত
আলাদা গ্রহের মত ভিন্ন কক্ষপথে আজো আছি।
যেন আমি মৃগতৃষ্ণা, শীত ও ছায়ার মত নিস্প্রভ কার্পাস।
হাত উঁচু বাতাসের প্রাণ হয়ে, দুই চক্ষু মেলে,
যদিও তোমার কাছে চলে যেতে চাই এক ছুটে,
বাস্তবে কেবলমাত্র হেঁটে হেঁটে তোমার পথের কিনারায় এসে, ভীত,
লুকিয়ে এভাবে বসে থাকা ছাড়া আর কিছু করতে জানিনা।
সকল পাগল হয় কায়াহীন এই পৃথিবীতে। তাই দেখি,
আমাকে না দেখেই তুমি চলে যাও ঘরে।
কি স্বপ্নে অনেক রাতে পৃথিবীর বিলবোর্ড থেকে তবু তুমি
নেমে আসো এ পথের কিনারায়, ক্ষণিক বাতাস,
তোমার নিঃশ্বাস লেগে অদৃশ্য পাগল কেঁপে ওঠে,
অনুজ্জ্বল পরমাণু উড়ে চলে যায় বহু দূরে
তৃষ্ণার ভিতরে বসে গুটিপোকা নষ্ট হয় রেশম না হয়ে।
রূপান্তরহীনতার এ বেদনা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বেয়ে নামে।
১৫/১১/২০১২
নর্থ এন্ড
দগ্ধ নক্ষত্রেরা শুধু এই গ্রহে কফি খেতে আসে।
তবু জেনো, কফিও বিস্বাদ লাগে এ গ্রহেই খুব,
রাত যদি অবিরাম চাঁদহীন থাকে।
বনভূমি পুড়ে গিয়ে আবার সবুজ হতে পারে।
পৃথিবীর অভ্যন্তরে এই শক্তি আছে।
কিন্তু জেনো, দগ্ধ নক্ষত্রের তাও নেই।
যখন ঘুমিয়ে পড়ো
জানি বহুদিন ঘুম নেই, তবু, ওভাবে ঘুমিয়ে পড়ে কেউ?
বহু দূরে ডালগুলি ঝুঁকে নামে আবার মাটিতে।
দেখি এক অচেনা প্রবাহ এসে এই গ্রহে প্রবেশ করছে।
আমার সকল পাতা তার স্পর্শে একরাতে ঝরে।
পাঠাই তোমার কাছে মানুষের এই হাত,
ঝরে যাওয়া দুই ধূমকেতু,
নক্ষত্র বিদগ্ধ হলে এভাবে গ্রহকে ছুঁতে চায়।
সত্যহীন হাতগুলি, তবু দেখ, স্পর্শ না পেয়েই ফিরে আসে।
ডাহুক ডাকেনি বলে আজ রাতে পুকুরও ডাকে না।
অজানা মুখের রূপে দুর্লভ দিগন্ত ভেসে যায়। চাঁদ নেমে
আসে কাছে; পৃথিবীর ঝিঁঝিঁপোকা, দূর নয়, নিকটকে চায়।
এ ঘুম ব্যথার জেনে খালি পায়ে অসীম ধুলায় হাটে আলো।
যখন ঘুমিয়ে পড়ো ক্লান্ত হয়ে নিজের বাহুতে মাথা রেখে
দিগ্বিদিকে বিমর্ষতা ছেয়ে যায়। ঘাস বৃষ্টি ভেবে জাগে মাঠে।
ঘুমের ক্ষণিক শ্বাসে জোনাকি ফুলের বিহ্বলতা বোধ করে।
নরম বিমান ফোটে রাত্রির অক্ষরে। বিচ্যুত পৃথিবী, আমি,
কক্ষপথে ঘুরে ঘুরে ঘুণপোকাদের মত অন্তর্মুখি হই।
পূজার পরে
তোমার দেহে কি জলের সবুজ সম্ভাবনা আছে?
দূর থেকে সমুদ্রকে ভেবে দেখে মনে হয় গাংচিল ঢেউএর সন্তান।
লবনাক্ত বাতাসের সাদা নখ আমার চিন্তায় ছবি আঁকে।
চোখ বুজে আসে; শুন্যতার ঢেউ ছাড়া কফি শপে কেউ নেই।
বহু দূরে সমুদ্রের তলদেশে আমার স্বপ্নেরা শুয়ে আছে।
কাছে বসে স্থির চোখে তাকিয়ে রয়েছে এক স্ফটিক দেয়াল।
আংশিক ও ক্লান্ত এই ছবির ভিতরে তুমি নেই।
শান্ত শহরের রাত সহিষ্ণু, গোপন সামিয়ানা টানিয়েছে, যেন ঘর।
সেই ঘরে তোমাকে জড়িয়ে ধরে অন্যের দুহাত নাচে, জানি।
আরও দূরে, দিগন্তের দেহ থেকে ঝরে যায় শব্দহীন, সূচীভেদ্য ঘাস;
বাতাস আমাকে নিয়ে সর্বশ্রান্ত খেলা করে, ওড়ে;
আমাকে জানো না তবু শহরের আলোহীন মাঠে
কোনো ম্রিয়মান জোনাকির অর্ধস্ফুট খণ্ড খণ্ড আলো ফেলে
আমি শুধু তোমাকেই ভয়ঙ্কর ভাবে খুঁজে চলি, সারারাত