কনে যাব এইসব পাখির গায়ের গন্ধবহ
ডুমুর পাতার ঘর উল্টো করে
কার কাছে থুয়ে!
ঐ শীত আসে যদি বলি হালকা মউত আসে
তা’লে কেন আগে আসে
সেইসব ছেঁড়া কাঁথা ফুটা মনে!
বাতাসের হামাগুড়ি কেন মেকুরের থাবা-তারা হচ্ছে
শীতের রাত্রিতে…
কী কচ্ছো আমাগের না-ঝরা পাতারা–
আমি অসহায় মেহগনিটারে ধরে ঠিক মতো
এলোমেলো গান গাওয়ায়ে নিতেছি আপাতত
ওশে জীর্ণ হবার আগেই–
পেরেক সরাচ্ছি ক্ষতে আমাকেই,
যেন মোরা নানা বহুদিন যৌথস্মৃতি সংগ্রাহক–
ফেলে দিচ্ছি টিনে লেখা সাইনবোর্ড
হাত রাখি তাহার মাথায়
ছিটাই পুরানা অল্পকিছু মিছা বিলি
যেন ওর নিজেরই প্রয়াত ঘুম উঠে আসে
বুজে যাওয়া মরমের থেকে শ্বাসে!
আর মোর কানে আসে কে যেন কতেছে–
‘অগ্রানের শুক্কুর না রোববার আমি পেটের তে পড়ছি শেষে–
তেনি কী কচ্ছেন– শুক্কুর না রোববার
আমি পেটের তে পড়ছিলাম!’
এই মেহগনি বন যেন দামি মসৃণ কাঠের
নাতিদীর্ঘ প্রতিশ্র“তি–
আমার আব্বার মনে
বুঝি এইখানে হাঁটছি হুদায়–
ঐখান থেকে দেখা যায়–
আমি এ গ্রামের সবাইরে ডাইকে আনি, বলি, তাদেরে,
তাদের আর্ধেকশিক্ষিত মেয়েরে ছেলেরে বলি– দেখ, দেখ
পাতাগের পেছন থাকিয়া
এই মেহগনি বন থেকে দেখ–
ঐ কুয়াশার ঐপার থেকে অনন্তের শুরু…
কুয়াশারে দেখিবারে এতদিন পর
মাথা বের করে জানালার ওই পারে
ওশে কে তাকাচ্ছে যেন কেবা কুয়াশার চর,
ছাইগাদার ওপার থাকি!
ওরাও আমার পরিচিত খেই,
যেন বা এদের মন-মদ্যে
একটা মেহগনি বন
বহুদিন প্রচলিত ছিল নিষ্প্রয়োজনেই–
এরা বেশ কিছুটা না-কিছু
তা না হলে তা না হলে
কুয়াশা দেখতি কেন বাছলো আসলে
এই বাস্তবের তুচ্ছ এই মেহগনি বন–
আগে দেখে নাই আমার সহিত
যেন এই ব্যারিস্টারের সহিত–
যেন এ রাত্রির কিরাম কী!
কুয়াশারা মউতের নাচন
ওরা কাফনের কাপড়ের পরী…
এইখান থেকে শেষকৃত্য
শ্মশানের মাঠের ভেতর
এদের সহিত পরিচিতি হয়ে
কাকে কিছু না কয়ে জানাই
শ্মশানের মড়াপ্রতি দূরে
মিলায়ে নিতেছি ছাই–
তালি কেউ পুরোটাই
হারাচ্ছে না মিলায়ে নিতিছি শুধু–
পাতার অপর পাতা দুই রঙ রূপে থাকা
অনেক দূরের দেশ পাখিমাখা
শাক-সবজি আয়ু মুখে
উড়ায়ে কঠিন ধূলা চারপাশ
ময়লা করতে করতে
প্রাইভেট কারে করে
আমাদের নিজ গ্রামে আসা–
যেন আমি ব্যক্তিগত বহুদিন পর
বাড়ি এসে টের পাচ্ছি–
আর খামোখাই পরিদর্শকের অধিক
নানামুখি উদ্বিগ্নে হোঁচট খাচ্ছি–
যেন আমি এই শীতে একখান
মর্সিয়ার কবি সেজে
দিলে সারাক্ষণ নিয়ে ঘুরছি
শোকের পুঁথির বীজ!
এখন সরলরেখা–
যেন এই গ্রামে কোনো কালে একবার
মরা শাখা নদী
বাঁকা-আঁকা ছিল লেখা–
সেইখানে দূরে ও নিকটে কোনোদিন
চোখে দেখে নাই যেন খোয়াবেই আঁকলাম
চান্দি ছোলা কানি বক–
আমি আজ তারা দেখলাম কিবা খেয়ালের বসে
দিগন্তরে বিচিত্র করতেছে–
যারা ইন্তেকাল করেছিল
আমাদের চাচার দাদারা
তারা কেন জানি আমাগের অজান্তেই
কোন আচানক গোস্বার চোটেতে
ফের দুনিয়াতে তারা
আকাশের কবর থেকেই
ফেরৎ পাঠায়ে দেচ্ছে অবহেলা ভরে
ওনাদের কুয়াশার দেহ–
আর ওনাদের দেহের মরণ নাই–
বার বার এই কথা কতি
ঘোষণা দিতেই এই শীতে আসা!
মনে হয় বিশ্লিষ্ট আন্ধারে
আইলের উপর আজ পড়ে আছো দাঁত–
মানুষের হয়ে হাসছিলি যেনতেন নাই ভারে
আজ দেখ শুয়ে শুয়ে আসমান বিছানো জমিন
থেকে কিছুটা উপরে
কুয়াশার কাহা বাহাদুরি!
