ওখানটায় যারা বসে ছিল তারা চলে গেছে যারা বসে আছে
তারা থাকবে না; যার আসার কথা সে এখনও আসেনি
আমি বসে আছি অপেক্ষায়-সন্ধ্যা নামছে আবছায়া অন্ধকার
এক নারী হেঁটে যাচ্ছে আর তার খোলা চুল থেকে
জোনাক পোকারা ছড়িয়ে যাচ্ছে মিষ্টি আলোর আনন্দ
একপাশ থেকে দেখছি; সুঢৌল বাহু, অনামিকার অঙ্গুরি
নিটোল ছন্দময় পায়ের ক্ষেপণ, কাঁধে দোলায়মান ব্যাগ-
আমি ফিরে তাকালাম দূরে যেখানে বসে আছে কেউ নুয়ে
যেনো মন্দিরের পুরোহিত
আর আমার চারপাশের বৃক্ষগুলো অশরীরী হয়ে উঠেছে।
আকাশে বিভাময় চাঁদ, বসে আছি কত হাজার বছর–
কত যুগ ইতিহাসের গতিধারায় নতুনের পরম্পরা
সামনে জলের জাজিম, হাসছে শাপলা আর ভাসমান তৃণ
দীর্ঘদেহী ইউক্যালিপ্টাস দোলাচ্ছে আলোর ওড়না
কত সময় বয়ে গেছে কত আশা ডুবেছে হতাশায় ,
কত নিষ্ঠুরতা কালিমালিপ্ত করেছে জাতিকে
আর্তনাদে ভরে আছে রাত্রির নির্ঝর আর পূণ্যের বেদীতে
কত লোক ঠুকছে মাথা!
অশ্রু রাশিরাশি– তবুও অপেক্ষার কাল দীর্ঘ,
অনর্থক ভেদ করছে আরেকটা দিনের দিকে
কেউ আসে নি,
আমি উঠব, সেই বেঞ্চিতে হাত রাখতে মনে হল সে এসে ছিল
মনে হল কত কথা বলেছি সারা রাত
ভালোবাসা, প্রেম-প্রীতি ছলনা অর্থশাস্ত্রের মারপ্যাঁচ রাজনীতি ধ্বংস যুদ্ধের নান্দিরোল
শাসন অপ-শাসন দুঃশাসন দুর্যোধনদের রীতি নীতি–কত মানুষের বলিদান।
বেঞ্চিটি ভিজে গেছে,
শিশিরে ভিজেছে বুঝি! না কি সে কেঁদেছিল!
আমি হাতের তালুতে অনুভব করছি বালিশের নরম শরীর।
২২.০৭.১৪.
১২.
সারাদিন খোঁজাখুজি, কী খোঁজ তুমি! রাস্তায় ফুটপাতে হাঁটার অলস ভঙিতে কাগজ-পাতায়
রেডিও টিভির সংবাদে হাটের মেলায় সমিতি সভায় প্রাজ্ঞদের বক্তৃতায় রেস্তরার আলাপে,
পার্কের বেঞ্চিতে, কবিদের শত কত কবিতায়!
কী খোঁজ তুমি ! বাতাসে ঝিমিয়ে থাকা রক্ত-রাঙা প্রিয় পতাকা!
এই জনস্রোতে কালের বোঝা টেনে টেনে যাবে কতদূর! কী খোঁজ তুমি নুয়ে পড়া কাঁধে,
চোখের বিষাদ ? ঝরে ঘাম, কিংবা যে হাতগুলো দূর দেখা যায়
লিক লিকে শিরার টকটকে লাল? কী খোঁ তুমি!
