কাঠের কবিতা
অতীত চলে গেছে, অতীত নাই কোনোখানে।
কিন্তু রংপুরে খাবার টেবিলেরা জানে:
কাঠের কোষে কোষে রয়েছে কথা-রূপকথা,
সোনারূপার কাঠি, স্বপ্ন-ভেঙে-যাওয়া ঘুম।
অন্ধকার-গূঢ় আলোর ঝালরের নিচে
অনড় নাচে একা অচিন পুরাণের প্রেত,
শিউরে ওঠে রোম, শিহরণের নীল স্মৃতি
ছিল না যার, আজ সে কাঁপে আঁধারের আঁচে।
অথচ রুনু আপা কাঠের মতো স্থির নদী,
নুরুলামীন ভাই কেমন সাবলীল ধারা;
রূপালি টেবিলের প্রাচীন কুল ও কিনারা
প্লাবিত হতে হতে নিখিল নিরাকার বোধি।
চক্র নিরবধি। অতীত জলধির চাকা
জমিয়ে তোলে মেঘ কাঠের পিনোকিও-চোখে;
সুপ্ত সাগরের অতলে সুনামির রেখা
আঁধারে জ্বালে দ্বীপ – শুদ্ধ কালো দীপশিখা।
বকুলতলা, রংপুর: ২রা সেপ্টেম্বর ২০১৩
অধঃপতন
আলোর সাথে বাতাসের মতো অদৃশ্য কোনো সম্পর্কের নাম মনে হয় ঘোড়ার ডিম। কিংবা আলোর মতো অশুদ্ধ একটা সরলরেখার সাথে নিরাকার অন্ধকারের সম্বন্ধের মতো সর্বময় কোনো অস্তিত্বের নাম হয়ত যাচ্ছেতাই হবে। অথবা ধরো মূল্যবোধ, রীতিনীতি, আর সমাজকাঠামো অতিক্রম করে যাওয়া কোনো আকুলতার নাম হতে পারে গীতবিতান।
অথচ, আবর্তিত-পুনরাবর্তিত হতে থাকা সেই অপার সম্পর্কের পূর্বনির্ধারিত কোনো কেন্দ্রপ্রান্ত নকশা নেই – পারাপার নেই। যাবতীয় খুনের মতো পরিকল্পিত সমস্ত বৃত্ত উপচে পড়া ইত্যাকার পতনের নামই কিন্তু অধঃপতন! একবার যে পড়ে, তার আর ওঠার কোনো আতঙ্ক থাকে না।
তবু, দূর থেকে আলো আসে, অন্ধকারও আসে। কেউ থাকে আকাশে, তো কেউ থাকে সমুদ্রের নিচে। এইসব থাকাথাকি, আসাআসি নিয়ে আর কিইবা বলা যায়! অহেতুক কথা যত কবিতায় জমে। অযথাই। অজ্ঞাতসারে।
বকুলতলা, রংপুর: ২রা সেপ্টেম্বর ২০১৩
পাতার কবিতা
একটা পত্র কুড়িয়ে পেলাম পথে।
অর্ধেক তার তোর হাতে দিয়ে অর্ধেক নিয়ে হাঁটি।
পথে অভ্যাস ডাক দিয়ে বলে:
কোন অর্ধেক খাঁটি?
কোন অর্ধেকে মিশেছে মলিন মাটি?
আমি পড়ি মুশকিলে।
ভাবি: কাকে বলে গৃহস্থ, আর কাকে বলে সন্ন্যাসী?
যে আছে এখানে, সেই তো ওখানে আছে—
ঘরে আর পথে মাখামাখি-মিলেমিশে
বিশুদ্ধ মুসিবতে।
যেটুকু শুদ্ধ, সেটুকু রয়েছে গাছে,
জড় ও প্রাণের সংজ্ঞার মাঝখানে;
মলিন ধুলায়, বৃষ্টি-কাদায়, দূরে আর খুব কাছে
পাতার এবং আমার আত্মা এক সাথে শুয়ে আছে
চিরবিরহের অচেনা ঐকতানে।
বকুলতলা, রংপুর: ৫ই সেপ্টেম্বর ২০১৩