ঐদিকে যাই
সিগরেট ধরাই–
ভাবি, মৃদু ঝরা পাতাগুলা গেল কোথা
এরা যত না মউতের কথা হাঁকতেছ
মোর মন তার থাকি মেলা–
যেন আজ এলোমেলো লাশ না না রংমাখা
আকাশে উড়তিছে–
তাদের যুদ্ধের শেষ নাই–
তাদের মুক্তির যুদ্ধ তারা নিজে করে নাই,
যার শেষ নাই তার শেষ নাই
অহেতুক মোরা তড়িঘড়ি আশা করি–
কেন কুয়াশার থেকে
কিছুটা অধিক যোদ্ধারা বিস্মৃত হয়–
কেন শরীরের আর সব
আঘাতের সঙ্গে মিয়ায়ে গিয়েছে
আঘাত মারের ঝাঁক ঝাঁক দাগ
কবরস্থ হইছে আমাগের
বিপদ-সহিষ্ণু জাম্বুরার বনে–
যেন একাধারে কুয়াশার মতো
ক্ষণস্থায়ী বায়ু-বাস
সহ্য হয় না কাহার–
শিশিরের বুকে কুয়াশার
যেন মুক্তি নেই শব্দ শব্দের মৌচাক
ভাষার জেলের থেকে–
এ জগতে ফিকে হওয়া সবকিছুকেই
বোকা বোবা কুয়াশা নামেতে ডেকে
অপ্রয়োজনীয় করে তুলি–
সারাগ্রাম মাঠে দেখি শীতে
আমার এসব সারমর্মহীন ঘোরাঘুরি
সবকিছু যেন ঘুরে ঘুরে
দার্শনিকতার ভুমিষ্ট করছে–
যখন দেখেছি কারা যেন নিরর্থক
মরা বাছুর ফেলিয়া
চলে যাচ্ছে কুয়াশায়…
যতই হোক না মনে অন্য কোথা
মূলত নির্জন কুয়াশা মনেতে ভেবে হাঁটতেছি
বেশ কিছুক্ষণ ধরে আমার কেবলি মনে হচ্ছে
ভ্রমবশে ধরা যাক কত শ বছর ধরে হাঁটতেছি
তেমন কুয়াশা নয় অন্য কিছুর ভিতর দিয়ে
কোট পরা হিম ছাওয়া মাঠ থেকে মাঠে–
আমার সাহেবি হাঁটা–
আস্তে আস্তে হাঁটি কুয়াশায় পরস্পর
মনে হয় কুয়াশারা এ জগতে কিছু নয়
এতদিনে চিনে গেছে
আপন ও পর–
তাদের ভেতর যেন জীব রূপে
হাঁটা সত্যিই দুরুহ–
এ জীবনে কেহ তবে কুয়াশায় হাঁটে নাই!
বুঝতে পারতেছি নে আমি কী কাউরে
উপড়ে যাচ্ছি নাকি তুচ্ছ করে পার হচ্ছি
দেখি সেইসব কুকুরকুন্ডলি খড়েরে জড়ায়ে
তবু ফের ঘুরেফিরে ঝরাপাতা মউতের বিবৃতিদাতা–
ঝরাপাতা যেন মরা বাণী মাড়ায়ে চলছি–
লছ লছ কিছু শুনছি কী!
শব্দবৃন্দ করেছে তালাক
কুয়াশার অষ্পষ্টতায় ঝুলে থাকা
ধারণারে– না আমারে!
মনে হয় এ-এক বেহুদা অনুভূতি
ধোঁকা দিতে প্রায় আসে মনেরে/চোখেরে
আসে কুয়াশায়
শোনা যাচ্ছে গোপন ভোরের
কোনো ত্রন্দনের মালগাড়ি চলে যায়…
যদিচ কান্দন জিনিসটা
একসাথে দেখা ও শোনার–
ওইখানে কে কান্দিছে
শোনা যায় বটে দেখা যায় না কুয়াশায়
তবু দেখে আসি
কুয়াশা মোদের যত সব জরুরি দৃশ্যরে
নিজ স্বার্থে ঢেকে দেয়–
আমি এই মানসিক ঝোপের মালিক চুপ রহি–
যেয়ে দেখি কুয়াশা দূরত্ব থেকে
কুয়াশারে অবহেলে
গুরুতর গোল হয়ে বসে খিদের ঠ্যালায় ওরা
আগুন না কুয়াশা খাচ্ছে…
ওইখানে শালিকটা উড়ে গিয়া সে বসিল কনে!
তালি কওদিনি এই টিকে ধাকা
একা বসে একা যেন একা ঠান্ডা লক্ষ্মিপেঁচা–
নিজের খেতের এই পাশে শুয়ে শুয়ে
আর্ধেক গাজর খাওয়া–
বাকিটা ফেলাব না নে টান মেরে–
নিজের নিজের পর
কী ভরসা?
ঐ দুইখান ভাতশালিক ও ওদের ছাও কুয়াশা
ছাড়া আর কী কী শীতে ভেসে আসে
সবজি খেতের আলে…
সূর্যের দিকে চেয়ে হা
ওরা কারা
বেহুদা তিনারা মাপছে লহমা?
এই অকারণ প্রশ্নটা জরুরি
এই শীতে কেন ধরা পড়তেছে
নোটের ভগ্নাংশতে!