রাতের আকাশ নূয়ে এসে বলে স্বাধীনতা–
ব্রাক্ষ্মাণ্যবাদের বিস্তার বেড়ে যায়, তারকার উঁকি ঝুকি রামধনু রং পাখির পাখায়
পাখিগুলো গলা ছেড়ে গায়, একটা ব্যাঙ লাফিয়ে পড়ে তুমুল জলে
জানালার মুখগুলো ঝকঝকে– কোন ছায়া নেই, আর অবরুদ্ধ রমণীরা নদীর কল্লোল
অদ্ভুত বাতাস এক নাড়িয়ে দেয় থম্কে থাকা পাতার সবুজ, বৃক্ষ শাখা
শীতের আড়মোরা ভেঙে উঁকি দেয় নতুন পাতা
তখন রক্তরঙা সবুজের পতাকা পত্পত্ ওড়ে অলিক ডানায়
যেনো দণ্ডের বাঁধন ছিড়ে উড়বে সে অসীম আকাশে ।
আর কেউ গায়
‘স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় রে কে বাঁচিতে চায়–
১৭.০৮.১৪.
১৩.
সন্দেহ করো না কোন কিছুতে যা কিছু তুমি শুনছ আর যা শুনবে
সব কিছুর একটা যুক্তি তো আছেই
তুমি যদি জিজ্ঞেস কর এ সবের সত্যটা কি? তা হলে শোন–
সাধারণরা কেবল অসাধারণের সত্যটা শুনবে– প্লেটো তাই বলেছিলেন
ভাবো, তুমি বাস করছো গণতন্ত্রের যুগে আর গণতন্ত্র সবার জন্য
কেন তুমি বুঝতে চাওনা কতলোক! সমান পায় কী করে ?
কিছু বুদ্ধিজীবী ! না থাকলেই ভালো ছিল–
তারা চায় ডুব সাঁতার সামান্য হাতের ছোঁয়া– সেই তাদের কষ্ট–
তুমি কিছু ভাবতে যেওনা এখন; কল্যাণের পঞ্চবার্ষিকী শুরু
তোমার ভাবনার বাণী লেখা হয়ে গেছে
আর আমরা বাস করছি তাদের মাঝে যারা কেবল দাসত্বই মেনে নেয়
দীর্ঘ লাইন ত্রাণের, যেখানে ষাঁড়গুলো শিং উঁচিয়ে থাকে
আর হাম্বায় ভরিয়ে তোলে পথঘাট
এখন কেবল স্মরণ কর চিরদাসত্বের দিনগুলি আর রাত্রিগুলি যা তোমার পূর্বপুরুষের
‘স্মৃতিকান্নার’ এই সময়ে স্মরণ কর তাদের যারা হাওয়া হয়ে গেছে–
৩১.০৮.১৪
১৪.
যখন তুমি অতটা দূর থেকে জানতে চাও ভাবি, কিছু বলি–
ঠিক তখন কয়েক শ’ লোক গায়েব হয়ে যায় হদিস মেলে না
যখন একটু বিরতি, শুনব তোমার প্রবাস বলব আমার স্বদেশ
তখন কেউ ঘরে ঢুকে গলা কাটে কিংবা বসিয়ে দেয় কয়টা বুলেট
ছুরিও কম যায় না রশি হয় গলার ওড়না
আর সংবাদপত্রগুলো সেই সব চিবিয়ে চিবিয়ে লেখে
লিখবার কিছু থাকেনা তাই–
আর মিলটন সংবাদ দেয় কত টন বর্জ্যে আহার সারল বুড়িগঙ্গা–
একটা অদ্ভুত সময় বৃষ্টিতে ভিজছে, ঝিমিয়ে পড়েছে বৃক্ষগুলো,
বাগানগুলো উজার
মৎস্যগুলো ক্রমান্বয়ে ছোট হয়ে রেণু হয়ে গেছে
চোখেই পড়েনা বড় হলে কি তার নাম হতো কোন রসনার
বালকেরা ফরমালিন আর যুবকেরা বড় হচ্ছে ইয়োবায়
একটা প্রজন্ম ধেয়ে আসছে পঙ্গপালের মত আত্মবিনাশের আর্তনাদ নিয়ে
আর বৃষ্টির আন্দোলন চোখে নামিয়ে আনছে ঘুম
স্মৃতিকাতরতার এই সময় সকল মায়ের সেই গানটাই গাইছি
‘আয় ঘুম আয় আমার খোকার চোখে নেমে আয়’
ওপাশ থেকে তুমি বললে : মানুষের কী আর কোন উদ্ধার নেই !
৩১.০৮.১৪.