সকাল হয়ে আসছে
আজানের ভোরে অভ্যাসবসে উঠে বসবেন সুনীল বর্মণ
বউ শেফালি বর্মণও উঠবেন।
দাওয়ার কোণায় গুজে রাখা জালের
ঘুনির জন্য হাত বাড়াবেন এখন সুনীল
আর শেফালি বাড়াবেন হাত জল দিয়ে ঢেকে রাখা
রাতের ভাতে, অভ্যাসবসে।
সুনীলের হাত শূণ্যে স্থির
শেফালির হাত ভাতহীন হাঁড়ির জলে
বিপাশার কান্না একটু মেলোড্রামা মনে
হতে পারে…থাক বরং ওটা
আরে বাবা, সব বাস্তবতা শৈল্পিক হয় না।
ওকে, ওয়ান, টু, থ্রি…ক্যামেরা রোলিং…কাট…
অভয়নগর ২০১৪
বাংলাদেশ।
১৪ জানুয়ারী ২০১৪
মেয়েগুলো যখন শালিক হয়ে ঘোরে আঙ্গিনায়
দোকানটা পুড়িয়েই তো দেয়া যায়
চাইলেই হয়, ঘরটাও;
ঘরটাও নেহাতই ছনের
এক দেশলাই কাঠি, একটু কেরোসিন
এ আর এমন কী কঠিন!
ছিঁড়েছিলো যে শাড়ি সেদিন বিকেলে
সেই শাড়ি ফের গায়ে দিয়ে দিব্যি দিনপার
হরি হরি, বেজায় যে জার!
এক টুকরো কুয়াশায়
ছোট বস্তায়
ছেঁড়া শাড়ি
ভাঙ্গা বাতি
বিয়ের মালাশাড়ি
সিন্দুর-শাঁখা
আর হাড়ি-কুড়ি
সব এঁটে যায়
হিলি খুব দূরে নয়
তবু ‘লাইন খোলা নয়’ অজুহাতে
থেকে যাওয়া;
না কি তুলসীমঞ্চের মায়া?
থাকা-না-থাকা কিংবা যাওয়া-যেতে না পারার মাঝখানে
প্রীতম পাড়া আর তেলিপাড়ার মাঠ
কলঙ্ক, হুঁ হুঁ বাতাস।
জয়তী আসবে না রাতে আর কোনদিন
মা আলতা রানী জানে
জানে ঘরের আলগা ছন
আঙ্গিনার ফিঁকে আলপনা
শিম-মাচার বেগুনিবাহারি ফুল
দীপ্তি রানী রায়
রোহিনী রায়
জবা রায়
লাভলী রানী রায়
বীণা রানী
ক্ষেতের মটর ঘন সবুজ হয়ে উঠবার আগেই,
পুকুরে্র জলে ধোঁয়া-ওঠা শীত উষ্ম তরল সুখ হয়ে উঠবার আগেই
শালিক পাখি হয়ে গেছে;
আর মা আলতা রানী হয়ে গেছে দুই ধারা চোখের জল
মাঠের ডাহুক কিছুটা বুঝেছে সে জলের মানে
কিংবা কিছু মেঠো শামুক
হয়তোবা ধেঁড়ে ইঁদুরও
মানুষ বোঝেনি এই কান্নার মানে
আমিও বুঝিনি।
২৫/০১/২০১৪
রোদ্দুর ও জীবনের গান
ডানা-ভাঙ্গা পাখিও আজ রৌদ্রে শুকাতে দিয়েছে ডানা
আহ রোদ্দুর!
কুঁকড়ে থাকা পেলব ফড়িং ঘাসের ঘ্রাণে মাতোয়ারা
ছুটছে ছন্দে
পরম আনন্দে।
কে দেয়নি প্রেম
কে কৃপণ ছিলো ভালবাসায়,
ইলিশ মাছে সর্ষে না পোস্ত
কী বেশি ভালো যায়
সে প্রশ্ন অবান্তর।
রোদ্দুর জানিয়ে দিয়েছে সাফ সাফ
আসলে মানুষকে তুমি শেষ পর্যন্ত ঠেকাতে পারো না;
হারানোর ভয়
না পাওয়ার বেদনা
ইট দিয়ে থেঁতলে দেয়া কোমর
মুচড়ে দেয়া মন
পুড়িয়ে দেয়া দোকান
গুড়িয়ে দেয়া ঘর
সব পেছনে ফেলে
মানুষ কিন্তু ফের দাঁড়াতে পারে।
এ সময় আলো ফুটবার, সূর্যের আলো-
থেঁতলে যাওয়া মনটাকে ফের শুকোতে দিলাম।
মা আলতা রানী রায় চাল-কুমড়োর বড়ি খানিক
শুকাতে দিও আঙ্গিনায়, জয়ন্তী আসবে ।
কদিন বাদে বর্ষায় জীবন হবে সবুজ-রঙ্গিন,
শোল-গজারের গায়ে সাদা ফুটকি জ্বলজ্বলে হবে,
আর কার্তিকের সন্ধ্যায় ফের জ্বলবে জোনাকি-
তুষ-পোড়া ঘ্রাণের পথে বাড়ির মেয়েরা ফিরবে বাড়ি।
গৌরচন্দ্র পাল, বামুনিয়া গ্রামের মাটির মানুষ-
মাটিতেই বসবাস, মাটির কারিগর;
ভেঙ্গেছে যারা নির্মাণ তাঁর, জানে নাই-
ফের বানাবেন তিনি মাটির হাঁড়ি, মাটির ভাঁড়
রোদ্দুর সেঁকবে সে মাটির জীবন।
আর আমার ছোট সাধ
জাহাঙ্গীর নগরে যাবো একদিন,
লেকে বসে যে পরিযায়ী পাখিদের মেলা , সে মেলায়-
যাবো কোন বন্ধুর সাথে কোন এক তুমুল শীতের হল্লায়,
তেমন দরদী কোন বন্ধু জোটেনি বলে দেখা হয়নি আজও।
এ শীতও গিয়েছে যাক-
ফের শীতে কুয়াশার ঘ্রাণ ধরে ঠিক চলে যাবো।
জীবনের এমন সব তুমুল আয়োজন
কে ঠেকাতে পারে?
ঠকাতে যদিবা পারো
জীবনকে শেষ পর্যন্ত ঠেকানো যায় না।
২৮/০১/২০১৪